মাকে বাঁচাতে চায় ইবি ছাত্রী মিতু, প্রয়োজন ৮০ লাখ টাকা

আজাহার ইসলাম, ইবি


শায়লা আক্তার মিতু। জন্ম রাজশাহী বিভাগের মোহনপুর উপজেলার গোছা গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে। বাবা মা এবং বড় বোনকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার। মেয়েটি পড়াশোনা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে। বড় বোন স্নাতক (সম্মান) শেষ করেছেন। মুদির দোকানী বাবার সামান্য উপার্জনে কোন রকম সংসার চলত তাদের।

হঠাৎ তার বাবার এক হাত ভেঙে যাওয়ায় অনেকটা কর্মক্ষম হয়ে পড়েন। তবুও তার বাবার কষ্টের উপার্জনে দুই বোনের পড়াশোনার খরচসহ কোন রকমে সংসার চলে। কিন্তু হঠাৎ মা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এইদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী অসুস্থ বাবার হাতে যথেষ্ট টাকা না থাকায় মাকে ঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেনি তারা।

চিকিৎসার অভাবে দিন দিন শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্নের দিকে মিতুর মায়ের। বেশ কিছু দিন পর রাজশাহীতে ডা. সমরেশ মজুমদারের কাছে দেখানো হলো মিতুর মাকে। চিকিৎসক জানালেন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তিনি। সে অনুযায়ী তিনি চিকিৎসা দিলেন। এভাবে কেটে গেল দু’টি মাস। ফলাফল শূন্যের কোটায়। কোন উন্নতি হলোনা তার মায়ের।

পরে তার মাকে ভর্তি করানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করান ডাক্তার। পরে চিকিৎসকরা জানালেন তার মায়ের হার্টের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এর কোন চিকিৎসা নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমাতে হবে দেশের বাইরে। মেয়েটির পরিবার এখন অনেকটা দিশেহারা। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা দিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

কিন্তু হাল ছাড়েনি মিতু। তার মাকে সুস্থ করে তুলতেই হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সহযোগিতায় টাকা তুলে প্রায় দুই মাস পর ভারত যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করলো। পরে মিতুর মাকে নিয়ে যাওয়া হলো ভারতের ব্যাঙ্গালোরের নারায়ণ হাসপাতালে। সেখানকার অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করলো। পরীক্ষার বিপোর্টে দেখা গেল হার্টে পানি জমে অনেকাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। যেকোন সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও যেতে পারেন তিনি।

ভারতের অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা ছয় মাসের জন্য ওষুধ দিয়েছে। পরবর্তীতে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে বলে জানান চিকিৎসকেরা। এ পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের শেষের দিকে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে যেতে হবে তাদের। এবারে চিকিৎসার জন্য আরো প্রায় ছয় লাখ টাকা প্রয়োজন। অথচ মিতু ও তার পরিবারের নিকট গচ্ছিত কোনো টাকা নেই। এমনকি আত্মীয়স্বজনের নিকট থেকে সংগ্রহ করাও সম্ভব নয়।

এবারের চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি না ঘটলে হার্ট প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। যা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা একেবারে অসম্ভব। সার্বিক ভাবে সংকটাপন্ন অবস্থা যাচ্ছে মিতুর পরিবারের। এত গুলো টাকা যোগাড় করে যে মায়ের চিকিৎসা করাবে একথা ভাবতেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তার পরিবারকে। উপায়ন্তর না থাকায় সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছে।

মিতু জানান, ‘বড় বোনের বিয়ের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বাবার উপার্জনের কোন মাধ্যম নেই। আমার দৈনন্দিন ক্যাম্পাস। মায়ের শরীরের অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না। দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমি চাই মা আরো কিছুদিন বেঁচে থাকুক। হয়তো সকলের সহযোগিতা পেলে মাকে সুস্থ করে তুলতে পারবো। কিন্তু এত গুলো টাকার জন্য হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে এর আগে টাকা নিয়ে মায়ের চিকিৎসা করেছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেশার মত অবস্থা আর কোন উপায় নেই। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষদের নিকট সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।’

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ০১৭৩৭৩০১৮৫৪, এই নাম্বারে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে সাহায্য পাঠানো যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *