শিক্ষক যখন শিক্ষাহীন, মূল্যবোধ তখন কাঁচের বাক্সে বন্দী

শিক্ষক যখন শিক্ষাহীন, মূল্যবোধ তখন কাঁচের বাক্সে বন্দী

নূরুল মোস্তফা চৌধুরী রায়হান


মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের ভাষায় মানব জাতি হলো সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত। তবে কেউ কেউ আবার করে বলেন কোন মানুষ সৃষ্টির নিজেকে তার আচরণের সৃষ্টির ঘৃণিত জীব হিসেবেও প্রকাশ করেছেন।

অর্থাৎ তারা বিবেকহীনতা বা মনুষ্যত্বহীনতাকেই ইঙ্গিত করেছেন। আর এসব বিষয় নির্ভর করে দেশের উচ্চ পদগুলোতে বসে থাকা মানুষগুলোর পেশাগত জীবনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা।

একটা সময় ছিল এই দেশের শিক্ষকদের প্রতি মানুষের আন্তরিকতা কিংবা বিশ্বাস ছিল প্রবল। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলা হতো মুকুট বিহীন সম্রাট। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কম থাকলেও তাদের মূল্যায়ন ছিল দেশজুড়ে। শিক্ষার মানও ছিল উচ্চমানের। তবে অতিদ্রুত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে শিক্ষা এবং শিক্ষকদের মান।

দেশে বর্তমানে চল্লিশটিরও বেশী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিছুদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার বলেছিলেন চল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেগুলো পরিচালনা করার মত উপযুক্ত চল্লিশ জন উপাচার্য নেই। আমি তাঁর কথার সাথে পুরোপুরি একমত।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার ধরনের শিক্ষক আছে। ১. ভালো গবেষক এবং ভালো পড়ান ২. ভালো গবেষক নন কিন্তু ভালো পড়ান ৩. ভালো গবেষক কিন্তু ভালো পড়ান না। এই তিন ধরনের শিক্ষকদেরই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দরকার আছে। দরকার নেই শুধু ৪ নম্বর ক্যাটাগরি। অর্থাৎ নম্বর ৪. এরা ভালো গবেষকও নন আবার ভালো পড়ান না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এদের সংখ্যা ও দৌরাত্ম্য দুটোই বেশী। আবার এরাই বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসক হিসেবে নিয়োজিত থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত প্রশাসন দুই ভাগে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশ্ববদ্যালয়ের মূল প্রশাসনের বাহিরেও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ থাকে দেখা শিক্ষকদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। যেমনঃ ডিন, চেয়ারম্যান, প্রক্টর, প্রভোস্ট ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে চেয়ারম্যান এবং ডিনদের কাজ হলো বিভাগ বা অনুষদগুলো সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা এবং একাডেমিক নীতিনির্ধারণ করা যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘একাডেমিক পলিসি’ ।

অর্থাৎ এই পদগুলোতে যারা দায়িত্বরত থাকেন তারা শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে প্রশাসনিক দক্ষতাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে শিক্ষক হিসেবে তার কমতি থাকলেও প্রশাসনিক দক্ষতা থাকলে তিনি বিভাগকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন ভালো ভাবেই।কিন্তু কারো যদি শিক্ষা বা দক্ষতা দুটোই কম থাকে তাহলে? তাহলে সেই প্রবাদের মত বলতে হয়, ছাগল দিয়ে হাল চাষ।

আমি স্নাতক সম্পন্ন করেছি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন বিভাগ।

আমি যখন যবিপ্রবিতে স্নাতকে অধ্যায়নরত ছিলাম তখন তিনি তখন আমার বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন ড. জফিরুল ইসলাম স্যার। যিনি ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত বছর বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এত দীর্ঘ সময় কেউ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব ছিলো বলে আমার জানা নেই। অথচ এতদিন কেউ কোন বিভাগের দায়িত্বে সে বিভাগকে পৃথিবীর সেরা বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলা যায় যদি তার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু এরকম একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে তার কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্ম ও আচার-আচরণ সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ টি বিভাগ থাকলেও এখন পর্যন্ত আমার বিভাগেই সব থেকে বেশী একাডেমিক সেশনজট, সবথেকে বাজে ক্লাসরুম, নোংরা টয়লেট, বাজে ব্যবস্থাপনা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন করতে না পারা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে তলানিতে যাওয়া সব কিছুতেই উনার একক অবদান। সবথেকে আরও মজার বিষয় তিন বছর তার পেছনে দৌড়েও একটা ক্লাসের হোয়াইট বোর্ডটা পর্যন্ত দেয়ালের পেরেকে ঝোলাতে পারিনি।

তারপরেও কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতা বলে তিনি দীর্ঘদিন কিভাবে বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন সেটি এখনো আমার কাছে বোধগম্য নয়। আর আমার কাছে মনে হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি এটাই তিনি বুঝতেন না। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক সাংবাদিকের লেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি এই শিরোনামে লেখা বের হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়। ফলাফল সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত উপাচার্যের পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়। যাই হোক সেদিকে আপাতত আর না যাই। আবার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশে সহায়তা করা যার জন্যে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ক্লাব কার্যক্রম থাকে। যেমন- আবৃত্তি ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব, বিএনসিসি ইত্যাদি। এসব ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সামাজিক দায়িত্বও পালন করে।

কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলেও সত্য তিনি এসমস্ত সংগঠনের সাথে যারা যুক্ত থাকতেন তাদের মানসিকভাবে হেয় করতেন।আমার মনে আছে ইংরেজি বিভাগের আব্দুল হালিম স্যার আমাদের ইংরেজি কোর্সের ক্লাস নিতেন। সেখানে তিনি ‘সিভি রাইটিং’ বিষয়ে যখন আমাদের পড়িয়েছিলেন তখন একটা কথা বলেছিলেন, ভালো সিভি লিখতে হলে তোমাদের অবশ্যই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে তার অর্জনগুলো ব্যাক্তিগত তথ্যে লিখতে হবে।এতে তোমাদের ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে তোমাদের কর্পোরেট জগতে চাকুরির জন্য অনেক সুবিধা হবে। কারণ সরকারি চাকুরিতে পদের সংখ্যা অনেক কম থাকে।

আর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি। যেহেতু তখনকার বেশ কিছু কারণে যখন আমার বিভাগ কিছুটা ইমেজ সংকটেও পড়েছিল। সবকিছু মাথায় রেখে আমি সামরিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিএনসিসিতে যোগ দেই। মনে আছে ২০১৭ সালে যশোরের মনিরামপুরে বন্যাদুর্গত এলাকায় শত-শত ত্রাণ প্যাকেট মনে আছে ২০১৭ সালে যশোরের মনিরামপুরে বন্যাদুর্গত এলাকায় শত-শত ত্রাণ প্যাকেট করা, তা প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দেয়া, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে রোগীদের তালিকা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি সহ সবধরনের কাজ অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে করেছি। শুধু তাই না অনেক অসুস্থ রোগীকে নিজের কোলে করে বিভিন্ন তলায় চিকিৎসকের কাছে রেখে আসার মত কাজও করেছি।

পাশাপাশি আমার নেতৃত্বে পরপর দুইবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যশোর অঞ্চলে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়। সেই ট্রফি এখনো উপাচার্য স্যারের অফিসে শোভা পাচ্ছে। শুধু তাই না আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্যাডেট যে বিএনসিসির সর্বোচ্চ পদবী সিইও অর্জনের পাশাপাশি লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বিএনসিসির অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নেপাল সফর করে আসি। পাশাপাশি সেদেশের প্রধানমন্ত্রী,রাষ্ট্রপ্রতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ অর্জন করার সৌভাগ্য অর্জন করি। যা শুধু আমার বিভাগের জন্য না আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যেও ছিল অনেক বড় সম্মানের।

অথচ এইসব বিষয়েও তিনি আমাদের ব্যঙ্গ করতেন। এমনকি ছাত্রদের ব্যাক্তিগত আক্রমণও করতেন। কিন্তু উপাচার্য স্যার যেহেতু এইসব সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে সবসময় উদ্ভুদ্ধ করতেন এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পদক প্রাপ্তদের স্নেহ করতেন। তাই আমি জাফিরুল স্যারের এসব অযৌক্তিক কথা বার্তা কানে দিতাম না। কারণ এসমস্ত মানুষের কথায় কান দিলে আমার জীবন ওখানেই থেমে যাবে। আর তিনি তো আমার ক্যারিয়ার গড়ে দিবেন না। আমি বিশ্বাস করতাম আমার অনেক কিছু করার আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতাম।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়্যিদ বলেছিলেন ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।’ তাই সপ্ন দেখতাম।তবে আল্লাহর রহমত সবসময়ই আমার সাথে ছিল এবং তার অশেষ মেহেরবানিতে সেই স্বপ্নগুলো পূরণও হয়েছ।

তবে মজার বিষয় হলো তার কাছে শুধু অ্যাথলেটিকসেই সব। আপনি শ্রেষ্ঠ বিতর্কিক হন কোন মূল্য নেই, আপনি ভালো বাস্কেটবল খেলে পুরষ্কার আনেন তাতেও কোন মূল্য নেই, আপনি বিএনসিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সেরা প্রতিষ্ঠান করে আনেন কোন দাম নেই। তবে কোন অ্যাথলেট হলেই কেল্লাফতে।

এমনি যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলম দ্বারা সারা দেশে তুলে ধরতেন তাদেরকে হেনস্তা করতে ছাড়েননি তিনি। ২০১৭ তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটখাটো পরিসরে সাংবাদিকতা শুরু করি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদগুলো আমিই সংগ্রহ করতাম। প্রতিবারের মত সেবারও যবিপ্রবি অ্যাথলেটিক্সে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই টিমের কোচ এবং ম্যানেজার ছিলেন জফিরুল স্যার। আমি আমার সংবাদ সংগ্রহের জন্য যখন চেয়ারম্যানের কাছে যাই তখন তিনি রীতিমতো অভদ্র আচরণ করলেন। নূন্যতম সৌজন্যতাবোধতো দেখালেনই না উল্টো আরও বললেন আমি এসব নিউজ ফিউজে বিশ্বাসই না, আমি বিশ্বাস করি দলের পারফরম্যান্স । দলের পারফরম্যান্স আগের থেকে খারাপ। কথা শুনে রীতিমতো অবাক হলাম।ভাবলাম চ্যাম্পিয়ন হয়েও এই অবস্থা?

অথচ মজার বিষয় হলো উনি উনার ৪০ মিনিটের ক্লাসে ২০ মিনিটই পাতিয়ালায় তার শিক্ষা জীবন বা জাপানিদের পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতার গল্প শোনাতেন।অথচ যেই ক্লাসরুমে তিনি এত গালগল্প শোনাতেন সেই ক্লাস রুমই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ। এই দিকে আবার তার কোন খেয়ালই ছিলো না। আবার অন্যদিকে তিনি ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন সেক্টরে রেকর্ড করেছেন। প্রথম ব্যাচ এখনো স্নাতকোত্তর শেষ করে বের হতে পারেনি। সেই হিসেবে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ সর্বমোট নয়টি ব্যাচ চলমান। এর মধ্য পাঁচটি ব্যাচই স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। আর কয়দিন পর তো কারও কারও সরকারি চাকুরির বয়সটাও শেষ হয়ে যাবে সেদিকে তার খেয়ালই নেই।

মাঝে মনে হত তিনি যে কি বলতেন আর কি করতেন তা তিনি নিজেও জানতেন না।
তবে তার পছন্দের কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তিনি আবার সবকিছুই করতে পারেন। এই যেমন ধরুন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা পেছানো বা কারো কোন জায়গায় খেলতে যাবার কথা থাকলে ক্লাসের মাঝখানে হাসি মুখে ছুটি দেয়া। এমনকি তাকে না বলে মাঠে ক্রিকেট খেলার আম্পায়ারিং করলে সেখানেও তাকে এটেনডেন্ট দিয়ে দেয়া। কিন্তু একই বিষয় আবার আমার বা আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়।

সব থেকে বড় খেলা দেখিয়েছেন এবছর স্নাতকোত্তরে ভর্তি প্রকিয়ায়। চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেও পছন্দের ছাত্রী ভর্তি করার জন্য রীতিমতো তাড়াহুড়ো করে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা হয় তার ইচ্ছাতেই। অর্থাৎ পঞ্চম ব্যাচের স্নাতক সম্পন্ন হতে না হতেই জরুরি ভিত্তিতে রেজাল্ট প্রদান। পাশাপাশি তড়িঘড়ি করে ভর্তি। তাহলে ৩য় ব্যাচের সাথে এত বাজে আচরণ কেন? তার কাছে প্রশ্ন রইলো।

