প্রাক্তন

প্রাক্তন

লেখক- সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ


বিয়ের কয়েকদিন পরেই জোনাকি’র কথা জেনে গিয়েছিল সোয়াদের স্ত্রী।হতে পারে নতুন বউয়ের প্রতি তার আদিখ্যেতা আর হ্যেঁয়ালিপনা একটু কমই ছিল। কিন্তু পাড়ার মানুষের ফুসুরফাসুর, কানাকানিও যে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে নাই সেটা বলা যাবে না।

–জোনাকি কে?
–সে এক বন্ধ দরজা।
–বন্ধ দরজার ওদিকে কেউ তো থাকতে পারে।
–সে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা সেসব নিয়ে ভাবব না।

–অনেকের আবসেন্ট কিন্তু অনেক সময় প্রেজেন্স এর থেকে বেশী স্ট্রং হয়ে উঠে।
–এত দর্শন ঝাড়িও না তো..
–দর্শন কি মিথ্যা?
–আই ফেল্ট ডিস্টার্ব। প্লিজ.. লিভ মি এলোন।
–একা কি থাকতে দেয়? বড্ড ঢুকে পড়ে নি আমাদের ভিতর?

আসলেই জোনাকি বড্ড ঢুকে পড়েছে।এজন্যেই হয়তো এড্রেনালিন ক্ষরন থেকে টেষ্টেস্ট্রেরন ক্ষরন অবধি এই ক্ষুদ্র সময়টুকুই তার নতুন বউয়ের কপালে জুটে।শরীরের ক্ষুধা মিটানো হলেই সব সোহাগ, ভালোবাসা কুয়াশার পাতলা স্বরের মত মরা আলোয় মিলিয়ে যায়।মিলিয়ে গেলেই, মনে হয় No love for life.বেচে থাকাটাই জীবন।

–জোনাকি,তোমাকে রিফিউজ করেছিল না?
–খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এসব কেন বের করতে চাচ্ছ শুনি?
–করব না তে কি?গোপন একটা দালান তৈরী করে রাখব। আমি জানি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গোপন দালান থাকলে সংসারের মধ্যে শান্তি থাকে না।ইউ নিড টু সলভ আউট।
–প্রবলেম থাকলে তো সলভ করবে?তোমাকে নিয়ে আমার কোনো প্রবলেম নেই।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আর এখন আমি একজন সুখী মানুষ।

–মুখে বললেই ভালোবাসা হয়!ভালোবাসা অন্য জিনিস সে তুমি বুঝো না।
–বুঝি না!
–বুঝলে কি আর জোনাকি তোমাকে রিফিউজ করে?
–ও নাম মুখে নিবে না।সে নাম মুখে নেওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই।
–তোমার কি সে যোগ্যতা আছে?
–স্টপ..আই সেইড স্টপ।একটা কথা ওপেনলি বলছি কান খাড়া করে শুন, জোনাকির কথা না তুললে আমি খুশী হব।
–অভিনয় করতে বলতেছ তাহলে? কত দিন চলবে সে অভিনয়?

অভিনয়! সোয়াদ কি অভিনয় করেছে?আসলেই তো সে এতদিন অভিনয় করে এসেছে।বাবা মায়ের কাছে ভালো থাকার অভিনয়,এই যে বিয়ে সেটাও কি অভিনয় নয়! কতদিন চলবে এই অভিনয়? আজ সব বলেই দিবে সে।

–কি শুনতে চাও বলো..
–সব জানতে চাই। বলবে?
–আমরা খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম।
–এই টুকুই?
–না…আমি তাকে আত্না দিয়ে ভালোবাসতাম, সেও আমাকে ভালোবাসতো।
–তাহলে মিলল না কিসে?
–জানি না।
–কোন মেয়ে মানুষ?
–না।
–তাহলে কোনো পুরুষ মানুষ!
–নো.. নেভার।প্লিজ, স্টপ দিস ননসেন্স। আই ফিল এংরি..হাত উঠে যেতে পারে।
–রাখো,তোমার রাগ।আই ফেল এংরি। সব ভেজাল যে তোমার মধ্যেই ছিল। উত্তেজিত হয়ে কি সেটাই বোঝাতে চাচ্ছ?
–না রে বাবা, এ সব কিছু না।
–তাহলে কি?
— সি ওয়াচ সো মাচ পিউরিটান।
–পিউরিটান!
–হুম পিউরিটান। হাত টাও ধরতে দিত না।
–ওহ,বুঝেছি তুমি ওর পিউরিটি তে দাগ কাটতে চেয়েছিলে।ছি,ছি,ছি!

প্রায় সত্যটা বের হয়ে গিয়েছিল।এবার আর স্টপ স্টপ বলে না চেঁচিয়ে নিজেই থামে গেল সোয়াদ।সেই দিনের কথা বলা তো দূরের কথা সে মনেও করতে চায় না।সেদিনের পর থেকেই তো নাজমা কে ভয় পায় সে।শুধু কি ভয়! ভয়ের সাথে ঘৃনাও মিশে গিয়েছিল।ঘেন্নায় অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছে সে, নাজমার গালে কি মেজতা আছে?উপরের ঠোঁটটা একটু ঝোলা না?হাতের লোম গুলো তো বেশ বড় বড়।গোফের রেখাও তো বোঝা যায়।কিন্তু সেই ঘেন্না তাকে আরো কি অপরাধী করে দেয় নি?

দিয়েছে। পুরো ভার্সিটি, বন্ধুবান্ধব, জুনিয়র সিনিয়র সবাই তাকে ভুল বুঝেছে।যে দিন জোনাকি তার মাকে গিয়ে বলল,আব্বুকে ছেলে দেখতে বলো,আমি বিয়ে করব।ঠিক সে দিনই সবাই আচঁ করেছিল।জীবনেও হাত ছেড়ে দিবে না বলা মেয়েটা পরের মাসই বিয়ের পীড়িতে বসে পড়ল।সব বুঝে মানুষ।সব বুঝে যায় মা।

এরপর বেশ কয়েকদিন চলে যায়।জোনাকি কে নিয়ে বউয়ের সাথে তেমন আর কোনো কেলেঙ্কারি নাই।কেন নাই সেটা সোয়াদ জানে না।জানবেই বা কি করে! ১০৩ ডিগ্রীর জ্বরে কি কারো হুশ থাকে।জ্বরের চোটে জোনাকির সাথে কি কি করেছিল সব বিড়বিড় করে বলে দিয়েছে বউকে।কিভাবে নরপিশাচ এর মত হামলিয়ে পড়েছিল সে।কি থেকে কি হয়েছিল সব বলেছে।

এদিকে অন্য মেয়েরা যেমন করে সে রকম কিছু করে নি নতুন বউ। জোনাকির উপর রেগে না গিয়ে সব রাগ তার সোয়াদের উপরই।কারন সে জানে সবটা দোষ সোয়াদ করেছে।যেমন টা তার সাথে তার বিয়ের আগের প্রেমিক করেছিল।সে জানে পাপ চক্রাকারে ঘোড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *