রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ নিয়োগের বৈধতা চেয়ে রাতভর অবস্থান কর্মসূচি

রাবি প্রতিনিধি: শিক্ষামন্ত্রণলয় থেকে অবৈধ ঘোষণার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৭ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর স্ব পদে যোগদান স্থগিত করে নোটিশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এঘটনার পর স্ব পদে যোগদানের দাবিতে একের পর এক আন্দোলন করছেন অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা। তাদের এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে আজ বুধবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টানা ২৩ ঘণ্টা কর্মসূচি চালিয়ে যায় তারা।

আন্দোলনকারীরা পদায়নের দাবিতে উপাচার্য বাসভবনের সামনে রাতভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে আন্দোলনকারীর তোপের মুখে দ্বিতীয় বারেরমত সিন্ডিকেট স্থগিত করেন বিশ^বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘স্ব পদে যোগদান না করা পর্যন্ত তারা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’

এর আগে গতকাল বিকেল ৬টায় সিন্ডিকেট সভা ঠেকাতে নিয়োগপ্রাপ্তরা উপাচার্য ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেয়। ফলে বাধার মুখে রাত সাড়ে আটটার দিকে রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা সাংবাদিকদের সামনে সিন্ডিকেট সভা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। পরে নিয়োগপ্রাপ্তরা সেখান থেকে উঠে যান। আবার রাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেখানে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। রাত ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য ভবনের সামনে প্যারিস রোডে বিছানা পেতে অবস্থান করছেন। সেখানে কেউ বসে আবার কেউ শুয়ে আছেন। প্রায় ৪০ জন আন্দোলনকারী সেখানে অবস্থান করছেন।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমাদের যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাগাতার আবস্থান কর্মসূচী করব। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয় এজন্য আমরা প্রশাসন ভবনের সামনে না থেকে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান করছি।’

এদিকে গত সোমবার দুপুরে স্থানীয় সাংসদ আয়েন উদ্দিন ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তিন ঘণ্টাব্যপী নিয়োগপ্রাপ্তদের আলোচনাসভা হয়। সভা শেষে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একাডেমিক কাজে তারা বাধা প্রদান করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।

ফলে অবস্থান কর্মসূচিতে ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আরেক অংশ সামিল হয় নি। আন্দোলন নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘গত সোমবারের সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় নেতারা তিন দিনের সময় নিয়েছেন। আমরা একটি অংশ তাই এই আন্দোলনের সঙ্গে নেই। আমরা কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা রাখছি এখনও।’

এ বিষয়ে আতিকুর রহমান সুমন বলেন, আমরাও আমাদের নেতৃবৃন্দের উপর আশ্বাস রাখছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আমাদের নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন করছে। এটা আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমাদের আন্দোলন সকলকে নিয়ে। এতে দ্বিমত নেই। এখন কেউ যদি আন্দোলন না করে সেটা তাদের ব্যাপার। তাদের ব্যক্তিগত বা অন্যান্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে।’

নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বলেন, নিয়োগপ্রাপ্তরা যে দাবি করেছেন, তা পূরণ করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকার জড়িত।

আন্দোলনকারীরা সকালে জানিয়েছেন, রাতভর তাঁরা এখানে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে রাতভর এখানে একটু পরপর প্রক্টর এসে দেখা করে গেছেন। এ ছাড়া পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাঁরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করেননি। স্ব পদে যোগদান না করা পর্যন্ত তারা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে আবদুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসে (৬ মে) ১৩৭ জনকে অ্যাডহকে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিয়ে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিন এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে সেদিনই বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মন্ত্রণাণলয়ের তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

শেষ অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। আবদুস সোবহানের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন।

Scroll to Top