মানুষ মানুষের জন্য কবে হবে?

রুদ্র ইকবাল


লকডাউন ! হাহাকার জীবন। কিন্তু এই হাহাকারের চেয়ে আরো কঠিন হাহাকার ক্ষুধার হলো যন্ত্রণা।

আর এ ক্ষুধা নিয়েই মানুষকে ঠকাচ্ছে আরেক মানুষ। কার দোষ দিবেন বলেন? এটা তো ১৭৫৩ পরবর্তী সময় না। তা না হলে কষে ব্রিটিশদের গালি দিতাম। কিংবা পাকিস্তানি হানাদাররাও না। আমাদের জাত ভাই বাঙালিরা।

ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুর কথা শেয়ার করে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করে মাঠে-ময়দানে গিয়ে ওরা নিয়ে যাচ্ছে গরীবদের চাল। এই করোনাকালীন মুহুর্তে একটুও কি ভাবছে রিকশা চালাইতে যেতে না পারা মানুষটা খেতে না পেয়ে ক্ষুধার চোটে আত্নহত্যাকে ভালবাসতে চাচ্ছে।

একটা সংবাদে পড়েছিলাম, ইতালির মাফিয়ারা ও এই দুর্যোগ মূহুর্তে ত্রান দিচ্ছে। পাশে দাড়িয়েছে অসহায় মানুষের পাশে। কিন্তু বাংলাদেশে দেখুন! গরীবের চাল গুলো লুটপাট করে তারা আবার সাংবাদিকদের মারে।

যদি বলি স্বাধীনতার কথা! স্বাধীন এই শব্দ ছাড়া আর কোন জায়গায় স্বাধীনতা আছে বলে মনে হয় না। সাংবাদিক কাজলকে গুম মুক্তির পর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাত কড়া বেধে।

আমাদের রাষ্ট্রের খাদ্য গুদাম পরিচালনা করে, সিন্ডিকেটরা। এই সিন্ডিকেট গোষ্ঠীরা দেশের মহামারীর সময় ও লাভ ছাড়া কিছুই বুঝে না। করোনা আসার আগে পেয়াজের অবস্থা নিয়ে ভাবুন। এই পেয়াজ দূর্নীতিতে যে টাকা লুট হয়েছে তা দিয়ে স্যাটেলাইট পাঠানো সম্ভব।

যখন পেয়াজের হাহাকার চলতেছিল তখন নিউজে দেখতাম, বস্তা ভর্তি পেয়াজ জব্দ কিংবা পচে গিয়েছে বস্তা ভর্তি পেয়াজ। এই দুর্যোগ মূহুর্তে ও এক দল মানুষ, ইউজ করা মাস্ক সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে বিক্রি করেছিল। যারা বিক্রি করেছিল তারা কি ভেবেছিলো কয়েকটা টাকার জন্য অন্য জনের করোনা হতে পারে!

মানুষ মারা গেলে গ্রামবাসী খাটিয়া দিচ্ছে না। জানাজায় না যাওয়া যায় কিন্তু খাটিয়া দিলে কি সমস্যা? কবর দিতে দিচ্ছে না। কিন্তু কেন? মহামারীতে যারা মারা যাচ্ছে তারা তো শহীদ। কবর দিলে তো করোনা ছড়াবে না।

মা করোনা রোগী সন্দেহে সন্তানরা রেখে এসছে জঙ্গলে, করোনা আক্রান্ত গার্মেন্টস কর্মী জায়গা পায়নি নিজ ঘরে। এই নিউজ গুলো প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে উঠে।

গার্মেন্টস মালিকদের কর্মকাণ্ড দেখে ভূপেন হাজারিকার একটা পংক্তি মনে পড়ে যায়, “মানুষ মানুষকে পণ্য করে, মানুষ মানুষকে জীবীকা করে”। শ্রমিকদের অসহায় সময়ে বারবার টকাচ্ছে মালিকরা।

প্রনোদনার লোভে শ্রমিকদের হুমকির শিকার হতে হচ্ছে। এই মহামারীতে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল কিংবা কলরেট নিয়ে মানুষকে যে হয়রানির মধ্যে রাষ্ট্র রেখেছে তা দেখে অবাকই হয়ে হয়।

মানুষ মানবিক হয়ে উঠুক। মানুষ হয়ে উঠুক মানুষের আস্থা।

লেখক ও শিক্ষার্থী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *