যেভাবে কাটাবেন বর্ণিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন

যেভাবে কাটাবেন বর্ণিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক- বাংলাদেশের প্রতিটি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থাকে। তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরেও দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী প্রচণ্ড হতাশা আর আবেগ নিয়ে জীবন চালাচ্ছে। সে ভুলেই যায় তাঁর মতো অনেকেই আছে যারা এই সুযোগটি পায়নি। অথচ সে বিশাল একটা সুযোগ পেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নিজেকে মেলে ধরার বিশাল ,বৃহৎ একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শুধু জ্ঞান বিনময় হয়, জ্ঞান তৈরিও হয়। এখানে শিক্ষকরা হলেন সিনিয়র গবেষক আর শিক্ষার্থীরা হলেন জুনিয়র গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা হচ্ছে একটা রেল গাড়ির মতো; স্টেশন থেকে ছাড়লেই শেষ স্টেশনে পৌঁছান যায়। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেইল করে এই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পাশ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অগণিত। প্রথম বর্ষে এসে যারা প্রচণ্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে তাঁদের জন্যেই মূলত এই লেখা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই একে অপরের অপরিচিত থাকে। আস্তে আস্তে একে অপরকে চিনতে শেখে, জানতে শেখে। এমন কোন বন্ধু নির্বাচন করা উচিৎ না, যার সাথে আপনার মতাদর্শ মেলে না, যে ভণ্ড ,মিথ্যুক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যাদের হাজার হাজার বন্ধু থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁদের আসলে একজন বন্ধুও থাকে না; সবাই হায় হ্যালো টাইপ বন্ধু।

আমার মনে হয় এতো এতো ততাকথিত বন্ধু থাকার চেয়ে দু তিনজন খুব কাছের বন্ধু থাকা অতি জরুরী। যারা আপনার বিপদে-আপদে বন্ধুর হাতটি বাড়িয়ে দেবে। তাঁর মানে এই না যে আপনি আপনার ক্লাসমেট, হলের বন্ধু সকলকে এড়িয়ে চলবেন। সবার সাথেই আপনার ভালো সম্পর্ক থাকবে কিন্তু খুব কাছের দু তিনজন বন্ধু থাকবে। প্রথম বর্ষে বন্ধু নির্বাচন না করলে আসলে শেষের দিকে হয়ে ওঠে না। হলেও এতো ঘনিষ্ঠ হয় না। এজন্য এই বিষয়টা মাথায় রাখা জরুরী। মনে রাখতে হবে-

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। আনন্দ করবে, আড্ডা দেবে, মজা করবে কিন্তু মূল লক্ষ্যের বাইরে গিয়ে নয়। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে আসে তাহলে প্রথম বর্ষ থেকেই ডিপার্টমেন্টের প্রতি তাঁকে অনেক বেশি সিরিয়াস থাকতে হবে, যারা এর আগে বিভাগ থেকে প্রথম স্থান কিংবা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে তাঁদের কাছ থেকে জানতে হবে প্রথম হওয়ার উপায়, কিভাবে পড়ালেখা করলে বিভাগে ভালো করা যায় সে উপায়গুলো।

আবার কারো যদি বিসিএস লক্ষ্য হয় তাহলে তাঁকে শুরু থেকে সেভাবেই এগোতে হবে। কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চায় তাহলে তাঁকে সেভাবেই এগোতে হবে। দ্বিতীয় বর্ষে উঠে করব বলে যারা ইচ্ছে পোষণ করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁরা এই ট্র্যাক থেকে অন্য ট্র্যাকে চলে যায়। আর করা হয়ে ওঠে না। কারো যদি ইচ্ছে থাকে সাংবাদিকতা করা, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সাংবাদিকতা করে তাঁদের সান্নিধ্যে গিয়ে পরামর্শ নেয়া উচিৎ কিভাবে শুরু করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই উচিৎ তাঁর আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্দিষ্ট একটা বা দুটো সংগঠন করা। সেটি হতে পারে ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি সংগঠন, কুইজ ক্লাব, আইটি সোসাইটি কিংবা ফিল্ম সোসাইটি। সংগঠন করলে আপনি যেমন সাংগঠনিকভাবে দক্ষ হবেন ঠিক একইভাবে আপনার একটা সার্কেল তৈরি হবে যেটি ব্যক্তিজীবনে আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বিভিন্ন সমস্যায় সেই মানুষগুলোকে আপনি কাছে পাবেন। আপনার যদি ভাষায় আঞ্চলিকতার প্রভাব প্রকটভাবে থাকে তাহলে যেকোন একটা আবৃত্তি সংগঠনে ভর্তি হয়ে উচ্চারণটা ঠিক করে নিতে পারেন। আপনার যদি রাজনীতি করার ইচ্ছে থাকে তাহলে আপনি নিজেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে পারেন। প্রথম বর্ষে এই কাজগুলো না করলে সাধারণত পরবর্তীতে করা হয়ে ওঠে না। আমি অনেককেই দেখেছি যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে কিন্তু এখনও প্রকটভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে, যেটি তাঁকে ব্যক্তিজীবনে অনেক পিছিয়ে দিচ্ছে কিংবা চাকুরী জীবনে।

প্রথম বর্ষ থেকেই একজন শিক্ষার্থীর উচিৎ স্বনির্ভরশীল হতে শেখা। বাবা-মা’র বোঝা না হয়ে তাঁর উচিৎ বিভিন্ন কাজে বাবা-মাকে হেল্প করা; সেটি আর্থিকভাবে হতে পারে কিংবা মানসিকভাবে। এজন্য আয়ের জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় ফিচার লেখা যেতে পারে ,কিংবা কোন পার্ট টাইম কাজ নেওয়া যেতে পারে। আর এসবে যদি আপনার আগ্রহ না থাকে কিংবা সুযোগ না থাকা তাহলে আপনি টিউশন কিংবা কোচিং করাতে পারেন।

এতে করে আপনি নিজে আয়ও করতে পারলেন অপরপক্ষে আপনার কর্মদক্ষতাও বাড়ল। অন্যের কাছে অর্থের জন্য আপনাকে দ্বারস্থও হতে হল না। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক কিংবা বিভিন্ন লিঙ্কের মাধ্যমে আপনি আয়ের উৎস খুঁজে পেতে পারেন।

প্রথম ,দ্বিতীয় বর্ষ হল আনন্দ করার টাইম, ঘুরে বেরানোর টাইম, জীবনটাকে এই সময়ে উপভোগ করতে না পারলে পরবর্তীতে আর পারবেন না, টাকা থাকবে কিন্তু আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকবে না। সেক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা গুলো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে পারেন।

প্রথম বর্ষে কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে আপনার যদি কাউকে ভালো লাগে তাহলে তাঁকে সেই ভালোলাগার কথাটা জানিয়ে দেয়া উচিৎ। তা না হলে মনের পাখি অন্যের ঘরে বাসা বাঁধবে। এমন কাউকে পেলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাই আপনি অনেক মধুর করে কাটাতে পারবেন। এই সময়ে যদি কাউকে সঙ্গী বানাতে না পারেন তাহলে একদম ক্যারিয়ার দাঁড়ানো পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষত্রে তাই ই হয়।

যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শুরুতে এই কাজগুলো করেন নি। তাঁরা এখন চেষ্টা করে দেখতে পারেন, অন্যরকম একটা ফিল পাবেন জীবনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আপনার শুভ হোক ,মধুময় হোক, রোমাঞ্চকর হোক। এই কামনা করি। হ্যাপি ভার্সিটি লাইফ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment