হঠাৎ বছর কুড়ি পর

 

বরাবরের মতোই নির্বোধ আমি কিছুটা কাব্যপ্রেমী । তাই ক্ষানিক সময় পেলেই যেতাম চলে, কোনো এক নির্জন সোডিয়াম তলে । সেথা চুপটি করে বসে মঝেমধ্যে ভাবতাম,আবার মাঝেমধ্যে লিখতাম । যা ভাবতাম তাই আবার আধো আলোয় মন অগোচড়ে আঁকতাম । কিন্তু কেন জানি আমার নিরামিষ আঁকিঝুঁকির প্রতিলিপি নিত্যনৈমিতিক দিনকার মতোই ঠিক একই হত,মনের বিরুদ্ধে ছেদ ধরাতাম যত ।

তারপর আর কি কিছুকাল থাকতাম নিশ্চুপ,শেষে বেখেয়ালি অভিমানীনি তোমায় মনে পড়ত খুব ।
এভাবেই চলতে থাকে আমার অশাড় দিন,হয়ে তোমাতে বিলীণ
তবে তুমিহীন।
না জানি সোডিয়াম আলোয় ঘুমিয়েছি কত,খুঁজে খুঁজে কাউকে ঠিক তোমার মত।

জানো আজও মিটে নি নিঃশেষ আমার,
তোমার মত কারো দেখা পাওয়য়ার আকাঙ্ক্ষা ,তাইতো আমি এই অচল সময়ের খন্ডক নাম দিয়েছি ‘অসত্য অপেক্ষা’।

এমনি নিরস একদিন মাঝ রাস্তায় অচেতনে হাঁটছিলাম,আকস্মিক কার হাতের স্পর্শে জানি মৃতপ্রায় জীবন আবার নতুন করে ফিরে পেলাম।
মিটিমিটি চোখে দেখি তাকিয়ে ,
এ ত সে, মৃতপ্রায় আজ আমি যার নামহীন বিষাক্ত বিষে।

আরও পড়ুন

হাওরের ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ডলার আয় করছে

ফেলে রেখে জীবনের ছেদ,উৎকন্ঠা করে ভেদ করলাম একটাই প্রশ্ন,”হঠাৎ বছর কুড়ি পর…??”

আবুবকর সিদ্দিক শিবলী
শিক্ষার্থী,
১ম বর্ষ
‘কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর

বাংলায় ১৩টি ও উদুর্তে ৯টি বই লিখেছেন আল্লামা শফী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


হেফাজতে ইসলামের আমির ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আল-জামিয়াতুল তাহলিমা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী মারা গেছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

শাহ আহমদ শফী দেশের আলেম সমাজের খ্যাতিমান ইসলামি ব্যক্তিত্ব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আমীর ছিলেন। তিনি একইসাথে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের হাটহাজারীর মহাপরিচালক ছিলেন।

বর্ণাঢ্য জীবনে আল্লামা শফী লেখালেখিতেও ছিলেন বেশ পারদর্শী। শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা। তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বরাবরই সমালোচিত আহমদ শফী। আল্লামা শফীর গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বই হলো-

উর্দু
১. ফয়জুল জারী (বুখারীর ব্যাখ্যা)।
২. আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক্ব ওয়াল বাতিল।
৩. ইসলাম ও ছিয়াছাত।
৪. ইজহারে হাকিকাত।
৫. বাংলা।

বাংলা
১. হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব।
২. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা।
৩. ইসলাম ও রাজনীতি।
৪. সত্যের দিকে করুন আহবান।
৫. সুন্নাত ও বিদ’আতের সঠিক পরিচয়।

আমার একজন আমি থাকুক

মো: মাজেদুল ইসলাম


আমি চাই,আমারও একটা আমি থাকুক।
এই বৃষ্টির বদ্ধ দিনে গল্প করার মতো একজন থাকুক।
আমি চাই,অনলাইনে উকি দেওয়ার মতো আমারও কেউ থাকুক!!
রাতে ঘুমানোর আগে, শুভরাত্রি বলার মতো একজন নারী থাকুক।
বিষণ্ণ বেলায় মন ভালো করার, এক মায়াবিনী থাকুক।

যখন একাকীত্ব চারদিকে ভর করে!!
তখন সংগ দেওয়ার জন্য এক চিত্রাঙ্গীনি থাকুক।
ভোরের কুয়াশার চাঁদরে নগ্ন পাগুলো কে রাঙানোর সময়, এক সঙ্গিনী থাকুক।

গোধূলি বেলায় রক্তিম সূর্য যখন ডুবু-ডুবু করে,
সেই অলৌকিক দৃশ্য দেখার সময়,
পাশে এক মহিনী থাকুক
চারদিক যখন স্তব্ধ , নিশাচরের মতো আমি জেগে থাকি!!

তখন, আমাকে ঘুমানোর চেষ্টায় রত একজন নারী থাকুক।
খুব বেশি তো চাইনি আমি——
আমাকে সর্বদা পাশে আছি বলার মতো,
একজন আমি থাকুক।

বইমেলা হচ্ছে, মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মানতে বলা হচ্ছে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। এ অবস্থায় আগামী বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। মেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হওয়ার কারণে এ শঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

তবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মাথায় রেখে স্টল বিন্যাস থেকে শুরু করে প্রবেশাধিকার বা লোক সমাগম সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধু সামাজিক দূরত্ব নয়, স্টল থেকে স্টলও দূরত্ব বজায় রেখে তৈরি করা হবে। সবকিছু মাথায় রেখে আগামী বইমেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।

কতৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেখানে সবাইকে মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। এছাড়া করোনার কথা মাথায় রেখে করা হবে স্টল বিন্যাস। প্রবেশাধিকার ও লোক সমাগমও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী বইমেলার জন্য সব প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করছি। সরকারি নির্দেশনা মেনে মেলার আয়োজন করা হবে।’

বাংলা একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে এবার স্টল দূরত্ব বজায় রেখে তৈরি করা হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি শুরু করেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। একাডেমির পক্ষ থেকে কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশকদের আগ্রহপত্র চাওয়া হবে। এর ভিত্তিতেই মেলার বিন্যাস ও নকশা তৈরি হবে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রকাশকদের দুটি সমিতির সঙ্গে বাংলা একাডেমির আলোচনা হয়েছে। সেখানে সবাই ডিজিটাল নয়, প্রচলিত মেলার বিষয়ে মত দিয়েছেন। একই মত বিশিষ্ট লেখকদেরও। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও মেলার প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানা গেছে। এছাড়া আগামী বুধবার একাডেমিতে কাউন্সিল মিটিং রয়েছে। সেখান থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে।

কোনোভাবেই স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে নয় উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির এই পরিচালক বলেন, ‘আগামী বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় জিরো টলারেন্স থাকবে। গ্রন্থমেলা আমাদের একটি আলো, যেখানে প্রগতিশীলতার পক্ষে কথা বলি। এ আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে।

সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। অবশ্য চলমান পরিস্থিতিতে বইমেলা না হওয়ার কারণ কেউ দেখছেন না।

এদিকে আগামী বইমেলার পরিসর আগের মতোই থাকলেও স্টল কমতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, আমরা প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচাতে চাই, একইভাবে চাই লেখকদের নতুন বই আসুক। পাঠকরাও তাদের মনের খোরাক মেটাক।

এই সময়েও সম্ভ্রান্ত সাহিত্যচর্চা হচ্ছে, তবে আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি!

সাহিত্য ডেস্ক


রহমাতুল্লাহ রাফি এই সময়ের একজন জনপ্রিয় তরুণ কবি ও লেখক। পড়া-শোনা করছেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যে চর্চায় সক্রিয় আছেন তমুলভাবে। লেখকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অরণ্যে অন্বেষণ’। নিজকে ‘পাহাড়ি ক্যাম্পাসের যাযাবর’ ভাবা এই তরুণ কবির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- ‘দ্য ক্যাম্পাস টুডে’র সাহিত্য সহযোগী সম্পাদক — নুরুল করিম মাসুম।

‘অরণ্যে অন্বেষণ’ আপনার প্রথম কবিতার বই, এই বইটি যখন মলাটবদ্ধ হয়ে হাতে এসেছিল, তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?

প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু বিশেষ অনুভূতি থাকে, যা ভাষায় প্রকাশ করার সক্ষমতা মানুষের থাকে না। নিজের বিচ্ছিন্ন লেখাগুলোকে দুই মলাটের মাঝে কাগজের ভাঁজে সহাবস্থানে দেখে আমার অনুভূতির লিরিক ঠিক তেমনই সূক্ষ্ম।

‘অরণ্যে অন্বেষণ’ যখন মলাটবন্দী হয়ে আমার হাতে আসে, সেই আবেগঘন মূহুর্তের সঠিক চিত্রকল্প আঁকতে পৃথিবীর যে কোনো চিত্রশিল্পী ব্যর্থ— শব্দের কী সক্ষমতা যে সেই অনুভূতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বয়ান করে?

তবে এতটুকু বলতে পারি, মলাটবন্দী ‘অরণ্যে অন্বেষণ’কে এক নজর দেখতে আমার মন-মননে এক অপরিচিত ঝড়ের উদ্ভব হয়েছিল। জন্মের এতদিন পরেও দেহাবয়ব ‘অরণ্যে অন্বেষণ’কে একটু ছুঁয়ে দিলে আমার হৃদয় জুড়ে ভালোলাগার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে।

ধারণা করা যায়, এই করোনাকাল শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বা যারা সৃষ্টিশীল মানুষ তাদের জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ—এই সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

আমি মনে করি, শিল্পীরা হাজার ব্যস্ততার মাঝে একটু একটু সময় খুঁজে যখন তার শিল্পকে গড়ে তুলেন, তখন তা হয়ে ওঠে অনন্য। অঢেল সময় শিল্পীর মস্তিষ্ককে অনুর্বর করে তুলে, তার স্বভাবসিদ্ধ সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়। স্বাভাবিকভাবেই সৃজনশীল মানুষ অলস প্রকৃতির হয়ে থাকে, ফলে কর্মহীন বেহিসাব সময় তাদের আলস্য-চিতায় ঘি ঢেলে দেওয়ার মতোই ভয়ঙ্কর। এদিকে বিবেচনা করলে করোনাকালের এই অফুরন্ত সময় কখনই একজন শিল্পীর জন্য আশীর্বাদ নয়। তবে ব্যতিক্রম থাকতে পারে।

পাঠক মহলে পরবর্তীতে কি বই নিয়ে হাজির হবেন?

যেহেতু আমার প্রথম বই ‘অরণ্যে অন্বেষণ’ একটি কাব্যগ্রন্থ ছিল। সুতরাং আমার পরবর্তী বইটি একটি উপন্যাস হলে পাঠক আমাকে নতুন আঙ্গিকে খুঁজে পেত। সেই ভাবনাকে ধারণ করে একটি উপন্যাসে হাত দিয়েছিলাম আমি। উপন্যাসের গল্পটা খুব সরল নয়—তাই ধরে ধরে কাজ করতে হচ্ছে। গল্পের প্রয়োজনে মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কে বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করতে হচ্ছে। জানতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনীর কাজের সুপ্ত ধরন—যা আমার জন্য মোটেই সহজ কিছু নয়।

সুতরাং এরকম একটি কমপ্লিকেটেড স্টোরিকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে হলে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। সর্বোপরি নানাবিধ ব্যস্ততা এবং রাজকীয় অলসতার কারণে কাজটি থমকে আছে। তবে শুরু যখন হয়েছে শেষ হবেই। আর গোঁজামিল দিয়ে কাজ শেষ করা যেহেতু আমার স্বভাববিরুদ্ধ, সুতরাং তাড়াহুড়া করে পাঠককে কোনো অখাদ্য উপহার দিব না। আমি পরিমাণে নয়; মানে বিশ্বাসি।

ফলে আমার দ্বিতীয় বই উপন্যাস না হয়ে একটি কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে—যার সম্ভাব্য নাম ‘দ্বিতীয় দেখা’। বইটি পাঠকে তৃপ্ত এবং তুষ্ট করবে বলে আমি শতভাগ আশাবাদী। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকাশনী কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশের সম্যক পরিচিত এবং শতভাগ প্রতিশ্রুতিশীল কোনো প্রকাশনী থেকেই ‘দ্বিতীয় দেখা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ পাবে। ইন-শা-আল্লাহ।

পাহাড়ী ক্যাম্পাসের যাযাবর এবং কবি রহমাতুল্লাহ রাফির মধ্যেকার পার্থক্য কি?

‘পাহাড়ি ক্যাম্পাসের যাযাবর’ আর কবি রহমাতুল্লাহ রাফির মধ্যে আদতে কোনো পার্থক্য নেই। একজন প্রাণ ম্যাঙ্গো জুস, তো অন্যজন ফ্রুটিকা। আপাদমস্তক একজন প্রাণোচ্ছল, হাস্যোজ্জ্বল মানবদেহের নাম রহমাতুল্লাহ রাফি—একই সাথে ভালো এবং খারাপ।

বিপরীতমুখী গুণের এত তীব্রতর সমন্বয় যে, মাঝে মাঝে নিজেই কনফিউজ হয়ে যায় নিজের ডেফিনিশন নিয়ে। তবে যখন সে সাহিত্য নিয়ে ডুবে থাকে ভাবনার অতল গভীরে—বেচারা নাওয়া-খাওয়া ভুলে যায়, ভুলে যায় ঘড়ির পেণ্ডুলামের সঠিক সীমারেখা—তখন তাকে একটা উদ্ভ্রান্ত যাযাবর মনে হতে পারে।

চিন্তাশীল সাহিত্য চর্চা এই সময় তেমন হচ্ছে না, বরং সবাই গতানুগতিক রোমান্টিক জনরা নিয়ে সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছে। সাহিত্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একচেটিয়াভাবে প্রেম-ভালোবাসার অশ্লীল উপস্থিতিই কি সাহিত্য? কেন এই সমস্যা? এর মূল কারণ আপনার কাছে কী মনে হয়? এর থেকে উত্তরণের পথ কী?

চিন্তাশীল সাহিত্যচর্চা যে হচ্ছে না, ব্যাপারটা তেমন না; কম করে হলেও হচ্ছে। তবে যারা লাগাতার প্রচেষ্টা করছেন, পাঠক এখন পর্যন্ত তাদের সেভাবে চিনে উঠতে পারেননি। আসলে সাহিত্যের প্রতিটি যুগেই বিবাদমান দুইটি ধারা চলমান ছিল, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাজারি সাহিত্য। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই বাজারি সাহিত্যটা তুলনামূলক পাঠকের দোরগোড়ায় তাড়াতাড়ি পৌঁছায়। রুচিশীল সাহিত্য ঠিক এর বিপরীত।

এই সময়েও সম্ভ্রান্ত সাহিত্যচর্চা হচ্ছে, তবে তা এখনও আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, একটি জাতির রুচির উপর ভর করে সেই জাতির শিল্প-সাহিত্য গড়ে ওঠে। লজ্জাজনক হলেও বাস্তবতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই—আমাদের রুচিবোধ দিনদিন নিম্নদিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে অবধারিতভাবে আমাদের সাহিত্যিকদের উপরেও তার প্রভাব প্রবলভাবে পতিত হচ্ছে। তাদের চিন্তার সংকীর্ণতা সৃষ্টিতে পাঠকদের রুচির দীনতা দায়ী।

গতানুগতিক লুতুপুতু সাহিত্য থেকে বের হতে হলে, লেখকদের আগে আদর্শ পাঠক হতে হবে। বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান রাখতে হবে। পপুলারিটির পিছনে না ছুটে, প্যাশনের পিছনে ছুটতে হবে। একজন লেখক যখন ধী-মেধাসম্পন্ন হবেন, তখনই তার রচনা জাতির দর্পণ হিসেবে কাজ করবে। একজন আদর্শ লেখকের কলম-কালির উদ্ভাসিত আলোতে জাতি এগোতে থাকবে উৎকর্ষের সন্ধানে।

কবিতার মাঝেই কি কবির জীবন বন্দী?

একজন কবি তার চারিপাশের পরিবার-পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকেই কবিতা উদ্গত করে থাকেন। সুতরাং বলা যায়, কবিতার মাঝেই কবির জীবন বন্দী অথবা জীবনের মাঝেই কবির কবিতা লুকিয়ে থাকে।

সাহিত্য-সংসদে নিজেকে কোন আসনে দেখতে চান?

যথেষ্ট বিনয় নিয়েই বলছি, সাহিত্য-সংসদে প্রধানমন্ত্রীর আসনটিতেই নিজেকে দেখতে চাই আমি।

মনের কালিমা মুছে দেওয়ার অনবদ্য উদাহরণ: বৃষ্টি

 

মাজেদুল ইসলাম


বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এলো বান;

বৃষ্টি কিছু মানুষের জন্য শত প্রত্যাশিত আনন্দের বস্তুর নাম আবার কারো জন্য নিঃসঙ্গতাকে বরণ করে কষ্টকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু।

বৃষ্টি বয়স,পেশা ভেদে বিভিন্ন ভাবে ধরা দেয় জনমানুষের কাছে।বৃষ্টিবিহীন খাঁ খাঁ জমির জন্য বৃষ্টি যেন কৃষকের চোখে একমুঠো সোনা, যার আলিংগনে উদ্বেলিত হয় লাখো কৃষক পরিবার।বৃষ্টির জন্য মসজিদে, মন্দিরে চলে দোয়া,পূজা,ব্যাঙের বিয়ে সহ অন্যান্য লোকজ উৎসব।

গ্রামীণ শিশু কিশোরদের জন্য বৃষ্টি আবার প্রাণোচ্ছলতার নাম।বৃষ্টি শুরু হলেই বাবা- মা কে ফাঁকি দিয়ে দলবেঁধে ছুটে বেড়ায় নিকটস্থ দিঘি,পুকুরে। বৃষ্টির দিনে পুকুরে সাঁতার কাটার মজাই আলাদা।বাড়তি আনন্দ যোগ হয় পাশের বাড়ির ফল- ফলাদি চুরি করে খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠার মাধ্যমে।

শহুরে বাচ্চারা অবশ্য বৃষ্টিকে উপভোগ করে চার দেয়ালে আবদ্ধ অনলাইন গেমের মাধ্যমে।তবে তারাও বাবা-মাকে কাছে পেয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক সময় উপভোগ করে।

দাম্পত্য জীবনে বৃষ্টি আবার সুখের জোয়ার এনে দেয়, জায়া ও পতির মধ্যে।বৃষ্টির দরুন বাহিরে যাওয়া মানা তাই স্ত্রীর হাতের গরম গরম খিচুরি আর ডিম ভাজির স্বাদে এবং মুখরোচক গল্পের মাধ্যমে সময় কাটে তাদের।

উঠতি বয়সের ব্যাচেলর তরুণদের মধ্য আবার দুই শ্রেণি পাওয়া যায়। যারা রিলেশনে জড়িত তারা এ বৃষ্টির দিনে বিছানায় কাথা মুঁড়ি দিয়ে এসএমএস বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রেমালাপে জড়িয়ে পড়ে অথবা হারিয়ে যায় কোন কল্পনার রাজ্যে।

আর এক শ্রেণী পাওয়া যায় যারা এসব রিলেশনে জড়িত নয় তারা আবার অনেকে কবিতা লিখে নিঃসঙ্গতাকে জাহির করে,অথবা একাকিত্ব অনুভব করতে করতে ঘুমের অতল সাগরে হারিয়ে যায়।ধর্মভীরু মানুষজন আবার স্রষ্টাকে স্বরণ করে বারংবার।

তবে বৃষ্টির অপর পিঠটাও অনেক ভয়াবহ। বিশেষত সমস্যা হয় দিনমজুর শ্রেণির।যাদের গতর খাটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় প্রতিনিয়ত।মানুষজন বৃষ্টির দরুণ বাহিরে তেমন বের না হওয়ায়, তাদের জীবিকার চাহিদাও মেটে না তেমন।দারিদ্রতা যেন হুমড়ি খেয়ে ধরা দেয় তাদের পরিবারে।

তাছাড়া অতিবৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট ও চারপাশ পানিতে টুইটুম্বুর হয়ে যাওয়ায় নানাবিধ সমস্যাও বিরাজ করে।

ভালোমন্দের পরিমাপকাঠি বিচার করলে হয়তো আমরা নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বো।তবে বৃষ্টি আমাদের মধ্য ফিরিয়ে আনে পরিবারের সবাই গুটিসুঁটি হয়ে গল্প করার প্রাণোচ্ছল পরিবেশ,ঘরোয়া খেলার উন্মাদনা,গ্রামীণ কিশোরদের ডানপিঠে পথচলার অপরুপ দৃশ্য।

বৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে যাক মানুষের মধ্য বিরাজমান হাজারো কালিমা,সূচি হোক ধরা,মেতে উঠি সাম্যবাদিতা ও অসাম্প্রদায়িকতার মহতী কর্মকাণ্ডে।

আত্মার পরিবার

তাসনিয়া আলী


ছোট্টো ইটের টুকরোতে হুইল চেয়ারের চাকা বাঁধা প্রাপ্ত হতেই ছিটকে কিছুটা দূরে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন নীলিমা চক্রবর্তী । নাকে এবং ঠোঁটে প্রচন্ড আঘাত পেলেন তিনি । কিছুটা কেটে গিয়ে অনর্গল রক্ত ঝরছে ঠোঁট দিয়ে। হাতের কনুই দিয়ে মাটিতে ভর করে তিনি হুইল চেয়ার অব্দি পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন আর গলা ফাটিয়ে ” রহমত রহমত ” বলে চিৎকার করছেন। কিছু সময় ব্যর্থ প্রচেষ্টা করার পর তিনি হঠাৎ স্মরণ করলেন , রহমত ঘণ্টা খানিক আগে শহরে গিয়েছে তার জন্য ঔষুধ কিনতে। নীলিমা চক্রবর্তী কোন ঠাই কুল না পেয়ে ওভাবেই শুয়ে রইলো। বিস্তীর্ণ ফুলের বাগানে তিনি একা সীমাহীন আকাশের নিচে শুয়ে আছে ।

প্রকাণ্ড সদর দরজার দিকে তাকাতেই সেদিনের কথা তার মনে পড়ে গেলো , এইতো কিছুদিন আগের কথা , টুকটুকে লাল বেনারসি শাড়ি , আলতা মাখা পায়ে, মাথা ভর্তি সিঁদুর দিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এই বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন । সেইদিন আট বছরের ছোট্ট মেয়েটির কাছে লাল সিঁদুরের কৌটাটা পুতুল বউয়ের মতো লাগছিল। কিন্তু জমিদার বাড়ির ছোট বউয়ের দায়িত্বটা কিন্তু শক্ত হাতেই বুঝে নেওয়া লেগেছিল।
কত সব স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়ি । হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা , এই বাগানেই উদযাপিত হতো দোলের অনুষ্ঠান । তার অকেজো হাত উপরের দিকে উঠিয়ে ভাবতে লাগলো , এই হাতে দুর্গা পূজোর সময় তিনি প্রতি বেলায় ২০০ মানুষের খাবার রেধেছে । এক হাতে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছে , উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে ।
কিন্তু সেই প্রকাণ্ড চক্রবর্তী বাড়িতে তিনি আজ একা। বছর কয়েক আগে বাড়ির ছোট বাবু ( প্রদীপ চক্রবর্তী ) তাকে একা করে দিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি তে পদার্পণ করলেন । তিন সু পুত্রের পিতা হওয়া শর্তেও মুখাগ্নি করেছিল তার ভাইপো। যদিও ভিডিও কলে তার পুত্ররা অনেক কান্নাকাটি সমবেদনা জানিয়েছিল। তার মায়ের একা হওয়ার পর থেকে তারা তার মাকে জন্মভূমি ছেড়ে তাদের নিকট বিদেশ বিভূঁইতে যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিল কিন্তু তিনি রাজি ছিলেন না। তিনি শুধু একটাই অনুরোধ করেছে “তোরা আমার বুকে ফিরে আয় । আমি যে ক’দিন বাঁচবো তোদেরকে বুকে নিয়ে এই বাড়িতেই বাঁচবো। “
সফলতার শীর্ষে অবস্থানকারী সন্তানেরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে , দ্রুতই তারা মায়ের কোলে ফিরে আসবে । মাকে চিন্তা করতে না করেছে । গতকাল রাতেও ভিডিও কলে তার বড় ছেলে লন্ডনের সুনামধন্য ডক্টর. অমিত চক্রবর্তী তাকে চেক করেছে । কন্ডিশন দেখে কিছু ঔষুধ প্রেস্ক্রাইব করেছে । সেগুলো কিনতে রহমত শহরে গিয়েছে ।
আজ তার এই কঠিন সময়ে তার এক মাত্র আশ্রয় এই রহমত । রহমতের পুবপুরুষও তাদের বাড়িতে কাজ করতেন , রহমত তাকে সর্বক্ষণ দেখা শোনা করে। রহমত তার পরিবার নিয়ে জমিদার বাড়ির বাইরে একটি ঝুপড়ি তে বসবাস করে । রহমতের বউ যথাসময়ে এসে রান্না করে দিয়ে আবার তাদের ঘরে ফিরে যায় । কারণ গিন্নি মা ( নীলিমা চক্রবর্তী) অনেক ধার্মিক , সবসময় গঙ্গা জলে বাড়ি পবিত্র রাখার চেষ্টা করেন ।
রহমতের একটি ছোট্ট মেয়ে আছে , ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাটি গিন্নি মাকে দেখলেই বলে , আসসালামওয়ালাইকুম গিন্নি দাদিমা । তিনি দুর থেকে বাচ্চাটিকে দেখে , ভালোই লাগে খুব মায়াবী চেহারা তার ।তিনি সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে ভাবছি এইদিন রহমতের মেয়েটাকে একটি কাছে নিয়ে আদর করবো । অসহায় হৃদয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তিনি । খুব ব্যাথা হচ্ছে তার , হঠাৎ আবছা চোখে দেখতে পেল , সাইকেল নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই রহমত তাকে দেখেছে এবং সাইকেলটি ফেলে দিয়ে গিন্নি মা বলে দৌড়ে আসছে তার দিকে । এক গাল তৃপ্তির হাসি হেসে তিনি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন ।
চোখ খুলে নীলিমা চক্রবর্তী নিজেকে তার ঘরে আবিষ্কার করলেন । তার চোখের সামনে ডক্টর এবং রহমতের পরিবার খুব চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার জ্ঞান আসছে দেখেই রহমত দৌড়ে গেলো তার মাথার কাছে । তাকে প্রচন্ড আতঙ্কিত লাগে।
মমতাময় হাতে তার মাথা স্পর্শ করলো , ” গিন্নি মা ? খুব বেশি লাগছে নাকি ? আমারে ক্ষমা করে দেন । আর আপনারে একা থুয়ে কোন হানে যামু নানে ।” ” ঠিক বলছিস রহমত , আজকে থেকে আমার চোখের আড়াল হলে তোর নিস্তার নেই। কোথাও যাবি না । কাযা নামাজ পড়ার জন্য বাড়িতেও যাবি না । বুঝলি ?” ” হকচকিয়ে সে বললো , সব হইবো গিন্নি মা । আপনে আগে সুস্থ হউন। ” ” আমার বাড়ির দক্ষিণের ঘরটি আজকেই পরিষ্কার কর। তার পাশের টাও। ” ” ভয়ে ভয়ে সে উত্তর দিলো, কেন গিন্নি মা? কেও আসবে নাকি? “
” আজকে থেকে ওই ঘরে তুই তোর বউ বাচ্চা নিয়ে থাকবি ওই ঘরে । আর পাশের ঘরটা পরিষ্কার করে নিস , নামাজ কাযা গেলে তুই আর তোর বউ পড়িস। আর রহিমা ? প্রতিদিন আমার ঠাকুর ঘরটি কষ্ট করে একটু পরিষ্কার করে দিও মা । সাবিত্রীকে আর তেল মারা যায়না প্রতিদিন । তার তো অনেক কাজ , আমার বাড়িতে আসার সময় নেই।”
” আচ্ছা গিন্নি মা ।”কথাটি শুনেই রহমতের চোখ ভিজে এলো । কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো ? ” গিন্নি মা ? ” ” হ্যাঁ রহমত । আমি ঠিকই বললাম , এখন এইখান থেকে যা। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আয় । আর তোর মেয়েটাকে আমার কাছে রেখে যা ।”
রহমতের মেয়েটি তার কাছে এসে তাকে সালাম দিল। তিনি ওয়ালাইকুমুসসালাম উত্তর দিলেন । বাচ্চাটি আবার বলল , আমি নমস্কার বলতে পারি গিন্নি দিদিমা । কথাটি শুনে তিনি বাচ্চাটিকে তার কাছে টেনে নিলেন । তার বড় ছেলের ফোন আসলো। তিনি হাসি মুখে ফোন ধরে কথা বললেন । তাকে বলল , ” বাবা আমাকে নিয়ে আর চিন্তা করবে না। আমি আমার পরিবার নিয়ে অনেক সুখে শান্তিতে আছি ।”
লিখবেন আপনি প্রকাশ করব আমরা
নবীন-প্রবীন লেখকদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে গল্প, ছোটগল্প, ছড়া, কবিতা, রম্য রচনা,বুক-রিভিউ সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- sahitto@thecampustoday.com

ইট ভাটার বিছানা-এক বিপ্লবী কণ্ঠস্বর!

সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ


টাক মাথার একটা মমি মন ভার করে নিচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে, মুখমন্ডলে স্পষ্ট কান্নার ছাপ সাথে মগজে ঝড়ের গতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে সমাজের স্বীকৃত হাজারো নালিশ। আর একটা কালো ঝামা ইট সেই মমির মাথায় হেলিয়ে পড়ছে। যেন চেপে দিতে চায় সব নালিশ-আর্তনাদ। এমন একটি দৃশ্য ফুটে উঠেছে শৈশব রাজুর লেখা ‘ইট ভাটার বিছানা’ কাব্যগ্রন্থটির প্রচ্ছদে। এবং ‘ইট ভাটার বিছানা’ নামের একটি কবিতার নামেই মূলত এই কাব্যগ্রন্থটির নাম করন করা হয়েছে।

মহান একুশে বইমেলা-২০১৭ তে প্রকাশিত ৮৬ পৃষ্টার মোট ৭০ টি কবিতার সম্ভারে ‘ইট ভাটার বিছানা’ কাব্যগ্রন্থটিতে কবি শৈশব রাজু সমসাময়িক বিষয়বস্তু ও বিভিন্ন সময়ে সমাজে ঘটতে থাকা কর্মগুলোর প্রতিচ্ছবি নিখুঁত ভাবে আপন মহিমায় উপাস্থাপন করেছেন। কাব্যগ্রন্থটির একেকটি কবিতার মোটিফ একেক ধরনের হলেও বেশির ভাগ কবিতায় আমাদের চারপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা আর্তনাদ-হাহাকারের পাশাপাশি বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা আছড় কেটেছে প্রচন্ড ভাবে।

কবিতা গুলোয় ফুটে উঠেছে পুজির যাঁতাকলে পিষ্ট প্রায় এক বিপ্লবী কণ্ঠস্বর। যে শুনতে পায় চাপা স্বরে কেঁদে উঠা আপন আত্নার কান্না, শুনতে পায় নিজের বুকের ধুকপুকানি, যে রাতের পর রাত লম্বা লম্বা স্বপ্ন দেখে। আর সেগুলোই একের পর এক মগজে শূল কেটে জমা হতে হতে রুপ নেয় কবিতায়। সেই আত্নার বউয়ের ভাষ্যমতে এগুলো সিরিজ আকারে বিক্রি করলে নেহাত কম দাম হবে নাকো।

আবার সেই বিপ্লবী নিতান্ত আপন করে পাওয়ার জন্য প্রেমিকাকে অ্যাকুরিয়ামে বন্ধি কিংবা প্যারালাইজড রোগী করে কাছে রাখতে চায়। প্রেমিকার যার চুল আঁছড়ে দিবে,নক কেটে দিবে। আবার সে বিপ্লবী নিজেকে জড় মানব ভেবে বসে কারন তাকে গৃহপালিত পশুটিও ভয় পায়। যে ট্রেন হতে চায়, হতে চায় লিচু, দেশী কুল, জলপাই, লটকো। যে চিৎকার করে স্লোগান দেয় স্কুলের মুখ না হতে যেখানে চক স্লেটের ছুতে বাহারী গ্রাফাইটের সাথে ঢলাঢলি চলে।তার মনে এতই চাপা গ্লানি যে ইট হয়ে ভাটার আগুনে বসে নিন্দ্রা যাপন করার কথা ভাবে।

তবে সব কিছুর উর্ধ্বে এই কবিতা গুলোর প্রকৃতি বর্নণা। এক্ষেত্রে কবি একটুও কার্পণ্য করেছে বলে মনে হয় না। এত সুনিপুণ ভাবে প্রকৃতি বর্নণা করেছেন যে পড়ার সময় মনে হয় সেই প্রকৃতি আমার কত চেনা! কত কাছের! নিমিষেই ঠাই করে নেয় নিজের অন্তরে।

গদ্য ছন্দে লেখা বেশীর ভাগ কবিতায় মন ছুয়ে যায়। “ইতিহাসের রিমিক্স সুরে, আমার ঘুম পায় না” “চালাক বটে আমি, সে চালাকিতে হিসু করে মহাজন” “আমি রোজ একজন আলাদীন খুঁজি” এই লাইনের মত শ’খানেক পাঞ্চ লাইনের কাব্যরসে ভরপুর কাব্যগ্রন্থটি। কবিতার মোটিফ ঠিক রেখে নানান কথা রূপক অর্থে টেনে নিয়ে এসে কবি শৈশব রাজু তার অসাধারন প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন।যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের কমলাপুরের বেড়ে উঠা কবি শৈশব রাজুর কিছু কবিতায় পঞ্চগড় এলাকার আঞ্চলিক ভাষাও ঠাই পেয়েছে। সাথে কাব্যগ্রন্থটিতে বেশ কয়েকটি চরিত্রের বিচরণ লক্ষ্যনীয়। রশিদ মাস্টার আর আমান পাগলা তাদের অন্যতম। এই কাব্যগ্রন্থটি কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ হলেও এ যেন এক মহাকাব্য।

বই: ইট ভাটার বিছানা
লেখক: শৈশব রাজু
প্রচ্ছদ: হাজ্জাজ তানিম
প্রকাশনী :পূর্বা প্রকাশনী
মুল্য: একশত টাকা মাত্র
পৃষ্টা: ৮৬

বাংলা গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তকের মৃত্যু বার্ষিকী আজ

আজ রা সেপ্টেম্বর। বাংলা গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তক এবং বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রাবন্ধিক, কবি লেখক প্রমথ চৌধুরী মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ১৯৪৬ সালের এই দিনে ৭৮ বছর বয়সে শান্তি নিকেতনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত দিকপাল, মননশীল, যুক্তিবাদী, সৃষ্টিশীল ভাষাবিদ, কবি, সুপ্রাবন্ধিক, গল্পকারের ছদ্মনাম: বীরবল, নীললোহিত।

তার জন্ম ১৮৬৮ সালেরবাংলাদেশেরপাবনা জেলারচাটমোহর উপজেলারহরিপুর গ্রামে। প্রমথ চৌধুরীর শিক্ষাজীবন ছিল অসাধারণ কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রাস সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফ পাস করেন। ১৮৮৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স করার পর ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন এবং পরে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান। বিলাত থেকে ফিরে এসে ব্যারিস্টারি পেশায় যোগদান না করে তিনি কিছুকাল ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন এবং পরে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

কর্মজীবনে প্রমথ কিছুদিন কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা করেন। তারপর কিছুকাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে পড়ান। তিনি ঠাকুর এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়াও তিনি মাসিক সবুজপত্র বিশ্বভারতী সম্পাদনা করেন।

তার সম্পাদিত সবুজ পত্র বাংলা সাহিত্যে চলতি ভাষারীতি প্রবর্তনে আগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যা সে সময়ের নব্য লেখকদের জন্য বৃহৎ প্লাটফরম হিসেবে কাজ করেছে। তার প্রবর্তিত গদ্যরীতিতেসবুজ পত্রনামে বিখ্যাত সাহিত্যপত্র ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারই নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চলিত রীতিতে গদ্য লিখতে তিনি উৎসাহিত করেন।

রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সাথে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইঝি জামাই। এছাড়াও লেখক আশুতোষ চৌধুরী সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীর অগ্রজ। রবীন্দ্রনাথের ভগিনী প্রতিভা দেবীর সাথে আশুতোষ চৌধুরী বিয়ে হয়।

তিনি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য জগত্তারিণী পদক কে ভূষিত হন।তাঁর রচনাসম্ভার নিম্নে উল্লেখ করা হল:

কাব্যগ্রন্থ: সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৯),পদচারণ (১৯২০)

গল্পগ্রন্থ:চার ইয়ারি কথা (১৯১৬), আহুতি (১৯১৯) ঘোষালের ত্রিকথা,(১৯৩৭),নীল লোহিত (১৯৩৯),অনুকথা সপ্তক (১৯৩৯) সেকালের গল্প (১৯৩৯),ট্রাজেডির সূত্রপাত (১৯৪০),গল্পসংগ্রহ (১৯৪১), নীল লোহিতের আদি প্রেম (১৯৪৪)দুই বা এক (১৯৪০)

প্রবন্ধগ্রন্থ:তেলনুনলাকড়ি (১৯০৬), নানাকথা (১৯১১), বীরবলের হালখাতা,(১৯১৭), আমাদের শিক্ষা, (১৯২০), দুই ইয়ারির কথা (১৯২১), বীরবলের টিপ্পনী (১৯২৪), রায়তের কথা (১৯২৬), নানাচর্চা (১৯৩২), ঘরে বাইরে (১৯৩৬), প্রাচীন হিন্দুস্থান (১৯৪০), বঙ্গ সাহিত্যের সংপ্তি পরিচয় (১৯৪০), প্রবন্ধ সংগ্রহ (১ম ২য় খণ্ড) [১৯৫২১৯৫৩]

জ্যোতিষরাজ এমপি মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী!

আবদুর রব শরীফ


জ্যোতিষীর কাছে একজন প্রশ্ন করলো, বাংলাদেশে করোনায় কত জন লোক মরা যেতে পারে?

সে কোন উত্তর দিলো না ৷

আরেকজন গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, মৃত্যুর কথা বাদ দিলাম, একটু অনুমান করে বলেন তো, কতজন আক্রান্ত হতে পারে?

এবারও জ্যোতিষী নিরুত্তর ৷

পরের জন গিয়ে প্রশ্ন করলো, মহাশয় বলুন তো, এই ভাইরাস কতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করতে পারে?

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে মহাশয় কোন কথাই বলছেন না ৷

তারপর নেক্সট, আচ্ছা একটু কষ্ট করে হিসেব নিকেশ কষে বলুন তো, অর্থনীতির ক্ষয়-ক্ষতি কেমন হতে পারে?

না এবারও তিনি কোন ভবিষ্যতবাণী করলেন না ৷

অতঃপর ওখান থেকে একজন কাঁধ বাঁকিয়ে উঁকি দিয়ে বললেন, আপনি তো মানুষের মুখ দেখে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন মর্মে ঘোষণা করেন, আমার মুখ দেখে বলেন তো আমি করোনা‍য় আক্রান্ত হবো কি না?

তার চাঁদ বদনের দিকে তাকিয়ে থেকে জ্যোতীষ রাজ এবারও কিছু বললেন না ৷

ভক্ত কূল এবার জ্যোতির্ময়ের এমন মলিন বদন দেখে খুবি নারাজ হয়ে যাচ্ছিলেন,
কয়েকজন বলে উঠলেন, আগেই জানতাম এসব বিদ্যা ভুয়া!জাতির এই ক্রান্তিকালে এমন নীরবতা কখনো মেনে নেওয়া যায় না৷

হঠাৎ সভার মাঝখান থেকে একজন বলে উঠলেন, আমি জ্যোতিষ রাজের ভক্ত আগেও ছিলাম! এখনো আছি! ভবিষ্যতে থাকবো ৷

করোনা ভাইরাস নিয়ে এতোগুলো প্রশ্নের জবাব যখন মহাশয় দেননি সুতরাং আমি ধরে নিয়েছি এসব ভাইরাস টাইরাস কাউকে মারতে পারবে না এমনি কি অর্থনীতি সমাজ নীতির উপর কোন প্রভাব ই পরবে না ৷ এগুলো বরং উড়ে এসে দূরে চলে যাবে।

এহেন সময় জ্যোতিষরাজ মুখ খুললেন, চারদিকে সুনশান নীরবতা… সরব কন্ঠে উপরোক্ত ভক্তকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, ‘বৎস করোনা কি করবে না করবে আমি জানিনা, তবে অদূর ভবিষ্যতে তুমি এমপি মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী হবে!’

লিখেছেন: আবদুর রব শরীফ, চট্টগ্রাম

ছবি: ঢাকাপ্রতিদিন.কম