রাবি ভিসির দেয়া ১৪১ নিয়োগে বৈধতার সুযোগ নেই- শিক্ষামন্ত্রণালয়: তদন্ত কমিটি

রাবি প্রতিনিধি: শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ দিনে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন।

অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে এই
নিয়োগ দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

এরপরই বিকেলে শিক্ষামন্ত্রণালয় এই নিয়োগ বৈধ নয় উল্লেখ করে নিয়োগে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামিমা বেগম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়। তাতে বলা হয়, উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় প্রশাসনিক নিয়োগ দানে তাকে নিষেধ করা হয়।

এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিদায় বেলায় উপাচার্য বিভিন্ন পদে অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগদানের বৈধতা নেই। বিষয়টি তদন্তে ৪ সদস্যের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও ড. মো. জাকির হোসেন আখন্দকে কমিটির সদস্য এবং ইউজিসির পরিচালক মো. জামিনুর রহমানকে সদস্য- সচিব করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে নিয়োগে জড়িতদের চিহ্নিত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান বিদায় বেলায় বিভিন্ন পদে অস্থায়ী (এডহক) ভিত্তিতে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানানোয় রেজিস্ট্রার আবদুস সালামকে অব্যাহতি দেন উপাচার্য।

তার স্থলে পরিষদ সেকশনের সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন-উর-রশিদকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দায়িত্ব দিয়ে এই নিয়োগ সম্পন্ন করেন। বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মামুন-উর-রশিদ স্বাক্ষরে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন সেকশন অফিসার, ২৪ সহায়ক কর্মচারী এবং ৮৫ জন উচ্চ ও নিম্ন সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিয়োগের বিষয়ে জানতে একাধিক বার মামুন-উর-রশিদকে ফোন করে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে নিয়োগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাকরি প্রত্যাশী মহানগর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রিড়াবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান চঞ্চল, হবিবুর হলের সেকশন অফিসার আবদুল্লাহ আল মাসুদসহ আরও অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পরে দুপুর সোয়া ২টায় পুলিশি নিরাপত্তায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান উপাচার্য ভবন ত্যাগ করেন এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। এর আগে উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে উপস্থিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে উপাচার্য ভবনে চাকুরি প্রত্যাশীরা প্রবেশ করে নিয়োগপত্র সংগ্রহ করে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন, আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাকে নানা ভাবে অনৈতিক চাপ প্রদান করা হয়েছিল। তাই আমি গত দুই দিন ধরে আত্মগোপনে আছি।

ক্যাম্পাস ত্যাগ করা আগ মুহূর্তে রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি ও নিয়োগ প্রসঙ্গে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান বলেন, রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়নি, এটা মিথ্যা কথা। এডহকে নিয়োগের বিষয়টি আপনারা পরে জানতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান এম আব্দুস সোবহান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যোগ্যতা শিথিল করে
মেয়ে-জামাতাকে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

গত বছর ইউজিসির তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায়
শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরণের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। তবে শেষ দিনে সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেলেন উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *