ইবি ক্যাম্পাসে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’

আজাহার ইসলাম, ইবি


দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুজিব মুর‌্যাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। এই অনন্য স্থাপনাটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অবস্থিত। ইবি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে সামনে তাকালেই চোঁখে পড়ে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত মুর‌্যালটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ গর্বের সাথে জানান,‘দেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর এরকম কোন ম্যূরাল নেই। এরকম একটি মুর‌্যাল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে এজন্য আমরা গর্বিত।’

এদিকে দেশপ্রেমকে স্মরণ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আর কে রাজু বলেন,‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবের পাশে যখন দাঁড়াই, তখন মুজিবের চেতনায় দেশপ্রেমে আত্মবিআশ্বসী হয়ে উঠি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি একটি অনন্য স্থাপনা।’ এধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী তাদের অভিব্যক্তি জানান।

২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারী মুর‌্যালটির উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। মুর‌্যালটির পরিকল্পনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক ছাত্র জালাল উদ্দীন তুহিনের যৌথ অর্থায়নে এটি স্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আলিমুজ্জামান টুটুল নকশা করেন মুর‌্যালটির। শৈল্পিক কারুকার্যের রূপ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক।

মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব নামে মুর‌্যালটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সৌন্দর্যকে হাজার গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। যা দর্শনার্থীদের নজড় কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় দেখা যায় যাতায়াতকারীরাও যাওয়ার সময় মুর‌্যালটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যে তাকিয়ে থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন পিকনিক স্পটে যাওয়ার সময় মূল ফটকে গাড়ি থামিয়ে মুর‌্যালটির সৌন্দর্য উপভোগ করে পর্যটকরা।

কংক্রিটের তৈরি মুর‌্যালটির মূল স্থাপনার দৈর্ঘ্য সিঁড়িসহ ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮ ফুট। বেদির উচ্চতা ৫ ফুট। বেদির ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট। এর ৩টি সিঁড়ি রয়েছে। স্থাপনার তিন দিকে দর্শনার্থীদের চলাফেরার জন্য দুই স্তরের ১৫ ফুট চওড়া জায়গা রয়েছে। মূল বেদির ওপর আড়াই ফুট উচ্চতা এবং ২০ ফুট চওড়া একটি দেয়াল স্থাপন করা হয়েছে, যেটার ওপর যে কেউ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে পারবে। শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও মুর‌্যালটি সিঁড়িতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের আড্ডা। দেখা যায় ব্যাচ ডে/র‌্যাগ ডেতে অনেকের ফটোসেশন।

‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ মুর‌্যালটির ডান পাশে ৪ ফুট চওড়া এবং ২০ ফুট উচ্চতার একটি ওয়াল স্থাপন করা হয়েছে যাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহ্মানের স্বাক্ষর করা একটি ইংরেজী বাণী লিপিবদ্ধ আছে। তার ঠিক নিচেই রয়েছে তার বাংলা অনুবাদ। বাণীতে লেখা আছে- ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়ে আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সাথে সম্পর্কিত তা আমপাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তন সম্পত্তির উৎস ভালোবাসা। অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

ফিরে আসুক বাংলাদেশে সুস্থ পরিবেশ

বিকাশ সরকার


আজ আমরা কোনোকিছু না ভেবেই যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেশটা নোংরা করে যাচ্ছি। আমরা রাস্তায় চলতে চলতে চিপস, মুড়ি, বাদাম, বিস্কুট বিভিন্ন জিনিস খাই। এরপর কি করি খাওয়া শেষ হওয়া মাত্রই খাবারের খোলস বা প্যাকেট বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে রাস্তায় ফেলে দেই। এছাড়াও কোমল পানীয় কিংবা পানি খেয়েও আমরা বোতলটি নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে যেখানে সেখানে ফেলে রেখে চলে যাই।

আবার অনেকেই আছে বাড়ির ছাদ থেকে ময়লা ফেলে কিংবা রাস্তাঘাট অপরিচ্ছন্ন করে। এতে করে যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, তেমনি ছড়ায় রোগজীবাণু। একদিন এমন একটা সময় আসবে যখন আমি আপনি কেউই এই দেশে থাকবো না। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এইদেশকে টিকে থাকবে হবে বছরের পর বছর ধরে। আমার আপনার সামান্য অসচেতনতা যেন আমাদের আগামী প্রজন্মকে মারাত্মক বিপদে না ফেলে সে বিষয়ে নজর দেওয়া আমাদের উচিত।

আজকে যে আপনি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে দেশকে নোংরা করছেন, আগামীদিন হয়তোবা আপনারই কোনো উত্তরসূরি আপনার ফেলে যাওয়া ময়লাযুক্ত নোংরা পরিবেশে রোগ জীবাণুর মাঝে কষ্ট পাবে।
আমাদের সকলের মানতে হবে যে, এই দেশটি সরকার কিংবা জনপ্রতিনিধিদের নয়, দেশটি আমাদের সবার। তাই দেশটা অপরিচ্ছন্নতার হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

একজন মানুষের পক্ষে দেশকে পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। সেজন্য প্রয়োজন একাগ্রতা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগের। প্রত্যেক মানুষ যদি তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, তবেই একটি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। তাই আসুন আমরা নিজে নিজেই সচেতন হই। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলি। পরিচ্ছন্ন রাখি ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা আমাদের প্রিয় স্বদেশ, প্রিয় মাতৃভূমি।

আসুন আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাই একটি সুস্থ, সুন্দর বাংলাদেশ। ফিরে আসুক বাংলাদেশে আজ সুস্থ পরিবেশ।

 


লেখকঃশিক্ষার্থী,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় পছন্দক্রম হোক আপনার পছন্দ অনুযায়ী

কাজী মুহসিনা তামান্না


গ্রেটা থুনবার্গ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বনেতটদের বলেছিলেন “HOW DARE YOU”। ঠিক তেমন নিজের কাছে নিজে দায়ী থাকবেন যদি না নিজের পছন্দ অনুযায়ি বিষয় প্রথম সারিতে দিতে ভুল করেন। আজকে আমরা বিষয় পছন্দক্রম নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করব।

প্রথমত বিষয় পছন্দক্রম কী?

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে বিষয় পছন্দক্রম।

দ্বিতীয়ত আমার মতানুযায়ী কিভাবে দেয়া উচিত?

আমার মতানুসারে, বিষয় পছন্দক্রম সেভাবে দিতে হবে যেভাবে আপনি দিতে চান। উদাহরণ স্বরুপ, পছন্দক্রম অনুযায়ী আসলো সমাজবিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা, দর্শন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোকপ্রশাসন। এখন, আপনি নিজেই একটু চিন্তা করে দেখুন, প্রতিটি বিষয়ই কিন্তু একটি অপরটির থেকে স্বতন্ত্র, প্রতিটি বিষয়েরই রয়েছে স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার। যেমন ধরুন, আপনি বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হলে; ভালো ফলাফল করলে ক্যাডার হতে পারবেন। তা আপনি সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে পড়েন কিংবা ইংরেজিতে পড়েন। প্রতিটি বিষয়ের সমাজে রয়েছে স্বতন্ত্র অবদান।

যেমন: ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন কোন শিক্ষার্থী প্রথমেই সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাইবেন না। কারণ তাঁরা সমাজবিজ্ঞান কে মানবিক বিভাগের বিষয় মনে করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। সমাজবিজ্ঞান থেকেই কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজের সব সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন। যদি সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা না করা হতো, তাহলে চিন্তা করে দেখুন সমাজের পুরনো সমস্যার সমাধান হয়েছে কিনা? নতুন কী কী সমস্যা হচ্ছে? এবং সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়? তা বের করা সম্ভব নয়!

তাই চাইলেই গবেষণা খাতে গড়ে তুলতে পারেন নিজের ক্যারিয়ার। আবার সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে আপনি সরকারি বেসরকারি যেকোন খাতে চাকরি করতে পারবেন। ব্যাংকে চাকরিও করতে পারবেন। যদি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কথা বলি, আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন যদি এই বিভাগটি না থাকত, তাহলে আমার লেখাটা হয়তো প্রকাশ পেত না, আপনারও ভিন্নভাবে চিন্তা করার সুযোগ পেতেন না, বিষয় পছন্দক্রম নিয়ে। আমাদের সমাজ এর প্রতিটি স্তরের মানুষের সাথে তাদের ভাবনা তুলে ধরছেন প্রতিনিয়ত এই বিভাগের মাধ্যমে। আর এভাবেই প্রতিটি বিষয় বা সাবজেক্ট সমাজে অবদান রেখে চলছে প্রতিনিয়ত।

আমার কলেজ সরকারি কাউখালি মহাবিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় ইংরেজি শিক্ষক জনাব মনিরুল ইসলাম বলতেন, “যখন একটি বাচ্চা হাতিকে সার্কাস খেলা দেখানোর জন্য আনা হয়, তখন একটি শিকলে তার পা বেধে দেয়া হয়, যেনো সে পালিয়ে যেতে না পারে। যখনই ছোটবেলায় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত তখনই শিকলে তার পা আটকে যেত এবং সে ব্যাথা পেত। হাতিটা যখন বড় হলো কখনোই সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত না। কারণ সে ভয় পেত যে, সে পায়ে ব্যাথা পাবে অথচ সে তার ভয় দূর করতে পারলেই কিন্তু শিকল থেকে মুক্ত হয়ে সে সার্কাস নামক জেলখানা থেকে মুক্ত হতে পারত। নিজের ভয়কে জয় করুন, জীবন আপনার বিষয় পছন্দক্রমের সিরিয়াল ও হবে আপনার পছন্দানুযায়ী। তাহলে- As a student our duty is to acquire knowledge and our industry show us our own destination.


লেখকঃ শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশ আমার, দোষ আমার

নাজমুস সাবাহ কুবরা


বাংলাদেশ আজ হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্বাধীনতার ৪৮ বছর উদযাপন করছে। এই স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালী জাতিকে যে পরিমাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে, তা অন্য কোন জাতিকে দিতে হয়নি। বাঙালী জাতির ইতিহাসটাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। জাতি হিসেবে গর্ব করার মতো আমাদের রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনেরও আগের সময় গুলোতে ফিরে তাকালে আমরা বাঙালী জাতির নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতাবোধ দেখতে পাই। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালী জাতির সংগ্রামের শুরু হয়,যা পরবর্তীতে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের রূপ নেয়। ৫২’র ভাষা আন্দোলন হয় মূলত বাঙালী জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতাবোধ থেকে। বাঙালী নিজ সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি কতটা সচেতন তা ৫২’তে রফিক,বরকত,শফিক তাদের আত্মাত্যাগের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে। যা সত্যিই আমাদের জন্য গর্ব ও শিক্ষা অর্জনের বিষয়।

৫২’র ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের থেকে শুরু করে ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০’এর নির্বাচন, ৭১’এর মহান মুক্তিযুদ্ধ সবই বাঙালী জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতা ও দেশপ্রেমেরই স্বরূপ।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজ ভাষা তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের বিষয়। যা আমাদের জন্য নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনুপ্রেরণা স্বরুপ। অথচ আজকাল অর্থব্যয় হয় ঠিকই কিন্তু সেই চেতনাবোধের উদয় নেই আমাদের মাঝে। তাই এসব জাতীয় দিবস উদযাপন এক পর্যায়ের দেশপ্রেমের নামে প্রহসনে পরিণত হয়েছে।


কিন্তু এতকিছুর পরেও, আজ স্বাধীনতার ৪৮ বছরে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে একটি বড় প্রশ্ন রয়ে যায়। আর সেটা হলো,এই বর্তমানে দাড়িয়ে আমরা কি আদৌও সেই দেশপ্রেম, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতাবোধ ধরে রাখতে পেরেছি? নাকি ধসে পরা জাতির মতো অন্যের ভাষা ও সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে মত্ত আমরা। আজ পুরো দেশ জুড়েই চলছে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা ও অবমাননা।

বাঙালী উৎসবমুখর। সারাবছর নানা পূজা,পার্বণে মুখর থাকে আর এসব আয়োজনে আজকাল দেখা যায় বিদেশী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। দেশীয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র, কিন্তু আজকাল সেখানেই ভূলুন্ঠিত দেশীয় সংস্কৃতি। এসব প্রতিষ্ঠানে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় সেখানেই দেখা যায় ভারতীয় বা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র‍্যাগ ডে পালন করা হয় অনেক জাঁকজমকভাবে, যা থাকে নাচে গানে ভরপুর। আর এসব এর বেশিরভাগটাই জুড়ে ভারতীয় বা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সব গান। যেখানে কোন দেশীয় গান বাজানোর কথা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জাতির কর্ণধার, পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব এদেরই ওপর, তাই তাদেরই বেশী সচেতন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ তারাই উদাসীন, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

আমাদের দেশ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ, আমাদের রয়েছে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি,পালাগানসহ কবিতা, ছড়া, নাটক, গল্প, ও আরও নানান কিছু। তাই ভিনদেশি সংস্কৃতির কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। জাতীয় দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবসগুলো অনেক জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়, যার জন্য প্রচুর অর্থব্যয়ও করতে হয়। কিন্তু দেখা যায় সকালের দেশপ্রেম বিকেলে কোন বিদেশী সংস্কৃতির আদলে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজ ভাষা তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের বিষয়। যা আমাদের জন্য নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনুপ্রেরণা স্বরুপ। অথচ আজকাল অর্থব্যয় হয় ঠিকই কিন্তু সেই চেতনাবোধের উদয় নেই আমাদের মাঝে। তাই এসব জাতীয় দিবস উদযাপন এক পর্যায়ের দেশপ্রেমের নামে প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমরা আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ভুলে বিপথগামী হয়ে পড়বো আর এ দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না। এ দায় আপনার, আমার, আমাদের সকলের। তাই আমাদের সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরী। দেশ আমাদের তাই সচেতনতার দায়িত্বও আমাদের।

পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুস্থ,সুন্দর সংস্কৃতিক উপহার দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এখনি তার মোক্ষম সময়। যে জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের শুরুই হয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সচেতনতা থেকে, সে জাতির মহান দায়িত্ব সেই ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা ও তার চর্চা করা।


লেখক: ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।


বাংলাদেশ প্রসঙ্গ: ফিরে দেখা ২০১৯

ফজলে এলাহী ফুয়াদ


প্রতিটি দিন নতুন ভাবে শুরু করার, নতুন কিছু স্বপ্ন দেখার আর সেটা যদি পঞ্জিকায় নতুন বছর হয় তাহলে তো কথাই নেই, নতুন সাজেই শুরু করতে চাই সবাই,কিন্তু ফেলে আসা বছর নিয়ে ভাবে কে? চলুন একটু পিছনে ফিরে ২০১৯ কে দেখি।

বছরটা শুরু হয় নবনির্বাচিত একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে
তারপর নানা জল্পনা কল্পনা।


এ বছরে যা কিছু নেতিবাচক


বছর শুরু হতে না হতেই এক ভয়ানক দূর্ঘটনা ঢাকায় চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৭৮ জন মারা যান যা ২০১৯ কে নিহতদের স্বজনের কাছে একটি কাল হিসেবে কাজ করবে।

স্বাধীন বাংলা অত্যাচার হত্যা ঘুম নির্যাতন যেন এখনো পিছু ছাড়েনি আমাদের চলতি বছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে ঝলসে দেয়া যেন তারই উদাহরণ, এ বর্বরোচিত কাজটি করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা সাড়া পেলে দেশ ব্যাপি, মামলা করেন নুসরাতের বাবা, তবে এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয়তো একটু হলেও শান্তি দেবে ভুক্তভোগী পরিবার কে।

এ মামলায় ২৪ অক্টোবর বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনী জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ ১৬ জনের মৃত্যু দন্ডের রায় ঘোষণা করেন

১৪ জুলাই- এই দিনটিতে দেশে আবারো নেমে আসে শোকের ছায়া,এ দিনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ মৃত্যুবরন করেন,যিনি বাংলাদেশে শুক্রবার কে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

১৪ সেপ্টেম্বর- ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয়।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে সব থেকে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যা সারা দেশের মানুষকে নিস্তব্ধ করে দেয় আর তা হলো বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড। আবরার ফাহাদ ছিলেন
ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) -এর তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে তার জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে । ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ভোঁতা জিনিসের মাধ্যমে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহ করে যে আবরারকে তার সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আক্রমণ করা হয়েছিল, যা ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু চুক্তির সমালোচনা বলে মনে হয়েছিল

শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অসৎ কাজে লিপ্ত থাকায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সংগঠনটির ১ নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই শোভন ও রাব্বানী পদত্যাগ করেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বর্তমান বিশ্বের একটি সব থেকে বড় সমস্যা এ বছরের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর তাণ্ডবে নিহত হয় ১৭ জন। ১৪টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত।

মধ্যম আয়ের দেশে বছর শেষের দিকে বড় চমক সোনার দামে পেঁয়াজ। ১৭ নভেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের দাম ২৪০ টাকা হয়, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে


এ বছর যাদেরকে হারিয়েছি


১৫ ফেব্রুয়ারি- আল মাহমুদ, একুশে পদক প্রাপ্ত কবি ও সাহিত্যিক।
৬ এপ্রিল- টেলি সামাদ, কৌতুকাভিনেতা।

২০ ডিসেম্বর- ফজলে হাসান আবেদ, একজন বাংলাদেশি সমাজকর্মী এবং বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার ভুষিত হয়েছিলেন,এবং বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে গেছেন তিনি।


এ বছরে যা কিছু ইতিবাচক


১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট এ বাজেটের স্লোগান হচ্ছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।’

শুধু তাই নয় এ বছর রুমান সানা একজন বাংলাদেশী তীরন্দাজ। তিনি ২০১৯ বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের পুরুষ একক ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে পদক লাভ করেন।২০১৯ সালে ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ র‍্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টের ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেন।

পাশাপাশি আর্চারি থেকে ৮ ডিসেম্বর ৬টি সোনার পদক আসে বাংলাদেশের ঘরে। ৯ ডিসেম্বর প্রাপ্তির খাতায় যোগ হলো আরও চারটি। ফলে সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের আর্চারিতে দশে দশই ঘরে তুললেন বাংলাদেশের আর্চাররা।

সু খবর আরো আছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন মানের উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র এবং আইসিটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ অর্জন করেছে উইটসা গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯।

এ ছাড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিক থেকে ২০১৯ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম সুখের বছর। এ বছর তার প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। দ্য গ্লোবাল ইকোনমিস্ট ফোরাম (জিইএফ) সম্প্রতি এ তথ্য দিয়েছে।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


 

বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স ও শিক্ষার্থীদের ভাবনা

‘সান্ধ্যকোর্স মুক্ত ক্যম্পাস’ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সান্ধ্যকোর্সের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সেই দাবি মেনে নেয়নি। সান্ধ্যকোর্স একটি বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া ও এটি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করছে বলে দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

এদিকে সান্ধ্যকোর্স নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এ্যাড. মো. আবদুল হামিদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর সান্ধ্যকোর্স বন্ধের নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির এই নির্দেশনার পর সান্ধ্যকোর্স বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেবার পালা। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শুরু হয়েছে সমালোচনা।বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স থাকা কতটুকু যৌক্তিক এবিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডের রাবি প্রতিনিধি ওয়াসিফ রিয়াদ



বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদানে সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে
শেখ শোভন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সান্ধ্যকালীন কোর্স মূলত সার্বজনিন শিক্ষার যে ধারণা এবং শিক্ষার অধিকার আমাদের সংবিধানে দেওয়া হয়েছে তার বিরোধী। টাকার বিনিময়ে কিছু মানুষ নামেমাত্র ক্লাশ-পরীক্ষা দিয়ে একটা সার্টিফিকেট পাবে তা একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রের সাথে বেমানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান এবং একমাত্র কাজ হচ্ছে জ্ঞানের সাধন এবং নতুন জ্ঞান তৈরি। আমরা দেখেছি বর্তমানে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু জ্ঞানের সাধনার অপ্রতুলতার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংক ক্রমাগত নিচে নামছে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জনগনের অর্থে পরিচালিত হয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু শিক্ষক অর্থ উপার্জনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানানোই এই সান্ধ্যকালীন কোর্সের লক্ষ্য। আর এর প্রভাবে আমরা যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারা প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছি। বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করতে হলে সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে।

সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় কে তার অতীত ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনতে অনতিবিলম্বে এই বাণিজ্যিক কোর্সগুলকে বন্ধ করে নিয়মিত ছাত্রদের গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।



শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করতে হবে
ইমরান ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


দেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, মেধাবী ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ লক্ষ ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক ভর্তিচ্ছু কঠিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।

তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত কষ্ট করে পড়াশোনা করার একটাই উদ্দেশ্য উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালিন কোর্সে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উচ্চতর ডিগ্রী পাইয়ে দেওয়ার নাম করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকরা বিশ্ববদ্যালয়ের পড়–য়া নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিক্ষা গবেষনা কাজ বাদ দিয়ে অধিক টাকা আয়ের লক্ষ্যে সান্ধ্যকালিন কোর্সে সময় দিয়ে থাকেন।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে। এমনিভাবে চলতে থাকলে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে পড়বে। শিক্ষিার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বানিজ্যিক সান্ধ্যকালিন কোর্স বন্ধ করা এখন সময়ে দাবি।



সান্ধ্যকোর্সের নামে চলে রমরমা ব্যবসা
তাসবিয়া ইসলাম তুলি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


সান্ধ্যকোর্স একটা বাণিজ্য ছাড়া কিছুই না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মুক্ত চর্চা হবে, পড়াশোনা হবে গবেষণা নির্ভর। সেখানে তা না হয়ে শুরু হয়েছে রমরমা সান্ধ্যকোর্সের ব্যবসা। এ ধরণের বাণিজ্যিক সনদপত্র বিক্রির পন্থাগুলো অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। এ ধরনের কোর্সের জন্য ভুরি ভুরি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোর্স কেন জারি থাকবে? বিশ্ববিদ্যালয় একটা উন্মুক্ত প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের মেধার প্রমাণ দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। সেখানে টাকার বিনিময়ে কেউ একই সনদপত্র অর্জন করবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এই সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবিতে পূর্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। কিন্তু তাদের দাবি মানা হয়নি উপরন্তু শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে চরম বাঁধার সম্মুখীন হয়। তবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুদৃষ্টির ফলে আমরা আশাবাদী এ ধরণের সমস্যা অতি শীঘ্রই সমাধান হবে। যা পূর্বের এবং বর্তমান সকল শিক্ষার্থীর কাম্য।



শিক্ষা বাণিজ্য এক সাথে চলে না
মেরিন রুম্পা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


‘দেশের ফকির ভিক্ষা পায় না, ভিন্নদেশী ফকির পায় দাওয়াত’! যখন দেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানরা স্বপ্নমুখী হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় ভর্তিযুদ্ধে সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তখনি দেখতে পায় শিক্ষা বাণিজ্য। শিক্ষকরা তাদের সৃজনশীল মেধা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করলে হয়তো লাভবান হবেন কিন্তু তাদের ব্যবসার মূলধন শিক্ষাই কেন?

শিক্ষাকে পুজি করে ব্যবসায় ভালোই মুনাফা গুনে। কিন্তু শিক্ষা পুঁজিবাদের কষাঘাতে শোষন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। যেখানে সন্ধাকালীন ব্যাচগুলোতে ক্লাস নেওয়ার পরেরদিন সকালে ঝিমাতে ঝিমাতে রাজকীয় কায়দায় ক্লাসে ঢুকে লেকচার রেডি না করে। এটেন্ডেন্সের জন্য একটা কগজ ছুড়ে দিয়ে রোল নম্বর নিয়ে আই ওয়াশ করে। আদৌও সেটার পারসেনন্টন্স হিসাব করে কিনা প্রশ্নবিদ্ধ। এতে কষ্ট করে দিনের পর দিন ক্লাস করা শিক্ষার্থীরা হতাশা ছাড়া কিছুই পায়না।

একজন শিক্ষক একজন মানুষ, সে সুপার ন্যাচারাল কিছু না যে, ডিপার্টমেন্ট, পরিবার,সমাজ, গবেষণা সব দায়িত্ব পালন করেও আবশিষ্ট সময় থাকবে সন্ধাকালিন ব্যাচ পড়ানোর। শিক্ষকরা যখন সান্ধকোর্সের দিকে ঝুকে পরে ঠিক তখনই বঞ্চিত হতে থাকে নিয়মিত র্শিক্ষার্থীরা।



সান্ধকোর্সের ফলে বঞ্চিত হচ্ছে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা
আরেফিন মেহেদী হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


সান্ধ্যকোর্স পরিচালনা নিয়ে নানা বঞ্চনা ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, ক্লাস না করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, দ্রুত সময়ে খাতা মূল্যায়ন করা, অথচ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খাতা যথাসময়ে মূল্যায়ন না করে ফলাফল প্রদানে বিলম্ব ফলশ্রুতিতে সেশন জটে পরতে হচ্ছে।

এক শ্রেণির শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা ঠিকমতো নেন না। তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য ঢাকায় অবস্থান করেন। কিন্তু সান্ধ্যকোর্সে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঠিকই হাজির হন ক্যাম্পাসে। এ প্রক্রিয়ায় ‘বিকল্প পথে’ নিম্নমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির সূতিকাগারে পরিণত হয়েছে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও।

ইভিনিং মাস্টার্স কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই নিয়মিত কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদনেরই যোগ্যতা রাখেন না। কিন্তু এক শ্রেণির শিক্ষকদের কারণে এ ধরনের ছাত্রছাত্রীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী বনে যাচ্ছেন। ওই শ্রেণির শিক্ষকরা নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে উদাসীন। কেউ কেউ ক্লাস ফাঁকি দেন। এমনও চিত্র লক্ষ্য করা যায় যে রুটিন অনুযায়ী শিক্ষকদের ক্লাস থকে সকালে কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখে সেই ক্লাস বিকালে নেওয়ার আশ্বাস দেয়। অথচ বিকালেই একইভবে ক্লাসে বসিয়ে রাখে শিক্ষার্থীদের কিন্তু শিক্ষকের হদিস মিলে না।

অথচ রাতের সান্ধ্যকোর্সে এর বিপরীত চিত্র ভেসে উঠে। এসময় শিক্ষকেরা যথাসময়ে ক্লাস এ উপস্থিত থাকেন এবং অনেক আন্তরিকতার সাথে তাদেরকে সেবা দেন অপরপক্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা এইসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় প্রতিনিয়ত। এমনটাও লক্ষ্য করা যায় যে ক্লাসে রেগুলার স্টুডেন্টদের কোনো প্রোগ্রাম এর অনুমতি না দেওয়া হলেও দিব্যি ইভিনিং কোর্স এর শিক্ষার্থীদেরকে সকল প্রোগ্রাম এর অনুমতি প্রদান করা হচ্ছে।

এতে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে রিতীমতো। অথচ এমনটা কাম্য ছিলনা কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার স্টুডেন্টদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সর্বাঙ্গে কিন্তু সেটার বিপরীত কিছু অপ্রিয় সত্য ঘটনা ও চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। সুতরাং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল করা উচিৎ।


 

বিদেশি শিক্ষার্থীরা যখন গবেষনায় ব্যস্ত, আর আমরা লাইব্রেরীতে প্রেমে ব্যস্ত


জাকির রহমান


ইজরাইলের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন নতুন মৌল আবিস্কার করে, তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা লাইব্রেরিতে গিয়ে প্রেম করে! বিশ্বের ১ নম্বর হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বছরে কোন কনসার্টের খবর পাওয়া যায় না।

আর আমাদের ভার্সিটিতে কত কত কনসার্ট… এল.আর.বি, জেমস, শিরোনামহীন, অ্যাশেজ, তাহসান, ওয়ারফেজ.-একটার পর একটা প্রোগ্রাম হয়।নাচ, গান, হোলি উৎসবও হয় এখন। ফাক ইউ, হট বেবি, ক্রাশ খাইছি, মাস্তি, ইয়াবা, বিয়ার, গাজা এই শব্দগুলো এখন ছেলে-মেয়েদের কাছে অতি পরিচিত।

অন্যান্য দেশে জ্ঞানী মানুষরা, বিজ্ঞানীরা কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বেশ কয়েকবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিবেটে অংশগ্রহণ করেন।
আর আমাদের?

বিজ্ঞানী মকসুদুল আলম কয়টা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যেতেন? আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম কয়টি সমবর্তন অনুষ্ঠানে যান? (যিনি ব্যাক্টেরিয়া শনাক্তকরণের সেন্সর তৈরি করেছেন. “যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স” জার্নাল এ তার গবেষণা ছাপা হয়েছে)বা ‘জিন’ ত্রুটি নির্ণয়ে অভাবিত সাফল্য অর্জন করেছেন বাংলাদেশের যে তিন গবেষক।

তারা হলেন— ডা. কেএম ফোরকান উদ্দিন ও ডা. মোঃ রোবেদ আমিন ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান বৈজ্ঞানিক ডক্টর মোহাম্মদ উদ্দিন ড্যাফিল। তারাও কি ভার্সিটির কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাবেন? তাদেরকে কি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকা হবে?

তাদের কাউকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকবে না। কারণ- নাইলা নাঈম আর সানি লিওনদের দাম এখানে বেশি অথবা দালালী আর দাসত্বের বীজ বহনকারী মেরুদণ্ডহীন বুদ্ধিজীবীরা – যারা এদেশের মানুষকে রোহিঙ্গার মতো করতে চায়। স্টিভ জবসের স্পিচ পাওয়া যায় ইউটিউবে। সমাবর্তনে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।

বিলগেটস একজন ভালো বক্তা। মার্ক জুকারবার্গও একজন মোটিভেশনাল স্পীকার!
আজকে চীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হতে যাচ্ছে। ইন্ডিয়া আইটি সেক্টরে ডমিনেট করছে। তাদের ছেলে মেয়েরা গুগলে কাজ করে। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা মাস্তি করে আর মেয়েরা হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় পার করে।

ভারত যখন বসে বসে সিইও তৈরি করে আমরা তখন বসে বসে ক্যাম্পাসে ক্যাডার তৈরি করি। আমেরিকা যখন নতুন নতুন ফাইটার জেটের নকশা করে, তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন প্রতিরক্ষা-নিরাপত্তা মেলার আয়োজন করে আমরা তখন ক্যাম্পাসে মিথিলার – তাহসান ডিভোর্স নিয়ে আন্দোলন করি এবং ইউটিউবে লুল ভিডিও দেখি।

মায়ানমার যখন প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত থেকে খনিজ সম্পদ আহরণের যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে – তখন আমাদের ছেলেমেয়েরা বোটানিক্যল গার্ডেনে বসে প্রেম করছে।আমাদের দেশে প্রেমের নাটক করে হিট হওয়া ছেলেটা হলো বড় সেলেব্রেটি। আর ময়দা সুন্দরী হচ্ছেন হট কেক।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বপ্নভূমি নোবিপ্রবি


ফজলে এলাহি ফুয়াদ


নোবিপ্রবি অথবা NSTU নামে পরিচিত সবার কাছে। পুরো নাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সাফল্যের অগ্রযাত্রার ১৫ বছরে রয়েছে পেলে আসা হাজারো স্মৃতি।

রাজধানী থেকে ১৬০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত দেশের উপকূলীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা সকলের নিকট উপকূলীয় অক্সফোর্ড নামেও পরিচিত।

প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের ভাস্কর্য দন্ডায়মান। বামে পাউন্টেইন পেইন খ্যাত শহীদ মিনার। একটু সামনে গেলেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা পড়বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য নির্মিত ভাস্কর্য।

এখানে রয়েছে দুটি নির্মিত এবং একটি নির্মাণাধীন সহ মোট তিনটি একাডেমিক ভবন। এ ছাড়া হাজী ইদ্রিস আলী অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি ভবন, পাঁচটি হল সহ আরো অনেক স্থাপনা।

এখানে প্রতিনিয়ত গল্প সাজে। ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন বুনে তরুন প্রজন্ম। এক দিন বড় হবে, খুব বড়! যেখানে দাড়িয়ে গাছের মত ছায়া দেবে নিজ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মানুষগুলির। বিশেষত্ব দিবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের।

নাইম উদ্দিন এই তরুন প্রজন্মের একজন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখি নোবিপ্রবি কে নিয়ে, নিয়ে যেতে চাই নতুন এক উচ্চতায়। জীবন যুদ্ধে এক জন সফল মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাড়াতে চাই।

স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের এপ্রিল। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে প্রতিদিনই নোবিপ্রবির সামনে দিয়ে আসতাম আর স্বপ্ন দেখতাম, একদিন ঘুরে দেখব পুরোটা ক্যাম্পাস। ১০১ একরে কি আছে? সারাদেশের শিক্ষার্থীরা কেন আসে এখানে! তখনো একদমই মাথায় আসেনি যে, মাত্র কয়েক দিন পরে এই জায়গাই হবে আমার নিজের ঠিকানা!

সম্ভবত ২০১৪ সালের অক্টোবর। সকাল ৮ টায় ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উপস্থিত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী ইদ্রিস আলী নামের বিশাল অডিটোরিয়ামে। জীবনের নতুন এক অধ্যায়, নতুন সব মুখ। নোবিপ্রবি নিয়ে কল্পনাটা ছিল একটু ভিন্ন। এখানে ক্লাস করার চেয়ে ঘোরাফেরা এবং আড্ডা দেওয়া বেশি। স্কুল কলেজের মত ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই।

কিন্তু কোথায় কিসের কল্পনা, এসে দেখি এ এক নতুন জগত! প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসেই স্যারের নিয়ম কানুন নিয়ে বিশাল এক লেকচার। ঠিক সময়ে না আসলে ক্লাস এ ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই এই করলে এই এই শাস্তি। আবার উপস্থিতির জন্যও ৫ নাম্বার বরাদ্দ। এ কথা শুনে তো রীতিমত চোখ কপালে!

লাল সাদা বাসের কথা মনে পড়তেই মনে হলো এখানে আছে কিছু সুখের স্মৃতি। লাল বাসের দোতলায় বসে বাসায় ফেরার পথে সম্মিলিত কন্ঠে গান গাওয়া তো ছিলো নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা। সোনাপুর ডিগ্রি কলেজের সামনে দিয়ে যখন নোবিপ্রবির লাল সাদা বাস গুলো সর্বোচ্চ গতিসীমায় চলতো, তখন কিছু অসহায় চোখ তাকিয়ে থাকতো নোবিপ্রবির বাসের দিকে। হয়তো তারাও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু নোবিপ্রবিতে চান্স হয়নি। চান্স পায়নি বলে হয়তো অনেক কষ্টও পেত তারা।

এত শত গল্পে স্মৃতি যে আরো আছে শান্তি নিকেতনে বসে চায়ের কাপে ঝড় তোলা, সালাম হলের বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখা, ব্যাকলগ বনে বসে ক্লাস মিস দেওয়া, সেন্ট্রাল ফিল্ডে বসে গিটারে সুর তোলা, নীল দীঘীর পাড়ে জন্মদিন সেলিব্রেশন করা বাসের সিট রাখতে হুড়োহুড়ি করা এসব আমদের দৈনিক রুটিনে ছিলো

প্রতিদিন কতশত গল্পের জন্ম হত। কত সব চিন্তা আসতো। আড্ডায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া এই বন্ধুরা শিক্ষাজীবন শেষে কে কোথায় যাবে তার কি কোনো হদিছ থাকবে! গানে আড্ডায় ঘোরাঘুরি আর হালকা পড়াশুনোয় আর শত নিয়ম কানুনের বেড়াজালে ৪টি বছর পার হয়ে গেল। শুরু হল সমাপ্তির সূচনা।

চার বছরের এত স্মৃতি, এত সুখ দুঃখ, হাসি কান্না সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বিদায় বেলায়। দীর্ঘ ৪ বছর আগে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, নিমিষেই তা শেষ হয়।

আজও লাল সাদা রঙের সেই বাসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি চোখে পড়লেই। আহা… আবারো যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনগুলোতে! হয়তো এ রকম আশায় ব্যক্ত করে করে নোবিপ্রবি ছেড়ে আসা সকল শিক্ষার্থী।

বাস্তবতার জাঁতাকলে পিষ্ট প্রতিটি মানুষের মনেই থাকে জীবনে সফল হওয়ার ভাসনা। সে পালে হাওয়া দেয় নোবিপ্রবি নামক এই স্বপ্ন রাজ্য। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। কেউ সে যুদ্ধে সফল হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় কেউ বা হারায়। তবে নোবিপ্রবি উজ্জল তার স্বমহিমায়।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সাকি: সাহিত্য ও সুফিবাদের আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ


হোসাইন কামাল


কবিতার একটি ঐশ্বরিক আবেদন রয়েছে।কবিদের চিন্তা-চেতনায়, মননে, মগজে এ ঐশ্বরিক শক্তি বারবার খোঁচা দেয়।কখনো স্বপ্নে,কখনো বা বাস্তবে। অনেক ভক্তবৃন্দ তো আবার কবিতাকে ওহীর কাতারেও নিয়ে গেছেন। কবি ইকবালকে বলা হয় “লিসানুল গায়েব” তথা অদৃশ্য সুর, যে সুর কবির নিজের নয়।

কবি নজরুল তার রাজবন্দির জবানবন্দিতে তার বিদ্রোহ বাণীকে উদ্ধৃত করেন এভাবে “এই সুর আমারও নয়,বীণারও নয়। সুর তার যিনি আমার কন্ঠে তার বীণা বাজান। কাজের রাজবন্দী যদি হতে হয়,তবে আমি নই;স্বয়ং ভগবান”।মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গবাণী’র মূল সুর তার স্বপ্নের কুললক্ষ্মী। যিনি স্বপ্নে কবিকে মাতৃভাষায় ফিরে আসার আজ্ঞা দিয়েছেন।

সকল কবিরই একটা কাব্য সৌন্দর্য লক্ষ্মী আছে।যার কাছ থেকে কবি তার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পান। কবির কল্পনায় কাল্পনিক সাকি (ছবি-সম্পাদিত)বাস্তব জীবনেও বেঁচে থাকার আশা পান। কালিদাসের সরস্বতী, হোমারের আফ্রোদিতি, ভার্জিলের ভেনাস, দান্তের বিয়াত্রিসে, রবীন্দ্রনাথের মানসী,পেত্রার্কের লরা,.কীটসের ফেনিব্রাউন, হাফিজের শাখ ই নাবাত, বোদলেয়ারের সাবাতিয়ের, জীবনানন্দের বনলতাসেন। এদের মধ্যে অনেকে কবিদের বাস্তব জীবন সঙ্গীনী হিসেবেও ছিলেন।

আর্জেন্টিনার নারীবাদী নেত্রী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রতি রবীন্দ্রনাথের আগ্রহের কমতি ছিলো না। নানান গল্প কবিতায় এই প্রেয়সীর কথা টেনে এনেছেন। ‘আমি চিনি গো চিনি তোমায়,ওগো বিদেশিনী’ নামে গানের সুরও বেধেছিলেন। প্রকৃতির কবি উইলিয়াম ওয়র্ডসওয়ার্থ তো তার কাব্য মানসে প্রকৃতির স্বর্গীয় অনুভূতিকে কখনো নারী চরিত্ররূপে হৃদয়ে ধারন করেন।

এক কথায়,কবিদের এই নারী সূলভ চরিত্রগুলো তাদের মানসে কবিতা লেখার স্পৃহা দিয়েছেন যা প্রেম ও স্বর্গীয় আরাধনার স্তুতি যোগিয়েছে। ফলশ্রুতিতে হাজার বছর পরও পাঠকের হৃদয়ে অনুরনন হচ্ছে।

সাকি ফার্সি সাহিত্যের এক কালজয়ী চরিত্র। এই চরিত্রের সাথে ইতিহাস ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যেরও কিছুটা ছোঁয়া রয়েছে। কবিতার কাব্যরসের পাশাপাশি সুফিবাদের বিশেষ জগতেও এই সাকির অবস্থান। পরবর্তীকালে তা দেশ-কালের গন্ডি পেরিয়ে যায়। লোক মুখ থেকে শুরু করে ভারতীয় বলিউডের গানেও এই সাকি’র উপস্থিতি! আক্ষরিক অর্থে সাকি আরবী শব্দ। যার অর্থ শরাব বা মদের পেয়ালা পরিবেশন কারী।

পবিত্র কোরআনে শরাব ও সাকি শব্দটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হুর ও গেলমানকে সাকি সম্মোধন করা হয়েছে। শব্দটি দেখতে স্ত্রী লিঙ্গ হলেও মূলত উভয়লিঙ্গিক। সমগোত্রীয় কারো শারিরীক সৈন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে কবিতা লেখাটা কবিদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু না।উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অনেক সনেটে তার বন্ধুর শারিরীক গঠনের বর্ণানার কথা আছে। কিশোর বালকের প্রতি প্রেম,ইন্দ্রিয়ানুভূতি বহুপ্রাচীন এক ধারণা। আবার প্রাচীন গ্রীক কবিতায় নারীতে নারীতে আকুল কামনার(Lesbian) কথাও উঠে এসেছে।


বিখ্যাত কবি সাফোর ভাষায়

“Stand up and gaze on me
As friend to friend,love to love.
Reveal open by to me,
The beauty in your eyes”.


যাহোক,ফার্সি ও উর্দূ ভাষাভাষী জগৎবিখ্যাত কবি হাফিজ, খৈয়াম, শেখ সাদী, গালিবের কবিতায়ও সাকিরা এসেছেন। কখনো সরাসরি কখনো বা সুফি অঙ্গনে খোদার দিদারে কল্পনাব্যাঞ্জক রূপক অর্থের ভেতর দিয়ে। ওমর খৈয়াম তার ইয়ামেনী হুরসত প্রেয়সীকে লক্ষ্য করে সাকি’কে এনেছেন তার বিখ্যাত রুবাইয়াতয়ে। তার ভাষায়-


“সাকিকে হালাম যে গাম হেযার নাত
হার জাকে রুযি দাস্ত মান ব’দামানাত
রাফতী ব’হেযার দিল হালাক আযগাম তুস্ত,
বায আনকে সদ হেযার জান কুরবানাত”
অর্থঃ
সাকি! তোমার অভাবে আমার মৃত্যু হাজার বার।
কারণ তোমার আচল আমার হাতে হৃদয় বেধে রাখবার।
তাই তোমার বিদায়ে হাজার প্রাণবধ, আগমনে শত হাজার প্রাণ কুরবানী!


পরবর্তীকালে সুফি ঘরানার স্পর্শে এসে সাকি একটি বিশেষ অর্থে রূপান্তরিত হয়।ইসলামে সুফিবাদের প্রথম ধারনা দেন হাসান বসরী। পরবর্তীতে, ইমাম গাজ্জলী, জালালুদ্দিন রুমি, শেখ সাদী প্রমুখ এই সুফিবাদের ধারাকে কবিতার ছন্দ ও পঙক্তি তে রূপক ভাবে তুলে ধরেন। সুফিবাদ জগতের ভোগ, বিলাসকে বর্জন করে বিশেষ তপস্যা ও আত্মার কলুষতা দূর করে স্রষ্টার প্রেমময় সত্ত্বাকে কাছে পেতে চায়।

স্রষ্টার আযাবের ভয় দূর করে প্রেমের,ভালোবাসার দ্বারা নৈকট্য(দীদার) চায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে ইসলামের বাস্তব অনুশীলন ও আদর্শ থেকে দূরে মনে করা হয়। সুফিবাদের ভাষায় সাকি তথা পানপাত্রদাতা হলেন প্রেমময় ঈশ্বর বা প্রেমদীক্ষা দাতা।শরাব হলো প্রেম/ইশক। পেয়ালা হলো হৃদয়। সুফির মদপানকে রূপক অর্থে নেয়।তাই সাকিকে কখনোই নারী মূর্তি হিসেবে নেয় না।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার লেখায় সুফি ধারনাকে তুলে ধরেন সাকি’র মূর্তিতে।’এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরবি সাকি’,’খোদার প্রেমে শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই’ কবির অমর গজল হিসেবে আজও প্রসিদ্ধ।

পারস্যে সুফিবাদের প্রকৃত আদর্শকে সাধনার মাধ্যমে আদর্শিকভাবে রূপান্তরিত করেন বিখ্যাত দার্শনিক, সুফি কবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি। তার পাশাপাশি হাফিজ, শেখ শাদি প্রমুখ কবিরাও এই ধারার লোক ছিলেন। সুফিরা গ্রীক তত্ত্বজ্ঞানকে ইসলামের নবধারায় এনে একটি নবযাত্রা সৃষ্টি করেছিলেন, ফলে হেলেনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি হতে সুফি দার্শনিক ভিত্তি রচিত হয়।আর গ্রীক শব্দ Soph (বোধি) থেকে সুফি শব্দের উৎপত্তি।

যার কারণে অতীতে যিনি সুফি ছিলেন,তাকেই দার্শনিক হিসেবে মান্য করা হতো।সুফিদের নিকট তাদের বোধিচিন্তার মিশেল ঘটেছে গজল, মারেফতি গান, কবিতা ও দার্শনিক তত্ত্বের মধ্য দিয়ে। পরমাত্মা/মুরশিদকে সাকির মাধ্যমে কল্পনা করে তার মধ্যে বিলিন (ফানাফিল্লাহ) হওয়ার মাধ্যমে জীবনের পরমানন্দকে খুঁজে ফেরে।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।


 

স্বাধীনতার চেতনায় হোক তরুণদের চেতনা

ইকবাল মুনাওয়ারঃ নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার পর আমাদের মাঝে আসে বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ৭১ এর বিসর্জন স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙালি বীরদের ত্যাগের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় ও বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাঙালি বীররা রুখে দিয়েছিল হানাদারদের সমস্ত পরিকল্পনা।

দেশপ্রেমের চেতনা বুকে লালন করে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করার পর অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। লাল সবুজের পতাকা উড়েছিল পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাওয়া এই সবুজ বাংলায়।

স্বাধীনতা অর্জনের পর এই সময়ে দাড়িয়ে আমরা বিভিন্ন পত্রিকায় দেখতে পায় তরুণরা মাদকদ্রব্য সেবন সহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত। আমাদের দেশের বর্তমান অনেক তরুণ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত। নারী উত্যক্ত সহ ফেইসবুক পাড়ায় নানা খারাপ কাজ ও খারাপ কিছু ভাইরাল করা সহ নানা ধরনের নৈতিকতা বর্জিত কাজে বর্তমান তরুণরা নিমজ্জিত। মা বোনদের ইজ্জতের জন্য বাঙালি বীর সেনারা জীবন দিয়েছিল আজ প্রায়ই দেখা যায় প্রেমের নাম করে শত শত বোনদের ইজ্জত নিয়ে খেলা করে উঠতি এই প্রজন্ম।

এই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল তরুণ। এই তরুণ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেম অন্তরে লালন করে আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যায় বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উঁচু করে দাঁড়াবে। এই বিজয়ের মাসে তরুণ প্রজন্ম যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সৎ যোগ্য আদর্শ দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে গড়ে তুলে তাহলে মাতৃভূমি এগিয়ে যাবে বিশ্বের উচ্চ শিখরে।

পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলয়ে চলতে গিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি চেতনা যেন না হয় কোন অবহেলিত বিষয়। বরং বাঙালি চেতনার পাশাপাশি যেন হয় পশ্চিমা সংস্কৃতি একটি সাধারণ বিষয়। শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস, বিজয় দিবস যেন দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয় এবং এই দিবস গুলোর চেতনায় যেন তরুণদের মনে নতুন স্বপ্ন নিয়ে মাতৃভুমি এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র প্রত্যয় হয়। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস গুলো যেন হয় তরুণদের একমাত্র প্রেরণা।

বর্তমান তরুণদের যদি খেয়াল করা হয়, তারা বর্তমান যে ভুলে নিমজ্জিত আছে তা বাঙালি ইতিহাসের পরিপন্থী। অন্যায়কে আশ্রয় দেয়নি বাঙালি তরুণরা। সুকান্তের ভাষায়, তারা লাথির আঘাতে পাথর ভাঙে। কিন্তু পাশ্চাত্য বা ভারতীয় সাংস্কৃতির আগ্রাসনে তরুণরা আধুনিক হওয়ার চিন্তায় নানা নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে সমাজের অশালীন কাজে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত।

বিভিন্ন দিবসকে বন্দি করা হয়েছে সামান্য কিছু লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতায়। তরুণরা আজ ভুলতে বসেছে অতীত ইতিহাস। স্বাধীনতার চেতনা পাথেয় হয়ে হোক উন্নততর চিন্তা ভাবনা। নিপাত যাক সমস্ত অন্যায়।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।