রোদেলার মেঘলা আকাশ

ধর্ষক হওয়ার পথ খোলা রেখে ধর্ষণ বন্ধের জন্য মায়াকান্না
এক.
বিয়ের কার্ডটি হাতে নিয়ে আনমনে কি সব ভাবছিল রোদেলা৷ আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরই আবীরের সাথে তার বিয়ে৷ পাঁচ বছরের পরিচয়, তিন বছরের প্রেম … তারপর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন পরিণতির অপেক্ষায়৷
ব্যস্ততা, টেনশন বা অজানা কোন কারনে গত কয়েকমাস ধরেই রোদেলার ওজন কমছে৷ আবীর দুষ্টুমী করে বলে – “আমার মোটা বউতে সমস্যা নেই, তুমি please খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে এই বিশ্বসুন্দরী হবার প্রজেক্ট বন্ধ কর৷” রোদেলা মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “তোমার মত হ্যান্ডসাম আর সুন্দর পুরুষের পাশে আমাকে একটু মানানসই হতে দাও৷”
রোদেলার ওজন কমতে থাকাটা সবাই খুব positively নিয়েছিল, এমনকি ওর বান্ধবীরাও জানতে চাইত, কি diet chart ফলো করছিস … বা কোন Gym এ যাচ্ছিস?
তবে ওজন কমার পাশাপাশি রোদেলার খুব দুর্বল লাগে, কেমন অবসন্ন বোধ হয়৷ মাঝে মধ্যে কাজের মাঝেই Desk এ মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে৷ ওর কলিগ সোহানা বলে, “আপু, আপনিতো খুব Tired …. কাল সারারাত ভাইয়ার সাথে কথা বলেছেন বুঝি!?” রোদেলা বলে, “আরে না … এখন খালি খালি system loss করব কেন, দুদিন পরই তো ….”৷ মুখের কথা শেষ করতে না দিয়েই সোহানা বলে, “তাহলে বুঝেছি আপু, ডায়েটিং টা আপনার খুব বেশী হয়ে যাচ্ছে৷” এক্ষুনি আমার সাথে চলুন … এই বলে একরকম জোর করেই রোদেলাকে ক্যান্টিনে নিয়ে যায়৷ দুজনে জুস, পুডিং আর চীজ বার্গার খায়৷
ঘন্টা দুয়েক পর রোদেলার আরও খারাপ লাগতে থাকে৷ ঘুম পায়, চোখের দৃষ্টিও মাঝে মধ্যে ঝাপসা লাগে, চোখ কচলে নেয় সে, ভাবে ঘুমের জন্যই এই ঝাপসা লাগা!
দুই.
আজ চরম ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আবীর৷ ফরেন ডেলিগেটরা এসেছে৷ তাদের সাথে দফায় দফায় মিটিং, প্রেজেন্টেশন৷ একটা বড় পারচেজ অফার ঝুলে আছে তাদের motivate এবং satisfy করার উপর৷ আর আধা ঘন্টা পর final presentation …. সবকিছু শেষবারের মত check করতে ব্যস্ত আবীর৷ এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল …
– হ্যাঁ সোনামনি বল৷
– Sorry ভাইয়া, আমি সোহানা … আপুর কলিগ৷
– কি ব্যাপার সোহানা, কি হয়েছে? রোদেলা কোথায়?
– ভাইয়া, আপু একটু অসুস্থ৷
– মানে? কি হয়েছে ওর?
– ঠিক বুঝতে পারছিনা, খুব Tired, দুবার ঘুমিয়ে পড়েছিল৷ আপনি কি আজ এসে আপুকে নিয়ে যেতে পারবেন, ভাইয়া?
– একথা তো রোদেলাও বলতে পারত, তুমি ফোন করেছ কেন?
– ভাইয়া, আপু ঘুমিয়ে পড়েছে…. আর আজ আপনি ব্যস্ত বলে আপু কিছুতেই আপনাকে ফোন দিতে চাচ্ছিল না৷ কিন্ত বিশ্বাস করেন ভাইয়া, আমার মন বলছে আপুকে কোনভাবেই একলা বাসায় যেতে দেয়া ঠিক হবেনা৷
– Sorry সোহানা, Meeting শেষ না করে কোন অবস্থাতেই এখন আসা আমার পক্ষে সম্ভব না৷ তুমি যদি kindly ওকে আমার office পর্যন্ত পৌঁছে দাও, তাহলে খুব উপকার হয়৷
– ঠিক আছে ভাইয়া, আমি আপুকে নিয়ে আসব৷
– Ok bye সোহানা৷
মিটিং শেষ৷ আবীরের presentation এ সবাই impressed. তাড়াতাড়ি waiting room এ যায় আবীর৷ রোদেলাকে দেখে বুকটা ওর কেমন করে ওঠে৷ কেমন রুক্ষ্ণ-শুষ্ক লাগছে রোদেলাকে! “কি হয়েছে রোদেলা?” আবীরের কন্ঠে ব্যাকুলতা … “আমাকে কিছু লুকিয়ো না৷”
কিছু হয়নি আবীর, শুধু খুব দুর্বল লাগছে… পানি পিপাসা লাগছে… আর বারবার টয়লেটে যেতে হচ্ছে৷
এবার please তোমার ডায়েটিং টা বন্ধ করো… ডায়েটিং করার জন্য সারা জীবন পড়ে আছে৷ এখন বিয়ের আগে আর অসুস্থ হয়ে পড়োনা …. প্লিজ রোদেলা প্লিজ!
একটা সত্যি কথা বলবো আবীর … বলো রাগ করবেনা? আমি ডায়েটিং করছিনা আবীর …. আর, করিও নি কখনও৷
– হ্যালো রাশেদ ভাই?
– হ্যা আবীর বলো৷
– রাশেদ ভাই, please এই মুহূর্তে রোদেলাদের বাসায় আসেন, আর আপনার ডাক্তারী জিনিষপত্র সব নিয়ে আসবেন৷
তিন.
রোদেলার Test Report গুলো পেয়ে সারা শরীর কেমন অবশ হয়ে আসছিল আবীরের৷ রোদেলার রক্তের সুগার এসেছে অনেক বেশী৷ খালি পেটে ২৫.৩ আর গ্লুকোজ খাবার পর ৩২.৮৷ অন্য Report গুলি না দেখে আরও কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিল আবীর৷
এরপর রাশেদ ভাই এর সাথে কথা বলে, রোদেলাকে ফোন করল৷
– রোদেলা, এখন কেমন আছ?
– মিষ্টি হেসে রোদেলা বলল, এইতো ভালো৷ কিন্ত তোমার মুড অফ মনে হচ্ছে?
– ওটা কিছুনা Dear, একটু রেডী হয়ে থাকোতো, আমি আসছি৷
একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের চেম্বারের বাইরে অপেক্ষা করছে আবীর-রোদেলা৷ কারও মুখেই কোন কথা নেই … শুধু দুজনের দুটি হাত পরম নির্ভরতায় আঁকড়ে ধরা৷
নিঃশব্দ আবেগের ক্ষমতা যে কতটা তীব্র…. তা এই প্রথম উপলব্ধি করল আবীর!
ডাক্তার সাহেব Report গুলো দেখে বললেন, আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে এবং এটা ধরা পড়েছে অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় পৌঁছানোর পর৷ এছাড়া রক্তের কোলেষ্টেরল বেশি আর হার্টেও কিছুটা সমস্যা আছে৷ But don’t worry, You will be fine soon. তবে আপনাকে কয়েকদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে৷
– হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তো এই মুহূর্তে সম্ভব নয় ডাক্তার সাহেব, মাত্র ১২ দিন পর আমাদের বিয়ে৷ আপনি বরং ঔষধ prescribe করে দিন please.
– দেখুন, আপনার যেই বয়স আর যেই stage এ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে … তাতে আপনার চিকিৎসা শুরু করতে হবে ইনসুলিন দিয়ে৷ হাসপাতালে সুগার মনিটরিং এর মাধ্যমে, দ্রুততম সময়ে ইনসুলিনের dose fixed করে … আমরা আপনাকে ছুটি দিয়ে দেব৷ কিভাবে নিজে ইনসুলিন নিতে হয়, কিভাবে রক্তের সুগার পরীক্ষা করতে হয়, খাবার নিয়ম কানুন, নিজের যত্ন এবং পায়ের যত্ন কিভাবে নিতে হয় …. এইসব অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন আপনাকে শিখে নিতে হবে৷These are much more important. বিয়ে বরং এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিন৷
চার.
বাসায় ফিরে আবীরকে ড্রইংরুমে বসিয়ে রেখেই রোদেলা ওর ঘরের বিছানায় আছড়ে পড়ল৷ বুকের ভেতরটা হু হু করছে, কি যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে …. আর অশ্রু যেন বাঁধভাঙা জোয়ারের মত বইছে৷
বিদ্রোহী মন খালি চিৎকার করে বলছে, “কেন? কেন?? কেন??? কি পাপ করেছি আমি? আল্লাহ কেন আমাকে এত অল্প বয়সে এত বড় শাস্তি দিলেন? কেন সারাটা জীবন দোযখের আগুনের মত এই ডায়াবেটিসে পুড়ে চলা? এতই যখন শাস্তি দেবার ইচ্ছে তোমার …. তাহলে একটা এক্সিডেন্টে সব কিছু শেষ করে দিলেই তো পারতে!”
হটাৎ মাথায় মায়ের কোমল স্পর্শে নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করে রোদেলা৷
আবীরের কাছে সব শুনলাম মা৷ কেন এতটা ভেঙ্গে পড়ছিস? তোর মামাকে ফোন দিয়েছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে৷ ওর ডায়াবেটিস তো ১২ বছরের ও বেশী, দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ওর৷ যা বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে আয়৷ আমি নাস্তা দিয়েছি৷
পাঁচ.
“Congratulations ভাগ্নি, for joining our Diabetes club” – মামার কথা আর অঙ্গভঙ্গির মধ্যে এমন কিছু ছিল যে রোদেলা না হেসে পারেনা৷
ছোটবেলা থেকেই মামাকে এরকমই দেখে আসছে৷ যতই গুমোট পরিস্থিতি, অস্বস্তি, দুঃখ-বেদনা থাকুক না কেন… মামার উপস্থিতি দমকা হাওয়ার মতই সেগুলোকে সাময়িকভাবে হলেও উড়িয়ে নিয়ে যায়৷
Thanks মামা, কিন্ত আমি আপনার Diabetes club এর মেম্বার হয়ে মোটেও গর্বিত না৷ আমার গ্রেট মামা প্লিজ, আমার এই মেম্বারশীপ টা বাতিল করার ব্যবস্থা কর৷
আহারে ভাগ্নি, এখানেই তো আমাদের Diabetes club এর মাহাত্ম৷ এখানকার প্রতিটি মেম্বারই Life member. আর ক্লাবের discipline এবং নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে না চললে, এখানকার সদস্যদের অন্য কিছু বিখ্যাত ক্লাব এরও সদস্য করে দেয়া হয়… এই যেমন, হার্ট এটাক ক্লাব, Stroke ক্লাব, অন্ধত্ব ক্লাব, কিডনি বিকল ক্লাব, নার্ভ নষ্ট ক্লাব …. হাঃ হাঃ হাঃ৷
মামা থামোতো, তোমার এসব রসিকতা enjoy করার মত মুড এখন আমার নেই৷
ওকে ভাগ্নি, এবার সিরিয়াসলি বলছি – “ডায়াবেটিস এমন এক অভিশাপ যেটাকে চাইলে তুই তোর জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ বানাতে পারিস৷”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোদেলা৷ আমার মত হতভাগাদের জীবনে অভিশাপকেই আশীর্বাদ হিসেবে বরণ করতে হয়৷
এই দেখো … না বুঝেই … আবার দুঃখবিলাস শুরু হয়ে গেছে৷ আরে বাবা, চিকিৎসা করে তোর রক্তের সুগার তো কয়েকদিনেই নরমাল হয়ে যাবে৷ কিন্ত এরপর তোর হার্ট, কিডনী, লিভার ইত্যাদিকে এমন মনিটরিং এ রাখা হবে… যেন কোন রোগের উঁকিঝুকি দেখা মাত্রই সেটাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যায়৷ ডায়াবেটিস না হলে কি তুই দশ বছরেও এগুলো চেক করতি? এছাড়া disciplined diet, regular exercise তো আছেই… যা তোকে স্লিম, সুন্দরী আর রোগমুক্ত রাখবে৷
অনেকক্ষন পর আবীর মুখ খুলল, “মামা, রোদেলাকে ডাক্তার immediately হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন৷ ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে এবং আরও কি কি সব important ব্যাপার স্যাপার আছে৷ কিন্ত ও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাচ্ছেনা, আপনি একটু বোঝান৷”
শুরুতেই ইনসুলিন! বলিস কি? এত কম বয়সে ইনসুলিন শুরু করতে চাচ্ছে, কেমন ডাক্তার সে? ইনসুলিন একবার শুরু করলে তো সারাজীবন নিয়ে যেতে হবে… তখন আর ঔষধ কাজ করবে না৷
আমাকেও তো গত তিন চার বছর থেকেই ইনসুলিন দিতে চায় ডাক্তার৷ কিন্ত আমি ঠিকই ট্যাবলেট বাড়িয়ে বাড়িয়ে আর ব্যায়াম করে চালিয়ে নিচ্ছি৷ লোকে বলে না, পুরোনো ডায়াবেটিস রোগী… ডায়াবেটিসের বড় ডাক্তার হয়ে যায়! হাঃ হাঃ হাঃ ….
রোদেলার মুখে কিছুটা আলোর দ্যুতি খেলে গেল, “সত্যি বলছ মামা, ইনসুলিন নেয়া লাগবেনা?”
মামাকে এবার কিছুটা confused মনে হয়, উমম… এক কাজ কর, আমি তোকে আরেকজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই … উনি ইনসুলিন ছাড়াই তোর চিকিৎসা করতে পারবেন৷ মামা সাথে সাথেই ডাক্তারের চেম্বারে ফোন করে Appointment নিয়ে নিলেন… আজ রাত ৮ টায়৷
ঠিক হলো, একবারে ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েই বের হবে সবাই৷ আবীর এবং মামা ৭ টার মধ্যেই আসবে৷
ছয়.
“আবীর, তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে” – মায়ের কঠিন কন্ঠ আবীরকে কিছুটা বিচলিত করে তোলে৷ ও তখন রোদেলাদের বাসায় যাবার জন্য রেডী হচ্ছিল৷
– বল মা, শুনছি৷
– রোদেলাকে আমাদের বাড়ীর বউ করার ব্যাপারে আমার মত নেই৷
– কি বলছ মা? এই সময়ে এসে? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
– শোন আবীর, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ কর৷ আমার বা তোমার বাবা, কারও বংশেই ডায়াবেটিস নেই৷ এখন একজন ডায়াবেটিস রোগীকে বিয়ে করে, তুমি এবং তোমার বংশধরেরা suffer করবে…. এটা কোন অবস্থাতেই মা হিসেবে আমি চাইনা৷
– তুমি ভুল করছ মা, ডায়াবেটিস কোন ছোঁয়াচে রোগ নয় যে, রোদেলা থেকে আমার হবে৷ আর বংশগত ভাবে ছড়াবে কিনা সেটাও নির্ভর করে ভাগ্যের উপর৷ রোদেলাই এগুলো নিয়ে আগে ভেবেছে এবং ডাক্তারকে ঠিক এই প্রশ্নগুলোই করেছে৷
– আমি দরজাটাকে আগেই বন্ধ করে দিতে চাই যেন দূর্ভাগ্য ঢুকতে না পারে৷
– মা, মানবিকভাবে ব্যাপারটা বিবেচনা কর৷ রোগব্যাধির উপর তো কারও হাত নেই৷ আর যদি আমাদের বিয়ের পর ওর ডায়াবেটিস ধরা পড়ত, তখন কি করতে? ওকে ডিভোর্স দিতে বলতে?
– আবীর, we should honor our good luck. ভাগ্য যখন সংশোধনের সুযোগ করে দেয়, তখন সেটাকে উপেক্ষা করলে সারাজীবন ভুগতে হয়৷ তুমি মনে কোরনা, এত বড় একটা ব্যাপার সবদিক বিবেচনা না করেই আমি তোমাকে বলছি৷ You better start thinking logically and take the correct decision.
সাত.
আবার ঘড়ি দেখল রোদেলা, সোয়া সাতটা৷ আবীরের খবর নেই, মোবাইলটাও বন্ধ৷ সবকিছু গোছগাছ হয়ে গেছে, মামাও চলে এসেছেন সময়মত৷ হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে আবীর …. নিজেকে বোঝায় রোদেলা … যেকোন সময় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকবে৷
সাড়ে সাতটায় আবীর এল৷ হন্তদন্ত হয়ে নয়, এল ধীরস্থির এবং বিমর্ষভাবে৷ একদম বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে ওকে৷
Sorry রোদেলা, দেরী হয়ে গেল… চলো বের হই৷
গাড়ীতে অস্বস্তিকর নিরবতা ভাঙলেন রোদেলার মা৷
– তোমার business deal টার খবর কি?
– জ্বি আন্টি, খবর পেয়েছি ওরা আমাদের offer accept করেছে৷
– তাহলে তো তোমার জন্য অত্যন্ত ভাল খবর… Congratulations!
– Thank You আন্টি৷ কিন্ত good luck কখনও কখনও মানুষকে কঠিনতম কষ্টের সামনে দাঁড় করাতে চেষ্টা করে৷
– মানে? বুঝলাম না৷
– থাক আন্টি, পরে ওসব বলব৷
মামার ডাক্তার সাহেব বেশ বয়স্ক৷ কথাও কম বলেন৷ উনি আগের ডাক্তারের prescription টা দেখলেন… তারপর অবজ্ঞা ভরে রোদেলার দিকে ছুঁড়ে দিলেন৷ তারপর কিছু ঔষধ আর টেষ্ট লিখে দিয়ে এক সপ্তাহ পর আবার যেতে বললেন৷
রোদেলার মনটা ভাল হয়ে গেল৷ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগলোনা … এখন নিশ্চিন্তে বিয়ের প্রস্ততি নেয়া যাবে৷
নয়.
আকাশে আজ খুব সুন্দর চাঁদ৷ রোদেলার সবচেয়ে প্রিয় হল সমুদ্র, চাঁদ আর ঠান্ডা ঝিরঝিরে বাতাস৷ ওর খাটটিকে জানালার পাশে এমনভাবে সেট করেছে যেন জানালা দিয়ে পুরো আকাশ দেখা যায়৷
প্রকৃতি যেন আজ শুধু রোদেলার জন্যই নিজেকে সাজিয়েছে৷ পূর্ণিমা চাঁদ, প্রাণ পাগল করা মিষ্টি বাতাস আর খোলা জানালা দিয়ে আসতে থাকা ফুলের মিষ্টি সুবাস৷
পাশে পড়ে থাকা বিয়ের কার্ডটা আরেকবার হাতে নিল রোদেলা৷ আবার সেই স্মৃতির ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া …. বিয়ের কার্ড কিছুতেই পছন্দ হচ্ছিল না রোদেলার৷ সব লাল আর গোল্ডেন কার্ডের ভীড়ে, ওর স্বপ্নের নীল রংয়ের পছন্দসই কার্ড কিছুতেই মেলাতে পারছিল না৷ আবীর বলছিল, “আরে পাগলী, বিয়ের কার্ড কি নীল হয় নাকি? নীল তো বেদনার রং, কষ্টের রং৷”
আবীরের কথাটাই হয়তো সত্যি ছিল৷ আজ এই কার্ড একরাশ বেদনা আর কষ্টের স্মৃতি ছাড়া কিছুই না৷ আবীর পারেনি তার মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে৷ আবীরের সাথে তার নামটা আজীবন কেবল এই কার্ডের ভেতরেই লেখা থাকবে৷
আর প্রত্যেক পূর্ণিমা রাতে সে চাঁদের আলোয় কার্ডটি দেখবে৷ জ্যোৎস্নার আলোয় নামদুটো কি সুন্দর জ্বলজ্বল করে ….. তারপর চোখের জলে ঝাপসা হতে হতে মিলিয়ে যায়!!!
লিখেছেন –
ডা. মো.এজাজ বারী চৌধুরী
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
প্রধান, ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন ইউনিট
মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লি, ধানমন্ডি৷
সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment