রাম স্যাম ছদু মদু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

রাম স্যাম ছদু মদু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

কামরুল হাসান মামুন


Mutation বা পরিবর্তন হলো সকল ক্ষেত্রে উন্নতির চাবিকাঠি। পৃথিবীর সকল প্রাণী এই mutation-এর মাধ্যমে adaptability বা অভিযোজনযোগ্যতা অর্জন করে। এমনকি man-made টেকনোলোজিতেও mutation লাগে। টিকে থাকতে হলে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন ভার্সন বের করতে হয়। যারা পারে না তারা টিকতে পারে না।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা এখানেই। সেই ১৯২১ সালে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশনের যেইসব নিয়মকানুন ছিল মোটাদাগে এখনো প্রায় একইরকম। কিন্তু এরমধ্যে বুড়িগঙ্গা দিয়ে অযুত লক্ষ নিযুত কোটি কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়ে এটি নর্দমাতে পরিণত হয়েছে। পরিবর্তন যেটুকু হয়েছে সেটা হয়েছে খারাপের দিকেই বেশি।

আমাদের পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নের প্যাটার্ন সেই ১৯২১ সালে যেমন ছিল মোটাদাগে এখনো প্রায় একইরকম। যেমন ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৫টি। প্রশ্নগুলো হবে গৎবাঁধা এক দুই লাইনের কিন্তু উত্তর হবে রচনামূলক। যারজন্য ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন ব্যাংক খুঁজে। প্রশ্নগুলো এমন হয় যে ছাত্রছাত্রীরা যদি দুইএকটা চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে পড়েও পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। প্রব্লেম সলভিং প্রায় থাকে না বললেই চলে।

তখনো কেবল মাস্টার্স ডিগ্রী দিয়ে অধ্যাপক হওয়া যেত এবং এখনো যায়। পার্থক্য হলো এখন আরো সহজ হয়েছে। অধ্যাপক সত্যেন বোসের মত পন্ডিত মানুষকেও পিএইচডি ছাড়া অধ্যাপক হতে বেগ পেতে হয়েছে। তাকে আইনস্টাইনের মত বিজ্ঞানীর রেকমেন্ডশন আনতে হয়েছে। আর এখন রাম স্যাম ছদু মদু যেকেউ পিএইচডি ছাড়া অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছে।

ধরুন কেউ উচ্চ লাফে অলিম্পিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার ট্রেনিং কালে উচ্চ লম্ফের দড়ি কি আস্তে আস্তে নিচে নামাবে? নাকি আস্তে আস্তে উপরে উঠিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে? যদি নিচে নামায় তার কোন উন্নতি হবে না। ঠিক একইভাবে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিতে আমরা কেবল যতটুকু পরিবর্তন এনেছি সেটা উচ্চ লম্ফে দড়ি নিচে নামানোর মত।

অথচ গত ১০০ বছরে বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রমোশন নীতিমালা থেকে শুরু করে পরীক্ষায় প্রশ্নের প্যাটার্নে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আমরা ওসব গ্রহণ করিনি। তাহলে কিভাবে আমরা রেঙ্কিং-এ ভালো করব? যারা রেঙ্কিং করে তারা কি বলদ যে আমরা আমাদের তথ্য দেইনা বলে তারা আমাদের তথ্য পাবে না? Scopus ডাটা base-এ সব আছে। হ্যা নাই কি? নাই হলো দেশি গার্বেজ জার্নালগুলো। এইগুলোতে প্রকাশ করে যদি বলি ওদের কাছে তথ্য নাই তাহলে এর কিছু বলার নাই।

আমাদের একটা সমস্যা হলো আমরা ভালোর দিকে পরিবর্তন আনতে জানিনা। আমাদের ৭৩-এর একটি অধ্যাদেশ আছে। সেটিকে আমরা রিলিজিয়াস বইয়ের মত treat করি। Come on! এই অধ্যাদের স্পিরিট ঠিক রেখে এর পরিবর্তন আনতে বাধা কোথায়? আমরাতো এখন বুঝতে পারছি। বঙ্গবন্ধু যেই বিশ্বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গণতন্ত্র দিয়েছিলেন আমরা তার সেই বিশ্বাসের সম্মান রাখতে পারিনি।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বাচনকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছি। এমন একটা পরিবেশ তৈরী করেছি যে এখানে এখন সব কিছুই আবর্তিত হয় নির্বাচনকে ঘিরে। নির্বাচনকে ঘিরে দলান্ধতা বেড়েছে। সহকর্মীদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শিক্ষক নিয়োগ এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যেন এটি আসলে ভোটার নিয়োগ হয়ে গেছে। এইসব থেকে মুক্তি না হলে উচ্চ শিক্ষার মান কোনদিন ভালো হবে না।

ফেসবুক থেকে…

লেখক
কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment