বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কবে?

প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা


অনেক শিক্ষার্থী ফোন করে জানতে চায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কবে? সেটা আমার অজানা। তাই সঠিক উত্তর দিতে পারি না। ২৫ আগস্টের আগে মনে হচ্ছিল- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে একটা ঘোষণা আসতে পারে।

কয়েকদিনের মধ্যে আশা-নিরাশার ব্যাপারটি লক্ষ্য করলাম। পত্রিকায় যেভাবে লেখা তাতে মনে হচ্ছিলো সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিলো ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয় বা সরকারের পক্ষ থেকে খোলার বিষয়ে কিছু একটা জানানো হবে। ২৫ আগস্ট জানতে পারলাম আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। বিশেষজ্ঞমহল খোলার বিষয়ে আরও ধৈর্য্য ধরতে বলেছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কিছুটা ভিন্নতর। অনেকে অতীত অভিজ্ঞতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করেন। যুব সম্প্রদায়, টগবগে রক্ত করোনার কারণে- কিছু ঘটে গেলে সামাল দেয়া যাবে কি-না এ ব্যাপারে পিছুটান থাকে।

বাংলাদেশে করোনার পরিস্থিতি দেখে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ মুহুর্তে খোলা যেতে পারে বলে তারা মনে করে। তবে প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খোলার বিষয়ে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য একটা পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে :

(১) মাস্টার্স পরীক্ষার্থী যাদের শুধুমাত্র পরীক্ষা বাকি আছে- তাদের পরীক্ষা শেষ করতে হবে। যেসব বিভাগে ব্যবহারিক কিংবা মৌখিক পরীক্ষা অথবা থিসিস কিংবা প্রজেক্ট বাকি-তাদের কাজগুলি শেষ করতে পারলে মাস্টার্স পর্ব শেষ হয়ে যাবে। এতে হলগুলির উপর বিশেষ কোন চাপ পড়বে না।

(২) মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর স্নাতক বিশেষ করে যাদের টার্মিনাল পরীক্ষা শেষ করতে পারলে- মাস্টার্স এবং স্নাতক ডিগ্রি পেতে পারতো। এতে করে ক্যাম্পাসে সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ হতো।

এই পরীক্ষা দু’টি শেষ করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। এরই মধ্যে বোঝা যাবে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরিস্থিতি বা পরিবেশ অনুমান করা যাবে এবং সরকার কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে বলে মনে করি।

কোন কারণে করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ করা যাবে তাতে কেউ আপত্তি করবে না। ডঐঙ বলেছে, আগামী দু’বছর এভাবেই করোনাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সীমিত পরিসরে খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। সকল শিক্ষার্থী একসাথে ক্যাম্পাসে আসলে সামাজিক দূরুত্ব বা করোনা সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। সেকারণে পর্যায়ক্রমে (মাস্টার্স, স্নাতক) ক্লাস খুললে ভাল হবে বলে অনেকের ধারণা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এ প্রসঙ্গ বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

লেখক: উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি

প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা
উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে লালন করার জন্য এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রবাহিত করার জন্য তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সব জাতীয় আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নেতৃত্বে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অপরাজেয় বাংলা

ভাস্কর্যের শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ভাস্কর্য নির্মাণ করতে গিয়ে দু’হাত রক্তাক্ত করে দেশের প্রতি ঋণ শোধ করলাম এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদ।

১৯৭২-৭৩ সালে ডাকসুর উদ্যোগে অপরাজেয় বাংলার কাজে হাত দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে এর আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সকাল ৯ টায় ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়।

ভাস্কর্যের নাম ‘অপরাজেয় বাংলা’ কিভাবে হলো?

দৈনিক বাংলার সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী সেসময় দৈনিক বাংলাতে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘অপরাজেয় বাংলা’। পরবর্তীতে এ নামটিই সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ কাজ শুরু করার কিছু দিনের মধ্যে ঘটে যায় ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড। ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ স্তিমিত হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের দিকে তাক করিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সেনাবাহিনীর বিধ্বংসী ট্যাংক। যেকোন সময় গুঁড়িয়ে দিতে পারে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে পুনরায় ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সকাল ৯:০০ টায় ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়।

‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যটির ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। ১৪০০ মাইল বেগের ঝড় মোকাবিলা করতে সক্ষম, স্থায়ী হবে ভাস্কর্যটি প্রায় হাজার বছর। ভাস্কর্যটিতে তিনজন তরুণের মূর্তি প্রতীয়মান। এদের মধ্যে দু’জন যুবক একজন যুবতী। সর্বডানে ফাস্ট বক্স হাতে কুচি দিয়ে শাড়ী পরা প্রত্যয়ী এক যোদ্ধা নারী সেবিকা।

মাঝে দাঁড়িয়ে আছে- কাঁধে রাইফেল, বা হাতে গ্রেনেড, কাছা দেওয়া লুঙ্গি পরণে এক যুবক- গ্রাম বাংলার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। আর বাঁ-পাশে জিন্স-প্যান্ট পরা শহরে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা, যার হাতে রাইফেল এবং চোখে মুখে স্বাধীনতার দীপ্ত চেতনা।


সাবাস বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে-পুড়ে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ কবিতা অবলম্বনে নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘সাবাস বাংলাদেশ’। শিল্পী নিতুন কুণ্ডু ১৯৯২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কংক্রিটে তৈরী ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।

মূল ভাস্কর্যে দুটি ফিগার লক্ষ করা যায়। দুইজন যুবককেই খালি গায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন লুঙ্গি পরা, মাথায় গামছা বাঁধা গ্রামীণ যুবা- কৃষক সমাজের প্রতিনিধি যার এক হাতে রাইফেল ধরা, মুষ্টিবদ্ধ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অন্য হাতটি উপরে উত্থিত। প্যান্ট পরিহিত অন্য ফিগারটি শহুরে যুবকের প্রতিনিধি- দুই হাত দিয়ে ধরে রয়েছে রাইফেল, কোমরে গামছা বাঁধা, বাতাসের ঝাপটায় চুলগুলো পিছনের দিকে সরে গেছে।

সিঁড়ির উপরে মঞ্চের পিছনের দেয়াল গাত্রে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, সমাজের সকল বয়সের মানুষের মিছিলের দৃশ্য, রাইফেল হাতে যুবক-যুবতী, একতারা হাতে বাউল, গেঞ্জিপরা এক কিশোর তাকিয়ে আছে পতাকার দিকে। মোটকথা, বাংলার জনজীবনের ছবি এঁকেছেন শিল্পী, বুঝিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের সম্পৃক্ততার কথা।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করে সমগ্র বাংলাদেশকে ভস্মীভূত করে ফেলতে চায়। কিন্তু বাঙালির দৃঢ় মনোবল, মুক্তির প্রচণ্ড স্পৃহা, সীমাহীন কষ্টভোগ, অসীম ত্যাগের বিনিময়ে ভস্মাবশেষ থেকেই উদ্ভব হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের।


সংশপ্তক ভাস্কর্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালের ২৬শে মার্চ নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক।

এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত, এক পা হারিয়ে ও রাইফেল হাতে লড়ে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার বীর সন্তান। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।


অদম্য বাংলা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল। বলিষ্ঠ ও তেজোদীপ্ত চার মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি আছে এ ভাস্কর্যটিতে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক এটি। পুরো মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপস্থাপনা রয়েছে এই ভাস্কর্যটিতে।

ভাস্কর্যটিতে জাতীয় নেতাদের প্রতিবিম্ব মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের সুস্পষ্ট একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।


দুর্বার বাংলা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৩ সালে কুয়েটে প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্বার বাংলা। এই ভাস্কর্যের ভাস্কর গোপাল চন্দ্র পাল। সম্ভবতঃ ২০১৫ সালে প্রথম দেখি এই ভাস্কর্যটি। ভীষণ ভালো লেগেছিলো। মনে হয়েছিলো কুয়েট ক্যাম্পাসের মূল আকর্ষণ ‘দুর্বার বাংলা’। ইতোমধ্যে কুয়েট চত্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চমৎকার একটি শহীদ মিনার।

‘দুর্বার বাংলা’ এক ব্যতিক্রম জীবনীশক্তি। সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। এই প্রেরণার পিছনে যাঁদের অবদান, তাঁরা সব সময় আমাদের কাছে স্মরণীয়। আমরাও যেন তাঁদের মতো হতে চেষ্টা করি, সেই শক্তি দেয় এই ভাস্কর্য।

মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যগুলো শুধু ভাস্কর্যই নয়, প্রতিবাদের সাহসী প্রতীক। ভাস্কর্যগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থী-দর্শনার্থীরা দেশের জাতীয় আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জাগ্রত হয় দেশপ্রেম, নিজের অধিকার আদায়ের চেতনা।

কৃতজ্ঞতা:
১. জনাব জাহিদ হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২. জনাব বণি আদম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৩. জনাব সুপ্রভা হক, কুয়েট।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা

উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার গড়ে ওঠে রাজশাহী কলেজ হোস্টেলে। ২১ ফেব্রুয়ারির ১৯৫২ সন্ধ্যাতে আন্দোলনকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে গড়ে তোলেন ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নামে দেশের প্রথম শহীদ মিনার।

প্রাণের আবেগ দিয়ে গড়া এই শহীদ মিনার পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি সকালে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটি ভেঙ্গে ফেলে পাকিস্তান সরকারের পুলিশ।

২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাও ভাষা শহীদের স্মরণে এক রাতের শ্রমে নির্মাণ করেন ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, যেটি ঢাকার প্রথম শহীদ মিনার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সহসভাপতি গোলাম মাওলা ও সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিনের অনুরোধে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নামের এই শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন ডা. বদরুল আলম।

২৪শে ফেব্রুয়ারি এই স্মৃতিস্তম্ভ প্রথম উদ্বোধন করেন ভাষাশহীদ শফিউর রহমানের বাবা মাহবুবুর রহমান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আইন পরিষদ থেকে পদত্যাগকারী প্রথম সদস্য ‘আজাদ’ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। কিন্তু ভীত পাকিস্তান সরকার সেদিনই পুলিশ দিয়ে রাজশাহীতে নির্মিত পূর্ব বাংলার প্রথমটির মতো ঢাকার প্রথম শহীদ মিনারও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।

১৯৬৭ সালে রাকসুর উদ্যোগে শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ মিনার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিস্ফোরকের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেয়।

১৯৭৫ সালের ২৩শে এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের গড়নের দিক থেকে আলাদা। এ মিনারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর ম্যুরাল চিত্র, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, উন্মুক্ত মঞ্চ, সুবিস্তৃত খোলা প্রান্তর ও ফুলের বাগান- এসব কিছুর সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার চত্বর।

শহীদ মিনারটি কৃত্রিমভাবে তৈরি মাটির টিলার উপর অবস্থিত। অনেকগুলি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় মিনারের ভিত্তিমূলে। মিনারের পশ্চাতে রয়েছে দীর্ঘ একটি ম্যুরাল চিত্র। ‘অক্ষয়বট’ শীর্ষক ম্যুরালটি নানা বর্ণের পোড়া ইট, পাথর ইত্যাদি নানা অক্ষয় মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। এ চিত্রটিতে রূপ দেওয়া হয়েছে এক স্নেহময়ী মা ও তাঁর বীর সন্তানদের অবয়ব।

ম্যুরালটিতে সূর্যের উপস্থিতিতে শহীদ সন্তানদের বীরত্ব ও তেজস্বিতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে মায়ের অঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গঠনশৈলী ও উপাদানের বৈচিত্র্যে অনন্য এ ম্যুরালটি নির্মাণ করেন শিল্পী মুর্তজা বশীর।

শহীদ মিনারের পাদদেশে পূর্বদিকে যেদিক থেকে উদিহ হয় নতুন দিনের সূর্য, সেদিকে রয়েছে একটি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালার ডিজাইন করেন স্থপতি মাহবুবুল হক। এই সংগ্রহশালায় রয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নানা রাজনৈতিক ঘটনাবলির আলোকচিত্র, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নানা শিল্পকর্ম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আলোকচিত্র, তাঁদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নসহ অনেক কিছু। মোটকথা বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে এ সংগ্রহশালা- শুধু ধারণ নয় মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

১৯৮৯ সালের ২১শে মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রদর্শনী কক্ষের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রফেসর আমানূল্লাহ আহমদ, মাননীয় উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সংগ্রহশালার কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এর পিছনের দেয়ালে রয়েছে গ্রাম বাংলার আবহমান দৃশ্য যা রিলিফ ওয়ার্কে নানা রঙের মাধ্যমে রূপ দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ করেন শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়। এ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- যার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের ধারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নকশা করেন স্থপতি খায়রুল এনাম। ১৯৭২ সালের ৯ই মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই শহীদ মিনারে রয়েছে চারটি বাহু যা উল্লম্বভাবে উঠে গেছে উপরের দিকে। বাহু চারটি উপরের দিকে বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ। এখানে চারটি বাহু দ্বারা ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। সুউচ্চ এ শহীদ মিনার চত্বর বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করে সর্বপ্রাণে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরটি বর্তমানে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। এ মুহূর্তে তেমন কোলাহল নেই। নীলাভ সবুজ ঘাসকে কেউ পদদলিত করছে না। অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আসবে আত্মার আত্মীয়। বন্ধুরা যখনই ফিরে আসবে তোমাদের নিজস্ব মতিহার ক্যাম্পাসে- ভুল করবে না একবার শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রদর্শন করতে। নতুনভাবে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত প্রায় ৯৫০ খানা বই সংগ্রহ করা হয়েছে। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রদর্শন করলে নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে।

সূত্র:
১. মো. বনি আদম, ‘বাংলাদেশের চারুশিল্পে মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতিফলন’ পি-এইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৫।
২. দৈনিক পত্রিকা সমকাল, ২০২০।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাখি

আনন্দ কুমার সাহা


(পূর্ব প্রকাশের পর) [রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাখি]


দোয়েল

ইংরেজি নাম : Magpie Robin বৈজ্ঞানিক নাম: Copsychus saularis | বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ফরাসী ও ওলন্দাজ পাখিদের নামের সঙ্গে এর মিল আছে। ফরাসী ভাষায় বলা হয় Shama dayal এবং ওলন্দাজ ভাষায় বলা হয় Dayallijster | বাংলাদেশে মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে এদেরকে বেশি দেখা যায়। জনবসতিতে মানুষের কাছাকাছি এদের দেখতে পাওয়া যায়। দোয়েল দেখতে বেশ মায়াবী। এরা একটু ছটফটে ধরনের।

প্রজননের সময় পুরুষ দোয়েলের শরীরের রঙ উজ্জ্বলতর হয়। গাছের ডালে বসে স্ত্রী দোয়েলকে আকৃষ্ট করার জন্য হরেক রকম সুরে ডাকাডাকি করে।

দোয়েলের খাবার তালিকায় আছে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ, কেঁচো, ধান, ভাত ইত্যাদি। ধান, পাট, শাক-সবজির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে সমাজের উপকারী পাখি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে দোয়েল। এই পাখির নামে বাংলাদেশের রাজধানীতে দোয়েল চত্ত্বর আছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মাঝে অবস্থিত। দোয়েলের আয়ুষ্কাল পনের বছর।

দোয়েল

সুইডেন-নরওয়েতে দোয়েল পাখি দেখা যায়। সুইডেন কিংবা নরওয়ে মানুষগুলো যেমন লম্বা, স্বাস্থ্যবান ঠিক দোয়েল পাখিগুলোও ঐ রকম বড় এবং স্বাস্থ্যবান। বাংলাদেশের ৪টি দোয়েলের সমান এক একটি দোয়েল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এদের বিচরণ আছে। তবে সংখ্যায় খুব বেশি নয়।


মাছরাঙা

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে নদী। এই নদীমাতৃক দেশের অতি পরিচিত একটি প্রজাতির পাখি হচ্ছে মাছরাঙা। আমাদের দেশে ১২ প্রজাতির মাছরাঙা পাখির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পৃথিবী ব্যাপী ৯৪ প্রজাতির মাছরাঙা রয়েছে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৪ প্রজাতির মাছরাঙা দেখা যায় (আমিনুজ্জামান, ২০১২)।

১। পাতি মাছরাঙা, Common Kingfisher, Alcedo althis
২। ধলাগলা মাছরাঙা, White-throated Kingfisher, Halcyon smyrnensis
৩। মেঘহও মাছরাঙা, Stork-billed Kingfisher, Pelargopsis capensis
৪। পাকড়া মাছরাঙা, Pied Kingfisher, Ceryle rudis

মাছরাঙা অনেক ধরনের প্রাণী শিকার করে, তবে তার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে মাছ। অন্যান্য শিকারের মধ্যে রয়েছে পোকামাকড়, ব্যাঙ, সরীসৃপ ইত্যাদি। সাধারণত জলাজয়ের পাশে গর্তে এরা বাসা তৈরি করে।

মাছরাঙা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় ৪০টি পুকুর, জলাশয় আছে। মাছও পাওয়া যায়। বসবাসের জন্য পরিবেশও আছে। তাই মাছরাঙা পাখিগুলোকে প্রায়ই বিভিন্ন জলাশয়ের আশেপাশে দেখা যায়। ৩৮,০০০ শিক্ষার্থী বর্তমানে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত। পাখিগুলো তাই স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারছে। তবে শিক্ষার্থীরা থাকলে তাদের প্রতিরক্ষার জন্য ভালো, যদিও তারা একটু ভয়ও পায়। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফিরে আসবে আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীরা তাদের মতিহার সবুজ চত্ত্বরে। আমরা তাদের আগমনের অপেক্ষায়।


বাজপাখি

ইংরেজি নাম : Common Kestrel, বৈজ্ঞানিক নাম: Falco tinnunculus | ঈগলের মতো শিকারি হিংস্র পাখি। দিনের আলোতে শিকার করে। এদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর। দৃষ্টিশক্তি প্রখর হওয়ার পিছনে বড় কারণ হচ্ছে Photoreceptors । মানুষের চেয়ে এ ধরনের পাখির রেটিনাতে প্রায় ৫ গুণ বেশি Photoreceptors থাকে।

মেয়ে বাজপাখি পুরুষ বাজপাখির চেয়ে আকৃতিতে বড় হয়। বাজপাখি সাধারণত নিজের থেকে ছোট আকৃতির জীবজন্তু যেমন মাছ, কাঠবিড়ালী, খরগোশ, ইঁদুর খেয়ে জীবনধারণ করে।

ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের জাতীয় পাখি বাজ। ১৯৮৯ সালে ১৫ই মার্চ অন্য একটি পাখির পরিবর্তে বাজপাখিকে ‘স্টেট বার্ড অব পাঞ্জাব’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় পরিবেশের কারণে বাজপাখিকে এখন আর পাঞ্জাব প্রদেশে দেখা যায় না।

বাজপাখি

বাজপাখি নিয়ে অনেক গল্প আছে। বয়স ৪০-এ আসার পর একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাজপাখিকে নিতে হয়। সিদ্ধান্ত সঠিক নিতে পারলে প্রায় ৭০ বছর পর্যন্ত এরা বেঁচে থাকতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন এক সময় উল্লেখ করবো।

এই পাখিগুলোকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে মধ্যে বিচরণ করতে দেখা যায়। এক জুটি বাজ প্রায়ই জিমনেশিয়ামের উপরে খোলা জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে জিমনেশিয়ামের পূর্বদিকের গাছেও তাদের বসতে দেখা যায়। স্টেডিয়ামের খোলা মাঠে উড়তে এরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ খোলামেলা। এ মুহূর্তে তেমন কোলাহল নেই, সবাই লকডাউনে, তাই পাখিগুলো পেয়েছে উত্তম সময়।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আরও পাখি আছে। ভবিষ্যতে বর্ণনা করার আশারাখি। ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখি আসবে- তাদের আশ্রয় এবং খাদ্যের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ক্যাম্পাসে প্রায় ৪০টি পুকুর-জলাশয় আছে, ত্রিশ হাজারের অধিক গাছ আছে। নিঃসন্দেহে পাখিরা এই ক্যাম্পাসে বসবাস করবে। পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

গত দু’তিন বছরে পাখিদের জন্য বট, কামরাঙা, ডুমুর, আমলকি, বন কাঁঠাল প্রভৃতি গাছ লাগানো হয়েছে। গত ১৭ই মার্চ ২০২০ জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য “শতবর্ষে শতপ্রাণ” শীর্ষক নামে ১০০টি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। গোরস্থান মসজিদ এলাকায় এ বছরই ৪০০টি আমগাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ৬ই জুলাই গৌরবের ৬৭ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি রয়েছে।

এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাখিরাও যেন মনোরম পরিবেশ পায় সেদিকেও দৃষ্টি প্রখর রয়েছে। প্রশাসন কখনও গাছ কাটতে চায় না- তবে অনেক সময় বিদ্যুতের লাইনের জন্য, নতুন ভবন তৈরি করার সময় বা ঝড়ে ভেঙে গেলে, উপড়ে গেলে তখন কিছু করার থাকে না।

৭৬ প্রজাতির পাখি থেকে বর্তমানে ১৫৯ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আশাকরি ভবিষ্যতে প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার চেষ্টা আমরা সবাই মিলে করবো।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা বিজয় অর্জন করেছে, আশাকরি করোনার বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হবো এবং ফিরে আসবো আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে।


লেখকঃ অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাখি

প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা


যারা কবিতা শোনে, যারা ফুলকে ভালোবাসে, গান ভালোবাসে নিশ্চয় তারা পাখিও ভালোবাসে। ক্যাম্পাসে কত ধরনের পাখি আছে হয়ত অনেকের জানা নেই। জানা না থাকারই কথা, সবাইতো আর পাখি নিয়ে গবেষণা করে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর শীতের সময় অতিথি পাখি (Migratory bird)
যেভাবে আসে, দেখতে বেশ ভালো লাগে। এ বছরও বেশ কয়েক হাজার অতিথি পাখি এসেছিলো। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একটি আলাদা গর্বের বিষয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১০ প্রকার জলজ অতিথি পাখি দেখা যায়। এরমধ্যে ৯৮ ভাগই ছোট সরালি। পরিযায়ী পাখি ২৫০০ থেকে ১০,০০০ মাইল দূরত্ব থেকে বাংলাদেশে আসে। হিমালয়ের পাদদেশ, সাইবেরিয়া এবং মঙ্গোলিয়া থেকে এই পরিযায়ী পাখি এসে থাকে। এরা একটানা ১১ ঘন্টা উড়তে সক্ষম। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও কম নয়। এবার প্রায় পাঁচশত অতিথি পাখি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন মাস অবকাশ যাপন করলো।

যখন পাখিগুলো খাবারের সন্ধানে পুকুর থেকে উড়ে যায় দেখতে বেশ ভালো লাগে। আবার যখন বিকেলে ফিরে আসে, বেশ সুন্দর দেখায়। আগের মতো পাখি শিকারীরা তৎপর নয়। কয়েকবছর পূর্বেও পদ্মার চর থেকে পাখি শিকার করে সাহেব বাজার হয়ে নিজেদের বাসায় যেত শিকারীরা। কেউ তাদেরকে নিষেধ করতো না। এমনকি রাজশাহী শহরে যখন অতিথি পাখি বিক্রি করতো, কেউ তাদের ধরিয়ে দিতো না বা প্রশাসনও তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতো না। বর্তমানে পাখি শিকার বন্ধ এবং বাজারেও কেউ বিক্রি করতে পারে না।

১৯৭৬ সালে ক্যাম্পাসে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ছিলো ৭৬। জানামতে ২০০৮ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিলো। তখন ক্যাম্পাসে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ছিলো ৮৫। পরবর্তীতে আরও একটি গবেষণা হয়েছে (আমিনুজ্জামান, ২০১২) সেখানে পাখির প্রজাতির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৫৯।

১৫৯ প্রজাতির পাখির মধ্যে অতিথি পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৩৮। দেশীয় পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১২১। তবে বাংলাদেশে ৮০৬ ধরনের প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। প্রফেসর আমিনুজ্জামানের প্রবন্ধে উল্লেখ আছে ৩০ প্রজাতির পাখি খুবই চোখে পড়ে এবং ৩২ প্রজাতির পাখির সংখ্যা খুবই কম, সব সময় দেখা যায় না। সচরাচর যাদের দেখা পাওয়া যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, বক, কাঠ ঠোকরা, মাছরাঙ্গা, সাতভাই, কোকিল, কাক, চিল, বাজ, পেঁচা ইত্যাদি।


কাক ও শালিক


ক্যাম্পাসে যাদের সবচেয়ে বেশী দেখা যায় তাদের মধ্যে কাক অন্যতম। রাজশাহী শহরে প্রায় ২০,০০০ মতো কাক দেখা যায়। ৪ বছর পূর্বে কাকের উপর একটি ছোট্ট গবেষণা করেছিলাম। ক্যাম্পাসের পাশে মেহেরচণ্ডী গ্রামে একটি জায়গা ছিলো, সেখানে প্রায় ২-৩ হাজার কাক দেখা যেতো। এক সময় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে এবং আশেপাশের গাছে প্রায় হাজার দেড়েক কাক দেখা যেতো।

এমনিভাবে কাঁটাখালী, শাহ্ মখদুম দরগার পাশে, পদ্মার টি বাঁধের শেষ প্রান্তে এবং কোর্টের শেষ প্রান্তে ছিলো এদের আবাসস্থল। যেহেতু কাকের মাংস কেউ খায় না। তাই তাদের সংখ্যা অনেক। সংখ্যা বেশী দেখা যায় শালিকেরও। বেশ কয়েক ধরনের শালিক দেখা যায় যেমন বামন শালিক, চিত্রা শালিক, ঝুন্টি শালিক, ভাত শালিক, গোবরে শালিক ইত্যাদি। বলা যেতে পারে এদের উপর কম অত্যাচার হয়, তাই তারা সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশী। ঢাকা যাওয়ার সময় সিরাজগঞ্জে হানিফ হাইওয়ে বাস টার্মিনালে প্রচুর লাল ঠোঁটবিশিষ্ট শালিক দেখতে পাওয়া যায়।

শালিক

এই প্রজাতির শালিক ক্যাম্পাসে কম তবে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে। প্রতিদিন সকালে চা খাওয়ার সময় যখন টোস্ট বিস্কুট গুড়া করে ছিটিয়ে দেয়া হয়- টোস্ট বিস্কুটের ৫-৬ টুকরা ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে উড়ে যায়, বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য। এটাকে বলা হয় Parental Care.


ঘুঘু


ইংরেজি নাম: Dove , বৈজ্ঞানিক নাম: Streptopelia chinensis । ঘুঘু অত্যন্ত ভিতু ও লাজুক প্রকৃতির পাখি। ঘুঘু প্রতিবার একজোড়া করে বছরে তিনবার ডিম দেয়।

দেখতে ভাল লাগে ঘুঘু, বর্তমানে খোলা প্যারিসরোডে বিচরণ করছে ঘুঘুগুলো। প্রতিদিন একজোড়া ঘুঘু আনুমানিক সকাল সাড়ে ছ’টায় আমার বাসার আঙ্গিনায় উপস্থিত হয়। আমি তাদের জন্য সরিষা রেখেছি। তারা খুব যত্ন করে তা খায়। তবে ঘুঘু একটু ভীতু প্রকৃতির। দু’জাতের ঘুঘুই ক্যাম্পাসে দেখতে পাওয়া যায়।

ঘুঘু

তবে Spotted ঘুঘু বা তিলা ঘুঘুর বিচরণ বেশী মনে হয়। একজোড়া ঘুঘু ঘুম থেকে উঠে বাহিরে লোহার রডের উপর বসে। একজন অপরজনকে ঠোঁট দিয়ে গা চুলকিয়ে দারুণ আদর করে। এরা অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির। ঘুঘু পাখিগুলো দেখতে বেশ সুন্দর এবং মায়াবী। বর্তমান সময়ে এদের আধিক্য লক্ষণীয়। কিন্তু তাদের দেখবে কে? জানিনা তারা কোথায় কেমন আছে?


বক


সবার পরিচিত একটি পাখি বক। জলাশয়ের মরা মাছ ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। এক একটি কলোনিতে শত শত বক একসাথে বাসা তৈরী করে।

প্রফেসর আমিনুজ্জামানের (২০১২) প্রবন্ধে উল্লেখ আছে, ১১ প্রজাতির বক ক্যাম্পাসে দেখতে পাওয়া যায়। যদিও আমি প্রাণিবিদ্যার ছাত্র তথাপি আমার পক্ষেও সহজে ওদের আলাদাভাবে চেনা মুশকিল। তবে তাপসী রাবেয়া হলের গাছে এবার বাসা বেঁধেছিলো নিশিবক। রাতের বেলায় শিকার করতো আর দিনের বেলায় ঘুমাতো। কেউ যদি খুব সকালে খালেদা জিয়া হল থেকে তাপসীর দিকে যান, দেখতে পাবেন অন্ততঃ ১০০টি নিশিবক কিভাবে শব্দ করছে। দারুণ উপভোগ্য।

বক

ক’দিন আগেই দেখতে পেলাম জোহা হলের পূর্বদিকের পুকুর থেকে বেশ বড় লম্বা সাদা বক একটি ২৫০ গ্রাম ওজনেরও বেশী একটি মাছ দুই ঠোঁটের মধ্য রেখে দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের বাঁধে। আমাদের দেখামাত্র মাছটি রেখে সাদা বড় বকটি উড়ে গেল। মাছটি তখনও লাফাচ্ছিলো।


গো-বক


ইংরেজি নাম : Cattle Egret, , বৈজ্ঞানিক নাম Bubulcus ibis | এদের মূল খাদ্য পোকামাকড়, গিরকিটি, ব্যাঙ, গরু-মহিষ-ছাগলের শরীরের পরজীবী পোকা ও ডাঁশ মাছি। এরা জোঁক খায় না। গবাদিপশুর নাকের ভেতরে জোঁক লাগলে গো-বক টেনে বের করে ফেলে দেয়।

জোক অতি বুদ্ধিমান, গবাদিপশুর এমন সব জায়গায় লাগে যেখানে পশুটি জিভ দিয়ে চাটতে পারবে না। চাটা দিতে পারলে জোঁক লেগে থাকতে পারে না। গো-বক তাই গবাদিপশুর পরম বন্ধু। গবাদিপশু হাঁটছে, নড়ছে ঝোপঝাড়, উড়ছে পোকামাকড়, খাচ্ছে গো-বকেরা।

কৃষি প্রকল্পের গরুগুলো যখন তাদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মাঠের দিকে ঘাস খেতে বের হয়, তাদের সঙ্গেও এই বক দেখা যায়। গরু হাঁটতে থাকে আর বকও পিছন পিছন হঁাটতে থাকে। গরু রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটে- জঙ্গলের মধ্যে যে পোকাগুলো থাকে, বক সেই পোকাগুলো আহার করে। অনেক সময় জমিতে লাঙ্গল দেয়া হয়। আর সেখানে দলবেঁধে বকগুলো আনাগোনা করে। কারণ মাটির ভিতর থেকে পোকা বের হয়। বক সেগুলো খেয়ে থাকে। এভাবেই তারা জীবনযাপন করে।

গো বকের রং বরফ সাদা কিন্তু এ সময় দেখছি ঠোঁট-মাথা-ঘাড়-বুক সোনালি-হলুদ। দেখে মনে হচ্ছিলো ভিন্ন প্রজাতির। আসলে প্রজনন মৌসুমে এদের রং কিছুটা পরিবর্তিত হয়।

