আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা

৮ই মার্চ হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমঅধিকার রক্ষা ও সে সম্পর্কে বিশ্বে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। এছাড়ও কিভাবে এই দিনটি এলা, তথা নারী অধিকার অর্জনের ইতিহাসই কি এ সম্পর্কে জানতে পারবো নিম্নের রচনাটির মাধ্যমে। চলুন, রচনাটি শুরু করি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

সাম্যের গান গাই-

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,

অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।

————কাজী নজরুল ইসলাম

ভূমিকা

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হলো নারী। কিন্তু এ নারী সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষাদীক্ষা, কর্মসংস্থান, চাকরির বেতন-ভাতা, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের পেছনে পড়ে আছে। পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে নারীরা হচ্ছে নির্যাতিত, নিপীড়িত। তাই নারীরা তাদের প্রতি এ অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সম্মেলনের মাধ্যমে অন্যায়-অন্যায্য আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছে। ফলে ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। নারী সমাজের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা নারী সমাজের মধ্যে সংহতি ও সম্প্রীতি সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার নিয়ে জাতিসংঘের সহযোগিতায় প্রতি বছর সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস

১) ১৭৯২ সালের ব্রিটেনে ম্যারি ওয়েলস্টোন ক্র্যাফট নারী ও পুরুষকে এক মানদণ্ডে বিচারের দাবি জানান। কেবলমাত্র শিক্ষা নয়, রাজনৈতিক আইনবিধিতে সংশোধনী এনে নারীর অধস্তন অবস্থা বদলে ফেলার দাবি জানান তিনি। পরবর্তী শতকে তার এ দাবি মূল্যায়ন করা হয়।

২) সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের বিপ্লবী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ, ইংরেজদের গৃহযুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লব প্রভৃতি কারণে পুরুষ সমাজ নতুন নতুন অধিকার ভোগ করে। এসময়ই নারীরা মৌলিক অধিকার হিসেবে রাজনৈতিক ও আইনগত অধিকার, সন্তানের ওপর আইনগত দাবি, সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের এবং শিক্ষা ও ভোট দেবার অধিকার লাভ করে।

৩) ১৮৪৮ সালের জুলাই মাসে নিউইয়র্কের সেনেকা ফলস-এর কনভেনশনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাধিকার তথা নারীমুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত মনে করা হয়।

৪) ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের একটি সেলাই কারখানায় শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয় নারী শ্রমিকেরা। এর তিন বছর পর ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নারী শ্রমিকদের এক মিছিলে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে যে ইউনিয়ন গঠিত হয়, তা নারী শ্রমিকের দাবি আদায়ের লক্ষে নেতৃত্ব দেয়। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে কোপেনহেগেন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা সেভকিন প্রস্তাব করেন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার। সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের নারী প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয় আসছে। তবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ব্যাপক সাড়া জাগায় এবং প্রসার লাভ করে ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে।

নারী আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা

নারী আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমি থেকে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, শুরুতে নারীসমাজের আন্দোলন ছিল মূলত নারী শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরোপ ও আমেরিকার কলকারখানায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষ শ্রমিকের সাথে তাদের বেতন ভাতার বৈষম্যই সেদিনের সেই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। এ কারণেই বলা যায়, নারী শ্রমিকদের শোষণের শুরুটা পাশ্চাত্যেই হয়েছিল। এদিক থেকে নারীসমাজের প্রতি শোষণ-নির্যাতনের যে ঐতিহ্য পাশ্চাত্যে রয়েছে তা প্রাচ্যে ততটা ব্যাপক ছিল না। যা হোক, ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দান করার পর থেকে বিভিন্ন দেশে সভা, সেমিনার ও সম্মেলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নারীসমাজ। এ ঐক্যের মধ্য দিয়ে, সংহতি ও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারীসমাজ একতাবদ্ধ হয়। এ সম্প্রীতি সুদৃঢ় করার লক্ষেই সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

নারী দিবসে বাংলাদেশের ভূমিকা

নারী মুক্তি, নারীর স্বাধীনতা, নারীদের সমান আধিকার, আত্মমর্যাদার লড়াইকে সামনে এগিয়ে নেবার শপখ নিয়েই সারা বিশ্বের নারী পুরুষ এ দিবসটি পালন করে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে আমাদের দেশের নারীরাই এর জন্য সংগ্রাম করছে এবং দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করছে। পুরুষরা এখনো এ দিবসটিকে ততটা নিজেদের বলে মনে করতে পারছে না। নারীদের মুক্তির অর্থ হচ্ছে সমাজের মুক্তি। সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে নারীসমাজের মূল্যায়ন, তাদের উন্নতি। কিন্তু বিষয়টি মনের দিক থেকে মেনে নেবার আবস্থা আমাদের সমাজে এখনো গড়ে ওঠে নি। তাই ৮ মার্চ পালনের প্রস্তুতি নারীসমাজকেই নিতে হচ্ছে। প্রতিবছর সম্মিলিত নারীসমাজ এ দিবসটি ঘটা করে পালন করছে। এর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এ দিবসটি পালন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারী দিবসের গুরুত্ব অত্যধিক। যেমন- ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক বাধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রজনন প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর প্রতিবন্ধকতা জাতীয় অগ্রগতিকে বিলম্বিত করছে। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

নারী দিবসে জাতিসংঘের ভূমিকা

নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘ ৮ মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। নারীর মৌলিক অধিকারগুলোকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের ব্যাপারেও জাতিসংঘ প্রচেষ্টা চালায়। এ লক্ষে জাতিসংঘ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সালকে ‘নারী দশক’ হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় মেক্সিকো, কোপেনহেগেন, নাইরোবি এবং বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত হয় চারটি বিশ্ব নারী সম্মেলন।

নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

নারীদের কাজের স্বীকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকা, নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা, উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বীকৃতি, নারীপুরুষের সমতা নিশ্চিতকরণ, সারা বিশ্বে নারী নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রজনন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীর প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বিশ্ব নারী সম্মেলন: ১৯৯৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ শতকের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন চীনের রাজধানী বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ১৮৯টি দেশের প্রায় ৫ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। বেইজিং নারী সম্মেলনের শ্লোগান ছিল ‘নারীর চোখে বিশ্ব দেখুন’। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানির বোর্ডরুম পর্যন্ত নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লড়াইয়ের দৃঢ় অঙ্গীকার ও ‘নারীরা জাগছে’ শীর্ষক ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে জাতিসংঘে নারীর মর্যাদা সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ফিলিপাইনের প্যাট্রিসিয়া লিকিউযানান বলেন, “নারীরা মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা ভোগ করবে এ আশঙ্কা থেকে প্রজনন, স্বাস্থ্য, যৌনতার মতো অনেকগুলো বিষয় বিতর্কিত হয়েছে। যার মাধ্যমে রক্ষণশীল মানসিকতার লক্ষণ দেখা গেছে।” বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জেমস আলফেনশন তাঁর সমাপ্তি ভাষণে নারীদের শিক্ষার জন্য বছরে ৯০ কোটি ডলার অনুদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, এর ফলে বিশ্ব নেতৃত্বে নারীদের ভূমিকা শক্তিশালী হবে।”

বেইজিং সম্মেলনের বিতর্কিত বিষয়

চীনের রাজধানী বেইজিং-এ নারী সম্মেলনের ১৫০ পৃষ্ঠার দলিলের যে বিষয়গুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি তর্ক- বিতর্ক হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে যৌন স্বাধীনতা ও নারী নির্যাতন হ্রাস সংক্রান্ত বিষয়গুলো। আলোচকদের মতে, এ বিষয়গুলো নারী পাচার, মেয়ে শিশুদের পুষ্টিহীনতা ও যৌনতায় বাধ্য করার মতো নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কিন্তু ভ্যাটিকান ও ইসলামি দেশগুলোর প্রবল বাধার মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ উত্থাপিত সমকামিতার অধিকার সংক্রান্ত অংশটি চূড়ান্ত দলিল থেকে বাদ পড়ে।

উপসংহার

আজকের নারী আন্দোলন আন্তর্জাতিক রূপলাভ করেছে- যার পেছনে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চের অবদানকে প্রধান হিসেবে ধরা হয়। শোষিত ও শ্রমজীবী নারী ন্যায্য মজুরি, অধিকার ও মর্যাদার দাবিতে কতটা সংঘবদ্ধ এবং সোচ্চার হতে পারে, দীর্ঘদিনের শোষণ কতটা বিক্ষুব্ধ হতে পারে, তার প্রমাণ নারীরা রেখেছিল ৮ মার্চে রক্ত ঝরিয়ে। যার ফলশ্রুতিতে ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে গোটা বিশ্বে মর্যাদার সাথে পালন করা হয়ে থাকে।

 

বিশ্ব শিশু দিবস রচনা (৮০০ শব্দ) | JSC, SSC, HSC

বিশ্ব শিশু দিবস

ভূমিকা

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি,

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

——-সুকান্ত ভট্টাচার্য

শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারাই আগামী দিনের উজ্জ্বল বার্তা বয়ে আনে। তাদের মধ্যে সুপ্ত হয়ে থাকে আগামী দিনের পৃথিবীর স্বপ্ন- কল্পনার সম্ভাবনার নতুন ইতিহাস। আজ যারা নবজাতক, যারা হাঁটি হাঁটি পা-পা করে পৃথিবীর বুকে নতুন পদচারণা শুরু করছে, তাদের কথা আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না। অনাগত আগামী দিনে তারাই শৈশব-কৈশোরের কিশলয় দশা ঘুচিয়ে পূর্ণ পরিণত হবে যৌবনের শ্যামল গৌরবে। সেদিন তাদের হাতে থাকবে বিশ্ব শাসকদের নিয়ন্ত্রণশক্তি। আজকের নবজাতকদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামী দিনের কত শিল্পী, স্রষ্টা, কবি সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী দার্শনিক ও স্বদেশপ্রাণ মহাপুরুষ। তাই সমাজ ও মানুষের কর্তব্য শিশুদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া, তাদের স্বাধীন ও আত্মপ্রকাশের পথ খুলে দেওয়া। একদিন শিশুরাই হবে দেশের কর্ণধার। কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরেই অন্তরে’। কাজেই বিশ্ব শিশু দিবসের গুরুত্ব অনেক।

বিশ্ব শিশু দিবস

আন্তর্জাতিক শিশুকল্যাণ ইউনিয়ন ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ১৯৪৫ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের ভাগ্যাহত কোটি কোটি শিশুর খাদ্য, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও জীবনের নিরাপত্তা বিধান করাই হচ্ছে এ দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে বিগত তেত্রিশ বছর ধরে ঘটা করে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে বটে, কিন্তু বিড়ম্বিত শিশুদের কোনো কল্যাণই সাধিত হচ্ছে না।

শিশুদের অবস্থা

আমাদের দেশে গরিব লোকদের শিশু, নিরক্ষর ধনীদের শিশু, এতিম অসহায় শিশু এবং গরিব বিকলাঙ্গ শিশু-প্রধানত এই চার শ্রেণির শিশু দেখা যায়। অজ্ঞ বিত্তবান লোকের শিশুদের খাওয়া পরার কোনো রকম অভাব না থাকলেও অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে তারা মূর্খ এবং স্বাস্থ্যহীন হয়ে থাকে। গরিব শিশুরা তাদের পরিবার-পরিজনদের ভরণপোষণের জন্য পরের বাড়িতে কাজে লেগে যায় অল্প বয়স থেকেই। এতিম শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তিকে সম্বল করে জীবন কাটায়, আর এদের অনেকই রোগব্যাধির শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বিকলাঙ্গ শিশুরা অনেকের ভিক্ষার পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বলা বাহুল্য, এসব শিশু কীভাবে বিকলাঙ্গ হলো সে খোঁজ কেউ রাখে না। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়ে এসব শিশুর অনেকেরই পঙ্গুদশা বরণ করে নিতে হয়েছে। দেখা গেছে যে, শুধু রাজধানীতেই মাসে গড়ে শতাধিক শিশু নিখোঁজ হয়। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এভাবে কত শিশু যে নিখোঁজ হচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখে কে?

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ

মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব। আর শিশু দেশ ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ। কাজেই শিশু সমাজকে অবহেলিত রাখার অর্থই হচ্ছে দেশ এবং সমগ্র মানবজাতিকে অবহেলা করা, অবজ্ঞা করা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের জন্য সরকারিভাবে শিশুকল্যাণ তহবিল রয়েছে। এ তহবিলের সাহায্যে লেখাপড়া শিখিয়ে শিশুদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এসব উন্নত দেশে শিশুদের জন্য বেসরকারিভাবেও বহু সংগঠন রয়েছে। তারা অনেক শিশুর লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের দরিদ্র অসহায় ভূথানাঙ্গা শিশুদের প্রতি কেউ নজর দিতে চায় না।

সঠিক পরিকল্পনার অভাব

পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোর শিশুরা চরমভাবে অবহেলিত। আহার, বাসস্থান ও শিক্ষাদীক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শিশুদের প্রতি যাতে বিশ্বব্যাপী এক সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল মানসিকতা গড়ে ওঠে, তার ওপরেই সার্বিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকারগুলো বিভিন্ন সময়ে শিশুদের জন্য কিছু কিছু পরিকল্পনা ও সংগঠন তৈরি করলেও তা সঠিক ছিল না বলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তাই শিশুদের অবস্থা যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে, কোনো রকম সুফল তারা পায় নি।

ধনবানদের সৎ ইচ্ছার অভাব

আমাদের দেশে বিত্তশালী লোকদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও একেবারে নগণ্য বলা চলে না। এসব লোক নিজেদের আরাম আয়েসের জন্য বাড়ি গাড়ি ক্রয় করছেন অকৃপণভাবে এবং নিজেদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার নামে বিদেশে পাঠিয়ে অজস্র টাকা খরচ করছেন। কিন্তু অসহায় দরিদ্র শিশুদের জন্য তারা একটি টাকাও খরচ করছেন না। ইচ্ছে করলে তারা অনেক টাকা খরচ করতে পারেন, কিন্তু সৎ ইচ্ছার অভাবে তা হচ্ছে না। আবার দেশে অন্য এক শ্রেণির বিত্তবান আছেন, যারা প্রতি বছর যাকাত এবং সম্পদের কাফফারা হিসেবে লাখ লাখ টাকা দান খয়রাত দিচ্ছেন। কিন্তু তারাও বিপন্ন এবং ভাগ্যহীন শিশুদের দিকে একবারও করুণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন না।

দেশের সব শ্রেণির বিত্তশালী লোকজন ও আলেম সম্প্রদায় ত্যাগের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে যেকোনো বিদেশি সাহায্য সংস্থার তুলনায় তারা আরও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। বলা বাহুল্য, মাদার তেরেসা একজন নারী হয়েও দুস্থদের সেবা করে বিশ্বের ত্যাগের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। দুস্থদের সেবা ও সাহায্য-সহযোগিতা করে নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকলেন।

শিশুদের জীবিকার ব্যবস্থা

ধনীদের যাকাত, ফিতরা ও অন্যান্য দান খয়রাতের টাকায় দেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে তহবিল গঠন করে, সে তহবিলের সাহায্যে অনাথ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। আবার কোথাও কোথাও আলাদা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করে কোনো একটি বিদ্যালয়কে অনুদান দিয়ে সেখানে অনাথ শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। তহবিল গঠনের ব্যাপারে গ্রাম সরকারকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি জেলায় সরকারিভাবে একটি করে অনাথ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তন করলে, শিক্ষা নিয়ে অনাথ শিশুরা বিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম এবং সহজ হতে পারে। তখন আর অনাথ শিশুরা জাতির বোঝা হয়ে থাকবে না, তারা নিজেরাও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

উপসংহার

শিশুদের প্রতি আমাদের অবজ্ঞার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাদের পুষ্টি, বৃদ্ধি, পরিণতি, শরীর-মনে স্বাচ্ছন্দ্য স্বাভাবিক সুষ্ঠু বিকাশে আমাদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির অনুশীলন করতে হবে। দেশে ব্যাপকভাবে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হলে অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের কথা সকলে জানতে পারবেন। এতে অনেক দয়ালু ব্যক্তির হৃদয়ে করুণার উদ্রেক হবে এবং তারা অসহায় শিশুর অবস্থার উন্নয়নের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। তখনই সফল হবে বিশ্ব শিশু দিবসের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা (৭০০ শব্দ) | JSC, SSC, HSC

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, এটি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা হিসেবে নয়, এটি মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা এবং স্বাধীনতা দিবস রচনা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে। তাই অবশ্যই মনযোগ দিয়ে রচনাটি শিখে নেবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস,

মহান স্বাধীনতা দিবস,

স্বাধীনতা দিবস

ভূমিকা

স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীব প্রায় প্রতিটি জাতিকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। বাংলাদেশও এমনিভাবেই স্বাধীনতা পেয়েছে। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস । ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পরাধীনতার গ্লানি ধুয়েমুছে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আজ বাংলাদেশ একটি গৌরবময় স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। প্রতিবছর ২৬ মার্চ এদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় জাতীয় মর্যাদার সাথে। দিনটি আমাদের কাছে আনন্দের ও গৌরবের।

স্বাধীনতার পটভূমি

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বৈষম্যমূলক আচরণ করে পূর্ব বাংলার মানুষ তথা বাঙালিদের সাথে। প্রথমেই বাঙালিদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা হয়। সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে এককভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হলো। বাঙালিরা তা মেনে নিল না। গড়ে উঠল ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার তরুণদের জীবন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালিদের রাজনৈতিক ঐক্য যুক্তফ্রন্ট বিজয় অর্জন করল। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে অল্পকালের মধ্যেই ভেঙে দিল প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্ট সরকার। অল্পকালের মধ্যেই গড়ে উঠল ছয়দফা ও এগার দফা আন্দোলন। এ আন্দোলন ক্রমে ক্রমে প্রবল গণআন্দোলনে রূপলাভ করল। আবার হত্যাকান্ড ঘটল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। গণআন্দোলন গণবিস্ফোরণে পরিণত হলো। আন্দোলনের চাপের মুখে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচন দিলেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙালিদের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করল। কিন্তু বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলো না। তার পরিবর্তে শুরু হলো নানারকম তালবাহানা ও ষড়যন্ত্রের খেলা। আলোচনার নামে অযথা কালক্ষেপণ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বললেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর; জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান (পরে সেনাবাহিনী প্রধান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি)।

স্বাধীনতা যুদ্ধ

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর, ১০ এপ্রিল সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে এ যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অভিজ্ঞ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ ব্যূহ। হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় অগণিত মানুষের ঘরবাড়ি। যাকে পায় তাকেই গুলি করে মারে। লুটপাট চলে। এ অবস্থায় সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত বাঙালিরা পাকিস্তানের সাথে বিদ্রোহ করে যোগ দেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। দেশের প্রায় এক কোটি লোক প্রাণের ভয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তারা অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, চাকুরে ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য। ক্রমে ক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ভয়াবহ রূপলাভ করে। বিপর্যস্ত হতে থাকে হানাদার বাহিনী। সারা দেশে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে মার খেতে থাকে। শেষপর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের যাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল- তাই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস । ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর এ দিনটি একটি স্মরণীয় দিবস হিসেবে জাতীয় মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে। এদিন দেশের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকে। দিবসটি উদযাপনের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সমস্ত ভবনে জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। ঢাকায় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার অনুষ্ঠান। সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। ভোরবেলা গণজমায়েত হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে, ফাতেহা পাঠ করা হয়, শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানেও শহিদ মিনারে এবং বিদ্যালয়গুলোতে নানা উৎসব আয়োজন হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মসজিদ মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। খেলাধূলা হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা শোভা পায়। এভাবে সমগ্র দেশে ঘটা করে বিশেষ মর্যাদার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়।

উপসংহার

পরাধীন জাতি পশুর চেয়েও অধম। তাই স্বাধীনতা এত আনন্দের, এত গৌরবের। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। দেশের প্রতি মানুষের মনে নতুন করে ভালোবাসা জন্য নেয়, নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয় মানুষ। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার শপথই হোক স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূলমন্ত্র।

মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রচনা

মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতটা তা সবাই মন থেকে উপলব্ধি করতে পারে। প্রত্যেকের কাছে আপন আপন মাতৃভাষা ভীষণ প্রিয়। এই ভাষাতে প্রাণ খুলে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, গান গাওয়া যায়, কবিতা রচনা করা যায় আরও কত কি! আজ তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতটা তা রচনার মাধ্যমে শিখবো।

মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা

বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। এদেশের সকলেই বাংলা ভাষায় কথা বলে। এদেশের রাষ্ট্রভাষাও বাংলা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা আন্দোলনে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে ১৯৫২ সালে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও অফিস-আদালতে এখনো তা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রচলিত হয় নি। কেবল একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা প্রতিবছর একবার করে ভাষার জন্য কান্নাকাটি করি, কিন্তু পরে আর সারা বছর ভাষার কথা মনে থাকে না। বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচলন ও যথার্থ মূল্যায়নের জন্য সরকারিভাবে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিদেশি শাসকের কবলে আমাদের মাতৃভাষা

মুসলিম শাসনামলে এদেশের সরকারি ভাষা ছিল ফারসি। ইংরেজ শাসনামলে প্রায় দু’শ বছর ইংরেজি ছিল এদেশের সরকারি ভাষা। সেই সাথে কিছুকাল ফারসিও ছিল। পঞ্চাশের দশকের শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ইংরেজিই ছিল। এরপর ছাত্র আন্দোলনের ফলে বি.এ পাস পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হয় বাংলা। ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে অফিস, দোকান, গাড়ি সবকিছুর নাম ও নম্বর বাংলায় শুরু হয়েছে। স্বভাবতই আশা করা হয়েছিল যে, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের ফলে বাংলা ভাষার মর্যাদা বাড়বে, কিন্তু তা হয় নি। বরং পাকিস্তানি শাসকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছিল একমাত্র উর্দুকে। ফলে ভাষা আন্দোলন হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাঙালিদের জীবন দেওয়ার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা। তারপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। এবার নিশ্চিত মনে হয়েছিল স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জীবনের সকল পর্যায়ে মাতৃভামার দ্রুত প্রচলনের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু তেমন কিছু যে ঘটে নি তা অস্বীকার করার উপায় নেই। অফিস-আদালতে, শিক্ষায়তনে, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে এখনো ইংরেজির আধিপত্য। কেবল প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে যেমন শহিদ মিনারের ঘষামাজায় নিয়োজিত হয় কিছু শ্রমিক, তেমনি বাংলার সর্বাত্মক প্রচলনে ব্যর্থতার দায়ভার একে অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে উৎসারিত হয় বিলাপ। শহিদ দিবস অতিক্রান্ত হওয়ার পর যথারীতি ইংরেজিতেই প্রায় সকল আনুষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালিত হয়। শুধু তাই নয়, আমরা ভাষাশহিদের স্মরণে যে দিবসটি পালন করি, তাও ইংরেজি মাসের নাম এবং তারিখ অনুসারে ২১ ফেব্রুয়ারি। বাংলায় সে দিনটি ছিল ‘৮ ফাল্গুন’, কিন্তু আমরা তা ব্যবহার করি না-এই হলো আমাদের মানসিকতা। অবশ্যই এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার ফল

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের ক্ষেত্রে যে অতরায়গুলোর কথা সাধারণত উল্লিখিত হয়ে থাকে, তার একটি হলো পরিভাষার অভাব। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বাংলা বই নেই বলে উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার প্রবর্তন প্রায় অসম্ভব মনে করেন অনেকেই। যেকোনো বিদেশি ভাষায় বিধৃত জ্ঞান শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে তার মাতৃভাষায় অনূদিত হয়েই প্রবেশাধিকার পায়। এ প্রক্রিয়া বিড়ম্বিত হলে ভিন্ন ভাষায় রচিত যেকোনো প্রশ্ন, তা যত মূল্যবান তত্ত্ব বা তথ্য সমৃদ্ধ হোক, একজন পাঠকের কাছে অর্থহীন হতে বাধ্য। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে মাতৃভাষার সাহায্য নিতেই হয়। তাহলে ইংরেজি শিক্ষিত শিক্ষক কেন তাঁর সংগৃহীত জ্ঞান ছাত্রদের কাছে সরাসরি বাংলায় প্রকাশ করতে পারবেন না? অনেক প্রবীণ পদস্থ ব্যক্তি মনে করেন যে, প্রশাসনিক কাজকর্মে ইংরেজিতে সে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন, বাংলায় সে সুবিধা বোধ করেন না। এটি সম্পূর্ণ মানসিকতার ব্যাপার। দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে বাংলা ভাষাকে যারা ভাব বিনিময়ের বাহন হিসেবে অবলীলায় ব্যবহার করেন। কেবল প্রশাসনিক নথি রচনার সময়ে বাংলা ভাষা তাদের কাছে অকিঞ্চিৎকর প্রতিভাত হয় এ কারণেই যে, দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলে প্রশাসন ও ইংরেজির সম্পর্ককে তারা অবিচ্ছেদ্য বলে জেনেছেন। ইংরেজ অথবা পাকিস্তানি শাসকের চোখে উত্তম ইংরেজি লিখতে পারা অবশ্যই একজন বাঙালি কর্মচারীর যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা হতো। কিন্তু যে দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা সেখানেও ইংরেজির উৎকর্ষই কি প্রশাসনিক দক্ষতার মূল্যায়নের প্রতিমান হিসেবে গণ্য? জনগণের ভাষা ও প্রশাসনের ভাষা আলাদা রেখে কী করে জাতীয় কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব?

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের অসুবিধা

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার দুর্বল এ অজুহাতে বলতে শোনা যায় যে, বাংলা ভাষার মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা সম্ভব নয়। কিন্তু কথাটা মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, অনুন্নত দেশগুলো উন্নত দেশসমূহের কিছু শব্দ ধার করে নিজেদের শব্দসম্ভারের দৈন্যদশা কাটায়, যে শব্দ যে ভাষায় নেই, অন্য ভাষ্য থেকে ধার করতে আপত্তি কোথায়? কোনো ভাষাই নিরঙ্কুশ নিজস্ব নয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় যথেষ্ট বইয়ের অভাব আছে সত্য, তবে চেষ্টা করলে যোগ্যতাসম্পন্ন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা উদ্যোগ নিলে এ অসুবিধা দূরীকরণ সম্ভব। কাজেই বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা এবং উচ্চশিক্ষা সম্ভব নয় একথা যুক্তির মাপকাঠিতে টেকে না।

মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার ফলশ্রুতি

পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উন্নত জাতিসমূহ নিজ নিজ ভাষায় জ্ঞানচর্চা করেই নিজেদেরকে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে প্রাচীন গ্রিস ও বর্তমান চীনের কথা উল্লেখ করা যায়। মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে কখনোই নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে উন্নত করা সম্ভব নয়। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষাতেই মানুষের নিজস্ব মনোভাব ও চিন্তা-কল্পনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে না। জাতীয় ভাষাতেই জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে উঠতে পারে। ফরাসি বিপ্লবের প্রেরণাশক্তি ছিল সেদেশের সাহিত্য, যে সাহিত্য তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমেই সকলের ভাবধারাকে ফুটিয়ে তুলেছিল।

মাতৃভাষার গুরুত্ব

মাতৃভাষা প্রতিটি আতির মূল্যবান সম্পদ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও মাতৃভাষা ছাড়া পরিপূর্ণভাবে মনোভাব প্রকাশ করা যায় না। তাই স্থানীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়, যে ভাষায় অন্যের সঙ্গে প্রাণ খুলে ভাব বিনিময় করা যায় না, সেসব লোকের পক্ষে মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখাই একমাত্র পন্থা। বিশিষ্ট ভাষা-পন্ডিত ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায় বলা যায়, “আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।” মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে মধ্যযুগের অন্যতম শক্তিশালী কবি আবদুল হাকিম বলেছেন-

“যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।

নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়ঃ

মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।

দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতিঃ”

বাংলা কাব্যে মাতৃভাষার গুরুত্ব

মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক কবি কবিতা রচনা করেছেন। মধ্যযুগের অন্যতম শক্তিশালী কবি আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’, রামনিধি গুপ্তের ‘স্বদেশী ভাষা’, আধুনিক যুগের প্রথম সার্থক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভাষা’, দুদ্দু শাহর ‘মাতৃভাষা’, কায়কোবাদের ‘বঙ্গভাষার কাব্যকুঞ্জ’, ‘বঙ্গভূমি ও বঙ্গভাষা’, ‘দেশের বাণী’, রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলা ভাষা’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘মধুর বাঙলা ভাষা’, আহসান হাবীবের ‘বাংলা ভাষা’, ফররুখ আহমদের ‘ভাষার গান’, সূফী মোতাহার হোসেনের ‘বাংলা ভাষা’ প্রভৃতি কবিতায় মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। আবদুল হাকিম বলেছেন “নানান দেশের নানা ভাষা/বিনে স্বদেশী ভাষা পুরে কি আশা।” অতুলপ্রসাদ সেন ‘আমরি বাংলা ভাষা’ কবিতায় বলেছেন, “মোদের গরব মোদের আশা/আমরি বাংলা ভাষা!” কায়কোবাদের কবিতায় আছে-

“বাঙলা যোদের মাতৃভাষা

কি আছে আর তাহার মত।

শব্দে শব্দে মুক্তা ঝরে

জাগায় প্রাণে স্বপ্ন কত।”

মাতৃভাষা নিয়ে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যে। তার মধ্যে সানাউল হকের ‘মাতৃভাষা’, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ‘মুখের ভাষা’, শামসুর রাহমানের ‘বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে’, মহাদেব সাহার ‘আমার বাংলা ভাষা’, আবুল হাসানের ‘মাতৃভাষা’, মুহাম্মদ নূরুল হুদার ‘মাতৃভাষা’, আ.শ.ম. বাবর আলীর ‘আমার ভাষা’, কলিমদাদ খানের ‘আমার ভাষা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষা কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া পরাঠ আকুল করে?” এমনিভাবে বাংলা সাহিত্যে মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে।

উপসংহার

মাতৃভাষা ছাড়া মন উজাড় করে ভাব প্রকাশ করা যায় না। তাই সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নিরর্থক ইংরেজি প্রবণতা এবং মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা হীনম্মন্যতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। যে জাতির ভাষ্য যত সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত-এ কথা স্মরণে রেখে, মাতৃভাষার উন্নয়ন এবং তাকে সর্বস্তরে ব্যবহার প্রচলনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এর জন্য সরকারিভাবে জারি করতে হবে কঠোর নির্দেশ। তাহলেই সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন গুরুত্ব লাভ করবে।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা (৯৫০ শব্দ)

নারী শিক্ষার গুরুত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। নারীরা এখন আর ঘরের মধ্যে বসে নেই। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করছে অফিস-আদালত, ক্ষেতে-খামারে সবখানে। একজন শিক্ষিতা নারী নিজের সন্তানকে সুশিক্ষিত করার পাশাপাশি পরিবারের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারেন। তাই নারী শিক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক প্রয়োজনীয়। আজকে এ সম্পর্কে একটি রচনা শিখবো।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব

ভূমিকা

আমাদের দেশে প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। মানবসমাজে নারী ও পুরুষ পরস্পর নির্ভরশীল। আগের দিনে নারীকে গৃহসামগ্রীর কল্যাণার্থে বিবেচনা করা হতো। নারীকে তাদের স্বামী কিংবা পরিবারের ক্রীতদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নারীশিক্ষার কথা কেউ ভাবত না তখন। পিতামাতারা তাদের কন্যার বিয়ে দিয়েই দায়মুক্ত হতেন। নানারকম নির্যাতনেও তারা প্রতিবাদী হতে পারত না। আজ আর সেদিন নেই। বর্তমানে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজে নেমেছে। তাই আজ নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যেসব মহিলারা অশিক্ষিত তারা শুধু পরিবারের বোঝাই নয়, জাতির জন্যও বোকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য নারীশিক্ষার গুরুত্ব অনেক।

বাংলাদেশে নারীর অবস্থা

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় অনেক আগে থেকেই নারী ও পুরুষের বেলায় শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে বিচার করা হয় নি। পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ ও উদার মানসিকতা যতটুকু আছে, নারীর জন্য ততটুক নেই। ফলে একই পরিবারে পুরুষের শিক্ষার অগ্রগতির নমুনা থাকলেও নারীর বেলায় তেমন সুযোগ করে দেওয়া হয় নি। পরিণামে আমাদের সমাজ অগ্রসর হতে পারে নি, দেশ ও জাতির উন্নতি সাধিত হয় নি এবং পশ্চাদপদতার অভিশাপ আমাদের জীবনকে সমস্যাগ্রস্ত করে রেখেছে। অপরদিকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয় সুযোগ দিয়ে উন্নত জীবনের স্বাদ ভোগ করছে। নারীশিক্ষার অগ্রগতি নেই বলে জাতি হিসেবে আমাদের কোনো অগ্রগতি হয় নি।

জাতীয় উন্নয়নে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আজ আর কোনোরকম দ্বিধাদ্বন্দু নেই। নারীরা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। আমাদের জাতীয় জীবনে পুরুষের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই অর্ধেক জনসংখ্যাকে বাদ দিয়ে জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। সম্রাট নেপোলিয়ন জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন, “আমাকে তোমরা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। “বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-

“কোন কালে একা হয় নিক জয়ী পুরুষের তরবারি,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।”

নারীরা আজ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারী জাতিকে অবশ্যই শিক্ষার আলো করতে হবে। নারীর ভূমিকা প্রধানত মা হিসেবে হলেও রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে, ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আজ নারীর ভূমিকা খুবই শিক্ষার অভাবে লাভ তাৎপর্যপূর্ণ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বর্তমানে অফিস-আদালতে, কলকারখানায় কাজ করছে এবং আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শুধু তাই নয়, নারীরা আজকাল অবলীলায় দেশের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তাই নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও একধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী যদি অশিক্ষিত থাকে, তবে দেশকে এক বিরাট বোঝা বহন করতে হবে। তাই জাতীয় জীবনের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

শিক্ষিতা জননী হিসেবে নারী

নারীর ভূমিকা প্রধানত জননী হিসেবে বিবেচ্য। আগামী দিনের নাগরিক আজকের শিশুরা জননীর কোলেই প্রতিপালিত হয়। ছেলেমেয়েদের লালন-পালনের দায়িত্ব মায়েরা বহন করেনব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্বও অর্পিত হয় মায়ের ওপর। জালেমেয়েদের চালচলন, আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, শিক্ষা ইত্যাদির উৎস হলেন খুলনীয় মায়ের হাতে সন্তানের যে শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে, তা তার আগামী দিনের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। এক্ষেত্রে মা যদি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত না হন, তাহলে সন্তানের জীবন গঠনে তিনি তার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না। নিরক্ষর মায়ের কাছে শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, মায়ের নিজের পক্ষে তার সন্তানের ভালো-মন্দ বোঝার উপায় থাকে না। তাই সন্তানের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য মাকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিশুকে মানুষ করে গড়ে তোলার জ্ঞান ও কৌশল তার জানা থাকা দরকার। অশিক্ষিত মায়ের কাছ থেকে তা কখনো আশা করা যায় না। এদিক থেকে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

পারিবারিক জীবনে শিক্ষিতা নারী

পারিবারিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হলো নারী। একটি সুখী পরিবার গড়ে তুলতেও নারীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শুধু একজন মা হিসেবে নয়, একজন স্ত্রী হিসেবেও তার ভূমিকা অনেক বড়। কারণ পরিবারের সুখশান্তির চাবিকাঠি থাকে নারীর হাতে। তিনি তার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা সহযোগে পারিবারিক জীবনে আনন্দের সঞ্চার করবেন। ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ প্রবালটি। কিন্তু শিক্ষার অভাব থাকলে এখানেও তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হবে না। শিক্ষার আলোয় তার নিজের জীবন আলোকিত হলেই কেবল তিনি অপরের জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে সক্ষম হবেন।

শিক্ষিত নারীদের সাফল্য

জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারীসমাজের ভূমিকার গুরুত্ব বিশেষভাবে স্বীকার করে নিতে হয়। এ ভূমিকা যাতে বেশি পরিমাণে কার্যকর করা যায় সেদিকেও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। নারীর যোগ্য স্থান লাভের জন্য দরকার উপযুক্ত শিক্ষার। শিক্ষাদীক্ষায় পুরুষের মতোই নারীসমাজকে এগিয়ে যেতে হবে এবং শিক্ষার আলোকে নিজেদের জীবনকে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যেই শিক্ষিত নারীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তারা পুরুষের চেয়ে নিম্নপর্যায়ভুক্ত নন। রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নারীরা বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। সমাজসেবা ও রাজনীতির বেলায়ও তারা পিছিয়ে নেই। প্রাসঙ্গিকভাবেই যাদের নাম আসে তাঁরা হলেন সুলতানা রাজিয়া, হেলেন কেলার, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, মাদাম কুরি, মাদার তেরেসা, চন্দ্রিমা কুমারাতুঙ্গা, বেনজীর ভুট্টো প্রমুখ। আমাদের দেশেও শিক্ষিতা নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য প্রদর্শন করেছেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে নওয়াব ফয়জুন্নেসা, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল, জাহানারা আরজু, রিজিয়া রহমান, সেলিনা হোসেন; সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে ড. নীলিমা ইব্রাহিম, প্রফেসর হোসনে আরা শাহেদ,, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বেগম খালেজা জিয়া ও শেখ হাসিনা যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।

নারীশিক্ষার গুরুত্ব

নানা দিক থেকে নারীশিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। কিচ্ছু মানবজীবনের পরিপূর্ণ সফলতার জন্য নারীর শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকৃতি পেলেও যুগে যুগে পুরুষের অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি নারী জাতিকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করেছে। কারো কারো মতে, নারীর স্থান অন্তঃপুরের সীমানায়। আবার কারো ধারণা নারীসমাজকে শিক্ষিত করে তুললে ঘরের কাজে অসুবিধার সৃষ্টি হবে। শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত নারীসমাজ কাজের জন্য ঘরের বাইরে গেলে পারিবারিক জীবনে অশান্তি আসবে। এমনি ধরনের সংকীর্ণ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ থেকে নারীসমাজ বঞ্চিত হয়েছে। অবশ্য প্রতিভার অধিকারী নারীরা নিজেদের দুর্বার সাধনায় শিক্ষাদীক্ষায় বিশিষ্ট আসন লাভ করতে পেরেছেন। অনেক নারীর গৌরব কাহিনী লিপিবদ্য আছে ইতিহাসের পাতায়। শত প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেও বহু নারী জ্ঞানবিজ্ঞানে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্থান না থাকলে জাতীয় জীবনে উন্নতির আশা করা যায় না। তাই একই দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

উপসংহার

নারীরা সমাজের অর্ধেক অংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নতির কথা চিন্তা করা যায় না। আর তাই নারীসমাজকে শিক্ষিত হতে হবে। সে শিক্ষাই হবে নারীর জন্য শ্রেষ্ঠ, যে শিক্ষায় নারীরা নিজেদের উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ্য আসন লাভ করতে সক্ষম হবে। নারী এবং পুরুষকে এখন আর আসাদা দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত নয়। মানুষ হিসেবে উভয়ের সমান বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে শিক্ষার সমান সুযোগ দিতে হবে। ভবেই দেশের উন্নতি ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে বলে আশা করা যায়।

অতএব, রচনাটি পড়ে তোমরা কেন নারী শিক্ষার গুরুত্ব এত বেশি তা বুঝতে পারলে। এভাবে সামাজিকভাবে যত বেশি মানুষ সচেতন হবে ততবেশি নারীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। এবং দেশ ও সমাজের উন্নতি হবে।

টেলিভিশন রচনা সপ্তম শ্রেণী, অষ্টম শ্রেণী ও নবম-দশম শ্রেণী

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ, তোমরা অনেকেই টেলিভিশন রচনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছো। তোমাদের অনুরোধে রচনাটি সংগ্রহ করে অনলাইনে দিয়ে দিলাম। আশাকরি এতে তোমরা উপকৃত হবে।

টেলিভিশন রচনা এর সংকেত

টেলিভিশন রচনা এর সংকেতগুলো হলো- ভূমিকা, টেলিভিশন আবিষ্কার ,টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা, জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব, জনশিক্ষায় টেলিভিশন, কৃষি উন্নয়নে টেলিভিশন, খেলাধুলায় টেলিভিশন, বিনোদন হিসেবে টেলিভিশন, জনমত গঠনে টেলিভিশন, উপসংহার।

এবার রচনাটি শুরু করা যাক।

টেলিভিশন

কত অজানারে জানাইলে তুমি কত ঘরে দিলে ঠাঁই

দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই।

———রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তায় অভিষিক্ত হয়েছে টেলিভিশন। দূরমাধ্যম শিক্ষার সার্থক মাধ্যম এটি। শিক্ষাগ্রহণের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় সম্পর্কে দার্শনিকেরা বলেন যে, পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ। কিন্তু সাধারণত আমরা যেকোনো একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। শুধু বই পড়ে আমাদের যে শিক্ষা হয় তা একান্তই মনন ও চিন্তনসাপেক্ষ। চিত্র দর্শন ও দেশভ্রমণের মাধ্যমে যে শিক্ষা তা দেখার মাধ্যমে শিক্ষা। তা অনেক কার্যকরী শিক্ষা বটে। তবু দেশভ্রমণ বা চিত্র সংগ্রহের ব্যাপারটা খুব সহজ নয় বলে আমরা সে প্রয়োজন মেটাতে পারি টেলিভিশনের মাধ্যমে। টেলিভিশন আবিষ্কারের ফলে এ শিক্ষার পথ সহজ হয়েছে।

টেলিভিশন আবিষ্কার

টেলিভিশন আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিসস্নাকর আবিষ্কার। সর্বপ্রথম জার্মান দার্শনিকপল নেপকোটেলিভিশন সম্পর্কে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেন। তাঁর তত্ত্বের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালানো হয়। তারপর এই জনপ্রিয় গণমাধ্যমটি ১৯২৬ সালে আবিষ্কার করেন ইংরেজ বিজ্ঞানীজন বেয়ার্ড। ১৯৩৬ সালে সর্বপ্রথম সফলভাবে টেলিভিশন চালু হয় ইংল্যান্ডে। তখন টেলিভিশনের আকৃতি ও কার্যক্রম অন্য রকম ছিল। ক্রমান্বয়ে এর উন্নতি সাধিত হয়। টেলিভিশন বর্তমান রূপ ধারণ করে ১৯৪৫ সালে।

নুষ্ঠানসূচির বৈচিত্র্য সকল শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে আবেদন জানাতে পারে। তাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে কোনো বক্তব্য বিষয় প্রচার করতে গেলে টেলিভিশনকে রেডিও বা সংবাদপত্রের চেয়ে বেশি উপযোগী হিসেবে বিবেচনা করা যায়। টেলিভিশনের এই ব্যাপক উপযোগিতা আছে বলে জাতি গঠনে এর বিশেষ গুরুত্ব বিদ্যমান। কেনো জাতির অগ্রগতি নির্ভর করে দেশের সরকারের পরিচালনানীতির ওপর। সরকারের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা জনগণের কাছে পৌছাতে হয় এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে তা সহজে পৌছানো সম্ভব। আমাদের দেশের সিংহভাগ লোক নিরক্ষর বলে তারা বইপুস্তক বা পত্রপত্রিকা পড়তে পারে না। রেডিওর কদরও আজকাল আগের মতো নেই। কিন্তু টেলিভিশনের সামনে বসে নিরক্ষর লোকেরাও নানা অনুষ্ঠান উপভোগের সাথে সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনতে পছন্দ করে। যারা পড়তে পারে না, মুখের কথা শুনে বুঝতে পারে। এতে যেমন বিনোদন হয়, তেমনি দরকারি কথাগুলো জানা হয়ে যায়। টেলিভিশনের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা সহজ হয়। দেশের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য টেলিভিশন একটি উত্তম মাধ্যম। টেলিভিশনের মাধ্যমে নিজের দেশকে যেমন জানা যায়, তেমনি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। জাতীয় সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে জনগণ জানতে পেরে নাগরিক হিসেবে সচেতন হতে পারে। কাজেই সকল শ্রেণির মানুষের জন্য টেলিভিশনের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব

সার্থক প্রচার মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের বিশেষ গুরুত্ব বিদ্যমান। শুবণ ও দর্শনের নানা রকম সুযোগ টেলিভিশনের মাধ্যমে লাভ করা যায় বলে জনগণের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। টেলিভিশনকে জাতি গঠনের কাজে লাগাতে হলে এর উপযোগিতার কথা বিবেচনা করে এতে জাতি গঠনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। অনুষ্ঠানসূচি এমনভাবে পরিকল্পনা করা দরকার যাতে জাতির উন্নয়নমূলক নানা বিষয় এতে সংযোজিত হয়। মানুষের সুপ্ত প্রতিভার জাগরণ ঘটিয়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে তা বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়। এছাড়া আমাদের জাতীয় জীবনে টেলিভিশন যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিম্নরূপ:

জনশিক্ষায় টেলিভিশন

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার অগ্রগতি ছাড়া কোনো জাতি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। নিরক্ষরতা যেকোনো জাতির জন্য একটি মারাত্মক অভিশাপ। বাংলাদেশের লোকেরা এই অভিশাপের শিকার। এদেশের সিংহভাগ মানুষ নিরক্ষর। টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করে নিরক্ষর জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা যায়।

কৃষি উন্নয়নে টেলিভিশন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এদেশের অধিকাংশ কৃষক নিরক্ষর বলে তারা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ সম্পর্কে অজ্ঞ। প্রয়োজনীয় সময়ে জমিতে চাষ দেওয়া, উন্নত বীজ সংগ্রহ করা, মাটির প্রকৃতি অনুসারে চারা রোপণ করা, পরিমাণমত কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা, সময়মত জমিতে সেচ দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে অধিকাংশ কৃষকেরই ধারণা নেই। নিরক্ষরতার কারণে বই পড়ে এসব জানার সুযোগ নেই তাদের। টেলিভিশনের মাধ্যমে নানা অনুষ্ঠান করে এ সমস্যা যথেষ্ট পরিমাণে দূর করা যায়।

খেলাধুলায় টেলিভিশন

ব্যক্তিজীবনে যেমন, তেমনি সমগ্র জাতীয় জীবনেও খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। খেলাধুলা থেকে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখা যায়। খেলোয়াড়দের মতো দর্শকদের জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটতে পারে। চরিত্র গঠনেও খেলাধুলার উপযোগিতা কম না। আজ বিশ্বের বহু দেশে নানা ধরনের খেলা হচ্ছে। হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক গেমস, হকি, টেনিস ইত্যাদি খেলা। টেলিভিশনের মাধ্যমে এসব খেলা প্রচারিত হলে, তা দেখে ব্যক্তিজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রভাব পড়লে তার প্রতিফলন জাতীয় জীবনেও ঘটতে পারে। তাই খেলাধুলা প্রদর্শনের ব্যাপারে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগী হতে হবে।

বিনোদন হিসেবে টেলিভিশন

বিনোদন জীবনের একটি অংশ। জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে। সকাল থেকে সারাদিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আর কি-ই বা করার থাকে একজন মানুষের। মনের প্রফুল্লতার জন্য এ সময়ে তার একটু বিনোদন প্রয়োজন। এতে মানুষের কর্মক্লান্ত জীবনে প্রশান্তি আসে। আর এ প্রশান্তি আসতে পারে টেলিভিশনের মাধ্যমে। নাচ, গান, কৌতুক, নাটক, সিনেমা এবং নানারকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিভিশন মানুষকে আনন্দ দিতে পারে।

জনমত গঠনে টেলিভিশন

জনমতই গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রক। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সদাজাগ্রত জনমত সরকারকে স্বৈরাচারী হওয়ার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।। একদিকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভাব-অভিযোগ প্রভৃতি একমাত্র জনমতের মাধ্যমেই প্রকাশিত হতে পারে, অপরদিকে সরকারের সাফল্যের জন্য জনমতের সমর্থন খুবই প্রয়োজন। গঠনমূলক আলোচনা ও সুপরিকল্পিত অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে টেলিভিশন।

উপসংহার

বর্তমান যুগে টেলিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম। সরকারি টেলিভিশন ছাড়াও বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু হয়েছে। টেলিভিশনের অবদানকে জাতির কাজে লাগাতে চাইলে জনগণের কাছে সহজলভ্য করতে হবে। প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সরকারি কর্মক্ষেত্র ইত্যাদির বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে টেলিভিশন পাওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা আরও ব্যাপক করতে তবেই আমাদের জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।

অতএব, তোমরা টেলিভিশন রচনা সম্পর্কে জেনে গেলে। রচনাটি পেয়ে যদি উপকৃত হও, তবে বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করো। আর এরকম আরও কি কি রচনা পেতে চাও তা কমেন্টে জানাও।

দেশ ভ্রমণ রচনা – পরীক্ষায় ১০০% কমন

দেশ ভ্রমণ অনেকের নেশা। তারা অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার নেশায় ছুটে বেড়ায় পৃথিবীর এক কোণ থেকে আরেক কোণে। বিপুলা এই পৃথিবীর পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, আগ্নেয়গিরি আরও কত কি আছে দেখার। শুধুমাত্র ঘরকুনো না হয়ে ক্ষুদ্র সীমানার মধ্যে বন্দী হয়ে না থেকে আমাদের উচিত দেশ ভ্রমণ করে এই বিশ্ব সংসারের রূপ উপভোগ করা। চলো, আজকে এ সম্পর্কে রচনাটি জেনে নিই।

দেশ ভ্রমণ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি। —–জীবনানন্দ দাশ

ভূমিকা

অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার আকাঙ্ক্ষায় মানুষের মন সদাই উন্মুক্ত। মুক্ত বিহঙ্গের মত সে ছুটে যেতে চায় সংসারের সংকীর্ণ ছাড়িয়ে অবাধ মুক্তির মধ্যে। ক্ষুদ্র সীমানার মধ্যে বন্দি হয়ে থাকা মানুষের ধর্ম নয়। বিরাট বিশ্বের অন্তহীন অসংখ্য বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে পাহাড়ে পর্বতে, নদীনির্ঝরে, অরণ্য কান্ডারে বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবন যাপনের বিচিত্র ধারায় আর সমাজ সংস্কৃতিতে। সব কিছুকে জানার কৌতূহলই মানুষকে টেনে এনেছে অনন্ত পথের ধূলায়। বিপুলা এ পৃথিবী প্রতিমুহূর্তে হাতছানি দিয়ে আহ্বান জানায় তাকে, আর সে আহবানে সাড়া দিয়েই মানুষ হয় চিরপথিক।

চলাই মানবজীবনের মূলমন্ত্র

মানুষ চির যাযাবরের মত। তার ধমনীর রক্তে আছে ভ্রমণের নেশা ও অজানাকে জানার অনন্ত জিজ্ঞাসা। তাই স্বভাবতই সে ভ্রমণবিলাসী।

সমুদ্র , নদী, পর্বত, মরু, উপবন শোভিত এ বিশাল বিপুল বিশ্ব মানুষের অন্তরকে প্রতিমুহূর্তে হাতছানি দিয়ে ভাকে। বিশ্বের এ বিশাল আয়োজনের সঙ্গে রয়েছে মানুষের অন্তরের একটি নিগূঢ় যোগসূত্র। উপনিষদের মধ্যে তাই উচ্চারিত হয়েছে পথ চলার মন্ত্র। চরৈবেতি। চরৈবেতি। এগিয়ে চল, এগিয়ে চল। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো চল, পাখির গানের মতো চল, প্রভাতের আলোর মত চল। বিপুল, বিশাল এ বিশ্বে গতিই সত্য, গতিহীনতায় আসে মৃত্যু। গতিময় জীবনের এ রহস্য উপলব্ধি করতে পেরেছে বলেই মানুষ অনন্তকাল ধরে এ সত্যকে মানবজীবনের মর্মবাণী করে নিয়েছে। সে চায় প্রকৃতির রূপ, রস, রহস্য ও সৌন্দর্যকে আস্বাদন করতে, মানবজীবনের অজানা কথা উন্মোচন করতে। আর এরই আকর্ষণে দেশ ভ্রমণের পালা।

ভ্রমণের আনন্দ

মানুষ চিরপথিক, পথ চলতেই তার আনন্দ। মানুষের স্বভাবগত নেশা ভ্রমণ থেকে মানুষ বিচিত্র আনন্দ পায়। দেশ দেশান্তরে ভ্রমণের মাধ্যমেই মানুষ তার মনের সৌন্দর্য পিপাসাকে চরিতার্থ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানা কারণে আকর্ষণ করে রসিকজনদের। ভূপর্যটন তাদের কাছে গভীর আনন্দের প্রতীক। প্রকৃতি যে অন্তহীন সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে, একমাত্র দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে তা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ এবং আনন্দ লাভ করা সম্ভব হয়। আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে অবাধ চলার সুযোগ করে দিয়েছে বলেই মানুষ আজ সহজেই পারে প্রকৃতি জগতের আনন্দলীলার বৈচিত্র্য উপভোগ করতে। অতীতের মানুষ দেশ ভ্রমণ করত কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো পশুর ওপর সওয়ার হয়ে কিংবা পশুবাহিত মন্থর গতির যানবাহন বা পালতোলা জলযানে চড়ে। নতুন নতুন জনপদ ও সভ্যতা সংস্কৃতির আকর্ষণে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেত। এভাবে মানষ নানা দেশ ভ্রমণ করে লাভ করেছে বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং অপার আনন্দ।

শিক্ষার অঙ্গরূপে দেশ ভ্রমণ

শুধু আনন্দ লাভের আকাঙ্ক্ষাই নয়, শিক্ষালাভের আকাঙ্ক্ষাও দেশ ভ্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য। শিক্ষার অন্যতম অঙ্গ হলো দেশ ভ্রমণ। স্কুল কলেজের বই পড়ে মানুষ বা শিক্ষার্থী যে জ্ঞান অর্জন করে তা পরোক্ষ, কিন্তু দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে সে পায় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ন্ধ জ্ঞান। বিশেষ করে ভূগোলের প্রকৃত শিক্ষা বই পড়ে লাভ করা যায় না। পৃথিবী মানে তো আর মানচিত্রের কতকগুলো মৃতরেখা নয়, দেশ মানেও নয় ভূগোলের নিষ্প্রাণ বিবৃতি। পৃথিবী বহু মানুষের কলরব মুখরিত সঞ্জীব সুন্দর বিচিত্র বিস্ময় এবং দেশ রক্তমাংসের মানুষের হাসি কান্নার সংমিশ্রিত শ্যামল শোভন প্রাণোচ্ছল ভূখণ্ড। তাই কেবল ইতিহাস ও ভূগোলের পাঠই জ্ঞানলাভের পরিপূর্ণতা আনতে পারে না। প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতে হলে যেতে হবে দেশ ভ্রমণে। দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ পায় সজীব মানুষের সান্নিধ্য, প্রকৃতির প্রত্যক্ষ অনুষঙ্গে পায় অপার আনন্দ, লাভ করে প্রকৃত শিক্ষা। ঐতিহাসিক, সামাজিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ঘটনাবলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপন করার অথবা ঐতিহ্যানুসরণ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে দেশ ভ্রমণ। যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের ধর্মীয় স্থান বা তীর্থ ভ্রমণের ইতিবৃত্তও অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা ও দূরকে কাছে টানার বাসনারই ফলশ্রুতি। ইতিহাস, ভূগোলের বাইরে অবাধ উন্মুক্ত আকাশের নীচে জীবন্ত দেশটি দেখে, তার অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ স্পর্শ লাভ করে তাদের জীবনধারা সম্পর্কে মানুষ যে জ্ঞান লাভ করে সেই জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান, প্রকৃত শিক্ষা।

ভ্রমণে মানবসভ্যতার সমৃদ্ধি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকের দল দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার পেরিয়ে পৌঁছেছে দেশ দেশান্তরে। প্রখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ, ফা-হিয়েন, মেগাস্থিনিস, ইবনে বতুতা, ভাস্কো-দা-গামা, সিভিংস্টোন, মার্কো পোলো, কলম্বাস, ক্যাপ্টেন কুক কিংবা আমাদের দেশের অতীশ দীপঙ্কর এমনিভাবেই সভ্যতা সংস্কৃতির সম্যক জ্ঞানলাভের আশায়, কিংবা অজানা ভূখণ্ডকে আবিষ্কারের আকাঙ্ক্ষায় ভয়কে তুচ্ছ করে পাড়ি জমিয়েছেন অজানার পথে। প্রাণ বাজি রেখে অচেনা পথে পাড়ি দিয়েছিলেন বলেই অনেক অজানা দেশ, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি, মরূদেশ কিংবা অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার স্মারক হয়েছে আবিষ্কৃত, মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়েছে পূর্ণ, মানবসভ্যতা হয়েছে সমৃদ্ধ। আন্তর্জাতিক মৈত্রী এবং সৌভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধনেও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা গ্রহণ করেছে দেশ ভ্রমণ।

জাতীয় সংহতি স্থাপনে দেশ ভ্রমণ

আধুনিক বিশ্বের মানুষ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ ও পর্যটনকে গ্রহণ করেছে শিল্প হিসেবে। এ পর্যটনের উন্নতির জন্যে তাই শুরু হয়েছে নানামুখী প্রচেষ্টা। পথ ও পরিবহনের উন্নতির জন্যে যেমন নানা কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে, তেমনি গৃহীত হয়েছে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির ব্যবস্থা। দেশে দেশে ট্যুরিস্ট ব্যুরো স্থাপিত হওয়ায় পর্যটকদের সুবিধা বেড়েছে। ফলে আজ নানা দেশের মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সৌভ্রাতৃত্বের সহজ- সুন্দর সম্পর্ক, ব্যবসায়-বাণিজ্যের হচ্ছে সম্প্রসারণ। শুধু আনন্দ লাভই দেশ ভ্রমণের একমাত্র ফলশ্রুতি নয়, মনের প্রসারতা, হৃদয়ের ব্যাপ্তি ও সে সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে অখণ্ড সংহতি সৃষ্টিও দেশ ভ্রমণের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফল। ভ্রমণের মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধুত্বের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যে একটা অখণ্ড ভাবমূলক সংহতি গড়ে ওঠে, তা জাতীয় সংহতির পক্ষে, মানবিক সৌভ্রাতৃত্ববোধের উনোষের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

সারা পৃথিবীতেই দেশ ভ্রমণের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। জাতিসংঘও দেশ ভ্রমণকে ‘বিশ্ব শান্তির ছাড়পত্র’ বলে অভিহিত করে বিশ্ববাসীর কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। তাই আজ পৃথিবীর দেশে দেশে অসংখ্য ভ্রমণ বিলাসীর দল বিশ্বের অজানা, অচেনাকে জানবার জন্যে ঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়েছে দিকে দিকে। ভ্রমণের গুরুত্ব আজ সব দেশেই স্বীকৃত। আনন্দের উৎস হিসেবে এবং সেই সূত্রে শিক্ষার অঙ্গরূপেও দেশ ভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের গৃহকোণে বন্দি না থেকে সুযোগ পেলেই বাইরের পৃথিবীকে জানতে হবে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে। তবেই প্রত্যক্ষ শিক্ষার মধ্য দিয়ে জ্ঞানের দীনতা ঘুচে যাবে এবং কৌতূহল হবে চরিতার্থ।

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা | বাংলা রচনা

“যুদ্ধ নয় শান্তি চাই” এই স্লোগানটি আজ দিকে দিকে ধ্বনিত হচ্ছে। মানুষ যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক রূপ আর দেখতে চায় না। অনর্থক প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষয় সুস্থ মস্তিষ্কের কারোর কাম্য হতে পারে না। তাই আসুন, আমরাও আজকের রচনার মাধ্যমে জোর গলায় বলি, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ।

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা

যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা

যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা।

———-নির্মলেন্দু গুণ

ভূমিকা

বর্তমান দুনিয়া পরাক্রমশালী বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারমাণবিক মরণযুদ্ধের আয়োজনে ত্রস্ত, শঙ্কিত। তবুও আধুনিক মারণাস্ত্রের ধূমায়িত সমস্যার মধ্যেই শান্তির দীপশিখাটি প্রজ্বলিত। রণদামামার মাঝেও শান্তির বাণী ধ্বনিত হয় যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, মৃত্যু নয় জীবন চাই। শান্তিকামীদের শ্লোগান: Live and let live. একবিংশ শতকের প্রথম পাদে দাঁড়িয়ে বিশ্ব আজ প্রকৃত প্রস্তাবে যুদ্ধ ও শান্তির সন্ধিলগ্নের মুখোমুখি। শান্তি চায় না এমন কথা বিশ্বশান্তির বিরুদ্ধবাদীরাও মুখে আনবে না। তবু বিশ্ব আজ চরম সংকটের ভিতর দিয়ে চলছে। পরাশক্তির অধিকারী দেশগুলোর অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ভাটা পড়ে নি। নিত্যনতুন মারণাস্ত্র নির্মাণের ব্যয়ভার কমাতে কোনো পরাশক্তিই আজ পর্যন্ত আগ্রহ দেখায় নি। তাদের সামরিক শক্তির দম্ভে একের পর এক অঞ্চল উপদ্রুত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায়ও আমরা বলতে চাই – যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ।

প্রাচীন যুদ্ধ

প্রাচীন মহাকাব্যগুলো হলো যুদ্ধের কাব্য। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সভ্যতার অঙ্কুরোদগম হয়েছে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আধুনিক সমাজের সুমহান আদর্শ স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী, সমাজবাদ ইত্যাদি বিপ্লবের মধ্য দিয়েই বারবার নিজ মূল্য যাচাই করে নিয়েছে। খুঁজেছে শান্তির পথ।

পারমাণবিক যুদ্ধ

যষ্ঠদশ-সপ্তদশ শতকের ধর্মযুদ্ধ বা উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদের যুদ্ধের তুলনায় বিশ শতকের যুদ্ধ অতি নৃশংস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিশ বছর পরেই আবার রক্তাগ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জার্মান, জাপান, ইতালি অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির প্রতিরোধ এ যুদ্ধে শান্তিকামী মানুষের গলায় জয়মাল্য পরিয়েছিল, কিন্তু ১৯৪৫ সালের সেই কলঙ্কিত দিন দুটিতেই ‘৬ ও ৯ আগস্ট’ হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ, অগণিত মানুষের বীভৎস চিতাশয্যা রচনা করে। তারপর শুরু হয় পারমাণবিক মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা।

বিভিন্ন যুদ্ধে বিশ্বের ধ্বংসাত্মক রূপ

হিরোসিমা-নাগাসাকির গণকবরের নির্মমতায় আজ সভ্যতা ম্রিয়মাণ। তবুও আজকের আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতা তার মারণযজ্ঞের হোমানল প্রজ্বলিত করে চলেছে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে। যেই বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১২ মিলিয়ন টন টি. এন, টি। ১৯৪৫ সালে যে বোমা বিস্ফোরণ হয় তার ক্ষমতা ছিল ২০ হাজার টন টি,এন,টি। যুদ্ধাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০টি আণবিক বোমা বহনকারী MX আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের প্রত্যেকটি বোমা ৬,০০,০০০ টন টি.এন.টি, ক্ষমতা যুক্ত। নির্দিষ্ট নিশানায় আঘাত হানতে পাশি-২, ক্রুজ- ২ ক্ষেপণাস্ত্রের সময় লাগে মাত্র ৪-৬ মিনিট, আধুনিক নিউট্রন বোমার বিস্ফোরণ ১,৪০০ মিটার দূরবর্তী স্থানে বসবাসকারী মানুষকেও মহাশশ্মশানের চিরনিদ্রায় মগ্ন করবে। কয়েক বছর আগের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রতিবছর ৪,০০,০০০ মিলিয়ন ডলার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রনির্মাণের জন্যে ব্যয় করা হয়। ৪৫-এর পর বিশ্বযুদ্ধের রণলিপ্সা স্তিমিত হলেও বিচ্ছিন্ন যুদ্ধের রণদামামা শ্রবণে পৃথিবী আজ আতঙ্কিত। মহাযুদ্ধের মহাপ্রান্তরে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কোরিয়ার যুদ্ধ, বঙ্গোযুদ্ধ, ৬২-র কিউবা সংকট, ভিয়েতনামে মার্কিনের নৃশংসতা, আফগানিস্তানের নৃশংসতা। আরও যুদ্ধ আছে- আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। ইরান-ইরাকের যুদ্ধ খেলা। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় সংকটকে কেন্দ্র করে ইরাকের বিরুদ্ধে বহুজাতিক বাহিনীর রণোন্মত্ততা। ২০০৩ সালের শুরুতে ইরাকে চলেছে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর নৃশংস অগ্রাসন। ফিলিস্তিনে চলছে মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরাইলের নিষ্ঠুর বর্বরতা। ইউক্রেনে চলছে রাশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের শক্তি পরীক্ষা।

যুদ্ধ কেনো বাঁধে

জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে লড়াই করতে হয়। যে লড়াই অন্যকে পর্যুদস্ত করার লড়াই নয়, নিজের অস্তিত্বকে সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখার লড়াই। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ হচ্ছে একে অন্যকে পর্যুদস্ত, বিধ্বস্ত করার যুদ্ধ। বর্তমান যুগে মানুষের জীবনের সমাধি রচনার জন্যে মানুষের হিংসা, দ্বেষ ও লোভ-লালসায় একদল মানুষ বীভৎস জিঘাংসায় মেতে ওঠে। মানুষের যা আছে তাতে সে সুখী নয়, সে আরও চায়। সে চায় অন্যকে পদানত করতে। এ লালসা তাকে তার অধিকার সম্প্রসারিত করতে প্রলুব্ধ করে। এ সম্প্রসারণশীলতাই সকল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মূল কারণ। বিশ শতকে যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তার মূল কারণ এ সম্প্রসারণশীলতা।

যুদ্ধের পরিণাম

যুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে অগণিত জনপদ, অসংখ্য মানুষ। বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতি মানুষের জীবনে যুদ্ধের মাধ্যমে নিয়ে এসেছে সর্বনাশা ও ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। তাই আজকের দিনে যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। শক্তির সাধনায় আজকের বিশ্ব দুটি প্রধান রাষ্ট্র আমেরিকা ও রাশিয়ার পৃথক পৃথক জোটে আবদ্ধ হয়ে আছে। নিজের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য এ বৃহৎ শক্তি দুটি অনবরত যুদ্ধ সাজে সজ্জিত হচ্ছে। প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্যনতুন মারণাস্ত্র। ফলে সারা বিশ্বে এখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ; আগ্রাসনী ইসরাইল শক্তির মত্ততায় ন্যায়নীতি বিসর্জন দিচ্ছে। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণে অসংখ্য লোক নিহত হয়েছে, নষ্ট হয়েছে অনেক স্থাপত্য শিল্প, গণতন্ত্রের নামে মানবতার চরম অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ লোককে শহিদ হতে হয়েছে। সর্বনাশা যুদ্ধের পরিণাম ভয়াবহ আকারে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় নিশ্চিহ্ন হয় বস্তু জনপদ, ফসলের বিরাট মাঠ পুড়ে আবাদের অযোগ্য হয়ে যায়। বোমার কবলে পড়ে অসংখ্য মানুষের জীবনের অবসান ঘটে। কলকারখানা, বাড়িঘর ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির কোন তুলনা থাকে না। এ সর্বগ্রাসী ধ্বংসলীলা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের সভ্যতার অবসান অনিবার্য।

যুদ্ধের অবসান কেন হয় না

যুদ্ধের ভয়াবহতার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লীগ অব নেশনস’ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তিকামী মানুষের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’ বা ‘জাতিসংঘ’। এ জাতিসংঘ শান্তির লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করলেও যুদ্ধমান দেশগুলোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। মনে করা হয়েছিল নিরস্ত্রীকরণ শান্তির পথকে নিশ্চিত করবে। সেজন্যে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। যেমন– ন্যাটো চুক্তি, ওয়ারশ চুক্তি, অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি, পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তৃতি রোধ চুক্তি ইত্যাদি। ১৯৮৫ সালে জেনেভা নগরীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা গর্বাচেভের মধ্যে এক শান্তি আলোচনা হয়। সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে শান্তির জন্য পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ, নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি আলোচনা চলছেই। কিন্তু তবুও স্থায়ী কোনো শান্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ উভয় দেশই কেউ কারো ক্ষমতা কমাতে রাজি নয়। একজনের প্রস্তাবে অন্যজন সম্মত হয় না; কেউই কারো শ্রেষ্ঠত্ব হারাতে রাজি নয়। যুদ্ধমান অনুন্নত দেশগুলোও এদেরই মুখাপেক্ষী, তাই শান্তির ললিত বাণী দেশে দেশে আকাঙ্ক্ষিত হয়েও ধ্বনিত হতে পারছে না।

যুদ্ধ নয় শান্তি

বিশ্বের বুকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার অবসান ঘটিয়ে সৃষ্টি করতে হবে শান্তির রাজ্য। মানুষের জন্য এ শান্তি অপরিহার্য। তাই শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সচেতন হতে হবে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টায়। অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যে বিশাল পরিমান অর্থ ব্যয় করছে তা অবশ্যই রোধ করতে হবে এবং দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য সে অর্থ কাজে লাগাতে হবে। যুদ্ধের অবসানের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্ণবিদ্বেষ অবলুপ্ত করতে হবে; জাতিগত ঈর্ষার অস্তিত্ব দূর করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। আধিপত্যবাদ আর ঔপনিবেশিকতাবাদের কথা ভুলতে হবে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। আর শান্তির কাজে জাতিসংঘের কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে।

বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ আজ শান্তি চায়। কারণ শান্তিতেই আছে মানবজীবনের পরিপূর্ণ সমৃদ্ধি। শান্তি বিরাজমান থাকলে শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তথন অসম্ভর মনে হবে না। সামাজিক জীবন হবে নির্বিঘ্ন। তাই আমাদের শেষ কথা-যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, মৃত্যু নয় জীবন চাই।

উপসংহার

শান্তিই বিশ্বকে সমৃদ্ধিতে ভরে দিতে পারে। যুদ্ধের ফল কখনো শুভ হতে পারে না। শান্তি সকলেরই কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু মানুষ যদি সৎ না হয়, মানুষের মন থেকে যদি হিংস্রতা দূরীভূত না হয় তাহলে শান্তি চিরকাল মানুষের নাগালের বাইরে সোনার হরিণই থাকবে। অন্তরে বিষের ভাণ্ড রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালালে তা প্রহসনেই পরিণত হবে। বিশ্বের সকল জাতি যদি পারস্পরিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদাশীল হয়, সকলকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবন্ধ করতে পারে, তবেই বিশ্বে বইতে পারে শান্তির সুবাতাস, বিশ্বের কোটি কোটি জনতা আজ সেই শুভ দিনের প্রতীক্ষায় ব্যাকুল।

যানজট রচনা | বাংলা রচনা যানজট

প্রিয় শিক্ষার্থী, যানজট রচনা প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। কারণ যানজট হলো শহরবাসীর নিত্যদিনের বন্ধু। বিশেষ করে, গরমের দাবদাহে যানজটে আটকা থাকাটা কতটা অসহনীয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে। আজ আমরা যানজট রচনা সম্পর্কে জানবো।

যানজট রচনা

ভূমিকা

‘যান’ শব্দের অর্থ হাতি, ঘোড়া, গাড়ি, নৌকা প্রভৃতি বাহন। এখানে বিভিন্ন প্রকারের গাড়ির বাহনকেই যান বলা হয়েছে। আর ‘জট’ অর্থ বিশৃঙ্খল অবস্থায় জড় হওয়া। অর্থাৎ শহরের পথে যেখানে ছোট বড় বিভিন্ন প্রকারের গাড়ি জড় হয়, পথিমধ্যে যানবাহনের প্রচণ্ড ভিড় ও নিশ্চল অবস্থায় জনজীবন অচল হয়ে পড়াকে যানজট বলে।

যানজটের ক্ষতির দিক

ঢাকাসহ দেশের বৃহৎ শহরগুলোতে যানজট একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের ফলে প্রায়ই ঘটে থাকে মারাত্মক দুর্ঘটনা। অনেক সময় যানজটে আটকা পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে না পেরে জনসাধারণ চরম ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়। ট্রাফিক জ্যামের কারণে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অফিসগামী কর্মচারী, কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, উকিল, মোক্তার, বাদি, বিবাদি, মাজিস্ট্রেট, বিচারকসহ ডাক্তার, নার্স, রোগী, সকলকেই বর্ণনাতীত দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এতে যে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় তা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

যানজটের কারণ

আমাদের দেশে ছোট বড় অনেক শহর আছে আর এ শহরের রাস্তাগুলো এত ছোট বা অপ্রশস্ত যে, এখানে অনেক মানুষ ও গাড়িঘোড়া চলা দুষ্কর। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এখানে এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তা, এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় পৌঁছতে কয়েক গুণ বেশি সময় লাগে। তাছাড়া যত্রতত্র মালামাল উঠানামা করানো, সারাবছর সংস্কারের নামে খানাখন্দক কেটে রাখা, ট্রাফিক অইন লঙ্ঘন করা সর্বোপরি এ সবকিছুই যানজটের প্রধান কারণ।

যানজটের ফলে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা যানজটে পড়ে ঠিকসময় ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না, চাকরিজীবীদের অফিস উপস্থিতিতে দেরি হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ, চিকিৎসকগণ রোগী দেখতে গিয়ে রোগীর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে, আর সাধারণ মানুষের হয়রানির তো শেষ নেই। যেসব অব্যবস্থার দরুন যানজট ঘটছে, নিচে তার কয়েকটি কারণ সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করছি।

কারণগুলো হলো-

১. আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবক্ষয়ের কারণে যারা গ্রামে জীবিকার সংস্থান করতে পারছে না, তারা জীবিকার জন্য শহরমুখী হয়ে ভিড় বাড়াচ্ছে।

২. ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে রিকশার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আবার এ রিকশার একটা সিংহভাগ বিনা লাইসেন্সে চলছে। ফলে রিকশার আধিপত্য এখানে বেশি।

৩. একশ্রেণির ব্যবসায়ী যানবাহনের ব্যবসাকে অধিক লাভজনক মনে করে বৈধ-অবৈধভাবে এ ব্যবসা চালু করছে। ফলে যানবাহনের ভিড় ক্রমেই বেশি হচ্ছে।

৪. কর্পোরেশন বা পৌরকর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনেক সময় রাস্তা মেরামতের দীর্ঘমেয়াদি কারণে যানজট হয়।

৫. রাস্তা বা রাস্তার মোড়ে জনসভা অনুষ্ঠিত করা, গাড়ি মেরামত করা, হকার মার্কেট বসানো ইত্যাদি কারণেও যানজট হচ্ছে। তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশদের দায়িত্ব পালনে গাফলতি থাকায় অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।

যানজট নিরসনের উপায়

আমাদের দেশের শহরগুলোতে দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে। সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে এর নিরসন করার জন্য, কিন্তু পারছে না। সংবাদপত্রসমূহে লেখালেখি হচ্ছে। রেডিও, টেলিভিশনে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত সমস্যা দূর হচ্ছে না। আসলে এ সমস্যার সাথে আছে আমাদের জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক। পরিকল্পিতভাবে চিন্তা না করে, ব্যাপকভাবে কর্মসূচি না নিয়ে এ সমস্যা কখনো দূর হবে না। বস্তুত এ সমস্যা দূর করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের যা যা করা দরকার, তা নিচে উল্লেখ করছি।

১. আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যে, যাতে গ্রামে বেকার হয়ে কেউ শহরমুখী না হয়, গ্রামেই তার জীবিকার সংস্থান হয়।

২. বিকল্প উপায় উদ্ভাবন করে রিকশার সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে এবং লাইসেন্সবিহীন রিকশা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। যাতে করে মাত্রাতিরিক্ত রিকশার ফলে অহেতুক যানজটের সৃষ্টি না হয়।

৩. অসাধু গাড়ি ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. যখন তখন অপরিকল্পিতভাবে শহরে রাস্তা খোঁড়া বা মেরামত না করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. রাস্তায় সভা করা, গাড়ি মেরামত করা, দোকান বসান, ফুটপাত হকারদের দখলে নেওয়া ইত্যাদি কড়াকড়িভাবে বন্ধ করতে হবে।

৬. যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

উপসংহার

উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করে এসব দিকে যদি আমরা অধিক সচেতন ও সতর্ক হই, তাহলে দেখা যাবে, অদূর ভবিষ্যতে শহরগুলোর যানজট নিরসন হয়ে সকল ধরনের নাগরিকদের জীবনে সুস্থতা ও সচলতা ফিরে আসছে।

তো, কেমন লাগলো যানজট রচনা পড়ে? আশা করি, ভালো লেগেছে। যদি রচনাটি পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন, তবে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা | বাংলা রচনা পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ সমাদৃত। বিদেশী অনেক কোম্পানিই বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাক খাতে বিনিয়োগ করেছে। আজকে এই সম্পর্কে রচনা আকারে জানবো।

ভূমিকা

শিল্পে অনুন্নত বাংলাদেশে দ্রুত বিকাশমান ও সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী যেসব শিল্প খাত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প শতকরা একশ ভাগই রপ্তানিমুখী। প্রতিবছর বাংলাদেশের মোট প্রবৃদ্ধির সিংহভাগই আসে এই খাত থেকে। এই খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিচ্ছে।

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক দেশে-বিদেশে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান বর্তমানে দ্বিতীয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৩০টির মতো দেশে। আর এর সবচেয়ে বড়ো ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ফ্রান্স, কানাডা, বেলজিয়াম, জার্মানি, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করে। অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়াতেও সম্প্রসারিত হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার। পোশাক শিল্প কারখানাগুলো প্রায় ৫৪ লক্ষেরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই পোশাক শিল্প। এই শিল্পের মোট শ্রমিকের মধ্যে ৫৪ ভাগই নারী শ্রমিক। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশের বেকারত্ব নিরসন সম্ভব হচ্ছে এই সম্ভাবনাময় শিল্প খাতটির মাধ্যমে। কিন্তু তার পরও পোশাক শিল্পের কতিপয় অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রবল চাপের মুখে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্প খাতটির ভবিষ্যৎ অনেকটা নাজুক হয়ে উঠেছে। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজার থেকে আমদের ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের ভূমিকা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ করে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে তৈরি পোশাক শিল্পের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ খাতের সম্ভাবনা ও অবদানের প্রধান দিকগুলো হচ্ছে:

ক. জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন:প্রতিবছর জাতীয় আয়ের এক বিরাট অংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। অর্জিত হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩০.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন ভবিষ্যতে এই আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

খ. রপ্তানি বৃদ্ধি:৭০০০ এর মতো কারখানা বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রার সঙ্গে জড়িত। দেশের অভ্যন্তরে প্রতিযোগিতার কারণে এই খাতে পণ্যের গুণগত মান বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে, বাড়ছে রপ্তানি আয়ও।

গ. বেকার সমস্যা নিরসন:দেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে প্রায় চল্লিশ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এদের অধিকাংশই নারী। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এসব শ্রমিকর পাচ্ছে স্বাবলম্বী জীবন ও অর্থনৈতিক মর্যাদা।

ঘ. শিল্পের প্রসার:পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরও অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পোশাক তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে থাকে। যার ফলে দ্রুত শিল্পায়ন সম্ভব হচ্ছে। ঙ. পরিবহণ শিল্পের অগ্রগতিঃ পোশাক শিল্পসামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির জন্য দেশের পরিবহণ খাতেও আয় বাড়ছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হতে পারছে।

পোশাক শিল্পে বিরাজমান সমস্যা

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও সুবিধা পেয়ে আসছে। কিন্তু তারপরও এ শিল্প খাতটিতে নানা ধরনের সমস্যা বিরাজমান। যেমন:

১. রাজনৈতিক অস্থিরতা:বিভিন্ন সময়ে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী পোশাক সরবরাহ ব্যাহত হয়। ফলে সঠিক সময়ে মাল ডেলিভারি দিতে না পারায় অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।

২. কাঁচামালের অভাব:দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না পাওয়া গেলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে রপ্তানি আয়ের একটা বড়ো অংশ খরচ হয়ে যায়। অন্যদিকে, উন্নত কাঁচামালের অভাবে তৈরি পোশাকের সুনাম নষ্ট হয়।

৩. বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরিতে সীমাবদ্ধতা:বিশ্ববাজারে প্রায় ১১৫ ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ। সরবরাহ করতে পারে ৫ থেকে ১০ রকমের পোশাক। ফলে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।

৪. দক্ষ শ্রমিকের সংকট:পোশাক শিল্পে দক্ষ শ্রমিকদের সংকট একটি বড়ো সমস্যা। এই শিল্পের সিংহভাগই নারী। নারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এই শিল্পে বাধ্য হয়েই অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়োগ দিতে হয়। দক্ষ পুরুষ শ্রমিকেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

৫.শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তার অভাব:শ্রমিকরা প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ড, পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

৬. শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য:অন্যান্য শিল্পের তুলনায় পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। রয়েছে নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, অনিয়মিত বেতন শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

৭. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ:নিরাপদ পানি, পরিবেশ ও পেশাগত ঝুঁকির কারণে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। মজুরি কম হওয়ায় তাদের কোনো সঞ্চয় থাকে না। তার ওপর কোনো কারণে কাজে অনুপস্থিত থাকলে বেতন কেটে নেওয়া হয়।

এছাড়াও রয়েছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, বিদ্যুৎ সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা প্রভৃতি।

সমস্যা সমাধানের উপায়

যেহেতু পোশাক শিল্প অত্যন্ত লাভজনক একটি খাত, সে কারণে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন:

১. আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন পোশাক তৈরি করা;

২. দেশেই প্রয়োজনীয় কাঁচামাল উৎপাদনের পদক্ষেপ নেওয়া;

৩. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা;

৪. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা;

৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ইত্যাদি।

উপসংহার

বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে পোশাক শিল্পে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণের লক্ষ্যে শ্রম আইন ও শ্রম কল্যাণ আইন-২০০৬ প্রবর্তন করেছে। ২০১৩ সালে প্রণীত শ্রম আইনে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তার ব্যাপারটিও বিবেচনাধীন। এখন প্রয়োজন সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা। তাহলেই সম্ভানাময় এই শিল্প খাতটি আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।