স্থানীয় হতে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ‘জলাভূমির শাসন’ শক্তিশালী করার দাবি
ডেস্ক রিপোর্ট: সম্প্রতি ভার্চুয়াল সেশনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর আহমেদ মুকুল উপস্থাপনায় আগামির বাংলাদশ আয়োজিত “জলাভূমি, জীবন ও জীবিকা রক্ষায় আড়িয়াল বিলের ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যা পরবর্তীতে চ্যানেল আই নিউজে চুম্বক অংশ তুলে ধরা হয়।
আলোচনায় Panelist হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন: মুকিত মজুমদার বাবু, চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন; প্রফেসর ড. প্রফেসর ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়; ফরিদউদ্দিনআহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, আরন্যক ফাউন্ডেশন;আবদুর রশীদ খান, লেখক ও গবেষক, আড়িয়াল বিল; এবং ড. রঞ্জন রায়, সহযোগী অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূচনা বক্তব্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর আহমেদ মুকুল আড়িয়াল বিলের অবস্থান এবং ভুমি দখলদারদের আগ্রাসনের বিষয়টি জোরালো ভাবে তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন জলাভূমি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। জলাভূমির অর্থনৈতিক অবদান বিরাট, যেমন আড়িয়াল বিল মৎস্য সম্পদের বড় ভাণ্ডার। তাছাড়া, আড়িয়াল বিল-কেন্দ্রিক বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে অর্থনীতি জড়িত। টেকসই উন্নয়নে জলাভূমির ভূমিকা অপরিসীম।
এছাড়াও, জলাভূমির কতকগুলো ইউনিক গুরুত্ব আছে। ড. রঞ্জন রায় বলেন সব দেশেই জলের কোয়ালিটি নিম্নমুখী। জলাভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনায় এর অন্যতম সমাধান। জলাভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কার্বন স্টোর। জলাভূমি, ওয়াটার সাইকেল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে, যা পানির সহজলভ্যতা, প্রাপ্যতা, খরা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আলোচকরা উল্লেখ করেন ১৯৭০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে ৩৫ শতাংশ জলাভূমি কমে গেছে, এই হারটা বনাঞ্চল কমে যাওয়া থেকে তিনগুন বেশী। বাংলাদেশে এই হার হয়ত আরও বেশী। তবে, মানুষের-সৃষ্টি জলভূমির পরিমাণ ধীরে-ধীরে বাড়তেছে।
বাংলাদেশের দুই-তীতৃয়াংশই জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত। নিকট অতীতেও এদেশে জলাভূমিকে বলা হত জঞ্জালভুমি। দুঃখজনক হলেও সত্য এই জঞ্জালভুমিকে কমানো অনেকে শ্রেয় মনে করতেন। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে জলাভূমি ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। বর্তমানে, এদেশে চারভাগের এক ভাগ জলাভূমির প্রজাতি ধংসের মুখে।
সবুজ আর নীল আকাশের স্বর্গ আড়িয়াল বিল। এই বিল আজ হুমকির মুখে। আড়িয়াল বিলে অতিথি পাখির আগমন নেই বললেই চলে। দখলদাররা অক্টোপাসের মতো চারপাশ থেকে আড়িয়াল বিলকে চেপে ধরেছে। টপসয়েল কাটা, নতুন বসতি স্থাপন, ও বাঁধ নির্মান অবাধে চলছে।
আড়িয়াল বিলের এই অবস্থার জন্য Direct এবং Indirect Factor রা দায়ী। Direct Factors গুলো প্রাকৃতিক বা মানুষের সৃষ্ট। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থাপনা নির্মাণ বা স্থাপনার পরিবর্তন। Indirect Factors দের প্রভাব বৃহৎ এবং বিস্তৃত। এরা প্রাতিষ্ঠানিক, আর্থ-সামাজিক, ডেমোগ্রাফিক, এবং সাংস্কৃতিক উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমনঃ অযাচিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ।
জলাভূমির পুনরুদ্ধার, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। আবদুর রশীদ খান উল্লেখ করেন ১৩ টা খাল কে যদি পুর্নঃজীবিত করতে পারি এবং পদ্মার ধাক্কাটা যদি আড়িয়াল বিলে লাগে তাহলে এই বিল আগের সমহিমায় ফিরে যাবে। ড. রায় জোড় দেন জলাভূমির জাতীয় ইনভেন্টরী প্রতিষ্ঠা এবং জলাভূমির জাতীয় পলিসি বা স্ট্রাটেজি প্রণয়ন ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উপর।
ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন আড়িয়াল বিলের উপর বিস্তারিত গবেষণা হওয়া উচিত। সব বক্তাই বলেন রামসার কনভেনশন নির্দেশিত জলাভূমির প্রাজ্ঞ (Wise) ব্যবহারের গাইডলাইন কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
মুকিত মজুমদার বাবু বলেন আমাদের অনেক গুলো ভালো পলিসি, অ্যাক্ট, ও রেগুলেসন থাকলেও সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন দেখছি না। তিনি জোড় দেন ডেল্টা প্লান কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উপর এবং বলেন এই প্লান বাস্তবায়ন হলে জলাভূমির বা আড়িয়াল বিলে এই দূর্দসা থাকবে না।
প্রফেসর ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন সরকার অনেক কারনেই পলিসি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়তেছে। মূলত মন্ত্রনালয়ের মধ্যে সম্বন্নয়হীনতাকে এর জন্য দায়ী করেন। এক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দেন সকল পক্ষকে নিয়ে ইন্টিগ্রেট্রট সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তার বাস্তবায়ন করার।
সবশেষে আলোচকরা জোড় দেন বিভিন্ন স্তরে অর্থ্যাৎ স্থানীয় হতে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত “জলাভূমির শাসন” শক্তিশালী করার।“