যে অসম্মান টুকু আমাকে করা হয়েছে তা অপমানজনক, অনেক অনেক কষ্টকর

মোহাম্মদ রুবাইয়াৎ রহমানঃ উচ্চ শিক্ষা (পিএইচডি) অর্জনের জন্য ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছি। শিক্ষা ছুটির জন্য আইন বিভাগ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট আয়কর বিভাগ কে অবহিত করেছি ও অনুমতি নিয়েছি। অত:পর নথি সম্মূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড সেকশন অফিসে নথিবদ্ধ করা হয় যার নম্বর সম্মূহ :


BSMRSTU/R/PA/6428/339
BSMRSTU/R/PA/6428/338(7)
BSMRSTU/R/PA/6428/337(7)


অপরদিকে, ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল আমার প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশন হয় এবং আমি ২২ এপ্রিল তারিখে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করি।

এর পর যা ঘটেছে তা কি দুর্ভাগ্য, নিয়তি নাকি দুর্ঘটনা – জানি না।

শিক্ষা ছুটি পাবার এক বছর তিন মাস পর, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে আমার শিক্ষা ছুটিতে প্রাপ্য বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনের কাছে যোগাযোগ করা হলে জানতে পারি,

১. আইন বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমার বেতন বন্ধ করা হয়েছে।
২ আমার সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান নিয়ে সন্ধিহান প্রকাশ করা হয়েছে।

আমার একথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ, ভীষণ !!

আইন বিভাগ ছাড়াও আমি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , মার্কেটিং বিভাগে পড়িয়েছি; কৃষি, বিজিই ও অন্যান্য বিভাগে ইনভিজিলেশন দায়িত্ব পালন করেছি । আমি জানি না, তাদেরও আমার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আছে কি না। থাকলে আমি দুঃখিত।

এই ওয়েবসাইট এ আমার শিক্ষা ছুটি ও নিয়োগ পত্র আপলোড করে আমি নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত।
কিন্তু কি-ই বা করার আমার আছে ! বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক কতটুকু বিব্রত, হয়রান ও কোনঠাসা হলে এভাবে অন্তর্জালে (ইন্টারনেট) তা প্রকাশ করে ?

আমিতো আইন মেনে সবই করার চেষ্টা করেছি। তারপরও, যে শিক্ষক উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথে রয়েছে ; উচ্চ শিক্ষা শেষে যার জ্ঞানের আলোক বর্তিকা বিতরণে সামিল হবার প্রবল স্পৃহা রয়েছে , তাকে কেন এভাবে হয়রানি করা হবে ! ? কেনো তার সম্পর্কে ধোঁয়াশা তৈরী করা হবে !?

আমি কেমন শিক্ষক হতে চাই ; শিক্ষকতার সাথে আমার উচ্চ শিক্ষার প্ৰয়োজনীয়তা কতটুকু – তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক সময় আশাপূর্ণা দেবী’র কিছু কথা উল্লেখ করি।

আশাপূর্ণা দেবী তাঁর একটি উপন্যাসে (‘প্রথম প্রতিশ্রূতি ‘) উল্লেখ করেছিলেন যে, কথাশিল্পীকে এমন ‘কথা’ নিয়েই লিখতে হবে যাকে বর্তমানকালই নগদ বিদায় দিয়ে চুকিয়ে দেবে না, পরবর্তীকালও যার দেনা শোধ করবে।

এখানে, রূপক অর্থে ধরে নিই , আমরা শিক্ষকরাও এক রকম মাধ্যম, যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের দিক দেখিয়ে দিবো ; চিন্তা করতে ও মানবিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করবো; তাদের মাঝে মানুষ হবার ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার অন্তত এই টুকুন স্পৃহা জাগিয়ে তুলবো, যেন সে নিজে থেকে ‘স্বার্থপর সুখ’ আর সম্মানের মাঝে পার্থক্য করতে শিখে অনুধাবন করে – – “সুখের বদলে সম্মান বিকাইয়া দেওয়া যায় না। সুখ বিদায় হোক — সম্মান থাক জীবনে।”

একারণেই আমার কাছে শিক্ষকতা, উচ্চ শিক্ষা আর সম্মান – এর মূল্য এত্তো বেশি। একারণেই, আমি আমার শিক্ষার্থীদের বারবার বলি , খুব বেশি কিছু হতে হবে না, মানুষ হলেই হবে।

আইন ও অন্যান্য বিভাগে ক্লাশ নিয়ে আমি ছুটে গেছি লাইব্রেরি, কনফারেন্স রুম কিংবা আইন অফিসে। ক্লাসে পড়াকে কিভাবে বোধগম্য করে তোলা যায় তার জন্য বই-জার্নাল পড়ায় সময় দিয়েছি। একারণে ক্লাশের বাইরে কারো সাথে খুব একটা কথা হতো না। আমি অস্বীকার করবো না, এতো কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আমাকে অসাধারন সাহায্য করেছে।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে আমার শিক্ষা ছুটিতে প্রাপ্য বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আমার শিক্ষক সত্তা এ কারণে মারা যাবে না।

কিন্তু যে অসম্মান টুকু আমাকে করা হয়েছে তা অনেক ভারী ; অপমানজনক ; অনেক অনেক কষ্টকর।

মোহাম্মদ রুবাইয়াৎ রহমান,
সহকারী অধ্যাপক (শিক্ষা ছুটি ),
আইন বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *