এশিয়ান ফ্লু

এশিয়ান ফ্লু

আনন্দ কুমার সাহা


১৯৫৭-৫৮ সালে এশিয়ান ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিলো। এশিয়ান ফ্লু-র উৎপত্তি হয়েছিলো চীন থেকে। এ ভাইরাসটিও ছিলো এভিয়ান ভাইরাস। অর্থাৎ পাখি জাতীয় প্রাণী থেকে এ ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে বিস্তৃতি ঘটায়।

১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম গুইঝুই, চীন থেকে রিপোর্ট করা হয় এবং পার্শ্ববর্তী প্রদেশ ইউনানে বিস্তৃতি লাভ করে। এতে হাজারও হংকংবাসী আক্রান্ত হয়। একই সময়ে এ ভাইরাস সিঙ্গাপুরেও বিস্তার লাভ করে। তাইওয়ানে ১৯৫৮ সালের মে মাসে প্রায় ১লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়। ভারতেও প্রায় ১লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়।

১৯৫৭ সালের জুন মাসে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। আক্টোবর মাসে স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা এতে প্রথম আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবীণ ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়।

এশিয়ান ফ্লু, ১৯৫৭

জনস্বাস্থ্য বিভাগ ভ্যাকসিন তৈরী করার জন্য ১৯৫৭ সালের ১২ই মে এই ভাইরাস, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সাপ্লাই করে এবং অক্টোবর মাসে ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্য ভ্যাকসিন তৈরীতে সফলতা লাভ করে।

এশিয়ান ফ্লু-তে মৃত্যুর হার ছিলো শতকরা ৩ভাগ। তবে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর হার ছিলো ০.৩%। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু-র চেয়ে এশিয়ান ফ্লু-তে অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো। ভ্যাকসিন এবং এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের ফলে মৃত্যুর হার কম ছিলো। সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (CDC) এর মতামত অনুযায়ী ১১লক্ষ মানুষ মারা যায়। তারমধ্যে শুধু ল্যাটিন আমেরিকায় প্রায় ৭০হাজার থেকে ১লক্ষ ১০হাজার লোক মারা যায়।

১৯৫৮ সালের প্রথমদিকে যুক্তরাজ্যে ৯লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো, যারমধ্যে ১৪হাজার মারা গিয়েছিলো। গর্ভবতী মা, বয়স্ক লোক এবং ফুসফুসের অসুখে যারা ভুগছিলো তাদের জন্য এ ভাইরাস অত্যন্ত মারাত্মক ছিলো।

স্প্যানিশ ফ্লু এবং এশিয়ান ফ্লু মহামারি থেকে বিশ্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে- আশাকরি আমরা COVID-19 কে পরাজিত করতে সক্ষম হবো। জয় বাংলা।


লেখকঃ অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *