মেস ভাড়া এখন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা

বশেমুরবিপ্রবি টুডেঃ করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষাকার্যক্রম।

১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে স্পষ্টভাবে আবাসন সুবিধার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থার অভাবে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বসবাস করে।

যাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর টিউশন এবং খন্ডকালীন আয়ের ওপর নির্ভর করে চলা এসকল শিক্ষার্থীদের জন্য মেসভাড়া প্রদান বর্তমানে অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে গত ৭ মে মেস/সিট ভাড়া মওকুফ সংক্রান্ত বিষয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করে বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন। এখন পর্যন্ত উক্ত কমিটি গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিকদের সাথে পৃথক বৈঠকের মাধ্যমে গোবরা, চর পাথালিয়া, নীলামাঠ, সোনাকুড় এলাকায় ৪০ শতাংশ এবং নবীনবাগ এলাকায় ২৫ শতাংশ বাড়িভাড়া মওকুফ করেছে।

কিন্তু ২৫% ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নবীনবাগ এলাকার শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও “প্রতিবাদ করুন বাসা ছাড়ুন, বশেমুরবিপ্রবি” নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ গঠন করেছেন।

নবীনবাগে বসবাসরত শেখ হাসিনা কৃষি ইনিস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাঈম তালুকদার বলেন, “করোনার কারণে আমাদের সকলের আয়ের ওপরেই প্রভাব পড়েছে। আশা করেছিলাম বাড়িওয়ালারা আরো মানবিক হবেন, অন্তত ৪০% ভাড়া মওকুফ করবেন। কিন্তু তারা মাত্র ২৫% ভাড়া মওকুফ করেছেন।”

এই শিক্ষার্থী বলেন, “এই মুহুর্তে আমাদের ৭৫% ভাড়া বহন করা অত্যন্ত কষ্টের হবে। ছুটি যদি আরো দীর্ঘায়িত করা হয় জানিনা কিভাবে ভাড়া বহন করবো।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রথীন্দ্রনাথ বাপ্পী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নবীনবাগের মেসগুলোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে অামরা হতাশ ও মর্মাহত হয়েছি। কারণ অামরা অাশা করেছিলাম অন্তত ৫০ শতাংশ মওকুফের সিদ্ধান্ত হবে। অামাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় করোনার এই দুঃসময়ে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই ৭৫ শতাংশ ভাড়া দেয়া কষ্টকর হবে।”

রথীন্দ্রনাথ বাপ্পী আরও বলেন, “এখন অামাদের দাবি থাকবে সে সকল শিক্ষার্থী এই ৭৫ শতাংশ ভাড়া দিতে সক্ষম নয়, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অার্থিক ক্ষতিপূরণ দিবে।”

বাড়ি ভাড়া মওকুফ সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত কমিটির সভাপতি ড. মোঃ হাসিবুর রহমান বলেন, “বাড়িওয়ালাদেরকে আমরা ভাড়া মওকুফের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারিনা, শুধুমাত্র অনুরোধই করতে পারি। আর আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে অধিক পরিমাণ ভাড়া মওকুফ করা হয়।”

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “কমিটির সকলের সাথে আলোচনা করে যারা অধিক সমস্যায় রয়েছে তাদের বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করার বিষয়ে আমরা একটি প্রস্তাব রাখার চেষ্টা করবো।”

আর্থিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে অনেক শিক্ষার্থীই মেস ছেড়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। গোপালগঞ্জের নবীনবাগ মেসের এক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাজিম বলেন, “করোনা পরিস্থিতি কতদিন থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। আর এভাবে বাড়িভাড়া দেয়াও সম্ভব না তাই আমার মনেহয় মেসভাড়া ৪০ শতাংশ মওকুফ না করলে মেস ছেড়ে দেয়া উচিত।”

Scroll to Top