মাছ উৎপাদনে চমক এনেছে “বায়োফ্লক” পদ্ধতি

মাজেদুল ইসলাম


মাছে ভাতে বাঙালি -এই প্রবাদটা বেশ কয়েকবছর ধরে আর শোনা যায় না! যদিও নদীমাতৃক বাংলাদেশে মাছই ছিলো বাঙালীদের আমিষের চাহিদা পূরণে অন্যতম নিয়ামক।

কিন্তু জনসংখ্যা আধিক্য ও নদীগুলো তাদের নাব্যতা হারানোর দরুন আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না।আর পাওয়া গেলেও তা বিপুল জনসংখ্যার জন্য সংকুলান হয়ে যায়।তাছাড়া জনবসতি তৈরীর ফলে আবাদী জমি ও পুকুরের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তাইতো স্বল্প জায়গায় যাতে অধিক পরিমাণ মাছ চাষ করা যায় তাই কৃষকের দোড়গোড়ায় চলে এসেছে বায়োফ্লক পদ্ধতি। বায়োফ্লক পদ্ধতি শুধুৃমাত্র শহরে নয় বরং প্রান্তিক পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে মাছ উৎপাদন করে মাছে ভাতে বাঙালী উক্তিটি পুনরায় বাস্তবায়নের পথে হাটছে বাঙলার আপামর জনগণ।

বায়োফ্লক শব্দটি দুটি শব্দ বায়ো যার অর্থ জিবন ও ফ্লক অর্থ আলতোভাবে লেগে থাকা কণার সমষ্টি।অর্থাৎ বায়োফ্লক হলো আলতো ভাবে লেগে থাকা জীবিত কণার সমষ্টি । সুতরাং বায়োফ্লক হলো টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি যেখানে ব্যাকটেরিয়া,শৈবাল,প্রোটোজোয়া, ইস্ট তৈরী মাইক্রো এগ্রিগেট যা পানিতে উৎপন্ন নাইট্রোজেন ঘটিত ব্রজ্যপদার্থ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া তৈরী প্রতিহত করে ও নিজেদের বংশগতি বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে এসব ফ্লক আবার মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

মাছ চাষের ক্ষেত্রে খাদ্য রুপান্তর হার(এফসিআর) এর মান যত্ত কম হবে মাছ চাষে মুনাফা তত বেশি হবে।আর আমরা জানি,বায়োফ্লকে যেহেতু ফ্লক গুলোই মূলত মাছ খেয়ে থাকে তাই বাইরে থেকে খাদ্য তেমন দিতে হয় না।পানির গুণাগুণ রক্ষা,অ্যামোনিয়া,হাইড্রোজেন সালফাইড হ্রাস, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ানিয়ন্ত্রণ,এফসিআরসহ মাছের সুষম বৃদ্ধিতে বায়োফ্লকের জুড়ি নেই।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য পিভিসি ট্যাংক,প্রো- বায়োটিক,মোলাসেস, চুন,অপরিশোধিত লবণ দরকার হয়।এছাড়াও পানির গুণাগুণ জানার জন্য পিএইচ মিটার, টিডিএস মিটার,থার্মোমিটার প্রয়োজন।সবচেয়ে বেশি যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সার্বক্ষণিক অক্সিজেন ব্যবস্হা বজায় রাখা এর জন্য বিদ্যুতের পাশাপাশি জেনারেটর রাখা জরুরী।

বায়োফ্লক যেহেতু ট্যাংকে মাছ চাষ পদ্ধতি তাই আমাদের দেশে সচরাচর চাষকৃত মাছ – তেলাপিয়া, রুই,কাতলা,মাগুর,পাবদা,শিং ইত্যাদি চাষ করা যেতে পারে। ট্যাংকের আকার ভেদে মাছের উৎপাদন ও প্রয়োজনীয় উপকরণের ভিন্নতা হয়ে থাকে। তবে টিডিএস, পিএইচ,ডিও, তাপমাত্রা নির্দিষ্ট রাখতে হয় নতুবা মাছ উৎপাদনে ব্যপক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

প্রতি ১০০০ লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পূন্ন ট্যাংকে ১০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা যাবে।বায়োফ্লক পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছগুলো তুলনামূলক ভাবে রোগপ্রতিরোধক্ষম এবং পানির গুণাগুণ ঠিক রাখতে পারলে তেমন রোগ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা।

সুতরাং বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বদলে দিতে পারে আগামীর তারুণ্যের বেকারত্ম এবং সল্প জায়গায় বহুল মাছ উৎপাদনে অন্যতম মাধ্যম।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে মাছ উৎপাদনের হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলতেছে।

আগামীতে আমরা হয়তো আবারো মাছে ভাতে বাঙালী হতে পারবো এবং বেকার সমস্যা সমাধানে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment