‘ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন চাই, দিতে হবে’

শাফিউল কায়েস


একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদিষ্ট একটি বিভাগ, ঐ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অস্তিত্ব ও ভালোবাসা। কোন শিক্ষার্থী চান না যে, নিদিষ্ট সময় পর তাদের বিভাগের অস্তিত্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত বা বন্ধ হয়ে যাক। তাছাড়া একটা সময় পর বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ বন্ধের এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।

দুঃখজনক হলেও সত্যি ‘ইতিহাস বিভাগ’ নিয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন ছাড়াই তিন বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

এদিকে ০৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ইউজিসির এক সভায় বিভাগটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ইতিহাস বিভাগে আর কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। ইতিহাস বিভাগে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে এদিন মাঝ রাতে বিক্ষোভ করছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন তাদের বিভাগকে ইউজিসি অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

একজন শিক্ষার্থী অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে, একপ্রকার মেধার যুদ্ধে জয় লাভ করার পর একটি পছন্দের বিভাগে ভর্তি হন। একটি পরিবারে সদস্য চান তার পরিবারকে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে এবং অস্তিত্ব টিকে রাখতে। একটি পরিবারের কোন সদস্য চান না, তার পরিবার বা পরিচয় বিলুপ্ত হোক। তেমনি ‘ইতিহাস বিভাগ’ -এর শিক্ষার্থীরাও চান না, তাদের ইতিহাস পরিবার বিনাকারণে বিলুপ্ত কিংবা অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলুক।

একটা কথা না বললেই নয়, ‘ইতিহাস বিভাগ’ তুচ্ছ কোন বিভাগ নয়। একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ার প্লাটফর্ম এবং পরিচয় বহন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের মত এই বিভাগেরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। তাছাড়া এই বিভাগ না থাকলে দেশের গৌরবময় ইতিহাস চর্চা ও বৈশ্বিক ইতিহাস আমাদের কাছে অজানাই রয়ে যাবে; যা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না।

আমি চাই ইউজিসি ইতিহাস বিভাগের চারশতাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে অনতিবিলম্বে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন প্রদান করে এবং যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাবার সুযোগ করে দেবে। এটা অনুরোধ নয়, এটা তাদের প্রাপ্য। ইউজিসির এই সিদ্ধান্তকে কোনভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না কিংবা মেনে নেয়া যায় না।

অবশেষে বলতে চাই, ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন চাই, দিতে হবে। এটা যৌক্তিক দাবি, সময়ে দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসাবে এটা আমারও দাবি। আমার ভাই-বোনের যৌক্তিক দাবি যেকোন মূল্যে মেনে নিয়ে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দিতে হবে।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্তি পাক

আবরার ফাহাদ! বুয়েট ক্যাম্পাসের উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলোর একজন ছিলো সে। কাল থেকে দেশের মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত নাম। কিন্তু কেনো? কারন তার উপর করা বর্বরোচিত আঘাত এবং তারই ফলশ্রুতিতে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে প্রস্থান ঘটেছে ছেলেটির।

কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, নটরডেম থেকে বুয়েটের ইইই। দেশসেরা ছাত্রদের একজন। বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর জন্য তার নিজের, বাবা-মা’র, শিক্ষক সহ কতজনের কত শ্রম ছিলো, সবকিছু মাত্র ক’ঘন্টার ব্যবধানে পন্ড হয়ে যাবে কে ভেবেছিলো! কি দুর্ভাগা তার বাবা-মা!



বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্তি পাক


কত স্বপ্নের বীজ বপন করে রেখেছিল পরিবারটি। ভেবেছিলো এইতো কিছুদিন পর পরিবারের হাল ধরবে, সবার মুখে হাসি ফোটাবে। নরপিশাচরা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অতি জঘন্য ভাবে সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো।

আবরারের বাবার স্টেটমেন্ট শুনলাম। যেখানে উনি বলছেন “আমাদের পরিবার আগাগোড়া নৌকায় ভোট দেই!”

মাত্রই মারা যাওয়া পুত্রশোকে কাতর বাবাকে পরিবারের রাজনৈতিক সমর্থনের পরিচয় দিয়ে বিচার চাইতে হয়! হায়! কোন দেশে আমরা আছি! কেনো শুধুমাত্র ভিন্নমত ধারণ করার কারনে কারোর জীবন চলে যাবে? কেনো এসব দিনেদিনে বাড়ছে? স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশতকের কাছাকাছি সময়ে এসে এমন পরিনতি কি আমাদের কাম্য ছিলো? সত্যিকার অর্থেই ভাষাহীন হয়ে গেছি!

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের দেশের ক্যাম্পাস গুলোতে অহরহ ঘটেছে। বিচারের জন্য অনেকেই হন্যে হয়ে ঘুরেও ন্যায়বিচার পায়নি।



ছেলেটি বুয়েটের না হয়ে গ্রামের কোনো এক কলেজের হলে কি এমন শোরগোল শোনা যেতো? এতো লিখালিখি বা নিউজ হতো? আমি নিশ্চিত হতো না।


কেনো ঘটছে এমন ঘটনা। সমাজে মানুষ বড় হয় মানবিকতা ও যুক্তিতর্কের মাঝে। আজকাল এই দুটি গুণ অনেকের মধ্যে দেখা যায় না। কণ্ঠরোধের সংস্কৃতি একটা দেশকে দিনকে দিন পিছিয়ে দিতে পারে কারন যেখানে তর্ক নেই সেখানে উন্নয়নের সুযোগ সীমিত। মানবিকতা গড়ে ওঠে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। অর্থ উপার্জন ও সামাজিক স্ট্যাটাস অর্জন মূখ্য উদ্দেশ্য হতে পারেনা। প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ। যার ফলশ্রুতিতে মানসিক বিকারগস্ত মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। সাথেসাথে ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার ও শো-অফ মানসিকতাও অনেকাংশে দায়ী।

শুনলাম অমিত সাহা নামের একজনের রুমে অবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যায় সবচাইতে নিষ্ঠুর ভূমিকা পালন করে বলে খবরে এসেছে। কিন্তু তার নাম এজাহার থেকে বাদ, গ্রেফতারও হয়নি, ছাত্রলীগ ১১ জনকে বহিষ্কার করেছে, সেখানেও তার নাম নেই। হয়তো আরেকটি বিচারহীনতা দেখতে যাচ্ছে দেশ। এমন তো হবার কথা নয়।

আজ ছেলেটি বুয়েটের না হয়ে গ্রামের কোনো এক কলেজের হলে কি এমন শোরগোল শোনা যেতো? এতো লিখালিখি বা নিউজ হতো? আমি নিশ্চিত হতো না। তার অর্থ একটা ঘটনা যতক্ষণ না দেশের সবার কাছে পৌঁছাতে পারছে ততক্ষণ সবাই নিরব থাকছি, ততক্ষণ বিচার ঠিকমত হবে কি না তা নিয়ে আশংকায় থাকছি।

কিন্তু আমরা আশাকরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্তি পাক। দেশের বিরাজমান বিচারব্যবস্থায় যে শাস্তির বিধান রয়েছে তার সবকিছুর প্রয়োগ হোক। আমরা চায়না এমনভাবে আর কোনো মা’য়ের কোল খালি হোক। ক্যম্পাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল চরিত্র ফিরে পাক। সুষ্ঠু লেখাপড়া ও গবেষণার পরিবেশ দ্রুতই নিশ্চিত হোক।

লেখকঃ নাসির উদ্দিন, প্রধান সম্পাদক, দ্য ক্যাম্পাস টুডে।

পরিবারই হচ্ছে ভালো-মন্দের চাবিকাঠি

ফাতেমা সুলতানাঃ উঁচু দালানে বসবাস, সুন্দর পোশাক, খুব ভালো কোনো ইন্সটিটিউট থেকে পড়া, কথার মাঝে কিছু ইংরেজি শব্দের প্রয়োগ এই হলো আজকের দিনের মানুষের ভালো বা মন্দ হওয়ার মাপকাঠি ; স্মার্ট বা আনস্মার্ট হাওয়ার মাপকাঠি।

আমি বলি কি মানুষ ভালো বা মন্দ যা কিছু হয় তার পরিবার থেকেই হয়। জন্মের পর থেকে প্রথম তিন বছর তার ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হয়(কিছু রিসার্চে এসেছে) এরপর সে ষোলো বা আঠারো বছর পর্যন্ত পরিবার থেকে যা শিখে সারাজীবন ওটাই ভিতরে ধারণ করে। হুম, কিছু পরিবর্তন হয় ইউনিভার্সিটি লাইফে কিন্ত সেটা দিয়ে এক ছাঁদের নিচে থাকার যে অভিজ্ঞতা, তা যাচাই করা যায় না।

মানুষ বাইরে তার বন্ধুদের সাথে যেমন আচরণ করে, বাসায় তার মা/বাবা, ভাই -বোন, স্বামী/স্ত্রীর সাথে তেমন আচারণ কখনোই করে না। কারন বাইরের শিক্ষা আর ঘরের শিক্ষা কখনোই এক না। ফলে আচারণ ও এক না। পরিবার, বিশেষ করে বিবাহিত জীবন সম্পুর্ণ ভিন্ন একটি অভিজ্ঞতা। তাই আমার মতে একটা মানুষের ভালো মন্দ যাচাই শুরু করা উচিত তার পরিবার থেকে, তার সার্টিফিকেট বা আউটফিট দেখে নয়।

আমার কথায় অনেকেই দ্বিমত পোষন করতে পারেন কিন্তু নিজেই একবার ভেবে দেখুন আপনার নিজের সাথে কথাগুলি মিলে যাচ্ছে!! উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে আমার মঝেই একটা খুব খারাপ গুণ আছে। হুম, আমি গুণটা কেই খারাপ বলছি (তার ও অনেক ব্যাখ্যা আছে) সেটা হলো মিশুক হওয়া ; আর একটা খারাপ অভ্যাস ও আছে তা হলো রাগ! এই দুটাই উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবার থেকে পেয়েছি যেটা আমার সার্টিফিকেট আর অনেক সেল্ফ সেন্টার্ড সারাউন্ডিং ও চেন্জ করতে পারিনি।

লেখকঃ প্রভাষক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)

Hello world!

Welcome to WordPress. This is your first post. Edit or delete it, then start writing!