পড়া মনে রাখা ও বুঝা এখন হবে সোজা!

পড়া মনে রাখা ও বুঝা এখন হবে সোজা!

মুহম্মদ সজীব প্রধান


শিক্ষাজীবন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরেও আমাদেরকে পড়াশোনার সাথে লেগে থাকতে হয়।

কিন্তু সহজে পড়া না বুঝা কিংবা পড়া মনে না কার কারণে পড়াশোনার প্রতি চরম অনীহা জন্ম  নেয় যা আমাদের জ্ঞানার্জনের অন্তরায়।

আজ আমরা শিখে নেব পড়া মনে রাখা ও সহজে বুঝার চমৎকার ৫টি ধাপ এবং দূর্দান্ত ৫টি কৌশল-

ধাপঃ
১. পড়ার শুরুতেই ওরাধুরা পড়া শুরু করলে একঘেয়েমি ভাব চলে আসবে তাই শুরুতে পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো জরুরী। সেজন্য পড়ার শুরুতে অধ্যায়টি উল্টে পাল্টে প্রাথমিক ধারণা নেওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আপনি যে অধ্যায় বা টপিকস পড়ছেন তার পুরোটাতে দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিন। এসময়ে আপনি যেসব দিক খেয়াল রাখবেন তা হলো:
ক. ভূমিকা
খ. শব্দভাণ্ডার
গ. সংজ্ঞা
ঘ. পার্থক্য
ঙ. বৈশিষ্ট্য

এছাড়াও, আপনি এ অধ্যায়টি কত মিনিট/ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করবেন এর একটি জরিপ করে নিবেন। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য পড়া নয় বরং যা যা পড়তে হবে সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।

২. এবার আপনি প্রশ্ন তৈরি করবেন। প্রশ্নের প্যাটার্ন কেমন হতে পারে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনি আবহাওয়া ও জলবায়ু টপিকসে পড়ছেন।

তখন প্রশ্ন হতে পারে-
ক.আবহাওয়া কী?
খ.জলবায়ু কী?
গ. আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য কী কী?
ঘ. আবহাওয়া কেন একই সময়ে দুটি ভিন্ন স্থানে ভিন্নরকম হয়?
ঙ.জলবায়ু কেন সহজে পরিবর্তন হয়না? ইত্যাদি।

প্রশ্নগুলো খাতায় রাফ করে রাখুন যা একটু পরেই কাজে লাগবে।

৩. ছোট বেলা থেকেই আমরা পড়ে আসছি- যত পড়িবে ততই শিখিবে। তাই আমরা শিখার জন্য এবার পড়ব। আর এক্ষেত্রে আপনি পূর্বের ধাপে যেসব প্রশ্ন করেছেন সেসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পুরো অধ্যায়টি ভালভাবে পড়বেন এবং মনে মনে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর তৈরি করবেন। অতঃপর, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর না দেখে খাতায় নিজের মতো করে লিখবেন তবে বই হুবহু কখনোই লিখবেন না।

৪. পড়া মনে রাখা ও বুঝা এখন হবে সোজাপূর্বে আপনি যেসব প্রশ্ন তৈরি করেছেন সেখান থেকে নিজেকে একটি একটি করে প্রশ্ন করুন এবং চট করে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন তবে তা অবশ্যই সশব্দে হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার কোনো সহপাঠির সাহায্য নিতে পারেন যিনি আপনাকে ঐ অধ্যায় থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করবে আর আপনি তাকে প্রশ্নের জবাব দিবেন। এছাড়াও আপনি আপনার পঠিত অধ্যায়ের সাথে রিলেটেড অন্য বই ( যেমন: টেস্ট পেপারস) থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করতে পারেন। এতে করে পড়াটা আপনার ব্রেনে সুপার গ্লু হয়ে লেগে যাবে।

৫. এখন আপনি পূর্বের চারটি ধাপে যা শিখেছেন তা সামারি করবেন আর এক্ষেত্রে পুরো অধ্যায়ের ওপর একটি হ্যান্ডনোট তৈরি কেরতে পারেন যা পরীক্ষার পূর্বে অকল্পনীয় কাজে দেবে। এছাড়াও আপনি যা যা শিখার কথা তা শিখেছেন কিনা মিলিয়ে নেবেন কোনো কিছু বাদ গেলে তা পুণরায় পড়েবেন। ফলশ্রুতিতে, পুরো অধ্যায় সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা জন্মাবে।

কৌশল:

১. কোনো কিছু সহজে মনে রাখতে হলে তা দেখা বা কল্পনা করা বেশ কার্যকরী উপায়। ধরা যাক, আপনি ৭ ই মার্চের ভাষণ পড়ছেন। এবার আপনি কল্পনা করুন রেসকোর্স ময়দানে অসংখ্য মানুষ প্রবল আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর বঙ্গবন্ধু সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো কোর্ট পড়ে বজ্রকণ্ঠে ভাষণ দিচ্ছে যা আপনি স্পষ্ট দেখছেন এবং শুনছেন। এভাবে পড়লে আপনার ব্রেনে ঐ টপিকসে একটি দীর্ঘস্থায়ী ফাইল তৈরি হয়ে যাবে ফলে আপনি অতি সহজেই পড়া আয়ত্বে আনতে পারবেন এবং সহজে ভুলবেন না।

২. যেহেতু আমাদের ব্রেইন হযবরল কোনোকিছু মনে রাখতে পারে না। তাই কনফিউসান সৃষ্টি হয় এমন কিছু ছক বা টেবিল আকারে সাজিয়ে নিলে খুব সহজেই তা মনে রাখতে পারবেন।

৩. বিভিন্ন রঙের কলম বা হাইলাইটার দিয়ে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ুন এবং টপিকসের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম ছবি আঁকুন। পড়া মনে রাখার এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

৪. বড় কোনো অধ্যায় একবারে গোগ্রাসে গিলতে চেষ্টা করবেন না বরং ছোট ছোট ভাগ করে পড়বেন মনে রাখবেন মনের রাজ্যে ওভারডোজ সহ্য হয়না।

৫. একটানা দীর্ঘ সময় না পড়ে প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে একটু ঘুরে আসুন কিংবা চায়ের কাপে চুমুক দিতে পারেন এতে করে মন ফুরফুরে হবে যা জটিল বিষয় ভালভাবে পড়তে ও বুঝতে সহায়ক।

উপরোক্ত ধাপ ও কৌশলের কার্যকর প্রয়োগে পড়া বুঝা এখন হবে সোজা এবং বই পড়ে জ্ঞানার্জন হবে আমাদের জন্য আনন্দঘন ও সহজ। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। অন্যদিকে মাও সেতুং বলেছেন, পড়, পড় এবং পড়। তাই প্রিয় বন্ধু, এবার ভুলে যাওয়ার ভয়কে জয় করে বেশি বেশি বই পড়ুন, আলোকিত জীবন গড়ুন।


শিক্ষার্থীঃ আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *