অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা
শতবর্ষে শতপ্রাণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আমার প্রশ্ন ‘শতবর্ষে শতপ্রাণ’ কি? কিছু শিক্ষার্থী হয়ত বলতে পারবে কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীরা অনেকেই বলতে পারবে না।
বর্তমান সরকার এই বছরটিকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালন করছে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পশ্চিমপাশের্ব শতবর্ষের কাউন্ট ডাউন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশের কিছুটা জানতে পারি।
১৭ই মার্চ ২০২০ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে বধ্যভূমির উত্তরপাশের্ব বঙ্গবন্ধুর নামে বিভিন্ন প্রজাতির ১০০টি বৃক্ষরোপণ করে।
আমি বাংলা বিভাগের ড. তানিয়া তহমিনা সরকারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- ‘ম্যাডাম বঙ্গবন্ধুর নামে ১০০টি বৃক্ষরোপণ করবো- এই প্রোগ্রামটির নাম কি দেয়া যেতে পারে?’ বেশি সময় না নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বললেন ‘শতবর্ষে শতপ্রাণ’। আমি সঙ্গে সঙ্গেই নামটি গ্রহণ করলাম। মাননীয় উপাচার্য মহোদয়সহ আরও অনেক শিক্ষক নামকরণ বিষয়টিকে খুব এ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা, হলসমূহের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ, নাট্যব্যক্তিত্ব, ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ প্রত্যেকেই ১৭ই মার্চে একটি করে বৃক্ষরোপণ করেন। এখনও সব গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ পথ দিয়ে যারা যাতায়াত করেন তারা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতাকে স্মরণ করেন।
শান্তিবৃক্ষ
২০১৪ সালে ইউনেস্কো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিবৃক্ষ উপাধিতে ভূষিত করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মমতাময়ী শেখ হাসিনা আম্রকানন নামে একটি বাগান তৈরি করেছে। উক্ত বাগানে গোপালভোগ, খিরসাপাত, রানীপছন্দসহ মোট ১০৩টি আমগাছ লাগানো হয়েছে।
তিন প্রকারের আমগাছ লাগানোর কারণ কি? হর্টিকালচার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন আহমেদের পরামর্শ মতে, এই তিন প্রকার আম প্রায় ১৫ দিনের মধ্যে পেকে যায়। ফলে ভবিষ্যতে যারা এই বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তাদের বেশি সময় ব্যয় করতে হবে না। যদি ফজলি বা আশিনা লাগানো হতো, তাহলে প্রায় ২ মাস পাহারা দিতে হতো। উক্ত বাগানটি আগামী ২৮শে সেপ্টেম্বর মাননীয় উপাচার্য মহোদয় উদ্বোধন করবেন। ৮-১০টি জায়গা খালি রেখে ১০৩টি গাছ লাগানো হয়েছে। বিশাল আম্রকাননটি ভীষণ ভালো লাগছে দেখতে। আশাকরি আমাদের শিক্ষার্থীরা আম্রকাননটি উপভোগ করবে।
ঔষধী বাগান
এটা কোথায় অবস্থিত? ছাত্ররা হয়ত বলতে পারবে- কারণ হল থেকে ক্লাস করতে আসার সময় চোখে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানা এবং ছাত্রদের জিমনেশিয়ামের মধ্যবর্তী স্থানে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ফলজ গাছ। জিমনেশিয়ামের কোল ঘেঁষে লাগানো হয়েছে মাল্টা।
গাছগুলো দান করেছেন শরীরচর্চা শিক্ষক পার্থ প্রতিম মল্লিক। মি. মল্লিকের গাছ লাগানোর ভীষণ সখ। নিজের পকেটের অর্থ ব্যয় করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় তিনি গাছ লাগান। মাল্টার পাশ দিয়ে লাগানো হয়েছে কাঠবাদাম। মালটা এবং বাদামের মধ্যবর্তী স্থানে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য সুন্দর করে ৮-১০টি বেঞ্চ করা হয়েছে।
বটগাছের গোড়াটাকে মোড়ানো হয়েছে টাইলস দ্বারা। এরই পাশের্ব লাগানো হয়েছে হরিতকী, বহেরা, আমলকি, জলপাই, কামরাঙা, বেল, লটকন, হরিফল, জামরুল, লেবু, আমড়া, কাঁঠাল, করমচা ইত্যাদি প্রজাতির গাছ। মাল্টা গাছে ফল এসেছে, কিন্তু রক্ষা করতে পারছি না। করমচা গাছেও ফল এসেছে, দেখতে পায়নি বলে এখনও আছে।