তৃতীয় ব্যাচ মানে আমার ব্যাচের সাথে তার কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ বিষয়টি এবার তুলে ধরি। আমাদের স্নাতক তার ইচ্ছায় চার বছর ১০ মাসে শেষ হয়। তারও একবছর পর মাস্টার্সের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেন। অর্থাৎ প্রায় দেড় বছর নষ্ট করেছেন। যদিও আমি এমন অদ্ভুত মানুষ থেকে শিক্ষা নেব না বলে মাস্টার্সের ফরম কেনা থেকে বিরত থাকি। যদিও পরবর্তীতে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাই।পাশাপাশি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরিরও সুযোগ পাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনাচার আমাকে এখনও কষ্ট দেয়। তবে অসংখ্য ভালো শিক্ষকও পেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। যেমন-নাসিম স্যার, হামিদ স্যার, শৈবাল স্যার এবং ফিরোজ স্যার। বিশেষ করে হামিদ স্যার, শৈবাল স্যার এবং নাসিম স্যারের ব্যক্তিত্ববোধ আমাকে মুগ্ধ করতো। তাঁরা শিক্ষার্থীদের যেকোন সমস্যা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। আর উৎসাহ দিতেন সবসময়।

পাশাপাশি ফিরোজ স্যার ছিলেন একজন আধুনিক মানসিকতার মানুষ ছিলেন। বড় পরিসরে করতে না পারলেও কিভাবে ছোট পরিসরে বিভিন্ন বাস্তবায়ন করতে হয় তা আমাদের শিখিয়েছেন। যদিও তিনি বর্তমানে ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান পদে আছেন। নবীন শিক্ষক হয়েও সেখানেও তিনি তার মেধা ও আন্তরিকতার ছাপ রেখেছেন। মাত্র একটি ব্যাচ নিয়েও তিনি ফিজিওথেরাপিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে স্মার্ট বিভাগ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।মনোরম ক্লাস রুম, বিভিন্ন সভা সেমিনার কিংবা সিআরপিতে নিয়ে তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলছেন।

অথচ জফিরুল ইসলামের মত শিক্ষকরা দেখেও শেখেন না আবার শিখতে চানও না। অনেকটা না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান ধরার মত। আর করার দরকারও বা কি?তিরস্কারের বদলে জুটছে পুরষ্কার।চেয়ারম্যান থেকে পদন্নোতি পেয়ে ডীন। আর হবে না কেন? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন প্রভাব বিস্তার করে না।আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তার বিভিন্ন বিভাগে নজরদারি করে না।

ফলাফল কে জানে হয়তো কোনো একদিন নিজের প্রতিভা বলে উপাচার্যও বনে যেতে পারেন।ডিপার্টমেন্টের মত পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কেও ধ্বংস করে দিতে পারেন। উনাদের মত মানুষদের দেখলে আমার কেয়ামতের লক্ষণগুলো মনে পরে। যেমন, কেয়ামতের পূর্বে বড় বড় চেয়ারগুলোতে অযোগ্য লোকজন বসবে। এই সমস্ত লোকরা ভুলেই যান যে সরকার তাদের বেতন দেয় শিক্ষার্থীদের অভিবাবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য।

পাঠদানের পাশাপাশি তাদের যে আরও অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে সেটা হয়তো ভুলেই গেছেন। কথায় আছে, আনন্দ ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। অথচ তার সময় ছিলনা কোন বিভাগে কোন সঠিক বিনোদনের ব্যবস্থা। যে হয়না কোন নিয়মিত শিক্ষা সফর, হয়না কোন জ্ঞান মূলক প্রতিযোগিতা।কত কেউ বিভাগের এসব টালমাটাল অবস্থা দেখে মাস্টার্স সম্পন্ন না করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পা বাড়িয়েছে তার হিসেব উনাদের কাছে না থাকলেও আমার আছে।

ভালো থাকুক এই সমস্থ শিক্ষকরা আর পচে মরুক তার অসহায় ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে একটা মানুষ কতটা সফল সেটা তার মৃত্যুর পর বোঝা যায় মৃত্যুর পর। হয়তো তিনিও কোনদিন তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ঘৃণিত মানুষ হিসেবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। কারণ পৃথিবীতে নীতিহীন শিক্ষক আর মনুষ্যত্বহীন মানুষ একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।


লেখক: শিক্ষক, লেখক ও গবেষক; সাবেক সহ-সভাপতি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (যবিপ্রবিসাস) এবং সাবেক ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর, ইয়্যুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম নেপাল, বিএনসিসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *