শিক্ষকদের দেড় মাস ক্লাস পরীক্ষা বর্জনে ক্ষুব্ধ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি সমাধান। দেড় মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে সেশনজটসহ নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে সম্মতি জানান। পরবর্তীতে ৩০ জুন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর বিভিন্ন বিভাগে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলতে শুরু করলেও গত ১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু থাকলেও গত দেড় মাস ধরে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থী বান্ধব হতো তাহলে নিজেদের স্বার্থের জন্য এভাবে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে থাকতেন? এভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলতেছি।

আবিরুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস না করাতে চাইলে আমাদের ক্লাসের উপাদানগুলো দিয়ে দেওয়া হোক। পরবর্তীতে ক্যাম্প্যাস খুললে আমরা পরীক্ষা দিয়ে দিবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের ক্লাস, সিটি, এ্যাসাইনমেন্ট, সব কিছু এই বর্ষের মধ্যেই শেষ করতে হবে যাতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথে পরীক্ষা দিতে পারি। আমাদের জীবন থেকে ১ টা বছর নষ্ট হয়ে গেছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হয় কিন্তু আামদের ক্লাস হচ্ছে না। আবার পরীক্ষা ও ফলাফল দিতে বিলম্ব হবে এবং চাকরির বাজারেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি। হয়তো উনারা আমাদের কথা চিন্তা করছে নাহ কিন্তু দিন দিন আমরা মানসিক ভাবে ভেঙে পরছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করলেতো হয়না। ক্লাস এর ব্যবস্থা অবশ্যই করা উচিত অথবা যেন খুলে দিলে পরীক্ষা নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা উচিত। প্রশাসন ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্ট এর ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দিতে পারবে? এভাবে হয়না। যেখানে অন্য জায়গায় আমাদের জুনিয়র ব্যাচ এর শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাচ্ছে আবার আমাদের সাথে অন্য ব্যাচের সবারই কোর্স শেষ। সেখানে এভাবে ক্লাস বন্ধ রেখে স্টুডেন্ট দের বসিয়ে রাখার অর্থ হয় না!

মহিউদ্দিন খন্দকার সজীব নামে এক শিক্ষার্থী স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, আমার সম্মানিত শিক্ষকরা কি আমার কিংবা আমাদের কথা ভাবছেন? তারা কি আমাদের ভালবাসছেন, যেভাবে আমরা তাদের ভালবাসি? আমার সম্মানিত শিক্ষকরা চাইছেন শিক্ষক নিয়োগ যাতে চালু হয়। কেন চাইছেন? যাতে করে যেসকল ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক কম সেসকল ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষার্থীরা ঠিক ভাবে ক্লাস করতে পারেন। এইজন্য উনারা কি করছেন? বর্তমান ক্লাস বয়কট করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যাপারটা কেমন আইরনিকাল হয়ে গেলো না?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইনুল হাসান বলেন, শিক্ষক সমিতির আন্দোলন আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে না করে অন্যভাবে করতে হবে। আমরা কোনো প্রকার জট বা বিলম্বে পড়তে চাই না। আমাদের জুনিয়র ব্যাচ প্রাইভেটে পড়ে আমাদের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এভাবে হেলাফেলা করতেসে পরে ঠিকই আমাদেরকে জটে ফেলবে বা মাত্রাতিরিক্ত চাপে ফেলবে। তাই আমি চাই, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আমাদেরকে ফাইনাল সিদ্ধান্ত না জানালে যে যেভাবে পারি প্রতিবাদ করতে হবে।

এইদিকে ২০১৬ সালে ৭ ফেব্রুয়ারী ১৪ টি বিভাগের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। অনেক বিভাগের ইতিমধ্যে অনার্সের সকল একাডেমিক কার্যক্রম ও চূড়ান্ত ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বিভাগের মাস্টার্সের ক্লাসের ১ম সেমিষ্টার ও প্রায় শেষের পথে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বর্ষের শিক্ষার্থী হয়েও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যস্থাপনা বিভাগ, ইংরেজী বিভাগ, অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জীন প্রকৌশল বিভাগের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় নি।

এ সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানেও না তারা কবে পরীক্ষায় বসতে পারবে, আর কবেই বা চুড়ান্ত ফলাফল হাতে পাবে। এদিকে ১ বছরের জুনিয়র হওয়ার পরও শিক্ষাবর্ষ ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ একই সেমিষ্টারে অবস্থান করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ বর্ষের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা আটকা পড়ে আছে। কারো সেমিস্টার ফাইনাল বাকি কারো প্রজেক্ট, থিসিসের ডিফেন্স বাকি। এইভাবে দ্বিমুখী সমস্যায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।

দেড় মাস ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে, নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, যেহেতু সবকিছু অনলাইনেই তাই পরবর্তীতে ক্লাস বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে। অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে গেলে শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এবিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে সেটি খুবই দুঃখজনক। আগামীকাল এবিষয়ে শিক্ষকদের ডেকে বিষয়টি সমাধানে জন্য আলোচনা করা হবে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। শিক্ষা সচিব অসুস্থ থাকায় বিষয়টি সমাধান হতে দেরী হচ্ছে। আশা করি আগামী দু-একদিনের মধ্যে শিক্ষা সচিব অফিস কার্যক্রমের ফিরবে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যাটি সমাধান করবে।

অনার্স এবং মাস্টার্সের লাস্ট সেমিস্টারে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে আসলে এমতাবস্থায় কি করা যায় আমরা বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment