মূত্রত্যাগের স্থান এখন ফুলের বাগান, প্রশংসিত আ. রাজ্জাক

আরাফাত হোসেন,জিটিসি প্রতিনিধি


মলমূত্রের দুর্গন্ধে তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে চলাচল করা যেত না এখন সেখানে ফুলবাগানে বেড়েছে অপরুপ সৌন্দর্য। এমন সুন্দর এবং মহৎ কাজের অংশীদার আব্দুর রাজ্জাক।

আব্দুর রাজ্জাক তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। এছাড়াও পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন।

আ. রাজ্জাকের আগে ওই ব্রিজের নিচে মূত্রত্যাগ বন্ধ করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল। কিন্তু সবশেষে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ব্যক্তি উদ্যোগে আ. রাজ্জাক মূত্রত্যাগের স্থানে ফুলের বাগান করে দেখিয়েছেন। সন্ধ্যার পরও যাতে কেউ প্রস্রাব করতে না পারে সেজন্য সেখানে লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে গাছগাছালি প্রয়োজন শিরোনামে স্ট্যাটাস দিয়ে গাছ, টব, ব্যানারের অর্থ সংগ্রহ করেছেন আ. রাজ্জাক। নিজেও যতটুকু পেরেছেন দিয়েছেন। গাছ সংগ্রহ করতে যেয়ে বৃথা রায় দিপা নামে এক মধ্যবয়সী গাছপ্রেমীর সঙ্গে রাজ্জাকের পরিচয় হয়। তিনি রাজ্জাককে কলেজের সামনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য নানা পরামর্শ দেন এবং কিছু গাছ উপহার দেন।

এর আগে ফুটওভার ব্রিজের নিচে প্রস্রাবের গন্ধে নাক সিঁটকে হাটতে দেখা যায় শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের। হাটতে হাটতে জুতার নিচে কর্দমাক্ত কিছু লেপ্টে যায়। নিয়মিত প্রস্রাব করার ফলে আর পানি বের হতে না পেরে জমাট বেধে যায়। প্রত্যহ এই দৃশ্য দেখা যেত তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচে। ব্রিজের উপরে চলে শিক্ষার্থীদের আড্ডা আর নিচে চলে প্রস্রাব! চোখে এই দৃশ্য দেখা যতটা বিশ্রী তার থেকেও বেশি বিব্রতকর।

প্রসাবের দুর্গন্ধে এখন আর আগের মত আড্ডা জমে ওঠে না। নাকে মুখে মাস্ক পরে ওই স্থান ত্যাগ করতে হয়। পথচারীরা রাস্তা পারাপারে ব্যবহার করবে এই ওভারব্রীজ সেখানে উল্টো এটাকে এড়িয়ে যেতেই পথচারীরা নেমে পড়ে মধ্য রাস্তায়!

কিছু অসচেতন লোকের ফুটওভার ব্রীজের নিচে মুত্রত্যাগের কারণে প্রকট দুর্গন্ধে প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী ওভারব্রীজটি। যা দিন দিন আরো অসহনীয় হয়ে উঠছে। একসময় পথচারী চলাচলের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আড্ডা জমে উঠতো ওভারব্রীজে। কিন্তু এই অসহনীয় দুর্গন্ধে এখন প্রায় নির্জীব থাকে ওভারব্রীজটি।

তার এই ব্যক্তি উদ্যোগের বিষয়ে আ. রাজ্জাক জানান, “এই শহর আমার, এই দেশ আমার, পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বটাও আমার। পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকেই।”

স্বেচ্ছাসেবক আ. রাজ্জাক বলেন, “আমি খুবই আনন্দিত যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এমন একটা কাজ সম্পূর্ণরূপে করতে পেরেছি। সেই সঙ্গে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে যেখানে-সেখানে মূত্রত্যাগ করা ঠিক না। পাশাপাশি মানুষের কাছে জায়গাটির আরো সৌন্দর্যবর্ধক ভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের দুই পাশ এখন ১৫০টিরও অধিক ফুলগাছ, পাতাবাহার সহ নানা রকম গাছে সমৃদ্ধ। সন্ধ্যার পরপরই জ্বলে আলো। একদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রিজের চারপাশের সৌন্দর্য, থেমেছে মূত্রত্যাগ।

দুঃখ প্রকাশ করে আ. রাজ্জাক জানান, ‘গত বছরের (২০১৯), ১৭ ডিসেম্বর কলেজের অনেককে আমার সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছি। তবে দুঃখের বিষয় সেদিন তেমন কাউকে পাশে পাইনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ২য় বর্ষের নূর মোহাম্মদ সুমন নামের একজন আমার সঙ্গে থেকে কাজ করেছে। দুজনে মিলে কলেজ থেকে পাইপ টেনে পানি দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করেছি। বালু দিয়ে স্যাঁতসেঁতে জায়গা ভরাট করেছি। অনেকেই বলেছিলো যেও না, পারবা না করতে। অথচ আমি করে দেখিয়েছি। আমরা পেরেছি।”

এমন সুন্দর এবং মহৎ উদ্যোগে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন আ. রাজ্জাক। অদূর ভবিষ্যতে তিতুমীর কলেজের পরিবেশ আরও সৌন্দর্যময় হবে এমন শতশত ক্ষুদ্র উদ্যোগে, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

কে বলে আমাদের তরুণ সমাজ হতাশ, মাদকাসক্ত, কর্মহীন? শাওন ও রাজ্জাকের মতো তরুণরা আছে আমাদের পাশে। ওদের মতো করে আরও অনেক শাওন বা রাজ্জাক যদি এভাবে সবুজায়নের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে এই কংক্রিটের জঞ্জালে ভরা নগরী পুষ্প পল্লবে সেজে উঠবে। বাতাস হবে দূষণ মুক্ত, নির্মল।

আসুন আমরা স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন মরে গেলে তো বর্তমান স্থবির হয়ে যাবে। স্বপ্ন হোক সবুজের, স্বপ্ন হোক প্রাণের আনন্দের, স্বপ্ন হোক শ্যামল বাংলাদেশের।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment