স্থাপত্য শৈলিতে অনন্য ঝিনাইদহের মিয়ার দালান

স্থাপত্য শৈলিতে অনন্য ঝিনাইদহের মিয়ার দালান

হৃদয় পালঃ ঝিনাইদহ জেলা ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতি ও শিক্ষার এক আলোকিত নগর।ঝিনাইদহ জেলার প্রাণ আরাপপুর নামক জায়গা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মিয়াপাড়াতে অবস্থিত নন্দিত ‘মিয়ার দালান’ নামক পুরাতন ভবনটি। বাড়িটির সম্মুখের ভগ্নপ্রায় প্রাচীর থেকে জানা যায়, এর নির্মাণের কাজ ১২২৯ সালে শুরু হয় এবং ১২৩৬ সালে সমাপ্ত হয়।

মাথাভাঙ্গা নদীর একটি শাখানদী নবগঙ্গার তীরঘেষে বাড়িটি অবস্থিত।বাড়িটি ঝিনাইদহের অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান। ভবনটির নির্মাতা চমৎকারভাবে দেয়ালের গায়ে খোদায় করে নানানরকম কারুকার্য ফুটিয়ে তুলেছেন। যা অতি চমকপ্রদ।

তাছাড়া পুরাতন প্রথা অনুযায়ী ভবনটির গায়ে ছন্দাকারে লেখা রয়েছে- “শ্রী শ্রী রাম মুরারীদহ গ্রাম ধাম,বিবি আশরাফুন্নেসা নাম,কি কহিব হুরির বাখান।ইন্দ্রের আরামপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার,৭৫০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ,১২২৯ সালে শুরুম্ন করি কাজ,১২৩৬ সালে সমাপ্ত করি কাজ।”

মুরারীদহ গ্রামের স্থানীয়দের ভাষ্যমতে যে জমিদার ভবনটি নির্মাণ করেন তিনি ১৯৪৭ সালে বাড়িটি সেলিম চৌধুরী নামক ব্যাক্তির নিকট বিক্রি করে দেন। এজন্য অনেকের কাছে ভবনটি সেলিম চৌধুরীর বাড়ি নামেও পরিচিত। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটির বেশিরভাগ অংশই এখন ভগ্নপ্রায়। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনো চিহ্নিত করা যায়।

নদীতে বাঁধ দিয়ে ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল, এভাবে তৈরি আর কোনো পুরোনো ইমারত ঝিনাইদহ শহরে বর্তমানে নেই। বাড়িটি পূর্বে পরিচিতি লাভ করেছিলো একটি বিশেষ খেজুরগাছের কারণে। যে গাছটিতে একাধিক মাথা ছিল এবং প্রতিটি মাথা থেকেই রস সংগ্রহ করা যেত। এখন আর খেজুরগাছটির অস্তিত্ব নেই। বাড়িটিতে মোট ১৬ টি কক্ষ রয়েছে। এর ছাদে রয়েছে একটি চিলেকোঠা;ধারণা করা হয় এ কক্ষটি নামাজঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

এছাড়া নবগঙ্গা নদীতে বছরের বেশিরভাগ সময়ে খুব অল্প পরিমাণ পানি থাকে, এজন্য দেখা যায় নদীর ওপর সালতি নামক ছোট নৌকা নিয়ে কিছু লোক মাছ ধরছে। নদীর অগভীর পানিতে সাদা কচুরিপানার ঝোপ নদীর সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। বিকেলের সূর্য যখন অস্ত যায় মিয়ার দালানের পাশে নদীর পাড়ে সবুজ ঘাসের ওপর বসে অস্তমিত সূর্যের আলোয় প্রকৃতির অনাবিল রূপের মাঝে বেশ খানিকটা সময় ভালোভাবেই কাটিয়ে দেয়া যায়।মিয়ার দালান সংলগ্ন একটি বাঁধানো নদীরঘাটও রয়েছে সেখানে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যমণি বাড়িটি ভ্রমণকারীদের নিকট অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে;যদি এটাকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়। ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর থেকে অটো,রিক্সা অথবা ভ্যান সহযোগে দালানটিতে যাওয়া যায়। তবে আরাপপুর থেকে কাঁঠালবাগান নামক স্থানটি পার হলেই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ।

মহামারী করোনা ভাইরাস এর কারণে সপ্তাহের ছয়টি দিনই ভবনটি তালাবদ্ধ থাকে,তবে শুক্রবার ভবনটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।ঐতিহ্যপিপাসু লোকের কাছে ভবনটি হতে পারে অতিব নৈসর্গিক একটি স্থান।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment