ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। এ কারণে এপ্রিল থেকে মেসের মূল ভাড়ার ৪০ শতাংশ মওকুফের বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না মেস মালিকরা।
ফোন দিয়ে পুরো ভাড়া চাওয়া হচ্ছে, এমনকি হুমকিও দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রাবি) রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মেস থেকে বের করে দেয়াসহ দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে গত ১০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এবং মেস মালিক সমিতির এক বৈঠকে ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মেস মালিকরা বলছেন, অধিকাংশ মেস মালিক এ নোটিশের বিষয়ে জানেন না এবং এ সিদ্ধান্তটি গুজব।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে সিদ্ধান্ত জেনেও তা উপেক্ষা করছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ও সমালোচনা বিরাজ করছে।
নগরের তালাইমারী এলাকার একটি মেসে থাকেন রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবার পরও মেস মালিক পুরো টাকা চাইতো। অনেক অনুরোধের পর এখন ২০ শতাংশ কমিয়েছে।
রাজাশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রাতুল ঘোষপাড়া মোড় সংলগ্ন সেফালি মহল নামের ছাত্রাবাসে থাকেন। তিনি বলেন, মেস মালিক ফোন করে পুরো ভাড়া চাচ্ছেন। তা না হলে মেস থেকে বের করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। ৪০ শতাংশ মওকুফের বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী মেস মালিককে জানালে মালিক বলেন, এপ্রিল ও মে মাস পুরো ভাড়া দিতে হবে। আগামী জুন থেকে ৪০ শতাংশ মওকুফ করা হবে।
মিরজাপুর পুলিশফাঁড়ি সংলগ্ন সুফিয়া ছাত্রী নিবাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাড়িতে আসার পর বার বার মেস মালিক টাকার জন্য ফোন করে খারাপ ব্যবহার করতো। ৪০ শতাংশ মওকুফ করতে তারা রাজি নন। মেস মালিক ওই শিক্ষার্থীকে বলেন, তারা এ বিষয়ে কোন নোটিশ পাননি। তাই এ সিদ্ধান্ত তারা মানছে না।
জানতে চাইলে সুফিয়া ছাত্রী নিবাসের মালিক মো. মামুন বলেন, ‘ভাড়া মওকুফ সংক্রান্ত কোন নোটিশ আমি পাইনি। এ বিষয়ে আমি মেস মালিক সমিতির সাথেও কথা বলেছি। ওনারা বলেছেন ভাড়া মওকুফের বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সাথে মিটিং হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনত কার্যকর হয়নি। যদি সরকার কর্তৃক ঘোষিত হয় তাহলে আমি মেনে নিব, এর আগে নয়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে মেস মালিক সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সভায় সিদ্ধান্ত হবার পর বিষয়টি সকল মেস মালিকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি আবারও ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে (সুফিয়া ছাত্র নিবাস) বলবো। এরপরও পুরো ভাড়া দাবি করলে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, করোনার দুর্যোগে সকলেই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসকের দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্তটি সকল মেস মালিকদের মেনে নেয়া উচিৎ। আর কোন মেস মালিক যদি সংকটে পড়া শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পুরো ভাড়া মওকুফ করে তাহলে সেটা আরও ভালো হয়। কোন মেস মালিক যদি নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।