শ্রীনগরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটায় জে.সি বোস বিশ্ববিদ্যালয় দাবি উপেক্ষিত

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


গত ২৫ জুন, ২০২০ইং তারিখে এ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তিন জেলায় আরও ৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মতামত দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভাবলাম একটু দেখি এতো দিনের দাবি শ্রীনগরের রাড়িখালে জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে কিনা।

দেখি পাশের জেলার নামটি থাকলেও আমার শ্রীনগরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। শুধু যে এখন দেখি তা না, যখন কোন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রজ্ঞাপন হয় তখন দেখি শ্রীনগরের রাড়িখালে স্যার জেসি বোস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে কিনা?

নাটোর ও মেহেরপুর জেলা ছোট জেলা হলেও সেখানে দেখলাম ২টি করে সর্বমোট ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আমার জেলায় তো ১টিও বিশ্ববিদ্যালয় নাই।

এবার একটু পেছনে আসা যাক ২০১৮ সালে ৩০ নভেম্বর রাড়িখালে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর ১৬১-তম জম্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তৎকালীন সিনিয়র শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা, অতিঃ সচিব (অবঃ) মোঃ সাজ্জাদ কবির, যগ্নসচিব নজরুল ইসলাম ও মোতাহের হোসেন, উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ জাহিদুল ইসলামসহ উপস্থিত স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শ্রীনগরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটায় স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন বলে সকলে একমত হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এমনকি বিটিভির প্রতিবেদনে আমিসহ যগ্নসচিব নজরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল মাসুদ, স্থানীয় সচেতন নাগরিক আবদুর রশীদ খান, কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য ফাহামিদা ইয়াসমীন দীবা বক্তব্য উপস্থাপন করেন যা পরে খবরে প্রচারিত হয়।

এর পর গত ১৪/১০/২০১৮ইং পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক সংযোজনের কাজ উদ্বোধন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহিদুল ইসলামকে বিকশিত বিক্রমপুরের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আল-আমিন হুসাইন স্বাক্ষরিত শ্রীনগরের রাড়িখালে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে আরো জোরালো দাবি তুলে ধরেন।

পরবর্তীতে গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে মন্সিগঞ্জ-১ আসনের সকল প্রার্থীগণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শ্রীনগরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি বাস্তবায়নের । আমরা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকবার বর্তমান মাননীয় সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরির সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেওয়ার জন্য।

উল্লেখ্য, জে.সি বোস বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের জন্য মন্সিগঞ্জ-১ আসনের এমপিকে আহবায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য সদস্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন Facebook Group যেমনঃ Alumni Association of Sir J.C. Bose Institution, Bikrampur, বিকশিত বিক্রমপুর এর মাধ্যমে আমি ব্যক্তিগতভাবে সকলকে অনুরোধ করা করেছি সংযুক্ত থাকার জন্য যা চলবে আগামি ৫ জুলাই, ২০২০ইং পর্যন্ত।

আমরা বিশ্বাস করি, বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে শ্রীনগরে জে.সি বোস বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিক্রমপুরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

১৯২১ সাল। দেশের শিক্ষার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিক্রমপুরে জগদীশ চন্দ্র বসু (জেসি বোস) ইন্সস্টিটিউশন (হাইস্কুল) প্রতিষ্ঠা হয়। পরে ১৯৯৪ সালে এটি কলেজে উন্নীত হয়। আমাদের প্রাণের দাবী, রাড়িখালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। বিখ্যাত এ বিজ্ঞানীর জন্ম (৩০নভে’ ১৮৫৮) স্থান, পৈত্রিকবাড়ি, শৈশব ও বাল্যস্মৃতি বিজড়িত রাড়িখালে,শ্রীনগর উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ।

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাও বসুদের এ বাড়িতে রয়েছে (আনুমানিক ৩৫- থেকে ৪০ একর)। এছাড়া আশেপাশে প্রায় ১০০ একরের বেশি জমিদার যদুনাথ রায় বাবু’র খাস জমি, বিশাল বাড়ি ও জায়গা জমি রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসসহ একাডেমিক ভবন হতে পারে। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণের কোন দরকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এর নামকরণ হতে পারে “বিক্রমপুর স্যার জে সি বোস বিশ্ববিদ্যালয়।

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একজন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম দিকের একজন কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা। তার গবেষণার ফলে উদ্ভিদবিজ্ঞান শাখা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা হয় তার হাত ধরে। গাছের প্রাণ আছে। এ আবিস্কারের জন্য জগদীশ চন্দ্র বসু জগত বিখ্যাত। তাছাড়া বেতার যন্ত্র আবিস্কারের ক্ষেত্রেও তাঁর অনেক গবেষণা ছিল। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স তাকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করে। বিখ্যাত এ বিজ্ঞানীর নামে ওপাড় বাংলায় বসু মানমন্দিরসহ বহু প্রতিষ্ঠান আছে । ইংল্যান্ডে ৫০ পাউন্ডের মুদ্রায় জগদীশচন্দ্র বসুর ছবি ছাপানো হয়েছে অথচ বাংলাদেশে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে তেমন কিছু নেই বললেই চলে। আমরা আশা রাখি, এদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির অন্যতম পাদপীঠস্থান বিক্রমপুরের অতীত ও বর্তমানকে সদয় বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এ প্রাণের দাবী পূরণের আশ্বাস দিবেন।

উল্লেখ্য যে, গত ১০-০৭-২০১৮ইং অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ”যে সমস্ত জেলায় এখনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সে জেলায় পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি আরও বলেন ‘যুগোপযোগী শিক্ষার প্রতি বর্তমান সরকারের দৃষ্টি রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী। তাদের মেধা বিকাশের সব চেষ্টা করছে সরকার।”

শ্রীনগরের রাড়িখালে জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশের পৈতৃক নিবাসে পিছিয়ে পড়া মানুষের উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা ও দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর শিক্ষাকে আরও গতিশীল করতে এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন। এ এলাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে শ্রীনগরসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অধিক সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আশা করি, শ্রীনগরের রাড়িখালে বিজ্ঞানী জগদীশের পৈতৃক নিবাসে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব; মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব; জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মুন্সীগঞ্জ; ইউএনও শ্রীনগরসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর স্কলারশীপ প্রাপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *