মাদকাসক্তি ও তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ

মো: আব্দুল হালিম


স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মানুষকে যেমন বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় তেমনি মনের সুস্থতার জন্যও সচেতন থাকতে হয়।

সুন্দর মন-মানসিকতা ও সুস্থ-দেহ গঠনের জন্য সকল প্রকার নেশা থেকে দূরে থাকা দরকার।কিন্তু বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ দেহ ও মনের কল্যানের কথা বিবেচনা না করে নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে ও তার পরিণামে জীবনে নেমে আসে সীমাহীন দুর্গতি।

সুস্থ মানুষ হিসেবে তার আর পরিচয় থাকে না।নেশাজাতীয় জিনিসের প্রতি এই আকর্ষণকে বলে মাদকাসক্তি যা আজকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক ভয়ংকর আতংক সৃষ্টি করেছে।

মানুষ নানা ধরনের নেশা করে।সে নেশা করে এক ধরনের আনন্দ পায়।বিভিন্ন মাদকদ্রব্য থেকে যে নেশা হয় তা খুবই ক্ষতিকর জেনেও নেশাগ্রস্ত মানুষ তার মোহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না।

মাদকাসক্তির নানা উৎস বিদ্যমান।ভাং, আফিম, গাঁজা ইত্যাদি প্রাচীনকালে ছিলো কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ও বর্তমান সময়ে এর যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে।বর্তমানকালের মাদকদ্রব্য হিসেবে হিরোইন, মারিজুয়ানা, এল.এস.ডি, প্যাথেড্রিন, ইয়াবা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এটি একটি কু-অভ্যাস।সাধারণত বেকারত্ব, হতাশা, দারিদ্র্যের কষাঘাত, ব্যর্থতা, বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় মানুষকে মাদকাসক্ত করে তোলে। তাছাড়া মনের ফালতু কৌতুহল মিটাতে বা অসৎসঙ্গ মানুষকে বিপথগামী করে তোলে।যারা একবার মাদকাসক্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এর কুপ্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি মাদকের এই যাদুকরী স্পর্শ থেকে।মানুষের চিরন্তন নতুনত্বের নেশা,নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ ও আপাত ভালো লাগার প্রেরণার বশবর্তী হয়েও অনেকে মাদকাসক্ত ব্যবসায়ীদের পেতে রাখা ফাঁদে নিরুপায় কীটপতঙ্গের মতো ধরা দিচ্ছে।বিশেষ করে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরন করতে না পেরে বুদ্ধিহীন হালকা ব্যক্তিত্বের লোকেরা সহজেই আশা-ভঙ্গের বেদনায় মুষড়ে পড়ে এবং দুশ্চিন্তা ও উৎকন্ঠা দুর করার জন্য মাদকদ্রব্যের দিকে ঝুকে পড়ে।

মোটকথা, নৈরাজ্যের সুতীব্র যন্ত্রনায় দগ্ধীভূত হয়ে যুব সমাজ মাদকাসক্তির মধ্যস্থতায় আত্ম-বিনাশের পথ। ছেলেদের পাশাপাশি আজ কিছু অতি উৎসাহী মেয়েরাও এর সংঙ্গী হয়েছে।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় আজ এর ছোবলের বিষ ব্যাপক হারে অতি দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে।

যে ব্যক্তি এই মাদকদ্রব্য গ্রহন করে, সে সাময়িকভাবে উল্লাসিত হয়, হয় তন্দ্রাচ্ছন্ন।কিছু সময়ের জন্য সে নিজেকে রাজা-উজির মনে করে।মাদক সেবনকারী ব্যক্তির অধিবাস চলে সেই সময়টুকুতে এক স্বপ্ন রাজ্যে। আর এই সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘটায় অনেক অপকর্ম, অসামাজিক কাজ।

তার কথায় নেমে আসে জড়তা, চলাফেরায় হয় বেসামাল, কখনো কখনো শিরোঘর্মন পীড়ায় নিপতিত হয়।হজমি রস নিঃসারক গ্রন্থি ও মস্তিষ্কের কোষ হয় ক্ষতিগ্রস্ত এবং আস্তে আস্তে এই ব্যক্তির জীবনে নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক চরম বিপর্যয়। নেশার পরিমান খুব বেশি হলে শরীর ক্রমশ শুকিয়ে যায়, নিস্তেজ হয়, ঘুম হয় না যা চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা খুবই কষ্টকর।

মাদকদ্রব্যের এই অভিশপ্ত নেশা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে জাতি এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে।এর ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে সমাজকে রক্ষার জন্য সারা বিশ্বে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য সচেতন হতে হবে,নিতে হবে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ। এর ভয়াবহ পরিনামে আজ কত যুবক অকাল মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।কত পরিবার আজ হতাশাগ্রস্ত।এহেন অবস্থা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে।

সমাজে ন্যায়বিচার,মানবিক চেতনার বিকাশ,নতুন নতুন আদর্শবাদ প্রতিষ্ঠা দরকার। মাদকদ্রব্য উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বিশ্বের প্রতিটি দেশে যে আইন করা আছে প্রয়োজনে সেদিকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে।আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।শুধু মাদকাসক্তির কুফল প্রচার করে বা উপদেশ দিয়ে এই ভয়াবহ ব্যাধির প্রতিকার করা সম্ভব না।

এর হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য কঠোর আইন যেমন প্রয়োজন, তেমনি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতিকার করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ ভালোভাবে কার্যকর করতে হবে।মাদকদ্রব্যগুলোর মুল্য ও চাহিদা খুব বেশি বলে এর ব্যাপক চোরাচালান চলছে বর্তমান সময়ে।

চোরাচালান প্রতিরোধ অভিযানও বেশি বেশি চালাতে হবে। কোটি কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধরা পড়ছে এবং বিনষ্ট করা হচ্ছে তা সত্বেও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদকদ্রব্যগুলোর চোরাচালানির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েও এর সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।

এর থেকে মুক্তিলাভ করার জন্য বেশি করে নিরাময়মুলক চিকিৎসাকেন্দ্র প্রয়োজন আছে।প্রয়োজন আছে সচেতনতার।বেকারদের কর্মসংস্থানের দিকও ভাবতে হবে পলিসি মেকারদের।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *