সৌন্দর্যের লীলাভূমি হাবিপ্রবি ক্যাম্পাস

মোঃ রুবাইয়াদ ইসলাম, হাবিপ্রবি: উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ এবং আদর্শ বিদ্যাপীঠ হলো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর; সংক্ষেপে হাবিপ্রবি। দাতা হাতেম তাই হিসেবে খ্যাত হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামানুসারে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তন্মধ্যে গুণে-মানে ও সৌন্দর্যে হাবিপ্রবির স্থান সবার উপরের সারিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনাজপুর শহর হতে ৯ কিলোমিটার উত্তরে এবং ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের পশ্চিমে ১৩৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১১ হাজার শিক্ষার্থী , ৫৫০ জন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ, ২৯৩ জন শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ এবং ৯ জন ডিন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নয়টি অনুষদের অধীন দশটি স্নাতক ডিগ্রী এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট অনুষদের অধীনে বত্রিশটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত একটি কলেজ এবং একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে।

অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ৫টি অ্যাকাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ৫টি ছাত্র হোস্টেল(একটি বিদেশী শিক্ষার্থীদের), ৩টি ছাত্রী হোস্টেল, আধুনিক সাজসজ্জা বিশিষ্ট ১০০ আসনের একটি ভিআইপি সেমিনার কক্ষ, ৬০০ ও ২৫০ আসন বিশিষ্ট আরও দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটরিয়াম।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্লাব,২টি মসজিদ, ১৩৬টি আবাসিক ইউনিট/ভবন,১টি শিশুপার্ক, পোষ্ট অফিস, রূপালী ব্যাংক শাখা, মেঘনা ব্যাংক শাখা, শ্রমিক ব্যারাক, সার্বাক্ষণিক ইন্টারনেট সুবিধা, নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন,বৃহৎ খেলার মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (আই.আর.টি.)।

হাবিপ্রবিতে ডিভিএম এর গবেষণার জন্য রয়েছে একটি উট পাখির খামার যা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উট পাখি পালনের উপর গবেষণা করছে। প্রত্যেক বছরই বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী উটপাখি দেখতে হাবিপ্রবির ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে।

এছাড়াও রয়েছে নানা প্রজাতির পশু পাখির সমন্বয়ে একটি বিশাল গবেষণা স্থান। আছে একটি ভি. আই. পি গেস্ট হাউস, হাবিপ্রবি স্কুল, ডাক্তার ও এ্যাম্বুলেন্সসহ ১২ শয্যার একটি মেডিক্যাল সেন্টারও।

গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে ২৫ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ দ্বিতলাবিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক লাইব্রেরি। দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির আকর্ষণীয় সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং বিভিন্ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গবেষণার জন্য জার্মপ্লাজম সেন্টার।

উত্তরাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাবিপ্রবিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাল-সাদা ইটের সুবিশাল ভবন। হাবিপ্রবিতে প্রবেশের জন্য তিনটি প্রধান গেট রয়েছে। সবুজ গাছপালার সমারোহ আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে সবারই মন ভরে যায়।

ক্যাম্পাসের ঢোকার আগ মুহূর্তেই মানুষের চোখে ধরা পড়ে যায় হাবিপ্রবির সৌন্দর্য। হাবিপ্রবিতে এসে ঘুরে গেছে অথচ হাবিপ্রবির সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখানে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বলে খ্যাত টিএসসিতে পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামসহ আড্ডাবাজিতে সারাদিন মুখর হয়ে থাকে। এটি হাবিপ্রবির সৌন্দর্যকে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ক্যাফেটরিয়া এবং একটি জিমনেসিয়াম।

জিমনেসিয়ামে ছেলেদের এবং মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেওয়ায় তারা দুদলই সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। হাবিপ্রবির ক্যাফেটোরিয়াতে রয়েছে নানান ধরনের মুখরোচক খাবার। হাবিপ্রবিতে ছোট ছোট অনেকগুলো চত্বর রয়েছে। তন্মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ রিমা চত্বর, এলিয়েন চত্বর, ডি বক্স, ও বক্স, বাবুই চত্বর; এছাড়াও রয়েছে ময়নার দ্বীপ, সুবিশাল লিচু বাগান ও আম বাগান।

হাবিপ্রবির ডি-বক্স চত্বরে যেন সর্বদা ব্যস্ততা লেগেই থাকে। আর ডঃ এম এ ওয়াজেদ ভবনের সামনে অবস্থিত ও বক্সকে বলা হয় ক্যাম্পাসের শুটিং স্পট। হাবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সৌন্দর্য যেন বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা।

হাবিপ্রবির লাইব্রেরী চত্বরের পাশে চলে বিভিন্ন ক্লাবের প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের আড্ডাবাজি। হাবিপ্রবিতে রয়েছে উত্তরবঙ্গের সর্বশেষ্ঠ কর্নার ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’। এর প্রবেশ পথেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের মানচিত্র।

তাইতো বাংলাদেশের মধ্যে সব ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের লীলাভূমি হাবিপ্রবির ক্যাম্পাসকে বলা হয়।

Scroll to Top