দ্যা ক্যাম্পাস টুডেঃ বরখাস্ত করা হলো রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. ইসমত আরাকে। পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্তি ও জাল সনদে চাকরির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
তার জাল সনদে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়। বিষয়টি তদন্তে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যালয়েটি ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্যের অভিযোগ, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ইসমত আরা।
দীর্ঘদিন এমপিওভুক্তির চেষ্টা করলেও তার নিয়োগের কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে তাকে এমপিও দেয়া হয়নি। কিন্তু জোর তদবিরের কারণে চলতি বছরের মার্চে মোসা. ইসমত আরাকে নিজ পদের একধাপ নিচে সহকারী প্রধান শিক্ষকের স্কেলে এমপিও দেয়া হয়।
বিষয়টি স্কুলে জানাজানি হলে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. আরমান আলী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও আঞ্চলিক উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘণ ও জাল সনদে মোসা. ইসমত আরাকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তার এমপিওভুক্তি হয়েছে।
এরপরই স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি ইসমত আরাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কমিটির সদস্যরা বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপসহ আরও ১০টি অভিযোগের জবাব চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
প্রধান শিক্ষক হতে হলে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াও সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যুনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা দরকার। কিন্তু মোসা: ইসমত আরা ২০০৩ খ্র্রিষ্টাব্দে সরাসরি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে গোদাগাড়ীর উত্তরা বালিকা বিদ্যালয়ে যোগ দেন।
এসময় ইসমত আরার শিক্ষকতার কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না। তখন তার কোন বিএড ডিগ্রিও ছিল না। তারপরও তার এমপিও হয়, যার ইনডেক্স নম্বর-১০০৩২৮২।
এদিকে, ইসমত আরা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি মাটিকাটা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তবে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে বাতিল হওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএডের একটি সনদের অনুলিপি সংযুক্ত করেন। কয়েকবার তার এমপিওভুক্তির আবেদনও প্রত্যাখাত হয়।
এদিকে গত মার্চে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালকের দপ্তর মোসা. ইসমত আরাকে এমপিওভুক্ত করেছেন। যার ইনডেক্স নম্বর আর-১০০৩৮২।
ইসমত আরার ব্যক্তিগত ফাইল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে যখন তিনি উত্তরা বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তখন এই ডিগ্রি তিনি দেখাননি।
মাটিকাটা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির সময় তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১ এপ্রিল ইস্যু করা একটি সনদের অনুলিপি যুক্ত করেন।
রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাসির উদ্দিন জানান, সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি তিনি তদন্ত করা হচ্ছে। ইসমত আরার নিয়োগের বৈধতা ও তার সনদসমূহ যাচাই করে দেখা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।