সিপিডির তথ্যমতে, করোনার প্রকোপে প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে

সিপিডির তথ্যমতে, করোনার প্রকোপে প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে

দ্যা ক্যাম্পাস টুডেঃ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক জরিপে দেখা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে ৬২ শতাংশ মানুষ হারিয়েছে তাদের কাজ।গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে বেশিরভাগ মানুষ ই হারিয়েছে তাদের কাজ।

প্রতিষ্ঠানটির জরিপে উঠে এসেছে কাজ হারানোর ফলে বেশিরভাগ মানুষই আবার নতুন করে ফিরে এসেছেন কর্মসংস্থানে। কিন্তু এরপরও কমে গেছে তাদের আয় রোজগার। কমে এসেছে কর্মঘণ্টাও। রোজগার কমে যাওয়ায় প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন ঋণের বোঝা। অনেকেই আবার তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন।

বুধবার (৫ মে) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজন করা হয় ‘কোভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি : কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ শীর্ষক এক সংলাপে এ জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়।

রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম সিপিডির পক্ষে তুলে ধরেন একটি জরিপ প্রতিবেদন। তিনি বলেন, শ্রমশক্তির কাঠামোর উপর ভিত্তি করেই ২৬০০ খানার ওপর এই জরিপ পরিচালিত হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জরিপটি তৈরি করা হয়েছে। ফলে মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরু থেকে করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে তা জরিপে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

তৌফিক বলেন, জরিপের তথ্যমতে প্রায় ‘৬২ শতাংশ মানুষ তাদের কর্ম হারিয়েছেন।কিন্ত ওই একই সময়ে সবাই কর্ম হারাননি। অধিকাংশ মানুষই কাজ হারিয়েছেন গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে। অধিকাংশ মানুষ ই কাজ হারিয়েছেন, লকডাউন বা সাধারণ ছুটির সময়।

তৌফিক বলেন, চাকরি হারানো মানুষের মধ্যে, প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন ছিলেন।‘তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের জরিপ করা অবস্থায়ই আবার সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন। হিসাব করে দেখা যায়, মোট কর্মসংস্থানের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেড়েছে।’

নতুন কর্মসংস্থানের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, এ কর্মসংস্থানটা এসেছে মূলত কৃষিখাত থেকে। কৃষিখাতে কর্মসংস্থার প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। সেই তুলনায় আমাদের সেবা খাত যেটা কর্মসংস্থানের সব থেকে বড় জায়গা, সেখানে আমরা দেখছি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রায় দেড় শতাংশের মতো কমে গেছে। শিল্পখাতে কর্মসংস্থার প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।’

জরিপের তথ্য তুলে ধরে তৌফিক বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি করোনায় কর্মসংস্থান সেবা খাত থেকে কৃষিখাতের দিকে চলে গেছে। ফলে আমরা যে ধরনের কাঠামোগত রূপান্তরের কথা বলি, সেই রূপান্তর যতটা আধুনিক খাতে হওয়ার কথা ছিল, সেটা আরো পেছনের দিকে চলে গেছে।’

তৌফিক আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি নতুন করে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলো তার প্রায় ৯০ শতাংশ হয় স্ব-নিয়োজিত খাতে গেছেন অথবা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। অথবা তারা দৈনিক শ্রমিকের কাজ করছেন। ফলস্বরূপ যে কর্মসংস্থান এর সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হয়েছে।’

জরিপে কর্মঘণ্টার চিত্র তুলে ধরে তৌফিক বলেন, করোনায় কর্মঘণ্টা দৈনিক প্রায় ৪ শতাংশের মতো কমেছে। সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান দিয়েছে কৃষি খাত, সেখানেও কর্মঘণ্টা কমে গেছে। এতে বোঝা যায়, কৃষি কাজে আগে যেখানে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হতো, সেখানে এখন অধিক হারে শ্রমিক যুক্ত হচ্ছে।’

যারা কাজ হারিয়েছেন নতুন করে কর্মসংস্থানে ফিরলেও তাদের আয় কমে গেছে বলে সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে তৌফিক বলেন, ‘কর্মসংস্থান ফিরলেও আমরা জরিপে দেখেছি প্রায় ৪৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে আগে তাদের যে আয় ছিল, এখন তার থেকে কম আয় হচ্ছে।

আয় কমার এই হার গড়ে ১২ শতাংশের মতো। এর মধ্যে সব থেকে বেশি কমেছে কৃষি খাতে। প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ আয় কমেছে কৃষি খাতে। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতেও সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে আয় কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘আয় কমার চিত্র আমরা বয়সভেদেও দেখেছি। সেখানে আমরা দেখেছি সব বয়সের কর্মীদের আয় কমেছে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের আয় বেশি কমেছে। তাদের আয় কমেছে ১৫ শতাংশের ওপর। ৩০-৪৯ বছর বয়সীদের আয় কমেছে ১০ শতাংশের ওপর।’

জরিপের তথ্য তুলে ধরে সিপিডির এই রিসার্চ ফেলো বলেন, ‘৪২-৪৩ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের কর্ম পরিস্থিতি আগের থেকে খারাপ। প্রায় ৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন তারা আগের মতো যথেষ্ট আয় করছেন না। অর্থাৎ তারা যে ধানের আয়ের প্রত্যাশা করেন, এখন তার থেকে কম আয় করছে। সুতরাং তারা তাদের কাছের ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট নয়।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment