অপ্রস্তুত অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য হবে আত্মঘাতী’

মো: মিনহাজুল ইসলাম


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গত ২৩ মার্চ এক চিঠিতে দেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

যার প্রেক্ষিতে, গত কয়েকদিনে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক (ইউটিএন)। উক্ত সভায় সংগঠনটির বক্তারা বলেন- অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত, ও বৈষম্যমূলক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালুর চেষ্টা অথবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আত্মঘাতী হবে।

শিক্ষার্থীদের মহামারী চলাকালীন বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের জন্য মাসে ৩০০০ টাকা বৃত্তির আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমপক্ষে অর্ধেক হ্রাস করার কথাও বলা হয়েছে।

২০২০ শিক্ষাবর্ষ পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েকটি সুপারিশ জানিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীকে তথ্য-প্রযুক্তি সক্ষমতা অর্জনের জন্য এককালীন ২০ হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনৈতিক বিচারে দুঃসাধ্য হলে তা দীর্ঘমেয়াদী সুদহীন ঋণ হিসেবে দিতে হবে। সব শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশের সব অঞ্চলে প্রয়োজনীয় গতির ইন্টারনেট প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও বখতিয়ার আহমেদ – শিক্ষক নেটওর্য়াকের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষা-কার্যক্রমের একটি অলঙ্ঘনীয় ও মৌলিক পূর্বশর্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম কোন বৈষম্য তৈরি করে এমন শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার নৈতিক অধিকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নেই।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকেরা আরো জানান, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ইউজিসি’র হস্তক্ষেপের পর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসে গেলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবকাঠামোগত অসুবিধার কথা জানায়। ইউজিসির এক জরিপে জানা যায় যে, ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহার করার মতো ডিভাইস আছে। অর্থাৎ, এই পরিসংখ্যান থেকে এটা পরিষ্কার যে, বিদ্যমান অবকাঠামোয় শিক্ষার্থীদের ১৫ শতাংশের হাতে অনলাইন কার্যক্রমে যুক্ত হবার মতো প্রযুক্তি নেই। যা শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ পাওয়ার শর্ত ভঙ্গ করে।

শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য অবশ্যম্ভাবী আকারে দেখা দেবে। এছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও সক্ষমতা এখনও অনলাইন কার্যক্রম চালানোর ন্যূনতম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।

ইউটিএন জানায়, ইউজিসি এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই কেবল প্রশাসনিক আদেশে ‘অনলাইন-ক্লাস’ চালু করার চেষ্টা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। তারা আরও বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের রাজনৈতিক আনুগত্য ও ফায়দা হাসিলের জন্য তাড়াহুড়ো করে লোকদেখানো ‘অনলাইন ক্লাস’ শুরু হবে এবং শিক্ষার্থীদের এই করোনা মহামারী বিপর্যস্ত জীবনে আরো মারাত্মক সমস্যার জন্ম দেবে।’

এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিধানে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ বাতিল করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এই আইন বহাল রেখে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালুর কোনো সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।

শুরুতে শুধু স্নাতোকোত্তর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন শিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে বলে মনে করছে এই সংগঠনটি।

লেখক: মো: মিনহাজুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।