শিক্ষক বহিষ্কার ও বিসিএস শিক্ষা সমিতির উদাসীনতা

প্রফেসর ড. শেখ মকছেদুর রহমান


করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত হয়ে ডাক্তারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখার জন্য সরকারি কলেজের দু’জন শিক্ষক ময়মনসিংহের জনাব কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী ও বরিশালের জনাব সাহাদাত উল্লাহ কায়সার’ কে বরখাস্তের ঘটনায় আমরা মর্মাহত।

শিক্ষা প্রশাসন কতৃক বরখাস্তের এ অন্যায় আদেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা-উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম বিবৃতি দিয়ে এ অন্যায় আদেশ প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে, এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ফোরামকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, সরকারি কলেজ শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও যৌক্তিক দাবী আদায়ের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’ নির্বিকার কেন? সমিতি কি কোন প্রতিবাদ করবে না? বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ক্যাডাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি কি এ অন্যায় আদেশ মেনে নিবে?

যদি এ আদেশ প্রত্যাহারের জন্য সমিতি থেকে উদ্যোগ না নেয়া হয় তবে সমিতি থাকার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সবাইকে যদি আমলাদের ভয়ে গা বাচিয়ে চলতে হয়, উচিৎ কথা বলতে ভয় লাগে তবে সংগঠনের দরকার কী? দু-একজন এ অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছে, আমার দৃষ্টিতে এটা মোটেই পর্যাপ্ত নয়, সবাইকে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে।

যতদূর জানি শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাচ ভিত্তিক ফোরাম আছে কিন্তু কোন ফোরাম থেকেও কোন টু শব্দ নেই। ফোরাম কি শুধু নেতা সেজে ঢাকায় থাকার ধান্দায়? নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য?

মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়কে বলছি, শুনেছি আপনার পদটি সচিবের পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। আপনার সাথে এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রনালয় কতৃপক্ষের কি কোন আলোচনা হয়েছে? আপনি নিশ্চয় কলেজ শিক্ষক, তাই কলেজ শিক্ষকদের স্বার্থ দেখা উচিৎ। আপনাকে মেরুদন্ড শক্ত করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, বিসিএস ক্যাডার অফিসারদের শাস্তি দিতে হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। নজিরবিহীন দ্রুততার সাথে শাস্তির আদেশ জারির পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার।


লেখক: প্রফেসর ড. শেখ মকছেদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

দুর্যোগকালীন এক মাসের বাড়ি ভাড়া অর্ধেক করুন

মোঃ রেজোয়ান হোসেন


সারাবিশ্বে হানা দিয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। আমাদের বাংলাদেশও বাদ পড়েনি সেই তালিকা থেকে। আর এই ভাইরাসের প্রকোপে সারাদেশের মানুষ আজ গৃহবন্দি অবস্থায় দিন পার করছে। রাজধানী ঢাকা ইতোমধ্যে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।

এতটাই ফাঁকা হয়েছে যে বিগত বছরগুলোতে ঈদের সময়টাতেও রাজধানী ঢাকা এতটা ফাঁকা হয়নি। রাজধানীতে অবস্থানরত বিপুল জনসংখ্যার সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একটা সহজ সমীকরণ যদি আপনি করেন তাহলে দেখতে পাবেন এই করোনাভাইরাসের প্রকোপে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ কম বেশি কোন না কোনভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বাড়ির মালিকেরা, যারা বাড়ি ভাড়া দেন তারা এই করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রকোপ থেকে একেবারেই মুক্ত। বাড়িওয়ালাদের অর্থনৈতিকভাবে কোনও লস নেই। তারা ঠিকই মাস গেলে ভাড়া পাবেন। এই দুর্যোগের সময় তারা যদি একটু এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো আমাদের অর্থনীতিতে একটা বিরাট প্রভাব পড়বে।

এমনটি যদি করা সম্ভব হয়, দুর্যোগকালীন এক মাস অর্থাৎ মার্চ অথবা এপ্রিল মাসের বাড়িভাড়া বাড়ির মালিকরা তাদের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অর্ধেক নেবে। তাহলে বিপুল পরিমাণ একটি অর্থ স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করবে। যারা ডেইলি বেসিসে কাজ করেন বা কর্মস্থলে না গেলে বেতন পান না তাদের জন্য এই সময়টা খুবই কষ্টের যাচ্ছে। তারা হয়তো এই সুবিধাটুকু পেলে তাদের বিরাট উপকার হবে। ঢাকা শহরের বুকে যার একটি বাড়ি আছে, তাকে অন্তত গরীব বলা যায় না।

সুতরাং সে যদি এক মাসের বাড়িভাড়া অর্ধেক রাখে তবে তার খুব বেশি ক্ষতি হবে না। অপরদিকে একজন ভাড়াটিয়ার যদি একমাসের বাড়িভাড়া অর্ধেক বেচে যায় তাহলে বিশেষ করে এই দুর্যোগকালীন মুহূর্তের সময়টা তার কিছুটা হলেও উপকার হবে। ওই টাকা দিয়ে সে তার প্রয়োজন মেটাতে পারবে। কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারবে। এতে করে আমাদের অর্থনীতি খুব দ্রুত সচল হতে পারবে। অপরদিকে এটা করা গেলে বাড়িওয়ালাদের যে খুব বেশি ক্ষতি হবে তা কিন্তু নয়।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেগুলোর প্রত্যেকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা দেখেছি। সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। দুর্যোগকালীন বাজেট প্রণয়ন, গুঁজব প্রতিরোধ, খাদ্য বিতরণসহ নানা কর্মসূচি আমরা দেখতে পাচ্ছি।

কয়েকটি পত্রপত্রিকায় আমরা দেখেছি ঢাকার বেশ কিছু বাড়িওয়ালা এই দুর্যোগকালীন সময়ে বাড়িভাড়া মওকুফ করেছেন এবং ভাড়াটিয়াদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। অবশ্যই সেইসব বাড়িওয়ালারা ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার। তারা মহৎ হৃদয়ের মানুষও বটে।

এই মহৎ উদ্যোগটি যদি ঢাকাসহ সারাদেশে বাস্তবায়িত করা যায়, অথবা শুধু বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোতে করা যায় তাহলে সারাদেশের মানুষ উপকৃত হবেন। আর এজন্য দরকার শুধু একটি উদ্যোগের। একটি ঘোষণার।


লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি এবং সাবেক শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

ঐতিহ্য ও গৌরবের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

তাসনিমুল হাসান প্রান্ত


ঐতিহ্য ও গৌরবের চার দশক পেরিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন আন্তর্জাতিকীকরণের স্বপ্ন লালন করছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। নানা চাড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ৪০ বছর পেরিয়ে ৪১ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইসলামী বিদ্যাপীঠ স্থাপনের উদ্যোগ অনেক প্রাচীন । সর্বপ্রথম ১৯২০ সালে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী চট্টগ্রামের পটিয়ায় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ফান্ড গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে মাওলানা শওকত আলি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৪১ সালে মাওলা বক্স কমিটি ‘ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক লার্নিং’ প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। ১৯৪৬-৪৭ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন কমিটি এবং ১৯৪৯ সালে মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ কমিটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। ১৯৬৩ সালের ৩১ মে ড. এস. এম. হোসাইন-এর সভাপতিত্বে “ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন” গঠন করা হয়।দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এটিই ছিল স্বাধীন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম ঘোষণা।

এরপর ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ বারীকে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০ অক্টোবর ১৯৭৭ সালে রিপোর্ট পেশ করে।পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশে ৩টি অনুষদ, ১৮টি বিভাগ, ৩টি ইনস্টিটিউট ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন।

তবে ১৯৭৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৫ সাল থেকে। এসময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুষ্টিয়া থেকে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর হয়। পরে ১৯৯০ সালে সরকারি আদেশে আবার কুষ্টিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। গাজীপুরে থাকা অবস্থায় ১৯৮৫ সালে দু’টি অনুষদের অধীনে ৪টি বিভাগে ৮ জন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার পিটিআই এবং প্যারামেডিক্যাল ভবনে অস্থায়ী কার্যক্রম চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরের সবুজ চত্বরে মাটির সড়ক আর সবুজ গাছপালার মধ্যে গড়ে ওঠে দু’টি ভবন। ভবন দু’টি নিয়েই শুরু হয় মূল ক্যাম্পাসের কার্যক্রম।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদ, ৩৪টি বিভাগ, একটি ইনস্টিটিউট এবং ১টি ল্যাবরেটরি স্কুল রয়েছে। এর অধীনে রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী, ৪১০ শিক্ষক, ৪২৫ কর্মকর্তা, ২০৯ সহায়ক কর্মচারী এবং ১৯০ সাধারণ কর্মচারী। এমফিল কোর্সে ২৮৫ জন এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬২১ জনকে এমফিল ডিগ্রি এবং ৪২১ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।

১৭৫ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ২টি প্রশাসনিক ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, দেশের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। এছাড়াও রয়েছে ১টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন, সমৃদ্ধ ও আধুনিক লাইব্রেরী, উপাচার্য বাংলো, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার, ছেলেদের জন্য ৫টি এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে ৩টি আবাসিক হল। এছাড়া এখানে রয়েছে ক্যাম্পাস ভিত্তিক বৃহত্তম শহীদ মিনার, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ মুর‌্যাল, একুশে কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তবাংলা, স্মৃতিসৌধ এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এন এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী।

শতভাগ আবাসিকতার তকমা গায়ে নিয়ে বেড়ে উঠলেও গড়ে তুলতে পারেনি সম্পূর্ণ আবাসিকতা। প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পরও সে স্বপ্ন এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে।তবে বর্তমান উপাচার্যের আশ্বাসে আশায় বুক বেঁধেছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অবহেলিত এ প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসন ইতোমধ্যে বরাদ্দ পেয়েছে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রোজেক্ট।প্রোজেক্টে ৯টি ১০ তলা ভবন ও ১৯টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে স্বপ্ন পূরণের দিকে অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে।তবে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই এত অল্প সময়ে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্থান করে নিতে পারেনি। অল্প সময়েই ভর্তিচ্ছুদের পছন্দের তালিকায় ঢাবি,জাবি,জবি,রাবির পরেই এ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেও স্নাতক সম্মান শেষেই চাকরির বাজারে অভাবনীয় সাফল্য পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাকরি বিসিএস। আর সেই বিসিএস পরীক্ষায়ও তাদের সাফল্যের হার ঈর্ষণীয়।

দেশের প্রায় সব সেক্টরেই এই সাহসী যোদ্ধারা দেশের সেবার কাজে নিয়োজিত আছে। প্রতি বছর আবার নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। এভাবে দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও মান রক্ষার কাজে নিয়োজিত হচ্ছে আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে।

এছাড়াও জাপান, কোরিয়া,চীন, নিউজিল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষকতা সুনামের সাথে করে যাচ্ছে। জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাফল্য দেখাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণার সূতিকাগার। গবেষণা উপকরণের এবং সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা থাকলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হাঁটি হাঁটি পা করে সে দিকেই পথ চলছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ বিভাগে এমফিল, পিএইচডির কার্যক্রমে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী গবেষণা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ শাহীনুর রহমান বিগত কয়েক বছর ধরে এক গবেষণায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে তালের শাঁস ও ওলকচু এ বিষয়টি প্রমাণ করেন । অনুষদ বা বিভাগগুলোও নিয়মিত গবেষণা পত্রিকা প্রকাশিত করছে, যা তরুণ গবেষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করছে।

বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য প্রশংসনীয়। সময়ের আবর্তে ক্ষমতার পরিবর্তনে বাংলাদেশী নিয়মে ভিসির পালাবদল ঘটছে। প্রতিবছর ২ হাজারের ও অধিক শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। আবার প্রায় দুই হাজার চারশত মত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বপ্নবোনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একদিন বিশ্বের বুকে স্বগৌরব ও ঐতিহ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হবে বিশ্ব সেরা কোনো বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অথবা কলামিস্ট ।


 

 

লেখকঃ তাসনিমুল হাসান প্রান্ত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।

 

 


ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাস ও বর্তমান হালচাল

শেখ মোঃ ফায়েকুজ্জামানঃ প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর পিছনে ফিরে তাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাফল্য আর গৌরবের পাল্লাই ভারী দেখাবে তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু সেই গৌরব আর অর্জনকে পেছনে ফেলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়ে সরকার ও দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে বেশ বিব্রত করেছে জাতির পিতার হাতে গড়ে উঠা এই সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্মের পর থেকে আজ অবধি গৌরবময় ঐতিহ্য ধারণ করেই সোনালি আগামীর লক্ষ্যে এই সংগঠনের পথচলা। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলা এবং বাঙালির ছয় দশকের ও বেশি সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এর ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্র সংগঠনটি। বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় ও অর্জনে রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। বাঙালি জাতি হিসেবে জন্ম গ্রহনের আঁতুড় ঘর থেকে আজ অবধি স্বাধীনতা, সংগ্রাম আর শিক্ষার নিশ্চয়তায় ছাত্রসমাজের অধিকারের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের পথচলায় বায়ান্ন এসেছে, ৬২ এসেছে, ৬৬, ৬৯, ৭০-এর পথ ধরে এসেছে একাত্তর। এই সংগঠনটির প্রায় সতের হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ যুক্ত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে।

ছাত্রলীগ সম্পর্কে গর্ব করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।’ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ মেলে সংগঠনটির স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামের সম্মুখ সমরের যোদ্ধা ছিল ছাত্রলীগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে পথ পরিক্রমা পেরিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ দেশের সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী। আবার ছাত্রলীগের রাজনীতি করে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে এবং সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ছাত্রলীগের অনেক সূর্য সন্তান।

১৯৪৭ সালে বৃটিশ উপনিবেশের শাসনের বেড়াজাল থেকে ছিন্ন হয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাজনের পর বাঙালিরা নতুন ভাবে শোষনের যাতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেও সেই সুফলের স্বাদ পায়নি বাঙালিরা আর এই স্বাধীনতা অর্জনকে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ”এক শকুনির হাত থেকে অন্য শকুনির হাত বদল মাত্র ”। শেখ মুজিবই প্রথম অনুধাবন করলেন শোষনের কালো দাঁত ভেঙ্গে চুরমার করার একমাত্র হাতিয়ার হল ছাত্র সমাজ। তাই তৎকালীন পাকিস্থান সরকার কতৃক চাপিয়ে দেওয়া উর্দূ ভাষার বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন প্রতিরোধের দেওয়াল তৈরির জন্য ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ওয়ালা ছাত্র নেতা পরবর্তীতে বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার এক বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই ছাত্র সংগঠনটির হাত ধরেই তৎকালীন পাকিস্থানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র। যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের শাসন শোষন আর বঞ্চনার প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জন্মের পর থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জাতীয় রাজনীতিতেও সব সময় সরব ছিলেন । বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও ছাত্রলীগ থেকেই। ১৯৪৮ সালেই মাতৃভাষার পক্ষে ছাত্রলীগ আপোষহীন অবস্থান তৈরি করে। ১১ মার্চ ছাত্রলীগ জিন্নাহ র ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করে।ওই ধর্মঘটের পিকেটিং থেকেই গ্রেফতার হন রাজনীতির মাঠের উজ্জ্বল নক্ষত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র, বাঙালির রাজনীতির মহাপুরুষ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ও সহযোগীরা। ছাত্রলীগই প্রথম বাংলাভাষার জন্য ১০ দফা দাবিনামা পেশ করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ ও আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সকল দলের অংশগ্রহনে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সেই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্যের কারিগরও ছিলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ১৯৫৬ সালের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়, ১৯৫৭এর শিক্ষক ধর্মঘট এবং ১৯৬২এর শিক্ষা আন্দোলনের পালে ঢেউ তোলার কাজ করে ছাত্রলীগ। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ খ্যাত ছয় দফা হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ আন্দোলনে রাজপথের প্রথম সারিতে অবস্থান ছিল ছাত্রলীগের। এসময় ছাত্রদের ১১ দফার মাধ্যমে ছাত্রসমাজের রক্তে তারুণ্যের সঞ্চার করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাত্র-গণ আন্দোলন থেকে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। গণজাগরনের ১৯৭০এর নির্বাচনে মুক্তির সনদ ছয় দফাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এক দফার দাবিতে রূপ নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলার আকাশে লাল সবুজের পতাকায় বাংলাদেশ নামক এক নতুন রাষ্ট্রের সূর্যোদয় হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের হিসেব মতে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়ে তোলা বিশ্বের বৃহৎ ও সংগ্রামী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আত্মত্যাগী নেতাকর্মীদের সংখ্যা ছিল ১৭০০০ (সতের হাজার)।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের পূনগঠনের সংগ্রামেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই বাঙালির জীবনে আবার অন্ধকার নেমে আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা ও জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নির্মম ভাবে হত্যার পর। সামরিক শাসক(স্বৈর শাসক) মেজর জিয়াউর রহমান ছাত্রলীগের উপর অনেক দমন-পীড়ন চালিয়ে শেষ করতে চাইলেও আদর্শের এই সংগঠন বুক চিতিয়ে তা মোকাবেলা করেছে, সামরিক শাসক(স্বৈর শাসক) হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বিপক্ষে রাজপথে জোরালো ভূমিকা রেখে ১৯৯০ এর গন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৯৬ এ বিএনপির অন্যায়-অত্যাচার আর দমন-পীড়নের বিপক্ষে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শেখ হাসিনার ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করেছে। দীর্ঘ ২১ বছরের নিপীড়ন এর পর ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী উপমহাদেশের সর্ব বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার দেশ পরিচালনায় ফিরিয়ে আনতে সবচাইতে বেশি অবদান এই ছাত্রলীগের। ১৯৯৮ সালের বন্যা মোকাবেলায় ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এছাড়াও ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ-আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল আপোসহীন। নিরক্ষরতা মুক্ত ও পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণ এবং বৃক্ষরোপনের মধ্যেমে বিশ্বের উষ্ণায়ন কমাতে প্রতিটি জেলায় জেলায় কাজ করেছে ছাত্রলীগ। ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের সহিংসতা এবং দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ প্রতিরোধ গড়ে তুলে অনেক নেতা-কর্মীদের হারিয়েছে। বিএনপি-জামাত জোটের ২০০৬ সালের নীল নক্সার নির্বাচন প্রতিহত করা এবং ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মইনউদ্দিন-ফকরুদ্দিনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সামরিক কায়দায় আটকের পর সামরিক বাহিনীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ রচনা করেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।



ছাত্রলীগের বর্তমান হালচাল



বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ দেশের ছাত্র-গণ-আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসের এক গর্বিত অংশীদার এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই বিতর্ক থাকার প্রশ্নও আসেনা। ছাত্রলীগের এই ইতিহাস কেউ অস্বীকারও করবেনা। সম্ভবত এখন আর বিতর্ক নেই যে সেটা ইতিহাসই। ছাত্রলীগের বর্তমান নিয়ে গৌরব বা গর্ব করার উপায় আছে কি?ঐতিহ্যের কারনেই একশ্রেণির নেতা-কর্মীর সাম্প্রতিক কিছু কর্মকান্ডে কঠোর সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে । প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘ যাত্রাপথের এই প্রান্তে এসে বর্তমান ছাত্রলীগ কি পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। অনেকেই বলেছেন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের ইতিহাস অনেকটাই ম্লান হয়েছে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে। জাতির আবেগ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর গৌরবের প্রকাশ ঘটত যে ছাত্রলীগ নিয়ে, সংগঠনটির সেই মর্যাদা এখনও অটুট আছে কি-না এমন গুরুতর প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। এমনকি আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের অনেক শীর্ষ নেতাও ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে কখনও কখনও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন এবং ভাবমূর্তি রক্ষায় দিয়েছেন বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও।

ঐতিহ্যার ধারক ও এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা বাংলাদেশ ছাত্রলীগে এখন পথ হারিয়েছে বিভিন্ন কারনে। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া হয়ে উঠে অনেক চক্র যারা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগকে নিজেদের প্রয়োজনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে আবার বিপদ আসলে ছাত্রলীগকে ঠেলে দিয়েছে সামনে। বর্তমান ছাত্রলীগে মূলত ৩ প্রকার ছাত্রদের দেখা যায় সবাই একই সংগঠনের হলেও আচরণ-ব্যবহার-আদর্শ আর নেতৃত্ব প্রকাশ ভঙ্গিমায় এই ভিন্নতা স্পষ্টত প্রকাশ পায়।

প্রথমত, ছাত্রলীগকে মনে-প্রানে ধারন করে এমন এক শ্রেণির ছাত্র আছে যারা ছাত্র রাজনীতি করে মানুষের কল্যাণে। এরা মূলত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ ও লালন করে। কমিটি গঠন ও পদ-পদবী প্রাপ্তিতে এরা সব সময়ই পিছনের সারিতে থাকে। দল ক্ষমতায় থাকলে এরা অবহেলিত থাকে, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে এরা একেবারেই আনকোরা। হাইব্রিড আর নব্যদের দাপটে এরা এতটাই কোণঠাসা যে মিছিল-মিটিং এর সুযোগ পর্যন্ত তেমন পায়না আর সরকারী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তো চিন্তাই করা যায়না। দল হিসেবে আওয়ামীলীগ যখন বিরোধী দলে থাকে বা জাতীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতে দল বিপদে পড়ে তখন এদেরকে ব্যবহার করা হয়। ছাত্রলীগ এদের কাছে আবেগ, অনুভূতি আর ভালবাসার সংগঠন।

দ্বিতীয়ত, অন্যদল বা অমুক-তমুক বড় ভাইদের হাত ধরে দাপটের সাথে দলে থাকে বাগিয়ে নেয় পদ-পদবী আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এরাই মূলত হাইব্রিড বা নব্য বলে পরিচিত কিন্তু দলে শক্ত খুটির জোরে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ফায়দা নেয়। বর্তমানে ছাত্রলীগে এই সব ভাইদের লোকই বেশি। আর এরা দল ও সমাজে এতই প্রভাব বিস্তার করে আছে যে এরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ছাত্রলীগ নামক পবিত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কাজটা এরা খুব ভাল ভাবেই করতে পারে। দল বিপদে পড়লে এরা গর্তে লুকিয়ে পড়ে আবার অনেক সময় ভোল পাল্টাতেও দ্বিধাবোধ করেনা। মুশকিল হল এরাই ইদানিংকার সময়ে দলের চালিকা শক্তিতে থাকে বিভিন্ন ভাবে ও বিভিন্ন উপায়ে।

তৃতীয়ত, স্বার্থান্ধ একটা শ্রেণি যারা নিজেদের যোগ্যতা আর প্রাপ্তির মিল খুঁজে না পেয়ে তাদের থেকে যোগ্য আর ত্যাগীদেরকে বিভিন্ন নামে ট্যাগ লাগানোর রাজনীতি করে। এদের অনেক কে রাজপথে খুঁজে পাওয়া না গেলেও অন্যের সমালোচনা আর সোজা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে এরা খুব অভ্যস্ত। দলকে বিতর্কিত ও বিব্রত করতে এরা যে কোন কিছুই করতে পারে। আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে বিভক্ত করতে এরাই যথেষ্ট।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যে আবেগ-ভালবাসা আর অনুভূতির জায়গা দখল করে আছে এ দেশের মানুষের মাঝে সেই ভালবাসাই হতে পারে ছাত্রলীগের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধাদের বড় হাতিয়ার। ছাত্রলীগ এখন অনেক জায়গাতেই ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ১১/১২ বছর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা সত্তেও ছাত্রলীগ তার আদর্শিক জায়গা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আজ অনেকেই ছাত্রলীগকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে অনেক ছাত্র। ছাত্রলীগের সাথে অন্য যে কোন দলের লড়াই রাজপথে হবে কেন? ছাত্রলীগের অন্যের লড়াই হবে আদর্শের। ছাত্রলীগ বানের জলে ভেসে আসা কোন দল নয়, আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার শক্ত ভূমির উপর শক্তভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজকাল জুজুর ভয়ে কাতর হওয়া একশ্রেণির নেতা-কর্মীর মুখে আবোলতাবোল কথা শুনে মনে হয় যে হ্যাঁ ছাত্রলীগে হুড়মুড় করে বেনোজল ঢুকে পড়েছে।তাই,আসছে প্রজন্ম ও তরুন সমাজকে আহবান জানাই ১৯৪৮ থেকে ২০১৯ অবধি ছাত্রলীগের ত্যাগ,সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের গৌরবজনক দিকগুলো ধারন করে আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার সহায়ক শক্তি হিসেবে দেশ ও জাতিকে সেবা দিয়ে যাবে। পরিশেষে সকল ছাত্রদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও চিরকাল অব্যাহত থাকুক ছাত্রলীগের পথচলা এই প্রত্যাশা। হারানো ইমেজকে পুনরুদ্ধার করার একমাত্র পথ হল বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের ছাত্রলীগকে ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সেই হারানো ইমেজ ফিরে পাক সেই প্রত্যাশায়।

 

 

লেখক,

সহকারী অধ্যাপক, এআইএস বিভাগ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

 

 

পড়ার বিষয় যখন ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং

চন্দন কুমার পাল


উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করার পর ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের স্নাতক ডিগ্রীর জন্য। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হয়ে অনেকেই স্নাতক পড়ার বিষয় নির্ধারণ করতে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতক বিষয় নির্ধারণ সহজতর করার লক্ষ্যে এই লেখা।

ফিন্যান্স বিষয়টি মূলত বিভিন্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহায়তা করে। এই বিষয়টি বিভিন্ন গাণিতিক বিশ্লেষণ ও থিওরির সাহায্যে ব্যবহারিক জীবনে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

প্রতিটি কোর্সে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন থাকার দরুন আপনার উপস্থাপন করার জড়তা ও ভয় কাটবে। কোর্সের সমাপ্তিতে বাস্তব জীবনে থিওরির প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার সুবাদে দেশের অর্থনীতি, শেয়ার বাজার, শিল্পায়ন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং আয়কর ইত্যাদি সম্পর্কে সুদৃঢ় জ্ঞান অর্জন হবে। গাণিতিক বিষয়গুলিতে দক্ষ হলেই কেবল ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ে মজা পাবেন।

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে বি.বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করলে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। বি.সি.এস. এ সকল ক্যাডারের পাশাপাশি বি.সি.এস. শিক্ষা – ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং (প্রভাষক) পদে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই আবেদন করতে পারে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহকারী পরিচালক (অর্থ) পদে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই আবেদন করতে পারে।

দেশীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে (এম.এন.সি.) চাকুরির সুযোগ রয়েছে।

বিদেশে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং- এ স্নাতক ডিগ্রীধারীরা প্রফেশনাল ডিগ্রি সি.এফ.এ. গ্রহণ করতে পারে। সি. এফ. এ. ছাড়াও সি. এ., এ. সি. সি.এ., এ্যাকচুয়ারী, সি. এস. প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জনের পথ সহজ হয় এবং রেয়াত (এ্যাকজিমশন) পাওয়া যায়।

শেয়ার বাজারের বোকারেজ হাউজে, মিউচুয়াল ফান্ডের অফিসে, ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানে, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে, এ্যসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিতে এ্যানালিস্ট হিসেবে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এর গ্রাজুয়েট রিক্রুয়েট করা হয়।

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার দরুন আপনি কম্পিউটারে দক্ষ হবেন বিশেষ করে স্পেডশিট (মাইক্রোসফট এক্সেল) ব্যবহারে দক্ষ হবেন।

সর্বোপরি, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়লে আপনি নিজেকে এই প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির বাজারে একজন দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।


লেখক: প্রভাষক,
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রধানমন্ত্রী, নুরকে যারা মেরেছেন তারাই আপনার শত্রু


খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগ


পড়ে পড়ে মার খাচ্ছেন নুরুল হক নুর, এটি মনে হয় আমাদের সবচেয়ে প্রিয় দৃশ্য৷ তিনি মার খেলে আমরা কেউ প্রকাশ্যে হাসি, কেউ মুখ লুকিয়ে৷কারণ? কারণ, তিনি যেন আমাদের মনের মতো নন, ফিনফিনে পাঞ্জাবি পরেন না, সানগ্লাস জিনস আর কেডসেও খুব মানায় না তাকে৷

তিনি শেখ হাসিনাকে মায়ের মতো বলেন আবার ড. কামাল হোসেনের পাশে গিয়ে বসে থাকেন৷ কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে মার খেতে খেতেই দাবি আদায় করে ছাড়েন, তিন দশক পর অমিত শক্তিশালী ছাত্রলীগকে হারিয়ে জিতে নেন ডাকসু ভিপির চেয়ার৷

আমরা যারা তাকে মারি নাই, তারাও বলি মার খেতে খেতে ভিপি হয়ে গেল নুর৷ যেন মার খাওয়াই তার একমাত্র যোগ্যতা এবং অনেক দিন ধরে ছাত্রলীগ এবং ইদানীং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ যেন দয়া করে কষ্ট করে তাকে মেরেছে৷ মেরে ভিপি বানিয়ে দিয়েছে৷ এই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চটি একটু জানতে ইচ্ছে করে৷ সত্যানুরাগী হলে এর নাম হতে পারতো ‘নুরপ্রহার মঞ্চ’৷

কারণ, উনাকে মারা আর অপবাদ ছড়ানো ছাড়া এদের আর কোনো কাজ আছে বলে তো মনে হয় না!শুনেন, ধর্মের মতো মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে অতীতেও অপকর্ম হয়েছে, এখনো আপনারা করছেন৷ কিন্তু ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীদের মতো আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধজীবী, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বেচে খান, তারা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো শক্তিশালী হলেও আয়ু খুব সীমিত৷ তবে এ ধরনের মঞ্চকে জানতে হলে তার অধিকারীকে চিনতে হয়, ক্ষুদ্র আমার কী আর তাকে চেনা সম্ভব হবে?

ছাত্রলীগের আলাপে ফিরে আসি৷ বুয়েট ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে মেরেছেন বেশি দিন হয় নাই৷ সেটি একটি দুর্ঘটনা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এরকম বলার সুযোগ আপনারা নিশ্চয়ই আর দিতে চান না? আপনারা নিশ্চয়ই বলতে চান, আবরারকে মারা হয়েছে, লাইনে না এলে তোমাদেরও তাই করা হবে৷

তারপর সবার পিঠ দিয়ে নেমে যাবে ভয়ের স্রোত এবং মাঠে থাকবেন শুধু আপনারা৷ তারপরও নিশ্চয়ই আপনারা থামবেন না৷ পার্থক্য, শুধু আপনারা তখন মারবেন নিজেদের৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে কেউ যদি বুঝিয়ে থাকে যে, ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স-এর আদলে একটা ভয়ের সংস্কৃতিতে দেশ শাসন করা সহজ, তবে তারা সফল, সন্দেহ নেই৷

তবে ইতিহাস আপনাকে সফল বলবে কিনা সে সংশয় কিন্তু রয়েই যায়৷ আমার নিবেদন, নুর নয়, যারা নুরকে মারছে তারাই আপনার শত্রু৷ সময় থাকতে তাদের চিনে রাখুন, ব্যবস্থা নিন৷

সূত্রঃ ডয়চে ভেলে।

ধর্মীয় অনুশাসন, শিক্ষাঙ্গন ও বাস্তব জীবন

ফাতেমা সুলতানাঃ ছোটবেলায় আমরা যখন আমাদের বাচ্চাকে ধর্ম শিক্ষা দিতে যায় (সেটা নৈতিকতার শিক্ষা হোক, নামাজের শিক্ষা হোক, বা কোরআনের শিক্ষা হোক) ঠিক তখনই আমাদের মাথায় আসে- আরে! ও’র তো সামনে পরীক্ষা! এই তো সামনে ‘সমাপনী’ না হয় ‘জেএসসি’ নতুবা ‘এস এস সি’!

এভাবে চিন্তা করে আমরা অনেক দেরী করে ফেলি। আমাদের যেন আর সময় হয়ে ওঠে না; পাছে আমাদের বাচ্চারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পিছিয়ে পড়ে! আর যদি হোম টিউটর এবং গানের টিচার এর পাশাপাশি ধর্মের টিচার ও রাখা হয়, সেটাও কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই রাখা হয়-এই ভেবে যে আমার বাচ্চাটা যাতে হোম টিউটর এর গণনায় পিছিয়ে না পড়ে। ওখানেই আমাদের বাচ্চারা শিখে যায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

আমার প্রশ্ন হলো, ছেলে মেয়েরা ঘর থেকে এমন উপলব্ধি নিয়ে বিদ্যাপীঠ গিয়ে প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কি-ই বা শিখবে? এই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটে তাদের বিদ্যা পিঠেও। জেএসসি অথবা এসএসসি পরীক্ষায় সবগুলা বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থীও ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয় টির জন্য গোল্ডেন এ প্লাস পায় না এমন নমুনা আমি অনেক দেখেছি।

তারা মনে করে ‘ইসলাম শিক্ষা’ ই তো,পরীক্ষার আগের দিন পড়ে নিব। আর পড়া টাও হয় শুধুমাত্র জিপিএ অর্জনের জন্য। জীবন চলার জন্য ইসলাম কি ধরনের দিক নির্দেশনা দিয়েছে সেটা আর জানা হয় না, অবহেলায় একটি কোণে চাপা পড়ে থাকে।

আর যদি ইউনিভার্সিটি লাইফের কথা বলি ‘আবরার’ ও ‘অনিক সাহা’ এদেরকে আপনারা সবাই জানেন। যে ছাত্ররা আজ বাদে কাল দেশের হাল ধরবে, তারা কেন খুনি হবে! তারা কেন খুন হবে! আর কেনই বা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গঠনে অন্তরায় হবে?

আমি বলি, একজন শিশু তার পরিবার থেকে যদি ধর্মীয় অনুশাসন, বাধা-নিষেধ, করণীয়, বর্জনীয় সবকিছুর শিক্ষা ভালোমতো নিয়ে তারপর বিদ্যাপীঠে পদার্পণ করে, তবে তার এই বীজ জ্ঞান তার সমগ্র বিদ্যার্জনের পথে সহায়ক হবে। প্রতিযোগিতার আগে, ভালো এবং মন্দের কড়া তার হৃদয়ে নাড়া দিবে।

আজকে আমি শুধু শিক্ষার্থীদের কথা বললাম। সমাজে আরও এক শ্রেণির পিশাচ মানব বিকট আকার ধারণ করেছে যারা কিনা বিশেষভাবে বিদ্বান কিন্তু নিকৃষ্টতম দুর্জন; যার শিকার আমাদের ‘নুসরাত’। তাদের জন্য রয়েছে ভিন্ন মতামত। এই ভিন্নতায় এখন আর আসতে চায় না, তাদের জন্য শুধু শাস্তিই কাম্য।

শুধু এটুকু বলেই শেষ করব যে, আপনার, আমার ধর্ম যেটাই হোক, তা কিন্তু শুধু শান্তি-ই চাই। নিজের ভিতরে এই ধর্মের শিক্ষা ধারণ করুন তাহলে আপনাকে আর খুনি হতে হবে না এবং আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস ও প্রার্থনা করি- খুন ও হতে হবে না।

লেখকঃ প্রভাষক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বুয়েটের ছাত্র হত্যা প্রসঙ্গে: শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা

আরিফুজ্জামান রাজীবঃ বুয়েটের একজন ছাত্রকে গত ৬ তারিখ রাতে হত্যা করা হলো।এ ঘটনা সারা বাংলার মানুষকে নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। আমরা যারা প্রবাসে আছি দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশের এরূপ মর্মান্তিক ঘটনা অামার মতো আরও অনেকেরই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো। কি বিভৎস ঐ ঘটনা! কি মর্মান্তিক!

হলের ২০১১ কক্ষে রাত আনুমানিক ৮:৩০ থেকে ৩টা পর্যন্ত চললো অমানুষিক নির্যাতন। কেউ এগিয়ে এলো না? কেউ তাকালোও না? মরার পরেও কেউ ঘুরে দাঁড়ালো না? খুনিরা হল প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করলেন, কীভাবে আলামত নষ্ট করা যায়? কীভাবে এই ঘটনাটাকে অন্যদিকে নেয়া যায়?

এই পুরো ঘটনার জন্য কে বা কি দায়ী হতে পারে? আমাদের শিক্ষকদের এখানে দায় কতটুকু?

আমার ৩.৫ বছর শিক্ষকতা আর ৬ বছরের পড়াশুনার জীবনে একটা জিনিস খেয়াল করেছি, ছাত্র-ছাত্রীদের এই অন্যায় করা, অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকা, নিজের স্বার্থের দিকে আগে নজর দেয়া, এগুলোর জন্য মূল দায়ী শিক্ষক সমাজ আর কিছুক্ষেত্রে পরিবার। ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক বিকাশের পেছনেও মূল অন্তরায় শিক্ষকদের মানসিক সমস্যা, সাথে পরিবারিক অসঙ্গতি।

আবরারের ঘটনা সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে সম্পর্কটা আসলে স্বার্থের, ভীষণ দুর্বল ও মেকি। একটি ছাত্রকে হলে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হলো অথচ হল প্রভোস্ট জানেনই না তার হলে কী হচ্ছে বা জেনেও মাথা ঘামায় না। এ দায় কার??

শুধু শিক্ষকরা বললে কিছুটা ভুল হবে মোটামুটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে একটা প্যারামিটারে আমরা মেপে থাকি, তা হলো রেজাল্ট ভিত্তিক পড়াশুনায় ভালো ছাত্র-ছাত্রী আর খারাপ ছাত্র-ছাত্রী। যার সিজিপিএ বেশি সে ভালো ছাত্র আর যার সিজিপিএ কম সে খারাপ ছাত্র বা ছাত্রী। এই শ্রেণী বিন্যাসের পর, শুরু হয় আসল খেলা।

এই সিজিপিএ বেশি পাওয়া ছাত্র বা ছাত্রীটিকে মানসিকভাবে বিকালঙ্গ, স্বার্থপর, লেজুড়বৃত্তিক মানুষ বানানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। সে যেন বই ছাড়া অন্য কিছু না বুঝে, তাকে অমুক হতে হবে, তমুক করতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা উদাহরণ দিয়ে বললে বুঝতে সুবিধা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ বা অন্য কোন সামাজিক অসংগতি নিয়ে যদি কোন ছাত্র আন্দোলন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝের সারির ছাত্র-ছাত্রীরা সামনে চলে আসে, শেষের সারির গুলো ব্যবহার হয় রাজনৈতিক দল বা বড় ভাই দ্বারা, আর ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্র-ছাত্রীরা হয় মাথা লুকিয়ে রাখে, নয়তো কোনো অংশগ্রহনই থাকে না। আর যদি ভুল করে সামনের সারির কোন ছাত্র বা ছাত্রী সামনে চলে আসে, তখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক তাকে একা একা ডাকে। তাকে বুঝানো হয়, এই আন্দোলন তোমার জন্য না, তুমি পড়বে, তুমি আমাদের সম্পদ, তোমাকে সেটা অনুধাবন করতে হবে, ব্লা ব্লা ব্লা।

এসব বলে ছেলেটার/মেয়েটার যে কি উপকার হলো, আমি জানি না। কিন্তু ছেলেটার/মেয়েটার সমাজের, আমাদের যে কি ক্ষতি হলো তা আমি বুঝতে পারি। ঐ ছেলেটা মানসিকভাবে শেষ, স্বাভাবিক ভালো মন্দ বুঝার জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলে। গুরুর সাথে তার একটা স্বার্থের সম্পর্ক তৈরি হয়। তার মাথায় ঢুকে গেল, যদি এসব কাজে না যাই, ঐ শিক্ষক আমার জন্য সুপারিশ করবে চাকরি বা অন্য কোথাও। সে আবার শিক্ষক হলে আবারো এমন বহু ছাত্রকে মানসিক বিকালঙ্গ করে ফেলবে। এভাবে পুরো সমাজে অাজ তিন ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছে । এক তথাকথিত খারাপ ছাত্র, অল্প সংখ্যক মানুষ যারা এধরনের শিক্ষক বা পরিবারের বলয় থেকে বের হতে পারছে, আর ঐ শ্রেণীর যারা বিকালঙ্গ বানাচ্ছে সেটা শিক্ষক ও পরিবারের সদস্য দুইই হতে পারে।

এবার আমরা আবরারের ঘটনার দিকে চোখ ফেরাই। হলের ঐ ঘটনা নতুন না, সবাই জানতো কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। শিক্ষকদের বলা হলে তারা বলতো, এ নিয়ে তোমরা কেন চিন্তা করছো, তোমরা ভালো ছাত্র, বুয়েটে পড়ো। কিছু ছাত্র নষ্ট হয়ে গেছে, ওদের নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করো না। বরং আরো দুইটা নতুন প্রোজেক্ট বা কাজ করো, দেখবে এগুলো আর মনে থাকবে না।

এভাবে দিনে দিনে পুরো হলের ছাত্রদের মানসিক বিকালঙ্গ করা হয়েছে। আর ঐ অল্পকয়জন গুণধর দেখেছে, তাদের পেছনে বিশাল সাপোর্ট আছে। এই মানসিক অবসাদের যেই বেড়া তা অল্প কিছু ছাত্র-ছাত্রী ভাংতে পারে। সংখ্যায় কম বিধায় তারা সপ্তাহে ১-২ জনকে এভাবে পিটাতে দেখেও তাদের বলার সুযোগ ছিল না, আর যাদের কিছুটা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো তারা নানাবিধ কারণে জেগে ওঠার আগেই স্তমিত হয়ে যেত।

তাই অামার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এই আপদ দূর করার উপায় হলো মেধাবীদের রাজনীতি সচেতন করে তুলতে হবে। ভালো মন্দ বুঝার মত মনন সৃষ্টি করতে হবে। পুস্তকের জ্ঞানের পাশাপাশি মননের জ্ঞান আহরণ করতে হবে। যখন একজন মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রী নেতৃত্বে আসবে, তখন ঐ না জানা ইতর রাজনৈতিক দর্শন জানালা দিয়ে পালাবে।

শিক্ষকদের আরও অনেক বেশি সহনশীল হতে হবে, কোন ছাত্র-ছাত্রী আন্দোলনে গেলেই সে বখে যায় না, এটা অনুধাবন করতে হবে। আমার মতাবলম্বি বলেই তার জন্য সুপারিশ করতে হবে, আর না হলেই তার পদেপদে কন্টক দিয়ে রাস্তা বন্ধ করতে হবে, এই চিন্তা ধারা থেকে বের হয়ে অাসতে হবে। শিক্ষকদের এটা অনুধাবন করতে হবে, শুধু পুস্তকের শিক্ষাই আসল শিক্ষা না, মননশীলতার, মানবিক শিক্ষাই আসল শিক্ষা। ভালো কাজে সাহস দিতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে, সেটা কঠিন পথ হলে কাঁধে কাঁধ রাখতে হবে।

শিক্ষকদের পাশাপাশি পরিবার, সমাজকেও একই ধারণা ধারণ করতে হবে। ভালো কাজে পাশে থাকতে হবে, মানসিক বিকাশের জন্য, মননের বিকাশের জন্য। তাদেরকে বুঝাতে হবে, নিজের জন্য না অন্যের জন্য বাঁচো। যেই বাঁচায় আনন্দ আছে, অন্যের ভালোবাসা আছে।



লিখেছেনঃ সহকারী অধ্যাপক (শিক্ষাছুটি), ইটিই বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।



কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই? পর্ব-১

হানিফ সিদ্দিকীঃ নাবিক যদি না জানে সে কোন বন্দর খুঁজছে, তাহলে যে কোন বাতাসই তার কাছে সঠিক। রোমান দার্শনিকের বিখ্যাত উক্তিটির মধ্যে নিহিত আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধীরে ধীরে দিকভ্রান্ত হবার নিগুঢ় রহস্য। কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই? কে চান? কারা চান? নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির চাওয়া? নাকি গোষ্ঠীর চাওয়া?

আমরা প্রায়শই এই জায়গাটিতে ভুল করি। চাপিয়ে দেই। এই চাপিয়ে দেওয়া থেকে তৈরি হয়- ব্যক্তি তুষ্টি, কিন্তু সামগ্রিক অপ্রাপ্তি ও অসন্তোষ। অবশেষে বিস্ফোরণ। তখন আবার সংস্কার করি। তাৎক্ষণিক সংস্কার। সংস্কার করি অন্যদেশের মডেল বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি-বিশেষের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে। আবার সেই চক্র- অপ্রাপ্তি এবং অসন্তোষ। এই চক্রের মধ্যেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি।



বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ অংশীদান (Stakeholder) হলেন- শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিল্পকারখানা, সাধারণ জনগণ, সরকার, অর্থপ্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মকর্তা। এর মূলে কেন শুধু শিক্ষার্থী?



বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। কথাটি বলার পরে আমার সহকর্মী আমার উপর যেমনভাবে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন, তখনি বুঝেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দিয়ে হবে! বিশ্ববিদ্যালয় কেন শিক্ষার্থীদের জন্য- তা একটু খোলাসা করা যাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ অংশীদান (Stakeholder) হলেন- শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিল্পকারখানা, সাধারণ জনগণ, সরকার, অর্থপ্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মকর্তা। এর মূলে কেন শুধু শিক্ষার্থী?

অভিভাবকগণ সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান তাঁদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হবে বলে। পরিবারের দায়িত্ব নেবে বলে। এখানে অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাঁর সন্তানের মাধ্যমে যুক্ত। শিল্পকারখানাগুলো তাকিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে যেন তারা উপযুক্ত মানবসম্পদ পায় যার দ্বারা কলকারখানাগুলো সচল থাকবে। সমাজের চাহিদা মিটবে। এই চাহিদা মেটানোর কেন্দ্রে অবস্থান শিক্ষার্থীদের। সাধারণ জনগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কিভাবে সংযুক্ত?

একটি গল্প শুনুনঃ এক দেশে ছিলেন এক দরিদ্র ও ঋণগ্রস্ত দম্পতি। দিন আনে, দিন খায়। তাঁদের এক সন্তান। পড়াশুনা করে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সন্তানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে বাবামার কাছে ফেরত যায় এবং বলে- তোমরা আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছো। বড় করেছো। আমি কৃতজ্ঞ। এখন আমার জীবন চালানোর জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করে দাও। প্রিয় পাঠক বাবামার মনের অবস্থা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন? কে কার দায়িত্ব নেবার কথা ছিল?

বিষয়টি খোলাসা করা যাক। এই বাবামা হলেন আমাদের দরিদ্র-ঋণগ্রস্ত প্রিয় জন্মভূমি। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পেছনে বেশ কয়েক লাখ টাকার উপরে খরচ করে রাষ্ট্র যা সাধারণ জনগণের টাকা অথবা ঋণের টাকা। সাধারণ জনগণের প্রত্যাশার জায়গাটা স্পষ্ট। শিক্ষার্থীরা নিজেরা বোঝা না হয়ে অন্যদের বোঝা লাঘব করবে। জনগণের এই প্রত্যাশাটাও শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক। সরকার ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের কথা ভেবে তার দক্ষ জনবল তৈরি করে।



কোন শিক্ষার্থী বলতে পারে নাই- বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সে কী ভাবছে। অভিভাবকের সাথে যোজন যোজন দূরের সম্পর্ক।শিল্পকারখানাগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে বলেন, তাদের চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় প্রতিফলিত হয় না। সাধারণ জনগণের কোন মতামত প্রাধান্য পেতে কখনো শুনি নাই।



যেমন বর্তমানে আমাদের সামনে ভিশন ২০২১, এসডিজি ২০৩০, রূপকল্প ২০৪১ বা ডেল্টা ২১০০। আমরা তৈরি হচ্ছি। কাদেরকে তৈরি করছি? নিশ্চয় শিক্ষার্থীদের। তাহলে কী শিক্ষকদের ভূমিকা অস্বীকার করবো? মোটেও তা নয়। এই মহা কর্মযজ্ঞের কারিগর শিক্ষক। শিক্ষকের পেশা মানুষ বানানো। এটা তাঁর উপরে অর্পিত দায়িত্ব। কিন্তু রসদ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মানুষ করতে হবে বলেই শিক্ষক নিয়োজিত। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনায় মানুষ করার মধ্যেই নিহিত আছে রাষ্ট্রের কল্যাণ।

কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয় সমাজকে গতিশীল করার জন্য। কিন্তু কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই? এর প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য জানতে হবে যেমনটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা আরও প্রতিষ্ঠান থাকে। যারা প্রত্যক্ষভাবে সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকে। তারা প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অংশীদার হলেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিল্পকারখানা, সাধারণ জনগণ, সরকার, অর্থপ্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মকর্তা ইত্যাদি।

প্রথমতঃ তাঁরা কী চান? সমাজে ভবিষ্যতের চাহিদা কি? আমরা কোথায় পৌঁছতে চাই? এটি একমাত্রিক নয়। বরং বহুমাত্রিক। জরিপ, রাষ্ট্রের দিকদর্শন এবং বিভিন্ন নথি থেকে এটি পাওয়া যেতে পারে। একজন যোগ্য-বিজ্ঞ শিক্ষানুরাগী একটি বডির মাধ্যমে সমস্ত অংশীদারের উপর পরিচালিত জরিপ এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ভাবনা বা দিকদর্শন রোমন্থন করে নির্যাস বের করবেন। সেই নির্যাসই হলো একটি প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন বা সংক্ষিপ্ত দর্শন। এটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু সম্পূর্ণ। থাকবে সময় অভিক্ষেপ এবং ভবিষ্যতের দিকদর্শন। যেমন দশ বছর পরে আমরা আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় দেখতে চাই?

এটি হতে হবে নির্দিষ্ট কিন্তু চ্যালেঞ্জিং। এটি একটি সম্মিলিত স্বপ্ন। যাকে অর্জন করার জন্য সম্মিলিত এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা লাগবে। এমনি এমনিতে অর্জিত হবে না। যুদ্ধে সেনাপতি যোদ্ধাদের যেমন উদ্দীপিত করে, ভিশন কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের তেমনি উদ্দীপ্ত রাখে। এখন ভাবুন, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন কি আপনি জানেন? মানসিকভাবে ধারণ করেন? আপনাকে উদ্দীপ্ত রাখে? বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন নিয়ে কখনো ভেবেছেন?

এই ভিশনকে অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু সুপরিকল্পিত কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। যাকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তৈরি হয় মিশন। বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রকৃতি, সম্পদ ও বিশ্বাস অনুযায়ী এই মিশন তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠান কেন টিকে আছে- তার মর্মকথা থাকতে হয়। ৩টি প্রশ্নের উত্তরের সমন্বয়ে তৈরি হয় এই মিশন। ভিশন অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠান কি করছে? কার জন্য করছে? কিভাবে করছে?

এটি যেমন সকল অংশীদারের জন্য বোধগম্য হতে হয়, তেমনি হতে হয় উদ্দীপনামূলক। সকল অংশীদান অনুপ্রাণিত হবে। এর মধ্যে থাকবে ভিশন কেমন করে বাস্তবায়িত হবে। শব্দচয়নে থাকে প্রতিষ্ঠানের প্রমূল্য (মূল্যবোধ), প্রোডাক্ট, সার্ভিস, ভাবমূর্তি এবং কার্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রাধিকার ইত্যাদি বিষয়াদি। এটি সংক্ষিপ্ত এবং স্বাতন্ত্র। আমার জানামতে, কিছুদিন পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাড়াহুড়া করে ভিশন ও মিশন তৈরি হয়েছে, কিন্তু বস্তুতপক্ষে অংশীদারদের মতামত সেখানে কোনভাবেই নেয়া হয় নাই। প্রতিফলন তো অনেক দূরের কথা।

কোন শিক্ষার্থী বলতে পারে নাই- বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সে কী ভাবছে। অভিভাবকের সাথে যোজন যোজন দূরের সম্পর্ক।শিল্পকারখানাগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে বলেন, তাদের চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় প্রতিফলিত হয় না। সাধারণ জনগণের কোন মতামত প্রাধান্য পেতে কখনো শুনি নাই।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিষ্ঠানের (বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেকোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) মূল্যবোধ বা প্রমূল্য (Core Values)। এই মূল্যবোধ থেকেই মানুষ তৈরি হয়। মানবিক গুনের উন্মেষ ঘটে। মননশীলতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। রাষ্ট্র তথা সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে চলে। প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস থেকে মূল্যবোধ বা প্রমূল্য তৈরি হয়। এটি একটি সংস্কৃতি বা কালচার তৈরি করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাগবিহীন।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই সততার অনুশীলন করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের যে কোন সমস্যাতে সাধারণ জনগণের মঙ্গলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক মধুর। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ বিতর্ক হয়, এমনকি শিক্ষকগণও সেই বিতর্কে অংশগ্রহণ করে। কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের কাছে হেরে শিক্ষার্থীর পিঠ চাপড়ে বলে- যোগ্য বাছা। শিক্ষার্থী আমাদের বহুকালের সংস্কৃতি অনুযায়ী মাথা নিচু করে সালাম করে- সমস্ত আপনার জন্যই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টি করে। এগুলোই মূল্যবোধ। যেখান থেকে অহংবোধের সৃষ্টি। এটিই প্রমূল্য।

প্রতিষ্ঠানের প্রমূল্য স্থাপন বা খুঁজে বের করে আনতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লালন করতে হয়। সবার সামনে উপস্থাপন করতে হয়। এটি যেমন প্রতিষ্ঠানের মৌলিকত্ব প্রকাশ করে তেমনি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করে। সকল অংশীদার এই প্রমূল্যের জন্য গর্ব করে, তেমনি এটিকে লালন করে। লালন করতে হয় যেন বিনষ্ট না হয়। তিল তিল করে গড়ে তুলা এই প্রমূল্য প্রতিষ্ঠানকে স্বতন্ত্রভাবে সমাজে এবং বিশ্বপরিমন্ডলে পরিচিত করে তুলে। সাধারণত প্রমূল্য হিসেবে কী কী থাকতে পারে?

যেমনঃ বিষয়ভিত্তিক চরম উৎকর্ষতা বা গুণ, সততা ও নিষ্ঠা, মননশীলতা ও মানবিকগুণ, সৃষ্টিশীলতা ও সংস্কৃতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা, শ্রদ্ধাবোধ, টীমওয়ার্ক ইত্যাদি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোথাও প্রমূল্য লিখিত আছে শুনি নাই। কোথাও সুনির্দিষ্টভাবে আলোচিত হয়- জানিনা। তার মানে কি আমাদের গর্ব করার মত কিছু নেই। অবশ্যই আছে। কিন্তু সম্মিলিতভাবে সকল অংশীদার তা জানিনা বলেই লালন করতে পারি না বা চর্চা করার ব্যাপারে মনের ভেতর থেকে চাপ অনুভব করি না। অর্থ্যাৎ আমাদের বিবেককে শানিত করতে পারি না।

শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করতে সহায়তা করে। সর্বোপরি, নিজস্ব প্রকৃতি এবং পরিবেশ থেকে নিজেদের সমস্যা সমাধানের যে শিক্ষা তা হলো আমাদের জমিত শিক্ষা। আমাদের নিজস্ব বা সমাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা সমাধান করার ব্রত তৈরি হয় জমিত শিক্ষায়।

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রচলিত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান দোষের নয়। কিন্তু শুধুমাত্র বিদেশী চাহিদা পূরণ করার জন্য যে শিক্ষা তা আমাদের বিশেষ উপকারে লাগার কোন সম্ভাবনা নেই। বিশ্বের বিশেষ জ্ঞান আহরণ করে দেশের সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে বিশ্বসমাজে নিজেদের উপস্থাপন এবং নিজেদের ও বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা। যুক্তি আমাদের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিকে শানিত করে।

পরমতসহিষ্ণুতা আমাদেরকে সঠিক পথ বেছে নিতে সহায়তা করে। যুক্তি ও পরমতসহিষ্ণুতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ। উপরন্তু, মৌলিক জ্ঞানের উৎপত্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় উদ্দেশ্য। কিন্তু যুক্তি ও পরমতসহিষ্ণুতা ব্যতিরেকে মৌলিক জ্ঞানের উৎপত্তি যেমন সম্ভব নয় তেমনি প্রমূল্য বা মূল্যবোধ তৈরি হতেও পারে না।

লিখেছেনঃ অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, সিএসই বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আবরার হয়ে উঠতে পারেন অনন্ত প্রেরণার উৎস

আলী আর রাজীঃ আপোষহীন, দৃঢ়চেতা, সংশপ্তক, দেশপ্রেমিক, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অগ্রদূত আবরার ফাহাদ। মৃত্যু যাকে কেবল মহানই করেনি বরং করে তুলেছে বাঙলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মহানায়ক, এ মাটির নতুন রাজনীতির পথপ্রদর্শক। আজ, সর্বার্থে; প্রান্তিক বাঙলাদেশীদের সম্ভাব্য বিপুল উত্থানের প্রতীক আবরার ফাহাদ।

আবরারের সহপাঠী ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা শোকগ্রস্ততার এই ক্ষণে, দেশের জন্য আবরারের আত্মদান ও অবদানকে পরিপূর্ণমাত্রায় উপলব্ধি করতে পারছেন কি না, জানি না। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বলে, আবরারের আত্মদান নতুন বাঙলাদেশের উত্থান-পর্বের সূচনা করেছে এরই মধ্যে।

এই বিশেষ ক্ষণ এবং এই ক্ষণজন্মা মানুষটিকে দেশবাসীর স্মরণে অক্ষয় করে রাখার গৌরবে তার সান্নিধ্যধন্য সহপাঠীদের অংশ সর্বাধিক। অনুমান করি, আজ হোক বা কাল হোক আবরার ফাহাদের নামে অচিরেই দেশজুড়ে ছাত্রাবাসসহ নানান স্মৃতিস্মারক নির্মাণ শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে হল বা স্মৃতি-স্মারক নির্মাণের আগে, এই মুহূর্তে যে কক্ষটিতে আবরার ফাহাদ খুন হয়েছেন, বুয়েটের শেরেবাঙলা হলের সেই ২০১১ নং কক্ষটিকেই ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে স্বাধীন চিন্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে।

এই কক্ষটিকেই গড়ে তোলা যেতে পারে নতুন প্রজন্মের মুক্তির লড়াইয়ের আতুড়ঘর হিসেবে। এখানে আবরারের আবক্ষ মূর্তি থাকবে, থাকবে তার ফেসবুক-পোস্টের প্রতিলিপি, তার সংগৃহীত বই আর তার স্মৃতিস্মারকগুলো। এভাবেই আবরারের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ তার আত্মদানের কারণকে যথাযথ মাহাত্ম্য দিতে পারে। আবরারের প্রাণদানের ফলোক্রিয়ায়, জলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্মদান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার নতুন পীঠস্থান হয়ে উঠতে পারে বাঙলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

জয় হোক আবরারের।

লিখেছেনঃ সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।