মুক্ত সাংবাদিকতার ৬০ কোটি সেকেন্ড

মুক্ত সাংবাদিকতার ৬০ কোটি সেকেন্ড

সোহান সিদ্দিকী


এখন পর্যন্ত ৬৩ কোটি ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪০০ সেকেন্ডস্ অতিবাহিত হয়েছে। সেকেন্ডের হিসেবে সময়টা বেশ দীর্ঘ মনে হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) রিপোর্টার্স ইউনিটি আজ তার প্রতিষ্ঠার ৩য় বর্ষে পদার্পণ করেছে। কবিরা বলেন সময়ের স্রোত কখনও ফিরে আসে না, অথচ সময়ের স্রোত যে কতো দ্রুত প্রবাহিত হয় তা তাঁরা বলেন নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর অনেক গুলো সংগঠনের সদস্য পদের জন্য আবেদন করলেও সংকোচবোধ আর হেলায় শেষ পর্যন্ত কোথাও সদস্যপদের ভাইভা তে অংশগ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া মেসে থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক্টিভিটিও ছিল যথেষ্ট কম। আসতাম ক্লাস করতাম আর চলে যেতাম, আর এভাবেই কাটছিল দিন।

এভাবে চলতে চলতেই একদিন মোস্তাফিজ রাকিব ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। ভাই তখন ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যকরী সদস্য, বর্তমানে দপ্তর সম্পাদক। কথায় কথায় লেখালেখির বিষয়ে ভাইয়ের সাথে কথা হয়। এসময় ভাই আমাকে সাংবাদিকতায় করতে আগ্রহী কিনা জিজ্ঞেস করলে আমি এককথায় রাজি হয়ে যাই। এভাবেই ভাইয়ের হাত ধরে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা সম্পর্কে জানার সুযোগ হয় এবং ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সংস্পর্শে আসি।

অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের মতো শুধু প্রগতিশীল না, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি এমন একটি সাংবাদিক সংগঠন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে আমি শিখেছি কিভাবে সত্য সন্ধানে ধৈর্য ধরে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয়, শত চাপ ও প্রতিহিংসার মাঝে টিকে থাকতে হয়। বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে সাংবাদিকতার সংজ্ঞা শিখেছি আমি এখান থেকেই।

ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের আবু সালেহ শামীম রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা এবং তার সাথে অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসেবে ছিলেন মুরতুজা হাসান ভাই ও মাহফুজুর রহমান ভাই।

ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রতিষ্ঠার আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্র ছিল অত্যন্ত সংকীর্ণ। বিশেষ মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর হাতেই ইবির সাংবাদিকতা জিম্মি ছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটির অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত সাংবাদিকতার দ্বার উন্মোচন করা এবং নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সৃজনশীল লেখনী প্রকাশের সুযোগ করে দেয়া।

অতঃপর সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর ইবিতে রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের ইতিবাচক পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রেখেছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার মাত্র বছর খানিক সময়ের মধ্যে এর সফলতায়  মুগ্ধ বা অভিভূত না হয়ে উপায় নাই।

রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রতিষ্ঠার আগে ইবিতে মেয়েদের জন্য সাংবাদিকদিকতার কোনো সুযোগ ছিল না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ বছরের ইতিহাসে রিপোর্টার্স ইউনিটিই সর্বপ্রথম নারী সদস্য গ্রহন করে এবং মেয়েদের জন্যও সাংবাদিকতার দ্বার উন্মোচন করে। ইবিতে উন্নয়ন সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক হলাম আমরাই।
ইচ্ছাশক্তি আর রাগ ক্ষোভ যদি ভালো কাজে লাগানো যায় তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে। যার অন্যত্তম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোটার্স ইউনিটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতা বিশ্বাসী এ সংগঠনটি বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে, বেঁচে থাকুক সত্য সন্ধানে মুক্ত কলম সৈনিকরা।

লেখা: সোহান সিদ্দিকী
লেখক ও শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *