লকডাউনে ঢিলে হচ্ছে বন্ধুত্বের বন্ধন : মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবার

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


করোনা মহামারি সংকটের দিনগুলোতে বিভিন্ন দেশে চলমান লকডাউন এবং বিধিনিষেধ বন্ধুত্বের সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে বলে একটি প্রবন্ধে জানিয়েছেন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবার।

রয়্যাল সোসাইটি জার্নালে তিনি লিখেছেন, বিনিয়োগের সঠিক মাত্রার অভাবে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ভেঙে যেতে পারে বন্ধুত্ব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে রোগশোকের দিনগুলোতে মানুষ কীভাবে মানুষকে মনে রাখছে, সম্পর্ক ঠিক রাখছে-এসব জানার চেষ্টা করেছেন ডানবার। তিনি বলছেন, যদি ভাবেন এই সময়ে শুধু জুম মিটিং এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ে বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, তাহলে ভুল করছেন।

বিখ্যাত এই মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন তখন হয় যখন আপনি প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রুদের থেকে বন্ধুত্বকে রক্ষার চেষ্টা করেন।
এমন বন্ধুত্ব তৈরি করতে হলে ধারাবাহিক যত্ন নিতে হয় সম্পর্কের।

‘বন্ধুত্বের যত্ন মানে বিপদে-আপদে পাশে থাকা। সময় দেয়া। যেটা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয় না। ’

ফ্রান্সের একটি গবেষণায় সম্প্রতি দেখা গেছে, এখনকার দিনে মানুষ পরিবারের সঙ্গে বেশি কথা বললেও বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছেন। কখনো বা সেটি শূন্যের কোঠায় নেমে যাচ্ছে!

যৌবন হারিয়েছে ইবির ডায়না চত্বর

রোকনুজ্জামান রায়হান


‘ক্যাম্পাসে ক্লাস ব্যতিত অন্য সময়ে আমরা বন্ধুরা সকলে মিলে ‘ডায়না চত্বর’ এ আড্ডা দিতাম। কেউ বা গিটারের সুরে গান গাইত। কেউ সেলফি তুলত। কেউ বা বাসের অপেক্ষা করত। এখন আর বাজেনা গিটার। কেউ অপেক্ষাও করেনা বাসের জন্য। ওই সময়গুলো খুব মনে পড়ছে।’

এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শোয়েব আফজাল সিদ্দিকী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

আড্ডার প্রাণকেন্দ্র বললেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চোখে ভেসে ওঠে ‘ডায়না চত্বর’। ক্যাম্পাসের সবথেকে সুপরিচিত, প্রাণচঞ্চল ও আড্ডামুখর জায়গা এটি। যার অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে। জায়গাটির নাম শুনলে হাজারো শিক্ষার্থীর মনে চাপা অনুভূতির সৃষ্ঠি হয়। এই নামটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের আবেগ,অনুভূতি, বন্ধুদের সাথে কাটানো অজস্র সোনালী স্মৃতি।

গালিচার মতো সবুজ ঘাসে মোড়ানো, মাথার উপরে দীর্ঘ আলবেজিয়া গাছ এবং চারদিকে বেষ্টন করা সোনালু গাছ জায়গাটিকে দিয়েছে প্রিন্সেস ডায়নার মতোই আবেদন।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রিয় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার মতো অনেক জায়গা থাকলেও ‘ডায়না চত্বর’ সকলের মনেই একটা বাড়তি আমেজ সৃষ্টি করে। তাইতো দিনভর ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন সহ সবকিছুকেই পাশে ফেলে সবাই সমবেত হয় আড্ডার প্রাণকেন্দ্র ডায়না চত্বরে। হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করে অনুপ্রাণিত হয় নতুন কিছু করতে। এ জায়গাটি সবসময়ই উৎসবমুখর থাকে শত শিক্ষার্থীর পদচারণা ও প্রাণচঞ্চল আড্ডায়। কেউ বা আবার প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে গল্পগুজবে আনন্দঘন সময় কাটায়। আবার কেউ কেউ পড়শোনা নিয়ে ব্যস্ত।

বৈশ্বিক মমহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ছুটির আওতায় রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছে।

যার ফলশ্রুতিতে ক্যাম্পাস হয়ে গেছে সুনসান। নেই কোনো শিক্ষার্থীদের পদচারণা। আড্ডার প্রাণকেন্দ্র ‘ডায়না চত্বর’ হয়ে উঠেছে আড্ডাশুন্য। নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো খুঁনসুটি, নেই কারো আড্ডাবাজি।

জনসমাগম এড়াতে ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ায় রাত্রির ব্যবধানেই যেন ডায়না চত্বরে নেমে এসেছে নিঃস্তব্ধতা। আড্ডার প্রাণকেন্দ্রও যেন আড্ডার অভাবে নিঃসঙ্গতাবোধ করছে। খুবকরেই যেন চাইছে আবারও ফিরুক সেই আড্ডা, আবারও ফিরুক সেই প্রাণচঞ্চলতা।

ক্যাম্পাসে অবস্থান না করায় ‘ডায়না চত্বরে’ আড্ডা দিতে না পারায় অনেকেই বাড়িতে বসে স্মৃতিচারণ করছে পূর্বের সেই আড্ডার দিনগুলোর। হয়ে যাচ্ছে স্মৃতিকাতর। জানাচ্ছে ক্যাম্পাসে ফেরার আকুতি।

ডায়না চত্বরের আড্ডা সম্পর্কে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা শেষে আমাদের নৈমিত্তিক আড্ডার স্থল ছিলো ডায়না চত্বর। হাসি-আনন্দ, খুঁনসুটিতে সময় কেটে যেত। বন্ধুদের সহ সেই দিনগুলোকে মিস করতেছি। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব দ্রুতই আবারও আড্ডার প্রাণকেন্দ্রে সকলেই একত্রিত হতে পারব।’


লেখকঃ শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ।