মূত্রত্যাগের স্থানে এখন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে রাজ্জাকের ফুলের বাগান

মোঃ আরাফাত হোসেন, জিটিসি


উপরে শিক্ষার্থীদের আড্ডা, নিচে মূত্রত্যাগ! এমনটাই ছিল রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রধান গেট সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের রোজকারের দৃশ্যপট।

তিতুমীর কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে থাকা ফুটওভার ব্রিজের নিচে মল-মূত্রের উৎকট গন্ধ। সারাদিন পথচারীরা লাইন বেঁধে মূত্রত্যাগ করে। এ যেন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াটাই যেখানে মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে।

ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থী কিংবা পথচারীদের ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। মূত্রের দুর্গন্ধে নাক সিটকে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এসব দৃশ্য দৃষ্টিকটু। তবে উদ্যমী রাজ্জাকের কল্যাণে পাল্টেছে দৃশ্যপট। মূত্রে দুর্গন্ধযুক্ত জায়গায় এখন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে ফুলের বাগান।

আরও পড়ুনঃ মূত্রত্যাগের স্থান এখন ফুলের বাগান, প্রশংসিত আ. রাজ্জাক

ফুটওভার ব্রিজের নিচে মূত্রত্যাগ বন্ধ করার জন্য তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা পরিকল্পনা হাতে নিলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

তবে ব্যক্তি উদ্যোগে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক শিক্ষার্থী মূত্রত্যাগের স্থানে ফুলের বাগান করেছেন। সন্ধ্যার পরও যাতে কেউ প্রস্রাব করতে না পারে, সেজন্য সেখানে তিনি বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিয়ে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

আবদুর রাজ্জাক তিতুমীর কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। যৌথ উদ্যোগের অভাব থেকে সাফল্য আসে না। তবে তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থী দেখিয়েছেন যে চেষ্টা করলে তিনি একা কাজ করতে পারবেন।

আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘এই শহরটি আমার, এই দেশটি আমার, এটিকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমার। পরিষ্কার করা আমার কাছ থেকে শুরু করা যাক। আপনার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে পরিবেশ কোনওভাবেই নষ্ট হচ্ছে না। এখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলে দেবেন না। নির্দিষ্ট জায়গায় ভাল রাখুন। যাতে কারও ক্ষতি না হয়। পথচারীদের রাস্তার পাশে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কারণ আপনি রাস্তার পাশে ঠিক মতো হাঁটতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে এটি করতে পেরে আমি খুব খুশি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে যত্রতত্র প্রস্রাব করা ঠিক নয়। আমি জায়গাটির সৌন্দর্য মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করেছি।

ঘটনাস্থলে জানা গেছে যে তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজটি এখন দেড় শতাধিক ফুল, পাতা এবং অন্যান্য গাছ সমৃদ্ধ। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই আলো এসে গেল। একদিকে সৌন্দর্য বেড়েছে, অন্যদিকে প্রস্রাব বন্ধ হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে গাছের প্রয়োজনীয়তার স্ট্যাটাস সহ গাছ, টব ও ব্যানারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তিনি যতটুকু পারতেন তাই দিয়েছিলেন।

আবদুর রাজ্জাকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেকের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে তিতুমীর কলেজের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment