মিল্টন সমাদ্দার: মানবতার ফেরিওয়ালা থেকে সাইকোপ্যাথ?
মিল্টন সামাদ্দার একজন সামাজিক কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত আছেন। অনেকের কাছে তার পরিচয় সামাজিক সেবা করা হিসাবে গণ্য। মিল্টন সামাদ্দার সচেতন সমাজ সেবার জন্য অন্যদের কাছে অর্থ সাহায্য করতেন এবং সময়ের পর সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে তার কাজের উল্লেখ হচ্ছে। তবে, সম্প্রতি মিল্টন সামাদ্দারের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে এবং তিনি পুলিশ দ্বারা গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই অভিযোগের মধ্যে হল মানবপাচার, বাচ্চা ও বৃদ্ধ মানুষের ওপর হামলা, অসহায় মানুষের নামে অর্থ সংগ্রহ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি এবং জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় মিল্টন সামাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে এবং অদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে। এছাড়াও, মিল্টন সামাদ্দারের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে প্রতারণা এবং নির্যাতনের অভিযোগ সম্মিলিত রয়েছে।
কে এই মিল্টন সমাদ্দার
“মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। ২০০৯ সালে রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের পরিচয়ে তুলে ধরেন তিনি।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় মিল্টন সমাদ্দার নিজের পরিচয় সম্পর্কে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন ও মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড।
এর মধ্যে প্রথম দুইটি প্রতিষ্ঠানকে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ফেসবুকে দাবি করা হয়েছে, রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় ও আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের খুঁজে বেড়ানো তার নেশা ও পেশা হয়ে গেছে। মানুষের দান আর নিজের ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বৃদ্ধ ও শিশুদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করেন তিনি।
এতে আরো দাবি করা হয়েছে, বৃহৎ পরিসরে সেবা দিতে ২০১৪ সালে ঢাকার পাইকপাড়ায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মি. সমাদ্দার নিজের পেইজে যেসব ভিডিও প্রকাশ করেছেন সেখানে বিভিন্ন সময়ে তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে আশ্রম বলে তুলে ধরেছেন।” সুত্রঃ বিবিসি।
৯০০ মরদেহ দাফনের দাবি মিল্টনের আসলে কত?
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে মিল্টন সমাদ্দার প্রায়ই দাবি করেন, তার আশ্রমে সব সময় ২৫০-৩০০ অসুস্থ রোগী থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান।
মিল্টনের দাবি, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন তিনি। যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার।
তবে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে মিল্টনের মিথ্যা তথ্য দেয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। জানা যায়, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সেখানকার দায়িত্বরতরা।
প্রশ্ন ওঠে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় গেলো?” সূত্রঃ একাত্তর টিভি অনলাইন।
বরিশালে চার্চ দখল
“বরিশালে ‘চন্দ্রকোনা খ্রিষ্টান মিশনারি চার্চ’ দখল চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। দখলের উদ্দেশ্যে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জাল করে চার্চের নতুন কমিটি গঠন করে বরিশাল জেলা প্রশাসকে একটি চিঠি দেন। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় মিল্টন সমাদ্দারকে। কমিটির বাকি সদস্যদের প্রায় সবাই মিল্টনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না চার্চের দায়িত্বরত যাজকরা। পরে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়, এ ধরনের কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। এরপর তারা আদালতে মামলা করেন। আদালত জালিয়াতি করে চার্চ দখল করতে চাওয়া ব্যক্তিদের ওই চার্চের সীমানায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।” সূত্রঃ একাত্তর টিভি অনলাইন।