সফেদা বাগান
সফেদার (Chiku fruit)
বৈজ্ঞানিক নাম: Manilkara zapota সফেদা ভিটামিন-এ, সি, ই সমৃদ্ধ একটি ফল। সফেদা স্কিনের জন্য ভালো, এতে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০শে জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট গ্রুপ এবং কৃষি প্রকল্প, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বধ্যভূমির দক্ষিণপাশের্ব লাগানো হয়েছে প্রায় ১০০টি সফেদা গাছ।
২০১৮ সালে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উক্ত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সফেদা একটি মিষ্টি ফল। অনেকে ভীষণ পছন্দ করেন। সফেদা গাছে ফল এসেছে। তবে পরিমাণে কম। আশা করছি আগামী বছর গাছে প্রচুর ফল আসবে। গাছগুলো দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে। এরই পাশে পুকুরের উপরে লাগানো হয়েছে ৬৬টি মেহগুনি গাছ।
গতবছর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৬৬, ঠিক ৬ই জুলাই লাগানো হয়েছে ৬৬টি মেহগুনি গাছ। প্রত্যেকটি গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে। পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। মাছও বেশ বড় হয়েছে। প্রতিদিন এলাকার লোকজন উক্ত এলাকায় বেড়াতে আসেন এবং উপভোগ করেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
শহীদ মিনার বাগান
শহীদ মিনারের পশ্চিমদিকে যে বাগান আছে, তার মধ্য দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ এবং বাগানে বসবার জন্য রয়েছে ৫-৬টি বেঞ্চ। বসার ব্যবস্থা রয়েছে রেইনট্রি গাছের গোড়ায়। পায়ে হাঁটার পথ, বেঞ্চ ও গাছের গোড়া বাঁধানো ভেঙে গিয়েছিলো। মেরুন কালারের টাইলস দিয়ে বেঞ্চগুলোকে মোড়ানো হয়েছে। গাছের গোড়াটাকে টাইলস দ্বারা আবৃত করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের ভালো লাগবে।
আমলকি বাগান
আমলকির (Indian gooseberry) বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica আমলকি প্রতিদিন সেবন করলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল আমলকি। চুল এবং ত্বকের জন্য অত্যন্ত ভালো। পরিপাকে সহায়তা করে এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে অনেক গুণাগুণ বিশিষ্ট ফল আমলকি। একটি ছোট্ট আমলকি বাগানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের পিছনে এবং শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার অডিটোরিয়ামের মধ্যবর্তী স্থানে বারোটি আমলকি গাছ লাগানো হয়েছে। ইতোপূর্বে অবশ্য ৫টি লাগানো ছিল। গতবার ফল ধরেছিলো, কিছু সংখ্যক ছাত্র ঢিল দিয়ে পেড়ে বান্ধবীদের হাতে দিতে কার্পণ্য করেনি। বিশ্বাস রাখি শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল উপভোগ করবে।
ইতোমধ্যে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী অনলাইন ক্লাস উপভোগ করছে। অনেকে হয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে রাজশাহীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে মনে করছে বর্তমান সময়টা হয়ত রাজশাহীর জন্য পিক পিরিয়ড। এ সময় রাজশাহীতে না এসে যার যার অবস্থানে থাকাই ভালো। জানি তোমরা ব্যাকুল হয়ে আছো ক্যাম্পাসে আসার জন্য।
আমরাও অপেক্ষায় আছি তোমাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। রাত যত গভীর হয় সূর্যের আলো উঁকি দেওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। বেশিদিন হয়ত লাগবে না সূর্যের নতুন আলো ছড়াতে।
কণ্ঠশিল্পী নচিকেতার সেই গান মনে পড়ছে-
তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনও হয়নি।
তুমি আসবে বলেই কৃষ্ণচুড়ার ফুলগুলো ঝরে যায়নি।
ভালো থেকো তোমরা।
লেখক: প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা
উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।