হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হওয়ার পর থেকে স্থান নির্ধারণ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কোন এলাকায় স্থাপিত হবে- এ নিয়ে দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে চলছে রীতিমতো রশি টানাটানি।

পাসকৃত আইনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় স্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেহেতু (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহির দাবি করছেন এটা তার কৃতিত্ব। তার জোরালো দাবির মুখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বিশ্ববিদ্যালয়টি উপহার দিয়েছেন।

অন্যদিকে (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের দাবি, বানিয়াচং নাগুরাফার্ম কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ঘিরেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এখানে প্রায় ১শ’ একর ভূমি সরকারের মালিকানাধীন রয়েছে। তাই এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে।

এ নিয়ে দুই সংসদ সদস্য ও তাদের সমর্থকদের মাঝে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য প্রদান করেছেন উভয়েই। সূত্রমতে, সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৯শে নভেম্বর হবিগঞ্জ নিউফিল্ডে বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সভায় জেলাবাসীর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি তিনটি বড় দাবি উপস্থাপন করেন।

এর মধ্যে একটি দাবি ছিল- হবিগঞ্জে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যায় স্থাপন। সভায় (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তৎকালীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বানিয়াচং নাগুরাফার্ম কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ঘিরে কৃষি বিশ্ববিদ্যায় স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান।

পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে অন্যান্য দাবির সাথে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি ১ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পায়।

গত ২৩শে ডিসেম্বর বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে বিলটি গত ২৩শে জুন সংসদে উত্থাপিত হলে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটি ৭ই সেপ্টেম্বর বিলটির প্রতিবেদন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০ সংসদে পাস হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিলটি প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ, মৎস্য অনুষদ, প্রাণি চিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান অনুষদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ নামে ৪টি অনুষদ থাকবে বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন করবে।

জাতীয় পর্যায়ে কৃষি বিজ্ঞানে উন্নত শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রচলিত অন্যান্য বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ দেশে কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সমপ্রসারণের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে বলে আইনে বলা হয়েছে। এদিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশের পর ১৭ই সেপ্টেম্বর এমপি অ্যাডভোকেট আবু জাহির প্রেস ব্রিফিং করে সার্বিক বিষয় অবগত করেন।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে হবিগঞ্জবাসীর পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানান। এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে তার স্বপ্ন বাস্তায়ন হচ্ছে বলে জেলাবাসীকে অবহিত করেন। এরপর দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা প্রদান করেন। অন্যদিকে (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ২১শে সেপ্টেম্বর কৃষি বিশ্ববিদ্যায়র নাগুরা ফার্মে স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে হবিগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন।

একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করে ঢাকাস্থ বানিয়াচং এসোসিয়েশন। পরে ১লা অক্টোবর নাগুরা ফার্মের সামনে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *