সরকারের অটো পাস সিদ্ধান্তে বিপাকে প্রাইভেট টিউটররা

হৃদয় মিয়া


করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কয়েক ধাপে বাড়ানো হয়েছে ছুটি। এদিকে পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে অটো পাস‌ দেওয়া হতে পারে এমন আলোচনা চলছে, এমতবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে প্রাইভেট টিউটররা। অভিভাবকরাও বাদ দিয়ে দিচ্ছেন প্রাইভেট টিউটর।

অধিকাংশ প্রাইভেট টিউটরই ভার্সিটি পড়ুয়া। যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল তারা তাদের টিউশনের টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালায় এবং সংসারের হাল ধরার চেষ্ঠা করে।

এমনই একজন প্রাইভেট টিউটরের সাথে কথা বলে জানা যাই, তার তিনটি টিউশনি ছিল, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারনে দুইটি টিউশনি চলে গেছে, এখন তিনি বিপাকে আছেন।

প্রথমত নিজের খরচ অন্যদিকে সংসারে হাল, সবমিলিয়ে তিনি বলেন, খুব ঝামেলায় সময় পার করছেন।

লবণে লুকিয়ে আছে যেসব গুণ

আসিফ আহমেদ মাহাদী


‘লবণ’ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য উপাদান। মানব সভ্যতার খাদ্যভ্যাসে লবণহীন খাবার যেন সবকিছু পানসে করে দেয়। কিন্তু এই নুনের (লবণ) ও যেন অনেক গুণ, রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যবহার ও ব্যাখ্যা।

লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, অস্থি, দাঁত, এনজাইম ও হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ অপরিহার্য উপাদান, স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে, দেহের জলীয় অংশে সমতা রক্ষা করে ও বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় রাখে। ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়তা করে।

তেমনি মানবদেহের খাদ্যভ্যাসের জন্যে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) সুপারিশ করে যে প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন 5 গ্রাম (কেবলমাত্র এক চা চামচের নীচে) লবণ গ্রহণ না করে। উচ্চ সোডিয়াম গ্রহণ (5 গ্রাম লবণ / দিন) এবং অপর্যাপ্ত পটাসিয়াম গ্রহণ (৩.৫ গ্রাম / দিনেরও কম) উচ্চ রক্তচাপের সাথে যুক্ত হয়েছে এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

রসায়নে লবণ, একটি ক্ষারের সাথে অম্লকের প্রতিক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত পদার্থ যার একটি সোডিয়াম (Na) ও অন্যটি ক্লোরিন (Cl) এর প্রতিক্রিয়ায় উৎপাদিত “সোডিয়াম ক্লোরাইড” (NaCl) বা “লবণ”। লবণ মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) দ্বারা গঠিত একটি খনিজ।

বিশ্বে উৎপাদিত লবণের প্রায় ৬% খাবারেই ব্যবহৃত হয়। বাকীগুলির মধ্যে, ১২% পানি পরিশোধন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়, ৮% ডি-আইসিং হাইওয়ের জন্য যায় এবং ৬% কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। বাকী ৬৮% উৎপাদন এবং অন্যান্য শিল্প প্রক্রিয়াগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড হ’ল ভলিউম দ্বারা ব্যবহৃত বৃহত্তম অজৈব কাঁচামালগুলির মধ্যে একটি।

ক্লোর-ক্ষার শিল্প যেখানে রাসায়নিক ভাষ্যমতে লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন, হাইড্রোজেন ও সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ( NaOH) তৈরি করে। যেখানে ক্লোরিনের(Cl) কিছু প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে পিভিসি, জীবাণুনাশক এবং দ্রাবক। সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড(NaOH) এমন শিল্পগুলিকে সক্ষম করে যা কাগজ, সাবান এবং অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন করে।

সোডা এ্যাশ শিল্পে লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইডকে সোলেয়াম প্রক্রিয়ায় সোডিয়াম কার্বনেট এবং ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয়। পরিবর্তে সোডিয়াম কার্বোনেট গ্লাস, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট এবং রঞ্জক, পাশাপাশি অন্যান্য রাসায়নিকের অগণিত উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয়।

টেক্সটাইল এবং রঞ্জনকরণে, জৈব দূষকগুলিকে পৃথক করতে, ডাইস্টাফ প্রাকৃতিকল্পের “সল্টিং আউট” প্রচার করতে এবং সেগুলির মানককরণের জন্য সংমিশ্রিত বর্ণের সাথে মিশ্রিত করার জন্য লবণকে ব্রাইন কলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

মাটি সুরক্ষিত করার জন্য এবং যে ভিত্তিতে মহাসড়কগুলি নির্মিত হয়েছে তার দৃড়তা প্রদানের জন্য লবণও যুক্ত করা হয়। লবণটি আর্দ্রতা এবং ট্র্যাফিক লোডের পরিবর্তনের মাধ্যমে উপচেপণে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রভাবগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

লবণের দ্বিতীয় প্রধান প্রয়োগ হ’ল গ্রিট বিন এবং শীতকালীন পরিষেবা যানবাহনের দ্বারা ছড়িয়ে দেওয়া উভয় রাস্তার ডি-আইসিং এবং অ্যান্টি-আইসিংয়ের জন্য, যা শীতপ্রধান দেশে বেশী দেখা যায়।

সুতরাং লবণের ব্যবহার যে সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। উৎপাদিত লবণের সাথে আয়োডিন সহ বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে যেমন আমরা খাবারে ব্যনহার করি তেমনি ঐ লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড এর সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক ইন্ডাস্ট্রি, টেক্সটাইল ও ডাইং শিল্পে রয়েছে এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার।

তাই আমাদের লবণ চাষে চাষীদের বেশীবেশী আগ্রহী করে তুলতে হবে। লবণ চাষীদের লবণের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার সম্পর্কে জানাতে হবে, বৈজ্ঞানিক ব্যবহার সম্পর্কে জানাতে হবে যেন তারা লবণ চাষে উদ্ভবুদ্ধ হয়। প্রাচীন সনাতন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া ছাড়া নতুন ও আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন সম্পর্কে জানাতে হবে।

দেশে একটি লবণ নীতি থাকাতে হবে যার ফলে সরকার ও সেখান থেকে রাজস্ব পায়। লবণ উৎপাদনের এ সাফল্য আনয়নে বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানটি লবণ চাষীদেরকে বিভিন্ন প্রকার সম্প্রসারণমূলক সেবা প্রদান করে আসছে সেটি হলো বিসিক। লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিসিকের সেবা সহায়তা, নতুন প্রযুক্তি ও পরামর্শমূলক কর্মকান্ডের আরও ব্যাপ্তির ঘটাতে হবে।

শুধু খাবার হিসেবেই নয়, উৎপাদিত লবণের এক বিরাট অংশ বিভিন্ন শিল্পের উপাদান ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়। লবণের সার্বজনীন, বহুমাত্রিক ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এই লবণকে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। টেক্সটাইল ও ডাইং শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ২য় আর এই টেক্সটাইল ও ডাইং এ রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড তথা লবণের বৈজ্ঞানিক ব্যবহার, বাংলাদেশে রয়েছে কাচ বা গ্লাস শিল্প সেখানেও রয়েছে এর ব্যবহার।

দেশের এসকল শিল্পের ব্যবহারের পাশাপাশি রাসায়নিক ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহারের পরে দেশের ঘাটতি মিটিয়ে আমাদের বাইরের দেশেও রপ্তানি করতে হবে। উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে, আমদানির পরিমাণ কমাতে হবে ও রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

সর্বপরি পরিমিত পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ যেমন আমাদের খাদ্যের জন্যে, শরীরের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। তেমনি লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে উৎপাদিত হচ্ছে কাগজ, গ্লাস, সাবান,জীবাণুনাশক তৈরীর কাচামাল, ব্যবহৃত হচ্ছে টেক্সটাইল ও রঞ্জক শিল্পে, বিভিন্ন রাসায়নিক ইন্ডাস্ট্রির কাচামাল তৈরীতে যা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে।

আসিফ আহমেদ মাহাদী
শিক্ষার্থী, এপ্লািড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মনের যত্নে আঁচল ফাউন্ডেশন

মুহম্মদ সজীব প্রধান


শিক্ষার্থীরাই আজ ও আগামির বাংলাদেশ এবং দেশের কর্ণধার। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং কর্মদক্ষতা যেমন দেশের জন্য অগ্রগতি বয়ে আনে তেমনি তাদের ভুল পথে পা বাড়ানো সমগ্র জাতির এগিয়ে চলায় সৃষ্টি করে শঙ্কা।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন ভুল ও ব্যর্থতায় জর্জরিত যা মাত্রাতিরিক্ত হলে অনেক শিক্ষার্থী নিজের জীবন জলাঞ্জলি দিতেও দ্বিধা করেন না।

কিন্তু জাতির মেধাবি সন্তানরা কেন এতোটা নির্দয় হয়ে নির্দিধায় নিজেকে মৃত্যুর কাছে সপে দেন? এর কারণ অনেক তন্মেধ্যে প্রধান কারণ হলো বিষণ্ণতা যা একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯–এ দেখা যায়, বাংলাদেশে ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ কিশোর–কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকা এসব কিশোর-কিশোরীর ৯৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসা নেয় না।

জরিপে আরো দেখা যায়, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ১৭ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। এসব ব্যক্তির ৯২ শতাংশ চিকিৎসা নেয় না। বস্তুত বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের এমন নাজেহাল অবস্থার অন্যতম কারণ মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসার অপ্রতুলতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ২৫০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৬০ জন ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন। এছাড়া শিশু মনোবিজ্ঞানী একেবারে নেই বললেই চলে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক রয়েছেন ১০ হাজার জন এবং নার্স ১২ হাজার জন। এমন চিকিৎসা-সক্ষমতা দিয়েই এ বিরাট সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

এমন করুণ পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগের গুরুত্বও অপরিসীম। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে যাত্রা শুরু করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন যেখানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করছে একঝাক মেধাবি শিক্ষার্থী।

ফাউন্ডেশনে বর্তমানে ২৫ সদস্যের কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানসেন রোজ। এছাড়াও জেনারেল সেক্রেটারি রাফিয়া তাসনিম রিফা, মিনিস্টার অব অপারেশন সামিরা ইসলাম সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সু স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিক ও যত্নশীল।

আঁচল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে নিয়মিত সভা, সেমিনার এবং অনলাইনে সচেতনতামূলক অনেক কর্মশালার আয়োজন করা হয় হচ্ছে।

হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হতাশার চাদর থেকে বের করতে এখানে রয়েছে সুদক্ষ সাইকোলজিস্ট যাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করা হয়।

প্রেসিডেন্ট তাসসেন রোজ বলেন, আঁচল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে যাতে প্রত্যেকে শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে মানসিকভাবেও সুস্থ্য থাকতে পারেন। আর শিক্ষার্থীরা যদি সচেতন হয় তাহলে সচেতন হবে পরিবার, সমাজ এবং গোটা দেশ এমনটাই বিশ্বাস করেন তানসেন রোজ।

দিশেহারা হয়ে ক্যাম্পাস খোলার আগেই ফিরছেন শিক্ষার্থীরা

সুফিয়ান সোহাগ


করোনা মহামারী বিস্তারের শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষা প্রথিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই ফিরতে শুরু করেছেন পিছু টানে। অনেক শিক্ষার্থীর দাবি টিউশনি ও পার্ট টাইম জব করেই পড়াশোনা চালাতে হতো, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বাসায় চলে গিয়ে এখন আর্থিক সংকটে পরেছেন অনেকে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর বলেন, মহামারীর শুরুতেই গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় চলে এসেছি। টিউশনি ও পার্ট টাইম জব করে পড়াশোনা চালাতে হতো। কিন্তু বাসায় এসে এখন সংকটে পরেছি। তবে টিউশন ছুটে যাবার ভয়ে আমাকে আবার খুললায় ফিরতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টিউশনি বা পার্ট টাইম চাকরি করে নিজের খরচ চালায়। অনেকে আবার পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। ফলে এই করোনাকালে তাঁরা বিপদে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীর দাবি, টিউশনি করেই পড়াশোনা সহ সব খরচ চালাতাম। এখনতো টিউশনি নাই, ফলে ইন্টারনেট কিনে অনলাইন ক্লাস করতে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, ‘করোনার কারণে আমার সব টিউশনি চলে গেছে। নতুন টিউশনির খোঁজে এবং বন্ধুদের ডিভাইসের সাহায্য নিয়ে অনলাইন ক্লাস করার জন্য খুলনায় এসেছি। এখন পর্যন্ত কোনো আশা খুঁজে না পেয়ে আপাতত রংমিস্ত্রির কাজ করছি।’

পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান মিল্লাত বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে হয়। এই অবস্থায় দ্রুত ক্যাম্পাসে ফেরা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ এ ছাড়া লকডাউন পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে খুলনায় ফিরে এসেছেন।

আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এলাকায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ নেই। অথচ অনলাইনে প্রায় প্রতিদিনই ক্লাস হচ্ছে, অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার জন্য খুলনায় ফিরে এসেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে জিপিএ অসমতায় হতাশ ভর্তিচ্ছুরা

মঞ্জুরুল ইসলাম আকন্দ

বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি


বাংলাদেশে ২০২০ সালের সর্বশেষ অধ্যাদেশ পাস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি সহ ধরলে দেশে মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০ টি।৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ দেশে আর মাএ ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয় হলেই প্রতি হাজার বর্গমাইলে গড়ে থাকবে ১ টি করে বিশ্ববিদ্যালয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গড় ঘনত্বের জায়গা থেকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে না হোক অন্তত এশিয়ায় জ্ঞানচর্চার একটি তীর্থভূমিতে পরিণত হবে এমনটাই প্রত্যাশা।

সমগ্র বিশ্বজুড়ে গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে যাকে ধরা হয় তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়। আর এ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জাতিকে কি দিবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা উঠে আসছে কি না তার উপর।

বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। ২০১৯-২০ সেশনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা চালু আছে এমন ৩৯ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরিক্ষার সার্কুলারে দেখা গেছে ৯ টি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে জিপিএ র উপর নম্বর। যার ফলে দেখা যায় প্রকৃত মেধাবীরা তারা তাদের পছন্দের বিষয় বা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২০০ নম্বর জিপিএতে । ভর্তি পদ্ধতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার জিপিএ তে সর্বোচ্চ ৬৭.৬৭ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ নম্বরের মধ্যে ৮০ নম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে বরাদ্দ।

২০১৯-২০ সেশনে সমন্বিত ৭টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুলোতে দেখা যায় ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১০০ নম্বর বোর্ড পরিক্ষার জিপিএ এর উপর।

বোর্ড পরিক্ষার ভিত্তিতে সবথেকে কম নম্বর বরাদ্দ রয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (১১.১১%), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৬.৬৭%) , এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৫%) ।

আরও পড়ুনবিদায় বেলায় ভালোবাসায় সিক্ত উপাচার্য, পুনঃনিয়োগের দাবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় নম্বর বিভাজনের এমন অসমতা ও অসংগতির কথা তুলে ধরে “দ্যা ক্যাম্পাস টুডে” কে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তারা তাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা জানান।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান জ্যোতি ” দ্যা ক্যাম্পাস টুডে” কে বলেন “শিক্ষার নিম্নমানের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ-র ভ্যালু অনেকটা দায়ী। কারণ অসুস্থতা বা অন্য কারণবশত কোনো শিক্ষার্থী রেজাল্ট খারাপ করলে তার দায় ভার তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতেও বহন করতেহয়৷ আর এর প্রেক্ষিতে অনেক শিক্ষার্থী সেকেন্ড টাইমারও হয়ে যায়। কারণ, যেখানে তারই সহপাঠী ১৪/১৫মার্কস এগিয়ে থাকছে তখন স্বভাবত সে মানসিকভাবে হতাশায় ভূগে। ভর্তি পরীক্ষায় সমান বা বেশি মার্কস পেয়েও ভর্তি হতে না পারার পেছনে এটাই দ্বায়ী। আর ভর্তি হওয়ার সুযোগ হলেও পছন্দের বিষয় পাওয়া ডুমুরের ফুলের মতোই দুষ্কর। অন্যদিকে যখন দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় চান্স পেলো তখন তার মনে হবে আমি হয়তো এটার যোগ্য নই কারণ, সবাই আমার থেকে মেধাবী।আবার তাকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথাও শুনতে হয়। মানসিক ভাবে হতাশাগ্রস্থ হওয়ার কারণে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ থেকেই পিছিয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু

অথচ জিপিএ ভ্যালু না থাকলে তার জীবনের মোড় হয়তো পাল্টে যেত। আর যেখানে সব শিক্ষাবোর্ডের প্রশ্নভিন্ন সেখানে ভর্তিপরীক্ষায় জিপিএ ভ্যালু রাখাটা অহেতুক। শিক্ষামানের অগ্রযাত্রা এগিয়ে রাখতে হলে জিপিএ ভ্যালু অবশ্যই বাদ রাখা উচিৎ বলে মনে হয়। “

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) এর শিক্ষার্থী, সাদিকাতুল বারী লাবিব জানান,“আমাদের ভর্তি পরীক্ষা সবচেয়ে ভাল ও গ্রহন যোগ্য।আমাদের ৬০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। বিস্তারিতভাবে একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই হয়।দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভেবে দেখতে পারে তারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে কি না।আমরা আমাদের পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট।”

রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর শিক্ষার্থী, ইমন বলেন,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মোটামুটি বেশ ভাল ছাত্র। কিন্তু এইসএসসি পরীক্ষায় অপ্রত্যাশিতভাবে রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় সে অনেক জায়গাতে পরীক্ষাই দিতে পারে নাই।মেডিকেলে তার ১৭ নম্বর গ্যাপ থাকায় পরীক্ষা দিতেই চায় নি । নোবিপ্রবি তে ভর্তি পরীক্ষায় হয়তো সে প্রথম হতে পারত। কিন্তু জিপিএ তে ১০ মার্ক কম ছিল।তাই মেধাক্রমে থাকতেই পারে নি,পরে ওয়েটিং থেকেও ডাকলেও পছন্দমত সাবজেক্ট পায় নি। এমন আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে,শুধু সেই না আমার এমন আরও কিছু বন্ধু এমন পরিস্থিতির স্বীকার। তাই আমিও তাই এমন বৈষম্যমুলক পরিস্থিতির অবসান হোক।

আরও পড়ুনবরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রীয় মসজিদের উদ্বোধন আজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, রনো আনোয়ার জানান “ভিন্ন ভিন্ন বোর্ডের প্রশ্নের কাঠিন্য ভিন্ন হয়ে থাকে,রেজাল্টেও রয়েছে পার্থক্য।সব বোর্ডের জিপিএ কে এক পাল্লায় মাপার কোন গাণিতিক যুক্তি থাকতে পারে না।ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী ভাল নম্বর পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী চান্স পাচ্ছে না,অনেকে শীর্ষ পছন্দের বিভাগগুলোতে পড়তে ব্যর্থ।অবিলম্বে এই অসম পদ্ধতি পরিহার করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসির ভাবা প্রয়োজন।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী, জান্নাতুল ফারজানা তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমি সিলেট কৃষিতে ভালো পরিক্ষা দিয়েও অপেক্ষমান তালিকায় ছিলাম। রেজাল্ট এ ৩ মার্ক কম ছিলো বলে । যদি ৩ মার্ক কম না থাকতো তাবে চান্স পেতাম। ময়মনসিংহ এ বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাকৃবি তে পরিক্ষা দিতে পারিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ কম বলে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ও অনেক নাম্বার কেটেছে, নয়ত ভালো প্রাইভেট মেডিকেলে হলেও স্কলারশিপের চান্স পেতাম। এরকম অনেক বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি, অপেক্ষমান তালিকায় থেকেছি আর হতাশায় সেই ভয়ঙ্কর দিন গুলো কাটিয়েছি।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী, মোঃ আল-মামুন জনান “আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ টাকে অনেক গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। এখানে জিপিএর ভিত্তিতে প্রতি বিভাগ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী বাছাই করে নেওয়া হয় এবং শুধু তারাই পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়। সর্বনিম্ন জিপিএ ৭.০০ (এসএসসি+এইচএসসি) ধরা হলেও বাস্তবে অনেক শিক্ষার্থীর জিপিএ ৭.০০ থাকার পরেও তাদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয় না।যেমনঃ গত ২০১৯-২০ সেশনে ক-বিভাগের বাছাইকৃতদের মধ্যে সর্বনিম্ন জিপিএ ছিল ৯.৬৩। প্রথম সিলেকশনে জিপিএর ভিত্তিতে যাদের বাতিল করে দেয়া হয় তাদের মধ্যেও অনেক মেধাবী থাকতে পারে বলে আমি মনে করি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএর গুণগত মান বিচার না করে সবাইকে সমান সুযোগ করে দেয়া উচিৎ।”

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে যদি এমন নম্বর বিভাজন পদ্ধতি চালু থাকে তাহলে তাদের পক্ষে কি পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা সুগোগ কি আদৌ সম্ভব?

জহির রায়হানের জন্মদিন আজ

সাহিত্য টুডে


কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের ৮৬তম জন্মদিন আজ। অসাধারন প্রতিভাবান মানুষটি ১৯৩৫ সালের আজকের এই দিনে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম যে ১০ জনের দলটি ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতক শেষ করা জহির রায়হান তাদেরই একজন। সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গেও।সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত থাকায় ক্যামেরা হাতে বেশ সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে।

ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোক ছিল জহির রায়হানের। চলচ্চিত্রেও তার আগ্রহ সে সময় থেকেই। ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানি চিত্রপরিচালক জারদারির সঙ্গে কাজ করেন তিনি। ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ তার প্রথম ছবি উর্দু ভাষার। তারপর ১৯৬১ সালে তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনও আসেনি’ মুক্তি পায়। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা’। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে প্রতীকী কাহিনীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে চিত্রিত করেন তিনি। এর মাধ্যমে জনগণকে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জহির রায়হান চলে যান কলকাতায়। শুরু করেন তার অন্য রকম যুদ্ধ। ক্যামেরা হাতে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন
বিভিন্ন সীমান্তে এবং এক শরণার্থী শিবির থেকে আরেক শরণার্থী শিবিরে।

জহির রায়হানের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে- ‘কখনো আসেনি’, স্টপ জেনোসাইড, এ স্টেট ইজ বর্ন, জীবন থেকে নেওয়া’ কাঁচের দেয়াল’ ইত্যাদি।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হচ্ছে- ‘শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কত দিন, কয়েকটি মৃত্যু, একুশে ফেব্রুয়ারি, তৃষ্ণা ইত্যাদি।

এছাড়া তার রচিত গল্পসমগ্র হচ্ছে- সূর্যগ্রহণ, সোনার হরিণ, সময়ের প্রয়োজনে, একটি জিজ্ঞাসা, হারানো বলয়, বাঁধ, নয়াপত্তন, মহামৃত্যু, ভাঙাচোরা, অপরাধ, স্বীকৃতি, অতি পরিচিত, ইচ্ছা অনিচ্ছা, জন্মান্ত, পোস্টার, ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি, কতকগুলো কুকুরের আর্তনাদ, কয়েকটি সংলাপ, দেমাক, ম্যাসাকার, একুশের গল্প ইত্যাদি।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আদমজি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। এছড়া চলচ্চিত্র বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নিগার পুরস্কার, ‘একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন।

১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের সন্ধানে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি এই নন্দিত চলচ্চিত্র পরিচালক। তার মৃতদেহটিও পাওয়া যায়নি। ওই দিনটি জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস হিসেবে পালিত হয়।

‘অল্প বয়স তোর, তুই পারবি না’, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের আয় মাসে ৩০ হাজার টাকা

করোনা সংকট সময়ে অনেক শিক্ষার্থী যেখানে অর্থকষ্টে জর্জরিত, আবার কেউ বা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেখানে
অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অসিত মন্ডল।

অসিত মন্ডল করোনার এই অবসরে কাছের এক সহপাঠীর বড় ভাইয়ের পরামর্শে চীনা প্রজাতির বেইজিং হাঁস পালন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এখন সে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালিক এবং মাসিক আয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার।

বেইজিং হাঁস পালনে সফলতা নিয়ে অসিত মন্ডলের সাথে কথা বলেছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডের স্টাফ রিপোর্টার সাগর দে

করোনার এই সময়ে হঠাৎ কি ভেবে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন?

আমি এই হাঁস সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে এই হাঁস পালন শুরু করি যাতে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে পারি।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে হাঁস পালনে পরিবার থেকে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল?

প্রতিবন্ধকতা তো ছিলোই। যখন আমি উদ্যোগের কথা পরিবারকে প্রথমে জানাই তখন বলছিলো- ‘অল্প বয়স তোর, তুই পারবি না’। এই প্রজাতির হাঁসের চল আমাদের এদিকে নাই। যদি হাঁসের বাচ্চা বাঁচাতে না পারিস? ডিম ফোটাতে পারিস না একেবারে নতুন কি দিয়ে কি হবে তার থেকে এসব বাদ দে। কিন্তু এসব কথা না শুনে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে হাঁস পালন করি। শুধু বলেছিলাম আমি বিস্তারিত শুনেছি এক বড় ভাইয়ের থেকে দেখি কি হয়!

প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অনুপ্রেরণা পেলেন কিভাবে?

ওই যে বললাম এক ভাই। তিনি আমার এক বন্ধুর বড় ভাই। বন্ধুর মুখে শোনা আর তার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।

বেইজিং হাঁস কোথায় পেলেন, প্রথমে কত হাঁস নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু ?

ওই বড় ভাইয়ের থেকে প্রথমে ২০০ হাঁস কিনে খামারের যাত্রা শুরু। যার দাম প্রায় ২০০০০ টাকা।

শুরুতে এতগুলো টাকা কিভাবে পেয়েছিলেন?

আমার সঞ্চয়ের কিছু টাকা আর বাকি টাকা পরিবার থেকে দিয়ে ছিল।

বেইজিং হাঁস সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

বেইজিং হাঁসকে অনেকে রাণী হাঁস বলে। ৫ মাস পর বড় হলে এর ওজন প্রায় ৩-৩.৫ কেজি এবং ৬ মাস পর এরা ডিম পারা শুরু করে।প্রতিটি ডিমের দাম ২০ টাকা। এর মাংস খেতেও অনেক সুস্বাদু এবং মাংসের কেজি ৩৫০ টাকা। এছাড়া ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করলে প্রতি পিস হাঁসের দাম ১০০ টাকা।

এখন আপনার মাসিক ইনকাম কত?

শুধু ডিম বিক্রি করলে মাসে ১৫ হাজার মতো থাকে তবে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করলে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে বর্তমানে খামারে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার হাঁস আছে।

ডিম কি তা দিয়ে ফুটান না মেশিন আছে?

প্রথমে তা দিয়ে ফুটাতাম। যখন আমি সফল হলাম তখন আমার অনির্বাণ মামা খুশি হয়ে ফ্রি একটি মেশিন বানিয়ে দেন যার দাম প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এই মেশিনে একসাথে প্রায় ৫০০০ ডিম ফুটানো যায়।

ভবিষ্যৎ খামার নিয়ে পরিকল্পনা কি?

সফল হওয়ার পর পরিবার থেকে এখন বলছে বড় আকারে করতে।আমার ইচ্ছেও এই খামার বড় পরিসরে করার। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বড় করে খামার ঘর করবো বাড়ির আঙিনায়।

শেষ প্রশ্ন, প্রতিবন্ধকতার পেরিয়ে আজ আপনি সফল উদ্যোক্তা, এব্যাপারে আপনার অভিমত?

আজ আমি সফল হতে পেরে অনেক খুশি। আরও বেশি ভালো লাগে যখন আমার সহপাঠীরা এব্যাপারে আগ্রহী হয়, আমার কাছে পরামর্শ নেয়। শুধু পরামর্শ বা সহপাঠী নয় আগে এলাকার যারা সমালোচনা করতো তারও এটা করতে আগ্রহী।

ইতিমধ্যে পরিচিতদের মধ্যে অনেক ৭০০ থেকে ৮০০ হাঁসের অর্ডার পেয়েছি। আর শেষে এটাই বলবো অনেকে আছে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পায় না, বেকার থাকে। তাদের উদ্দেশ্য বলবো কোন কাজই ছোট নয়, শুধু চাকরির পিছনে না দৌড়াদৌড়ি করে সময়টাকে কাজে লাগাতে পারলে যে কেউ সফল হতে পারবে।

ইষ্টিপত্রের মডেল ময়মনসিংহের মেয়ে রিনথি

সুপর্না রহমান


ময়মনসিংহের মেয়ে শেখ রিফাত জাফরিন রিনথি। মডেলিং তাঁর শখ। উদ্যোক্তা জান্নাত নিপুনের প্রতিষ্ঠিত ‘ইষ্টিপত্র’ এ নতুন মডেল হিসেবে যোগ দেন তিনি।

সম্প্রতি ইষ্টিপত্রের নতুন ড্রেস কালেকশনের ফটোশুট শেষ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে মডেল হয়েছেন রিনথি। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা নিপুন ‘দ্য ক্যাম্পাস টুডে’ কে বলেন, ‘রিনথি অনেক বেশি সুদর্শীনী। তাঁর মডেলিং আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে প্রচারিত হবে। ইষ্টিপত্র কিছু ভালো পণ্য বাজারে নিয়ে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের জন্য সর্বদা শুভ কামনা। আশা করি, রিনথি অচিরেই বড় পরিসরে কাজ শুরু করবে। তাঁর কাজ খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ ও ক্যামেরার সামনে সে খুবই সাবলীল।’

রিনথি বলেন, ‘যদিও এই ইউনিটের সাথে আমার প্রথম কাজ। তবে কাজ করে খুব ভালো লেগেছে। সবাই খুব আন্তরিক। একবারের জন্যও মনে হয়নি সেটে আমি নতুন। প্রত্যাশা করি, ভাল রেসপন্স আসবে।’

উল্লেখ্য, তিনি একজন নতুন ইউটিউবার। তিনি মিডিয়া পাড়ায় মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান। রিনথি সকলের দোয়াপ্রার্থী।

শাহ্ সুলতান কলেজে একদিন

মো. রাকিবুল হাসান


ঘরবন্দীরা ভাবে দেশে চলছে লকডাউন। তবে বাহিরের চিত্র একদম ভিন্ন। চার মাস পরে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মুঠোফোনে জানাল ‘আমি আসতেছি তুই বের হ’। অনেকদিন বের হইনা তাই হ্যাঁ বলে দিই।

বাহিরে গিয়ে দেখি শহরের রাস্তাগুলোতে লকডাউনের কোনো অস্তিত্ব নেই। বরং মানুষের গাদাগাদি শহর জুড়ে। বন্ধু’র সঙ্গে অনেক দিন পরে দেখা। সেই ক্যাম্পাস খোলা থাকতে শেষ দেখা হয়েছিল।

গল্প করার জন্য নির্জন এলাকা খুঁজতে থাকলাম। সেরকম জায়গা না পেয়ে বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে ঢুকে পড়লাম দু’জন।

অনেক দূরে এক দুইজন মানুষের দেখা মিলল। বাঁকি কলেজ প্রাঙ্গণ ফাঁকা। আজ ০৫ আগস্ট হওয়ায় কলেজের অফিস কক্ষ খোলা দেখতে পেলাম।

আমার বন্ধু আসাদুর রহমান। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি এক হাসপাতালে চাকরি করে। তাই করোনাকালীন সময়ের হাসপাতালের গল্প শুনতে শুনতে কলেজের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে গেলাম।

প্রখর রোদে কলেজের নতুন গেট ঝকমক করছে। তবে গেটে এখনও কলেজের নাম লেখা হয়নি। আসাদ এ কলেজে প্রথমদিন এসেছে।

সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।এটি বগুড়া শহরে অবস্থিত। এ কলেজ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এটি বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

কলেজের মূল ফটক থেকে একাডেমিক ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে মাঠের দিকে এগুলাম। তবে মাঠে ঢুকতে পারিনি। মাঠের সামনে রটের লোহার তালাবন্দী করে রাখা। করোনা’র কারণে মাঠে কেউ যেতে পারে না। স্বাভাবিক সময়ে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে মাঠটি।

এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্সদের ক্লাস হয়ে থাকে।উচ্চমাধ্যমিকদের জন্য আলাদা ভবন বানানো হয়েছে তা আগে খেয়াল করিনি। টুই মেরে ভবনটিও ঘুরে এলাম। নতুন বানানো হয়েছে। এখনও ক্লাস শুরু হয়েছে বলে মনে হল না।

কলেজের প্রাণ কেন্দ্রে রয়েছে শহীদ মিনার৷ তবে সেখানে যাবার এখন কোনো পথ নেই। কলেজ বন্ধে উঁচু উঁচু ঘাসে চারপাশ ভরে গেছে। বৃষ্টির পানিতে মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে।

একাডেমিক ভবনগুলোতে কয়েকটি কক্ষ খোলা থাকলেও বেশির ভাগ কক্ষে তালা ঝুলছে। যেখানে দিনভর শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় ভরপুর থাকত সেখানে আজ নেই প্রাণের স্পন্দন।

বন্ধুর সাথে গল্প ও হাঁটার ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম। এরপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। বন্ধু গেল তার মামার বাড়ি।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনায় জবিয়ানদের ঈদ ভাবনা, মহামারী পরিস্থিতিতে সেই ঈদের আমেজ নাই!

ফারহান আহমেদ রাফি, জবি প্রতিনিধি:


সারাবিশ্বের মতো করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে ঈদুল আযহা উদযাপনে ভিন্ন রকম আবহ তৈরি হয়েছে। অনেকটা চার দেয়ালের মধ্যেই কাটছে বেশিরভাগ মানুষের ঈদ।এবারে কোরবানির আয়োজন যেমন ছিল সীমিত, তেমনি সবাই মিলে নামাজ পড়া বা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার মতো প্রচলিত রীতিতে দেখা গেছে বড় ধরণের পরিবর্তন।

করোনার মধ্যে কেমন কাটলো জবি শিক্ষার্থীদের ঈদ এ বিষয়ে জবি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস টুডের প্রতিনিধি ফারহান আহমেদ রাফি। পাঠকদের উদ্দেশ্যে জবিয়ান দের ঈদ উদযাপন , ভাবনা তুলে ধরা হলো :

আফসানা আক্তার চাঁদনী

১৪ তম ব্যাচ

নৃবিজ্ঞান বিভাগ

করোনার মধ্যে পার হলো আরো একটি ঈদ।ঈদ মানেই হলো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন জামা পরে মায়ের হাতে বানানো সেমাই খাওয়া, বন্ধুদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, বড়দের কাছ থেকে সালামী নেওয়া। কিন্তু করোনার এই সময়ে ঈদের সেই খুশি যেনো কারো মনেই নেই,সব কিছু যেনো থমকে গেছে।ঘর থেকে বের হলেও একটা ভয়ের কাজ করে।ছোট ছোট বাচ্চাদের মাঝেও যেনো সেই আনন্দ নেই।তারা চাইলেও কেউ একসাথে ঈদের দিন আনন্দ করতে পারে নি।ঘরের মাঝে বন্ধি হয়েই অন্যান্য দিনের মত ঈদ পার করতে হয়েছে।রোজার ঈদের থেকে কুরাবানির ঈদে যেনো সবার মাঝে একটু বেশিই আনন্দ থাকে।কিন্তু করোনা নামক এই মহামারীর সময়ে চাইলেও আগের মত আনন্দ করতে পারি নি।তারপর ও ঈদ এসেছে সবার মাঝে,একটি দিনের জন্য হলেও ঘরের মাঝে থেকে পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করার চেষ্টা করেছি।

বায়জিদ রহমান

পরিসংখ্যান বিভাগ

১৪ তম ব্যাচ

ইদ মানেই আনন্দ ইদ মানেই খুশি।
সেই আনন্দ টা আরো দ্বিগুন হয়ে পরে যখন ফ্যামিলির সবাই একসাথে থাকে।আমার নানুবাড়ি,দুই মামা,দুই খালাম্মুদের এবং আমাদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় আমরা একসাথেই কোরবানি দেই সেই সুবাধে ইদের দিন সবাই একসাথে বড় খালাম্মুদের বাড়িতে যাই।ঐখানে খালাতো ভাই-বোন,মামাতো ভাই-বোন রা,খালাম্মু-খালু, মামা-মামি,নানা-নানু সবাই আসে।মুহূর্তে অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় অনেকদিন পর সবাই সবাইকে দেখতে পেরে সবার মুখেই ফুটে উঠে ইদ আনন্দ।

এবারের ঈদ বর্ণনা দিতে গেলে-ইদের আগের দিন রাতে প্রায় আমার কাছের যতগুলা ফ্রেন্ড,বড় ভাই-আপু,ছোটো ভাই-আপু দের সাথে কথা বলতে বলতে রাত প্রায় ৪ টা বেজে গেছে।সকালে সাড়ে ৫ টায় আম্মুর ডাকে আবার ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে সেমাই খেয়ে সবাই মিলে খালাম্মুদের বাসায় গেলাম ততক্ষণে পরিবার এর সবাই এসে গেছে।সেখানে গিয়ে সবার সাথে ইদ আনন্দ ভাগাভাগি করে সব ভাই রা মিলে নামাজ পড়তে গেলাম মসজিদ এ,দুঃখের বিষয় একটাই যে দেশে করোনা পরিস্থিতির জন্য জনসমাগম এড়ানোর জন্য এবার ঈদগাহে ৩-৪ গ্রামের মানুষ একসাথে নামাজ পড়া হলো নাহ্,যে যার যার মসজিদ এই নামাজ আদায় করলাম।নামাজ পড়ে নানার বাসায় গেলাম ঐখানে বড় মামি নাস্তা দিলো সবাই মিলে নাস্তা করে বড় খালাম্মুদের বাসায় চলে গেলাম।এখানে এসে ছোটো পোলাপান রে সালামী দেওয়া, তারপর গরু কুরবানি দেওয়া হলো তারপর শুরু হলো আমাদের কাজ করা,কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফ্রেন্ডদের,বড় ভাই-আপু,ছোটো ভাই-বোনদের ফোন দেওয়া,মেসেজ করা,কার ইদ কেমন কাঁটতেছে এইসব ছিলো আনন্দের মধ্যে ও আরো আনন্দ বয়ে আনার অংশ।সারাদিন কাজ শেষে বাসায় আসলাম।পরিশেষ এ এটাই বলবো যে বরাবর ই কোরবানির ইদ আমার জন্য আনন্দ বয়ে আনে এবার ও তার ব্যতিক্রম ছিলো নাহ্,পরিবার এর সবাই মিলে ইদ উদযাপন করার আনন্দ টাই “ইদ”নামক শব্দটার তাৎপর্য আরো বেশি করে দেয়।

মালিহা আফরিন

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

১৪ তম ব্যাচ

ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ।টানা ১ বছর দীর্ঘ অপেক্ষা করার পর আমাদের মুসলমানদের জন্য এ দুটো ঈদ নিয়ে আসে খুশির বার্তা। বাড়িতে বাড়িতে,অলিতে গলিতে,পথের আনাচেকানাচে মনে হয় যেন সর্বদা ঈদের আমেজে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে।

তবে এ বছরের দুটো ঈদই আমাদের সকলের অন্যরকম কাটাতে হচ্ছে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য কেউ কারো কাছে যেতে তো পারছেই না তারসাথে ঈদের মূল খুশি যেই নামাজ পড়া আর কোলাকুলি করা সেটাও অনেকেরই সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র এক অদৃশ্য ভাইরাসের কারণে।অন্যবছরের মতো আনন্দ আর খুশি এবার আর নেই।চারদিকে এক চুপচাপ থমথমে পরিবেশ। মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি আরও কত কি। এক অদৃশ্য অনুজীবের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে আমাদের। জানি না আর কতকাল এই যুদ্ধ আমাদের করে যেতে হবে।

এ বছরের মতো দুটো ঈদেরই বাজে অভিজ্ঞতা কখনো ভুলার নয়।এ যেন এক তিক্ত পরিস্থিতি। না কারো সাথে দেখা হচ্ছে না বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে।কোথাও ঈদ এসেছে বলে বাচ্চাদের হইহুল্লোড় নেই।নেই এ বাড়ি থেকে ওবাড়ি গিয়ে সবাই একসাথে মেহেদী পরার উৎসবও।কোনোকিছুই হচ্ছে না।

রমজানের ঈদ আর কুরবানের ঈদ।এদুটোর মধ্যে আমার কুরবানি ঈদই বেশি প্রিয়। কারণ ধনী-গরীবের বৈষম্য বেশিরভাগই কুরবানি ঈদেই দূরীভূত হয়। এদিন যারা দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারে না তারাও মাংস ভাত খেতে পারে। রমজানের ঈদে গরীবদের কথা ধনীরা ভুলে গেলেও কুরবানি ঈদে তাদের কথা ঠিকই মনে থাকে,মনে রাখতে হয়।রেখে দিতে হয় তাদের প্রাপ্য অংশটুকু। এটাই আমাদের ইসলামের শিক্ষা।

মনে রাখতে চাই না এই ২০২০ সালকে। মনে রাখতে চাই না এদুটো ঈদকে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যাতে খুব শীঘ্রই আমাদের এর হাত থেকে রক্ষা করেন। পুরো পৃথিবীকে আবার আগের মতো সুস্থ এবং সুন্দর করে দিন।

আরও পড়ুনমৃত্যুশঙ্কায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী, বাঁচাতে প্রয়োজন ৩ লক্ষ টাকা

রাফসান জামিল রাজু

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

১৪ তম ব্যাচ

মহামারী করোনায় ঈদের আমেজ টা আগের মত পাওয়া যায়নি। তাই বলে কি নিজেকে হতাশ রাখতে হবে? মোটেও না! আনন্দটা নিজে থেকে খুঁজে নিতে হয়। করোনার মধ্যে এবারের ঈদুল আজহা টা একটু ব্যতিক্রম ছিল। লকডাউন এর আগে থেকে আম্মুর দেশের বাইরে থাকায় ঈদের দিন মনটা একটু খারাপ ছিল। কিন্তু সকাল সকাল ঈদের নামাজ শেষে আমার বন্ধু রাকিব তার বাড়িতে নিয়ে গেল এবং সেখানেই সকালের নাস্তা করে দিন টা শুরু হলো। এর পরেই গরু কোরবানি করা হলো এবং হাতে হাতে সবার সাথে কোরবানির কাজগুলো করা হলো । এর মধ্যেই বৃষ্টি আসলো এবং আমাদের আনন্দটা আরো বেড়ে গেল। যতক্ষণ বৃষ্টি ছিল ততক্ষণই ভিজেছি। বৃষ্টিতে ভেজার পর নুডুলস খেয়েছি। সব কাজ শেষ হওয়ার পর বাড়ি গেলাম, ফ্রেশ হলাম। তারপর বন্ধুর ফোনে আবার ওদের বাড়ি গেলাম এবং গিয়ে এক বাটি গোস্ত ভোজন করলাম। এরপর বাড়ি এসে একটু বিশ্রাম নিলাম। আর সারাদিন ধরেই অনেকের ফোন মেসেজ ঈদ শুভেচ্ছা সবার টা একটু রেসপন্স করার চেষ্টা করলাম। ও বাড়িতে এসে সবার আগেই আম্মুর সাথে কিছুক্ষন ভিডিও কলে কথা বললাম। রাতে আমার একজন শিক্ষিকা যাকে আমি মা বলে ডাকি অর্থাৎ আমার সে ধর্ম মা ফোন দিয়ে নিয়ে গেলেন। অবশ্য দুপুর থেকেই সে ফোন দিচ্ছিলো যাওয়ার জন্য। ওখানে রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম এবং আমার তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম তারপর বাড়ি চলে আসলাম। আমার মতে আনন্দটাকে খুজে নিলেই তা পাওয়া যায়। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কাটলো আমার ঈদ।