৭৬ দিন ধর্মঘটের ক্ষতি মেটায়নি নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক আরোপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবীতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আন্দোলনের ডাক দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখে দুই মাসের অধিক সময়।
শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পরবর্তীতে পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টানা ৭৬ দিন দীর্ঘায়িত করা হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাক দেয়া ওই আন্দোলন। তবে সেসময়ে শিক্ষক নেতারা ক্ষতি মেটানোর দেয়ার আশ্বাস দিলেও তা মেটায়নি। বরং শিক্ষার্থীদের ঘাড়েই বোঝা রয়ে গেছে তাদের অভিযোগ।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের বন্ধে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাপক ব্যাহত হয়েছে। এতে সেশনজটসহ নানা ভোগান্তিতে পড়েছে তারা।
শিক্ষার্থীদের সেই চাপ কমাতে গতবছর ২৫ জুন ইউজিসি এক ভার্চুয়াল সভায় ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মতামতের আলোকে অনলাইন পাঠদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে আলোকে নোবিপ্রবি ৩০ জুন থেকে অনলাইন একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করলেও মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের’ মত সামনে এসেছে শিক্ষকদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক। ফলে কিছুদিন যেতে না যেতেই নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির ডাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে ১ অক্টোবর থেকে চলতে থাকে শিক্ষকদের আন্দোলন। কোন সুরাহা না পেয়ে টানা ৭৬ দিন আন্দোলন চালিয়ে শূন্য হাতেই আন্দোলন স্থগিত করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। সেসময় দায়িত্বশীল মহল থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশ্বাস পাওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত করেছে বলে জানায় শিক্ষক নেতারা।
ক্লাস বর্জনের সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নানান ক্ষোভ তৈরী হলে তখন ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার কথা বলে আন্দোলন দীর্ঘায়িত করে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থীদের মতে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে করোনায় নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন শিক্ষার্থীদের আরো পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে এগিয়ে গেলেও নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে গিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, গতবছরে থার্ড ইয়ারের ২য় সেমিস্টার এর ক্লাস শুরু করা কথা থাকলেও শিক্ষকদের আন্দোলনে দেরিতে শুরু হয় এবং প্রায় সম্পূর্ণ ক্লাস এখনো বাকি। এমনকি ওই ইয়ারের ১ম সেমিস্টারের ক্লাসগুলোও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভাবে শেষ করা হয়নি। তাহলে কিভাবে পুষিয়ে দেয়া হচ্ছে আসলে? শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী এ বছর অনার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা স্বপ্ন! গত ফ্রেবুয়ারী থেকে পরিক্ষা হবে হবে বলেও এখনো পরিক্ষার বিষয়ে আমার বিভাগ কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
এফটিএনএস বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিশকাত বলেন, করোনার কারনে মাস্টার্স ২ বছরেও শেষ করতে পারিনি। জব করতাম জবটাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি গত ফেব্রুয়ারিতে এক্সাম হওয়ার কথা থাকলেও হয় নি। এখন আমি জবলেস, হতাশা কাজ করে অনেক।
৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, যেহেতু শিক্ষকরা প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষানোর কথা বলেছেন, সেহেতু নিশ্চয়ই তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে চলমান এবং পরবর্তী সেমিস্টারগুলোতে এর প্রভাব পড়ে। এখন যাঁরা চতুর্থ বর্ষে আছে, তাঁদের ক্ষতি পোষাবে না৷ প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে চতুর্থ বর্ষসহ সকল সেমিস্টারগুলো শেষ করা।
অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শান্ত বলেন, শিক্ষকদের নিকট কোনভাবেই এটা কাম্য নয় যে, আমাদেরকে রাজনৈতিক নেতাদের মত প্রতিশ্রুতি দিবে। যেই প্রতিশ্রুতি উনারা রক্ষা করতে পারবেন না সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরো বিভ্রান্তি ছড়ানোর ও কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না। এখন যেভাবে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য ভাবছেন সেভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কার্যত ৭৬ দিনের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব না। আর ক্ষতি পুষিয়ে দেবার নামে এমন কিছু উদ্যোগ যাতে না নেয় যা আরো শিক্ষার্থীদের উপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়
কিভাবো ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। আটকে থাকা সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুত শেষ করা হবে এবং নতুন সেমিস্টারগুলোও দ্রুত শেষ করে দেয়া হবে।