স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: কর্মজীবী নারীদের জন্য করণীয়

আবু জাফর আহমেদ মুকুল
ইসরাত জাহান ইতি


স্ট্রেস এক ধরনের শারিরীক, মানসিক ও আবেগ সংক্রান্ত ফ্যাক্টর যা শারিরীক কিংবা মানসিক টেনশনের সৃষ্টি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি এমন কিছু হয় যা সম্ভবত আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। দুর্ভাগ্যবশত স্ট্রেস অনেক মানুষের জীবনের নিয়মিত অংশে পরিণত হয়েছে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনে জানিয়েছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্ট্রেসকে “একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ স্বাস্থ্য মহামারী” বলে অভিহিত করেছে।

দ্য আমেরিকান মনস্তাত্ত্বিক এসোসিয়েশন রিপোর্ট যে ৫০% এরও বেশি আমেরিকান চাপে ভুগছেন বিভিন্ন কারণে. উপরন্তু, প্রাপ্তবয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানদের ৯১% তারা রিপোর্ট করেছেন যে মানসিক চাপ অনুভব করেন, তাদের জীবনের কমপক্ষে একটি ক্ষেত্রে। প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নির্বাহী, কাজের-যুক্ত চাপের কারণে যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর ১২.৫ মিলিয়ন কর্ম দিবস হারাতে হয়। এই অবিরাম মানসিক চাপ সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হলে হার্ট অ্যাটাক বা আলসার হতে পারে।

স্ট্রেস কখনও কখনও করতে পারেন অব্যবস্থাপনা কারণ এটি তখন স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে শক্তির উত্সকে লক করে দেয়। খারাপ চাপ থেকে প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা। সেখানে তিন ধরণের চাপ, যার প্রত্যেকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, উপসর্গ এবং সময়কাল রয়েছে; তীব্র চাপ, এপিসোডিক তীব্র চাপ এবং দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস। বাস্তব ক্ষেত্রে, স্ট্রেস ব্যক্তির পারিবারিক ইতিহাস, আর্থিক স্ব-ক্ষমতা ও আয়ের বিন্যাস এবং সামাজিক মর্যাদার উপর নির্ভর করে।

স্ট্রেসের কারণেও কর্মজীবি নারীরা অনেক ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে , ঢাকা শহরে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে ডিভোর্সের আবেদন করা হচ্ছে অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) হিসাবে প্রতি দুই ঘণ্টায় সেখানে একটি করে ডিভোর্সের আবেদন করা হচ্ছে । ডিভোর্সের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়-প্রায় ৭৫ শতাংশ আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত সাত বছরে ডিভোর্সের প্রবণতা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, স্ত্রীর পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদন বাড়ছে। উত্তর ও দক্ষিণে ডিভোর্সের আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে। শিক্ষিত ও কর্মজীবীদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক বেশি। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও উত্তরার অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারীরা বেশি ডিভোর্সের আবেদন করছেন। দক্ষিণ সিটিতে মোহাম্মদপুর, কাওরান বাজার এলাকায় পেশাজীবী নারীরা বেশি ডিভোর্স দিচ্ছেন।

এক হিসাবে দেখা যায়, বিভাগীয় শহরে বিচ্ছেদের হার ৪৯.০৩ শতাংশ আর জেলা শহরে ৩৫.৫ শতাংশ। এ ছাড়া একক পরিবারে থাকা দম্পতিদের যৌথ পরিবার থেকে আসা দম্পতিদের তুলনায় ডিভোর্সের হার বেশি। ডিভোর্সের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তাদের সংখ্যা বেশি (হাজারে এক দশমিক ৭ জন)। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নারী নিজেই এখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে অনেকে নিজের পেশাজীবনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে আগের চেয়ে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক কারনের পাশাপাশি আছে অনেক ধনীর দুলালীর আত্মঅহমিকাও।

নারীরা সংসারের বিপুল ঝক্কি সামলান বিনামূল্যে। যে কাজে কোনো অর্থ দেওয়া হয় না, সেটা জিডিপিতে যুক্ত হবে না। এটাই নিয়ম এর বাইরে অর্থের বিনিময়ে বাজারজাতযোগ্য উৎপাদন ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। নারী-পুরুষের অবদান আলাদাভাবে দেখানো হয় না সরকারি কোনো তথ্যে। তবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে নারী-পুরুষের অবদান পৃথকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

এরই অংশ হিসেবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের করা গবেষণা ‘রিয়ালাইজিং দ্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রমোটিং ফিমেইল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন’-এ বের করেছে, জিডিপিতে নারীর ভূমিকা ২০ শতাংশ। এটি একজন নারী বছরে যত কাজ করেন, তার মাত্র ১৩ থেকে ২২ শতাংশের হিসাব। বাকি ৭৮ থেকে ৮৭ শতাংশ কাজের বিনিময়ে কোনো মূল্য পান না তারা। তাই ওই কাজের হিসাব জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না। এটি যুক্ত হলে জিডিপিতে নারীর অবদান হতো পুরুষের সমান।

উদাহরণ বলা যায় ‘এখন নারী বাসায় যে কাজ করছে, যেমন কাপড় ধোয়া, সেটা হিসাবে আসছে না। যদি লন্ড্রির দোকানে ধোয়া হতো, তাহলে তার জন্য দোকানদারকে টাকা দিতে হতো। এখন গৃহস্থালি বা গৃহস্থালির বাইরেও নারী অনেক কাজ করছে, যেটা হিসাবে আসছে না।

আমরা অন্য একটি গবেষণায় দেখেছি, নারীরা পারিবারিকভাবে যে সহিংসতার শিকার হয়, তাতে তারা অনেক কাজ করতে পারে না। ফলে মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা কমাতে পারলে এই ক্ষতিটা হতো না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নারীকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও কাজের আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ যত বাড়বে, উন্নয়নের গতিও তত বাড়বে। কারণ জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাছাড়া বর্তমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) এর ৫ নম্বর লক্ষ্য- লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সব নারী ও মেয়ের ক্ষমতায়ন করা। সে পথ ধরে তর তর করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এর ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে চলতি জিডিপিতে নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। দক্ষতার অভাব, পারিবারিক কাজের চাপ ও নিয়োগকর্তাদের মানসিকতার কারণে নারীরা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বড় পদে আসতে পারছেন না বলে দাবি করেছে বিবিএস।

সংস্থাটি বলেছে, কৃষি খাতের ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার শ্রমিকের মধ্যে নারী ৯৬ লাখ ৪৪ হাজার, যা মোট কৃষিশ্রমিকের ৪৯ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুসারে গৃহস্থালির কাজে একজন পুরুষ যেখানে দেড় ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, সেখানে একজন নারী ব্যয় করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে যে প্রতিদিন একজন নারী গড়ে একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সময় এমন কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। সুতরাং অর্থ রোজগারের জোরে পুরুষ যে ক্ষমতা চর্চা করেন, তা কতটা যুক্তিসংগত?

ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই দেশের নারীরা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এমআরআই) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুনে দেশে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার। এর ৯০ শতাংশই নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। একটি দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কতজন নারী এ হিসাবে বিশ্বের ৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে ৬ নম্বরে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা ২৩ লাখ।

জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। জিডিপিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান শতকরা ৩৪ ভাগের বেশি। সেই তৈরি পোশাক শিল্পে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারী কর্মী কাজ করছে। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ১০ কোটি ৯১ লাখ মানুষের মধ্যে নারীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। মোট কর্মক্ষম জনশক্তির অর্ধেকের বেশি নারী হলেও কর্মবাজারে আছেন মাত্র ২ কোটি।

এ হিসাবে নারী জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ সরাসরি কর্মবাজারে আছেন। বাইরে থাকা সাড়ে ৩ কোটি নারী কাজে যোগ দিলে দেশের মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ঘটবে- এ কথা বরাবর বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব ও পারিবারিক কাজের চাপে তাদের বড় অংশ শ্রমবাজারের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গৃহস্থালির কাজ নারীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ার পথে বড় বাধা। কর্মবাজারে যোগ না দেওয়া নারীর ৮১ দশমিক ১০ শতাংশই এর জন্য ঘরের কাজের চাপকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে একই কারণে কর্মবাজারে প্রবেশে বাধা পাচ্ছেন ৮ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ। উপযুক্ত কাজ পেলে শ্রমবাজারে যোগ দিতে ইচ্ছুক এমন নারীর সংখ্যাও পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে শ্রমবাজারে যোগ দেবেন আরো ১৫ লাখ ৮৭ হাজার নারী। আর কাজ পেলে যোগ দেবেন এমন পুরুষের সংখ্যা ৮ লাখ ৪৬ হাজার।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ব্যবস্থাপক পর্যায়ে শ্রমজীবীদের মাত্র ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী। এ ছাড়া পেশাজীবীদের ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, কারিগরি সহযোগীদের ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ, পাইকারি বাণিজ্যে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ নারী। শীর্ষ ব্যবস্থাপক পর্যায়ে নিয়োজিতদের মাত্র ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ নারী। দায়িত্বের পাশাপাশি বেতনের ক্ষেত্রেও নারীরা বৈষম্যের শিকার।

সম্প্রতি উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন পুরুষ প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৫৮৩ টাকা বেতন পেলেও নারীরা পান ১২ হাজার ২৫৪ টাকা। ব্যবস্থাপক পর্যায়ে পুরুষরা গড়ে ৩৬ হাজার ১৩৩ টাকা বেতন পেলেও নারীরা পান ৩২ হাজার ৫৮৮ টাকা।

এ ছাড়া পেশাজীবীদের মধ্যে মাসিক আয়ে ২ হাজার ২৮ টাকা, টেকনিশিয়ানদের ৮৭২ টাকা, করণিক পর্যায়ের সহযোগীদের ১ হাজার ৪৭৯ টাকা, পাইকারি সেবায় ৭৯৪ টাকা, কৃষি ও বনায়নে ১ হাজার ৭০৬ টাকা, খুচরা ব্যবসায় ৮৫৩ টাকা, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় ৯০৯ টাকা ও অন্যান্য কাজে ৩ হাজার ৭৫৪ টাকা কম পাচ্ছেন নারীরা। গৃহস্থালি কাজেও নারীরা তুলনামূলক কম বেতন পাচ্ছেন। এ খাতে পুরুষের গড় বেতন ৯ হাজার ৪৪১ টাকা। আর নারীর ৭ হাজার ৬৪৪ টাকা।

কর্মজীবী নারীদের নিরাপত্তার জন্য আবাসন, পরিবহন ও বাচ্চাদের ডে-কেয়ার সেন্টারের অপ্রতুলতা। তাদের চলাচলের পথে নারীদের জন্য পৃথক ওয়াশরুম, নামাযের ঘর ও বাচ্চাদের খাওয়ানোর পৃথক ব্রেস্ট ফিডিং রুম নেই বললেই চলে। খোদ রাজধানীতেই নারীদের ব্যবহার উপযোগী মাত্র ২৬টি টয়লেট রয়েছে।

সাম্প্রতিককালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৩.৩ শতাংশ কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী বান্ধব টয়লেট এক শতাংশও নেই। যার ফলে সর্বোপরি অনেক ক্ষেত্রে ঢাকা শহরেও নারী বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি। অনেক নারী নানারকম জটিল রোগে ভুগছেন।

উল্লেখ্য যে, সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস নির্ধারন করে দিলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৩ মাসের বেশি ছুটির অনুমোদন দেয় না। গত ১০ই মে, ২০২০ইং সারা বিশ্বে মা দিবস পালন করা হয়। মা শব্দটি ছোট হলেও এর পরিধি বিশাল। নিষ্ঠা সহকারে দায়িত্ব পালনে মায়েরা থাকেন সন্তানদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মা হিসেবে একজন নারীকে যেমন আমরা সকলে শ্রদ্ধা করি। তেমনি সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব। যার ফলে পরিবারে নানারকম মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে বৃহত্তর স্বার্থে উভয়কে ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে চলা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্মজীবি নারীদের জন্য কর্মজীবনের সহকর্মীদের হিংসা-বিদ্বেষ বাদ দিয়ে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল মনোভব পোষণ করাও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কর্মজীবনে নারীরা হতাশায় ভোগেন, তার বড় একটা কারণ হচ্ছে পরিবারের অসহযোগিতা।

ফলাফল, হয় ব্যক্তিগত জীবনে টানা অশান্তি, নয় শেষমেশ কাজটাই ছেড়ে দেয়া। ভাবুনতো, একজন পুরুষকে তো তার বাইরের কাজের জন্য এত ভেবে চিন্তে পা ফেলা লাগে না, তবে একজন নারীকে কেন ভাবতে হবে প্রতি পদে? অথচ, চাইলেই পরিবার সবচেয়ে বড় সমর্থন হয়ে উঠতে পারে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে। বিষয়টা খুব কি কঠিন?


লেখকবৃন্দঃ আবু জাফর আহমেদ মুকুল, পিএইচডি গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এবং ইসরাত জাহান ইতি তরুণ নারী উদ্যোক্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *