শিক্ষক দিবসে জাতির বিবেক শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা

শিক্ষক দিবসে জাতির বিবেক শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা

তরিকুল ইসলাম, ইবি


শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার আর শিক্ষাই একটি জাতির মেরুদন্ড ৷ তাই শিক্ষা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং শিক্ষা ছাড়া মানবজীবন অসার ৷ শিক্ষা মানুষকে সমাজে পরিচিত দান করার পাশাপাশি মানুষের নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, সৎ নাগরিক হিসাবে আদর্শ ও সৃজনশীল গুনাবলির বিকাশ ঘটানো। একটি জাতির উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা।

শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না ৷ আর সেই শিক্ষার কারিগর হলেন জাতির বিবেক শিক্ষকরাগণ। বিশ্বের শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর আহবানে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে “বিশ্ব শিক্ষক দিবস”।

সেই সকল গুণী শিক্ষকদের জন্য আমাদের ও রাষ্ট্রের করণীয় কি তা সকলের জানা আবশ্যক শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন হোক: শিক্ষকগণ মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার মহান ব্রত নিয়েই সমাজ, রাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বে শিক্ষকরা কাজ করে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ। শিক্ষকতা এমন এক ব্রতের নাম যার দ্বারা জাতির ভবিষ্যৎ নির্মিত হয় ৷ কিন্তু অনেকাংশেই আমাদের দেশে শিক্ষকদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। বিশ্বের উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকদের উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা হয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রচুর সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়।

অপরদিকে, আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেলায় তার ভিন্নতা লক্ষ্যণীয়। এমনকি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেও হিমশিম খেতে হয়। ফলে অনেক মেধাবী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতে আগ্রহী নয়। জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনে শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নয়নের কথা ভাবার উপায় নাই ৷

প্রথম স্তরে আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কম এবং তুলনামূলক কম সুবিধা পায়। দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা কম হওয়ায় মেধাবীরা এগিয়ে আসে না এই পেশায় ৷ বেসরকারিভাবে (প্রাইভেট) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা বেতন পান বেশী এবং সুযোগ-সুবিধাও বেশী পায়। সবর্শেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকার থেকে তেমন সুবিধা দেওয়া হয় না। বিশেষভাবে তাঁদের গবেষণা খাতে বরাদ্দ তামাশার শামিল ৷ ফলে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার দরুণ গবেষণায় ছেদ পড়ে ৷

শিক্ষাক্ষেত্র দুর্নীতিমুক্ত করা হোক: শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর এই মেরুদণ্ডকে সমাজ, রাষ্ট, বিশ্বের সাথে পরিচিত করিয়ে দেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকগণই সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কার, গোঁড়ামি ও কুসংস্কার ইত্যাদি দূর করে সমাজকে আলোর পথে অগ্রসর হন ৷ শিক্ষকের আদর্শ, সাহসিকতা, নীতি-নৈতিকতা, সততা আর মূল্যবোধ অনুসরণ করে শিক্ষার্থিরা নিজেদের জীবন গঠন করেন ৷ একজন শিক্ষকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একজন ছাত্র তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। একজন শিক্ষকের প্রভাব একজন ছাত্রের জীবনে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত থাকে।

শিক্ষক নিঃসন্দেহে একজন সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু যুগ যুগ ধরে তাঁরা আর্থিক সংকটে থেকেও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন ৷ সমাজ বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছেন এবং সমাজের অন্ধত্ব দূরীকরণে কাজ করে চলেছেন নিঃস্বার্থভাবে।

কিন্তু বর্তমানে কিছু অসংগতিও লক্ষ্যণীয় ৷ শিক্ষাক্ষেত্র হয়ে পড়ছে শিক্ষা ব্যবসা কিংবা দুর্নীতি শিক্ষার হাতিয়ার ৷ কেননা, শিক্ষক নিয়োগে মেধা দক্ষতার পরিবর্তে প্রভাবশালী মহলের প্রভাব আর অর্থ লেনদেন যেন এক রীতিতে পরিণত হয়েছে ৷ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই অর্থ লেনদেন করে অযোগ্যদেরকেও শিক্ষকের মহান আসনে বসানো হচ্ছে ৷ ফলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে ৷ আর অর্থ দিয়ে চাকরি কেনা শিক্ষকেরা অর্থ ওঠাতে শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ৷ স্কুলে সঠিকভাবে পাঠদানের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট বা কোচিংমুখী করতে বাধ্য করে ৷

সম্প্রতি কতিপয় শিক্ষকদের অশোভন আচরণ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি যৌন হয়রানি বৃব্ধি পেয়েছে ৷ বিভিন্ন পাঠে পরোক্ষভাবে অপসংস্কৃতির প্রভাবও রয়েছে ৷ ফলে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ৷ এই পরিস্থিতির উত্তরণ আবশ্যক ৷ তবেই শিক্ষকদের পেশার মহত্ব বজায় থাকবে ৷
বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক দেশে এই দিবস পালন করা হয়।

এই দিনে আমাদের প্রত্যাশা:
১. শিক্ষকের প্রকৃত অধিকার প্রদান করা হোক ৷
২. সম্মান সমাজে বাড়িয়ে দেওয়া হোক ৷
৩. সব পেশার উর্ধ্বে শিক্ষকতা পেশাকে মর্যাদা দেওয়া হোক ৷
৪. অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সঠিক তদারকির সুব্যবস্থা করা হোক ৷

লেখকঃ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment