১ টাকার মাস্টার!

১ টাকার মাস্টার!

রংপুর টুডেঃ একজন সফল মানুষের পেছনে একজন ভালো শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা বলাই বাহুল্য মাত্র। সেই শিক্ষক যে পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হতে হবে, শুধু তা নয়। তিনি থাকতে পারেন জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই।

সত্যিকারের শিক্ষক তাঁরাই, যাঁরা আমাদের ভাবতে সাহায্য করেন। যিনি তাদের শুধু সফল নয়, একজন ভাল মানুষ হতেও শেখান।
তিনি তার ছাত্র-কে শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন।

অপ্রিয় হলেও সত্য শিক্ষকতা কোনো পেশা নয়, এটা ব্রত। শিক্ষার এ ব্রত নিয়ে শিশুদের মাঝে আলো ছড়িয়ে দিতে জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন গাইবান্ধার লুৎফর রহমান। তারপর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৮৪ সাল থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ালেখায় সহযোগিতা করছেন লুৎফর রহমান। প্রথমদিকে ৮ থেকে ১০ জনকে একত্র করেন।

দীর্ঘ ৩৫ বছর এলাকার গ্রামগুলোতে শিক্ষার আলো ছড়ানোর বিনিময়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দিনে ৪ আনা (পঁচিশ পয়সা) থেকে শুরু করে বর্তমানে ১ টাকা পর্যন্ত ভাতা গ্রহণ করছেন এই মহান শিক্ষক। বর্তমানে মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাতা পান বলে জানান লুৎফর রহমান মাস্টার।

এদিকে গাইবান্ধা শহর ও গ্রামের মানুষ লুৎফর রহমানকে চেনেন ১ টাকার মাস্টার নামেই।গাইবান্ধার বাগুড়িয়া গ্রামটির আলাদা কোনো বিশেষত্ব না থাকলেও ১ টাকার মাস্টার লুৎফর রহমানের জন্যই আশেপাশের গ্রামের মানুষ গ্রামটিকে চেনে। নদী ভাঙনে সব হারানো এই নির্মোহ মানুষটি গ্রামের এক কোণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে একটি ছোট্ট টিনের ঘরে বাস করেন।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে শিশুদের লেখাপড়া শেখান। মাইলের পর মাইল এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম হেঁটে শিক্ষার্থী জোগাড় করেন। বই, খাতা, কলম নিয়ে রাস্তার ধারে বা গাছ তলায় বসে যান। প্রতিদিনের রুটিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা শিশুদের পাঠদান করান। এক টাকার মাস্টার নামটি এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তির।

লুৎফর রহমানের পরিচিতিঃ

বাবা ফইমুদ্দিন ব্যাপারী মারা গেছেন অনেক আগে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ১৯৫০ সালের ৭ আগস্ট গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া গ্রামে জন্ম তার। ১৯৭২ সালে ফুলছড়ি উপজেলার গুণভরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।

স্ত্রী লতিফুল বেগম, মেয়ে লিম্মি, লিপি এবং ছেলে লাভলু ও লিটনকে নিয়ে তার সংসার। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে লাভলু এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে আর পড়তে পারেনি। এখন অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকানির্বাহ করে। ছোট ছেলে লিটন একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। সংসারে অভাব-অনটনের শেষ ছিল না। কিছুদিন আগেও খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো। এখন বড় ছেলের সামান্য আয় দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে লুৎফর রহমান এভাবে ছেলেমেয়েদের পড়ান। অনেকেই তাকে এক সময় পাগল বলেও কটুক্তি করেছে। তারপরও দমে যাননি লুত্ফর রহমান মাস্টার । বাগুড়িয়া, মদনেরপাড়া, পুলবন্দি, চন্দিয়া, ঢুলিপাড়া, কঞ্চিপাড়া ও পূর্বপাড়ায় এ পর্যন্ত শতশত ছেলেমেয়েকে পড়িয়েছেন। তার অনেক ছাত্র এখন শিক্ষক, পুলিশ, চিকিত্সকসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও তার মনোবল কমেনি। শিক্ষার আলো ছড়ানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। আলোকিত এই মানুষটির উদ্যোগকে আরো এগিয়ে নিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তার পাশে দাঁড়ানো দরকার।

দ্য ক্যাম্পাস টুডে

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *