৬ মাসেও জ্ঞান ফেরেনি, কেমন আছে মুন্নি?

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, মুন্নি বিছানায় শুয়ে আছেন। ওঠা-বাসা বা খাওয়ার শক্তি নেই। অজ্ঞান অবস্থায় থাকায় স্যালাইনের নলের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে তরল খাবার। শরীর হয়েছে পড়েছে কঙ্কালসার।

ভুল চিকিৎসায় জ্ঞান হারানোর পর ছয় মাস পার হয়েছে, এখনো জ্ঞান ফেরেনি মরিয়ম সুলতানা মুন্নির। বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করালেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় তিন মাস আগে মুন্নিকে গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ভাড়া বাসায় নেয়া হয়। ওই বাড়িতে জীবন্মৃত হয়ে আছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মো. মোশারফ হোসেন বিশ্বাসের মেয়ে মরিয়ম সুলতানা মুন্নি।

মুন্নির বাবা মো. মোশারফ হোসেন বিশ্বাস বলেন, সদর হাসপাতালে ওই ঘটনার (ভুল ইনজেকশন পুশ) পর মুন্নিকে খুলনার আবু নাসের হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ ও শমরিতা হাসপাতালে তিন মাস ধরে চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে কোনো উপকার হয়নি। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টাকার অভাবে ঢাকায় চিকিৎসা করাতে না পারায় তিন মাস আগে জেলা শহরের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের পরামর্শে কোনোরকমে চিকিৎসা চলছে মুন্নির।

তিনি বলেন, কবে আবার আমার মেয়েটা ভালো হবে, সে অপেক্ষাতে আছি। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ভুল চিকিৎসার কারণে সে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

মুন্নির মা হাজেরা বেগম বলেন, “এখন আর মেয়ের দিকে তাকাতে পারি না। কতদিন হল মা ডাক শুনতে পারিনি। যে মেয়ে সারা দিন বাড়ি মাতিয়ে রাখত, সেই মেয়েই এখন বিছানায় শুয়ে থাকে। যারা আমার মেয়ের ভুল চিকিৎসা করেছে, তাদের বিচার চাই।”

মুন্নিকে ভুল ইনজেকশন (চেতনানাশক) দিয়ে অজ্ঞান করার মামলায় তার চাচা জাকির হোসেন বিশ্বাস বাদী হয়ে ডা. তপন কুমার মন্ডল, নার্স শাহানাজ পরভীন ও কুহেলিকাকে অভিযুক্ত করে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে আসামিরা জামিনে আছেন।

এ মামলায় প্রধান আসামি ডা. তপন কুমার মন্ডলের নাম বাদ দিয়ে দুই নাসর্কে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। মুন্নির পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ কারো সঙ্গে কথা না বলে এ চার্জশিট দাখিল করে।

মামলা বিষয়ে মুন্নির বাবা বলেন, “আমার ছোট ভাই জাকির হোসেন বিশ্বাস ডাক্তারসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ কারো সাথে কোনো কথা না বলে তদন্ত ছাড়াই ডা. তপন কুমার মন্ডলের নাম বাদ দিয়ে দুই নার্সকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, চাপে আছেন, সেজন্য তাড়াতাড়ি চার্জশিট দিয়েছেন। আমি নতুন করে তদন্ত শেষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।”

মুন্নির চাচা ও মামলার বাদী জাকির হোসেন বিশ্বাস জানান, “এ ঘটনার পর ডা. তপন কুমার মন্ডল, নার্স শাহানাজ ও কুহেলিকাকে অভিযুক্ত করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে আসামিরা জামিনে আছেন। আমরা সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাই।”

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, পুলিশের চার্জশিটে ডা. তপন কুমার মন্ডলকে বাদ দিলেও ওই দুই নার্সকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে ওই দুই নার্স সাসপেন্ড আছে। ডা. তপন কুমার মন্ডলের সাসপেন্ড হবার কথা থাকলেও এখনো হননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার উপ-পরিদর্শক মুকুল হোসেন বলেন, তদন্তে এ ঘটনায় ডা. তপন কুমার মন্ডলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। দুই নার্স শাহানাজ ও কুহেলিকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদেরকে আসামি করে এবং ডা. তপন কুমার মন্ডলের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পিত্তথলির পাথর অপসারণে গত ২০ মে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মুন্নিকে। ২১ মে সকাল ১০টায় মুন্নির অস্ত্রোপচারের সময় নির্ধারণ করা হয়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নার্স ভুল করে অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেন। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মুন্নি। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে খুলনা আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

ঘটনার পরপরই গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২৬ মে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুই নার্সকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করে। তবে তদন্ত কমিটি ভুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডা. তপন কুমার মন্ডলের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি।

উল্লেখ্য, সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে ছাত্রী মুন্নি। পড়াশোনা নিয়ে যার ব‌্যস্ত থাকার কথা ছিল, তিনি আজ বিছানাবন্দি। চঞ্চল যে তরুণী বাড়ি মাতিয়ে রাখতেন, আজ তার ওঠা-বসার শক্তিও নেই। ভুল চিকিৎসায় তার বেঁচে থাকা নিয়েই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *