মে দিবসে তারুণ্যের ভাবনা

মে দিবসে তারুণ্যের ভাবনা

মে দিবসকে ঘিরে তারুণ্যের প্রত্যাশা

প্রতিবছর পহেলা মে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ঐতিহাসিক শ্রমিক আন্দোলনের কথা। স্মরণ করিয়ে দেয় দৈনন্দিন জীবনে শ্রমিকদের অবদানের কথা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস হিসেবে পরিচিত। সমাজের প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ভাবে শ্রমজীবীদের উপর নির্ভরশীল। তাদের ন্যায্য অধিকার ও মে দিবস নিয়ে তারুণ্যের অনেক ভাবনা ও প্রত্যাশা রয়েছে। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন তরুণের মতামত তুলে ধরেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফজলে এলাহী ফুয়াদ।

শ্রমিক নীতিমালা যেন শ্রমিকদের পক্ষেই হয় মে দিবস শ্রমিক আন্দোলনের এক বৈপ্লবিক যুগান্তকারী বৈপ্লবিক স্মৃতির স্মারক। মূলত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী আদায়ের নিমিত্তে সংঘটিত হয়েছিল এটি। বর্তমানে করোনা মহামারী কারণে শ্রমিকরা স্বীকার হচ্ছেন নানান বিড়ম্বনায়। প্রতিষ্ঠানের কাজ কম থাকায় শ্রমিক ছাঁটাই, অর্ধেক বেতনে কাজ করাসহ নানান ভোগান্তি। অন্যদিকে, বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যে যা প্রায় নাগালের বাইরে নি¤œমধ্যবিত্তদের। লকডাউনে উপার্জন করতে হিমশিম খাচ্ছেন দিন মজুররা। অধিকাংশই পাচ্ছেন না কোনো কাজ। একরকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের মালিকদের স্বীয় শ্রমিকদের প্রতি আরো সদয় হওয়া উচিত। সঠিক সময়ে বেতনভাতা প্রদানের সাথে অতিরিক্ত কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করা উচিত। এছাড়াও নীতি নির্ধারকের প্রণয়ন করা নিয়মকানুন যাতে অসহায় শ্রমিক ও দিনমজুরদের বিপাকে না ফেলে সেদিকে কঠোর নজরদারি একান্ত কাম্য।

মিজানুর রহমান, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে মর্যাদার সহিত আমরা শ্রমিক দিবস পালন করি। একটি বিষয় আমাদের স্মরণ রাখতেই হবে যে শ্রমিকদের ঘামের উপর এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। ১৮৮৬ সালে ৮ কর্মঘণ্টা কাজ করার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমে শ্রমিকরা রক্তের বিনিময়ে তাঁদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু ২০২১-এ এসেও শ্রমজীবীরা শোষিত, নিগৃহীত ও বঞ্চিত রয়েই গেল। এখনও তাঁদের আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। সঠিক সময়ে দেয়া হয়না পারিশ্রমিক। সময়ের পরিক্রমায় শ্রমিকরা যখনই নিজেদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হয় তখনই তাদের উপর শোষণ-বঞ্চনা বাড়তে থাকে। এইতো কিছুদিন আগে বাঁশখালীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তারই অন্যন্য দৃষ্টান্ত। মে দিবস পালনের স্বার্থকতা তখনই আসবে যখন আমরা শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারবো। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখে মে দিবস পালনের মাঝে কোন স্বার্থকতা নেই।

নুর নওশাদ, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সভ্যতা নির্মাণের কারিগররা বেড়ে উঠুক নিজস্ব গতিতে

শ্রমকে ভিত্তি করে সভ্যতার সূচনা হলেও শুরু থেকে শ্রমিকের মর্যাদা বলে কিছুই ছিল না। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। শ্রমিকদের নাম মাত্র মুজুরী দিয়ে ইচ্ছামত কাজ করাতো মালিকরা। ছিলোনা কোন নির্দিষ্ট কর্ম ঘণ্টা। সেই ঐতিহাসিক পয়লা মে তে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে করা আন্দোলন সেসময় সফল হলেও তার প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘটেনি। অনেক ক্ষেত্রে আজও রয়েছে অসামঞ্জস্যতা। শ্রমিকদের শোষণ করার নীতি যেনো অলিখিতভাবে বিদ্যামান। বাংলাদেশ জেনেভা কনভেনশনের স্বাক্ষরিত একটি দেশ হলেও কিছুক্ষেত্রে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্র। বিভিন্ন সময় শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ধর্মঘট কিংবা আন্দোলন করলে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের মালিক তাদের উপর চড়াও হয়। স¤প্রতি এস.আলম কোম্পানি এবং বাঁশখালীর ঘটনা যেনো তার জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। সভ্যতা নির্মাণের কারিগররা বেড়ে উঠুক নিজস্ব গতিতে। বেঁচে থাকুক নিজেদের স্বপ্ন ও স্বাধীনতা নিয়ে- এই প্রত্যাশা রইলো আজকের মে দিবসে।

ছিদ্দিক ফারুক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *