যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যবিপ্রবি

শুধু করোনা পরীক্ষা নয়, যবিপ্রবি তে হবে ক্যান্সার এর জিন শনাক্তকরণও

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক:যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে গত ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় করোনাভাইরাস পরীক্ষা।যশোর ও আশপাশের জেলাগুলোর করোনা পরীক্ষার একমাত্র ল্যাব হচ্ছে যবিপ্রবির এই জিনোম সেন্টার। তবে শুধু করোনা পরীক্ষা নয়, জিনোম সেন্টারে ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণ এবং এর ঔষধ তৈরির কাজ করা হবে বলে ও জানা গিয়েছে।

ল্যাবটির সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ জানান,বিষয়ে জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার দেশের অন্যতম এক অত্যাধুনিক গবেষণাগার। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি থাকার সুবাদে আমরা দেশের অন্যান্য গবেষণাগার থেকে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছি। বর্তমানে আমাদের ল্যাবরেটরিতে Field emission scanning electron microscope এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধাতু, খনিজ পদার্থ ও কেমিক্যালের গুণগতমানসহ টেক্সটাইল ফেব্রিক্সেরও গুণগত মান যাচাই করা সম্ভব। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন কেমিক্যালের আনবিক আকার, ঘনত্ব এবং এর উপাদান নির্ণয় করতে সক্ষম। এর পাশাপাশি আমাদের জিনোম সেন্টারে মাছের জিনোমিক রিসার্চ, জিন সিকোয়েন্সিংসহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ল্যাবে তাদের গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে Next-generation sequencing (NGS) সুবিধা থাকলেও কোনটিতেই বাণিজ্যিকভাবে NGS সুবিধা দেয়া হয় না। বাণিজ্যিকভাবে 16S ribosomal RNA (rRNA) sequencing, Next-generation sequencing (NGS) এবং NGS data analysis সহ বেনাপোল স্থলনন্দর দিয়ে আমদানি ও রফতানি পণ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা মাথায় রেখে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জিনোম সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে NGS Data কে ব্যাবহার করে ক্যান্সার ও জেনেটিক ডিসঅর্ডার শনাক্তকরণ এবং পারসোনালাইজড ঔষধ তৈরিতে এই জিনোম সেন্টারটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।

২০১৭ সালের জুনে যবিপ্রবিতে এ জিনোম সেন্টার বা ল্যাবটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (NSU), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (ICDDR,b), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (BCSIR) জিনোম সেন্টার পরিদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। পরিদর্শনের পরে Genome Library Preparation, PCR, Real Time PCR এসব যন্ত্রপাতির কথা মাথায় রেখেই যবিপ্রবিতে জিনোম সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়। সব প্রস্তুতি শেষে ল্যাবরেটরিটি যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের নিচতলায় ১১৩ নম্বর কক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কক্ষটি সব প্রকার বায়োসেফটি এবং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনেই তৈরি ।

বর্তমানে 16S ribosomal RNA (rRNA) sequencing এর জন্য SeqStudio™ Genetic Analyzer নামক ৪ কেপেলারির মেশিন, Next-generation sequencing (NGS) এর জন্য Ion GeneStudio S5 Semiconductor Sequencer মেশিন, Real Time PCR এর জন্য QuantStudio™ 3 Real-Time PCR Systems মেশিন সেটআপ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে Field emission scanning electron microscope । সুতরাং এই জিনোম সেন্টারে একই সঙ্গে যেকোনো কিছুর Whole Genome Sequence এবং 16S ribosomal RNA (rRNA) sequence করা যাবে। ইতোমধ্যে এই সেন্টারটিকে বাণিজ্যিকীরণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও যবিপ্রবি জিনোম সেন্টার ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ, বিভিন্ন অণুজীবের DNA সিকুয়েশ্চিং, ব্যাকটেরিয়ার জীবন রহস্য উন্মোচন ইত্যাদি কাজ করতে সক্ষম। ভবিষ্যতে আরও একটি উন্নতমানের NGS মেশিন ক্রয় করা এবং জিনোম সেন্টারকে একটি বায়োইনফরমেটিক্স ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমরা এই জিনোম সেন্টারে ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণ ও এর ঔষধ তৈরিতে নিজেরাই কাজ করব। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি ও লোকবল দুটোই আমাদের আছে। সাধারণত পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ধরনের কাজ করা হয় এবং বাংলাদেশ থেকে প্রচুর নমুনা সেখানে পাঠানো হয়। আমাদের চেষ্টা করবো যেনো খুব দ্রুত এই বিষয়ে কাজ শুরু করার।

উল্লেখ্য,দেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বাইরে এটিই প্রথম কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ল্যাব ।গত দেড়মাসে যশোরসহ আশপাশের জেলার প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এই জিনোম সেন্টারে। এতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৬০ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *