ইকবাল মুনাওয়ার, কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের সনদ বাজেয়াপ্ত না করতে এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক সিফাতের সঞ্চালনায় সোমবার সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এই মানববন্ধন করে।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ‘Stand for Mehedi ‘ ‘ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থী, ক্ষমা করুন’ ‘সন্তানের ভুল ক্ষমা করুন’ ‘মামলা বাতিল চাই’ ‘সনদ বাতিল করা যাবে না’ ‘সন্তানের ভুল ক্ষমা করুন পিতৃতুল্য শিক্ষকবৃন্দ’ ‘everyone deserves a second chance ‘ ফেস্টুনে লিখে মামলা প্রত্যাহার এবং সনদ বাজেয়াপ্ত না করতে আহবান জানান।
থিয়েটার কুবির সভাপতি ফাহাদ বক্তব্যে বলেন, ‘ আমরা চাই মেহেদী ভাইয়ের বিচার হোক, কিন্তু এমন বিচার যার কারণে পরিবারসহ সবাই ভোগান্তিতে পড়বে এবং ৭ বছরের অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে এমন বিচার কেন নিবে? শিক্ষকরা পিতৃতুল্য হয়ে ক্ষমা করার আহবান করেছি’ অভায়রন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রেজোয়ান বলেন, একটা জীবন শেষ হওয়ার মত পদক্ষেপ মেহেদী ভাই সহ পরিবারের অবস্থা ব্যাহত হবে, শাস্তি লঘু করা হোক। এছাড়া ও বক্তারা বলেন, ‘অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া নয় বরং অপরাধ কমানোর লক্ষ্যই আইন, আমরা মামলা প্রত্যাহার, সনদ বাজেয়াপ্ত যেন না হয় তার পক্ষে দাড়িয়েছি। মেহেদী ভাই নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন পিতৃতুল্য শিক্ষকরা যেন এতবড় শাস্তি না দেন।
গতকাল (রবিবার) মেহেদী হাসান অনুতপ্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে Comilla University গ্রুপে লিখেন ‘শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলী, শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা, সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে আজ আমার এই প্রতিদান? আমার অপরাধের জন্য কি একটুও ছাড় দেওয়া যায় না? মামলা টা কি প্রত্যাহার করা যায় না? আমি কি সিরিয়াল অপরাধী যে সারা জীবন একটার পর একটা অপরাধ করে গেছি এখন আমার সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে? ‘
জানা যায়, মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে থিয়েটারের পরিবেশনা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন মেহেদী। সেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়িয়ে নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। তীব্র সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে আবার সেটি মুছে দেন। এ ঘটনায় শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মেহেদীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সাথে তার মূল সনদপত্র স্থগিত করে দেয়া হয় এবং কেন স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়।
এদিকে এ বিষয়ে মৌখিক এবং লিখিত ভাবে একাধিকবার শিক্ষক সমিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। অনুতপ্ত মেহেদীর শাস্তি লাঘবের জন্য এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্বারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় ফের মানববন্ধন করে তারা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি রশিদুল ইসলাম শেখ মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে ব্যস্ততা থাকায় আমরা বসতে পারিনি। আমি একা কিছু বলতে পারবো না। শিক্ষক সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত যা হবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে। আমরা বসবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি যদি মনে করে তাকে ক্ষমা করা যায় এবং এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবে। যেহেতু শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে।’