ক্যাম্পাসে আপনি যখন খালেদা জিয়া হল থেকে তৃতীয় বিজ্ঞানভবনের দিকে হাঁটবেন বামদিকে তাকালে দেখা যাবে সাদাবকগুলো মাছ শিকারের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ধূসর রঙের বকগুলো ডোবার কিনারে ওত পেতে বসে থাকে। আমরা হয়তো সময়ের কারণে ঠিকভাবে উপভোগ করতে পারি না। কানি বকগুলো পুকুরের একপাশে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে কখন একটা শিকার পাবে। এভাবেই পক্ষীকূল ক্যাম্পাসকে সমৃদ্ধ করেছে।


ডাহুক


ইংরেজি নাম: White-breasted Waterhen, বৈজ্ঞানিক নাম: Amaurornis phoenicurus | জলাভূমির আশেপাশের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা এই পাখিটি মাঝারি আকৃতির।

রবীন্দ্রভবনের দক্ষিণ পাশে যে ডোবাটি আছে সেখানে বিচরণ করে ডাহুক। তবে রোকেয়া হলের পিছনের ড্রেনেও তাদের বিচরণ করতে দেখা যায়। মা সামনে, বাচ্চা ৩টি মাঝে বাবা পেছনে হাঁটছে, কি-না চমৎকার! লকডাউনের কারণে এ রকম অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারা যাচ্ছে। কি অদ্ভূত! ডাহুকের বুকের অংশটি সাদা, দেহের বাকি অংশ কালো। দেখতে বেশি বড় নয় বা ওজনও বেশি মনে হয় না। হালকা-পাতলা গড়নের। এতই হালকা শাপলার পাতার উপর কিংবা কচুরীপানার উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারে।

প্রজননের সময় প্রথম বৃষ্টিতেই রাতের বেলায় ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক শুনে সহজেই চিনতে পারা যায়। দেখতে আকর্ষণীয়। একটু বেশি ভীতু। কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই নিজেদের আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে যায়। ডাহুক পাখি বলছে খড়পশফড়হি-এ আমরা নিরাপদে আছি। ভাল আছি কিন্তু যাদের জন্য এ ক্যাম্পাস তারা না থাকলে আমাদেরও ভালো লাগে না। তোমরা কবে আসবে গো!


শামুকখোল


ইংরেজি নাম : Asian Openbill, বৈজ্ঞানিক নাম: Anastomus oscitans | রাজশাহী অঞ্চলে শামুকখোলের বেশ দেখা মেলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ক্যাম্পাস, জেলখানার পাশ্ববর্তী অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। কয়েক বছর পূর্বে কলোনি করেছিলো জেলখানার পূর্বদিকে এবং পুরাতন জিপিও’র পশ্চিম পাশের্ব। সুবিধাজনক অবস্থা ছাড়া এরা প্রজনন করে না।

কয়েকটি গাছে প্রায় শ’পাঁচেক শামুকখোল বাসা বেঁধেছিল। প্রচণ্ড শব্দ করে ডাকাডাকি করে। দুই বছর আগে দেখা গেল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা এবং তাপসী রাবেয়া হলের আম এবং মেহগুনি গাছে কলোনী করেছে। তারপরে দেখা মিললো রুয়েট ক্যাম্পাসে। সচরাচর যে সকল পাখি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরা দেখতে পাই তারমধ্যে শামুকখোল ভীষণ বড়।

এদের প্রধান খাবার শামুক, ঝিনুক। তৃতীয় বিজ্ঞানভবনের পশ্চিমদিকে যে পুকুর বা ডোবাটি আছে সেখানে এক সময় অজস্র শামুক-ঝিনুক পাওয়া যেতো। না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য এই ডোবা থেকে শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু তখন যে পরিমাণে শামুক-ঝিনুক পাওয়া যেত এখন আর পাওয়া যায় না। সম্ভবতঃ সে কারণে শামুকখোল পাখিগুলো স্থান পরিবর্তন করেছে।

শামুক খোল

এদের যদি খাবারের অভাব না ঘটে তাহলে এরা স্থান পরিবর্তন করে না। কয়েকদিন আগে বৃষ্টির পরে দেখা মিললো জোহা হলের পূর্বদিকে। তবে সংখ্যায় বেশী নয়, ১০-১৫ টি। বর্তমানে ক্যাম্পাসে কোন কলোনি নেই। হয়তো এদের মনে দুঃখ থাকতে পারে, রোকেয়া, রহমতুন্নেসা এবং তাপসী রাবেয়া হল থেকে যখন ক্লাসে যেত তাদের সঙ্গে পক্ষীকূলের দেখা হতো।

তারা এখন ক্যাম্পাসে নেই, তাই এই পাখিরা অভিমান করে অন্যত্র চলে গিয়েছে। হয়তো আবার ফিরে আসবে। ফিরে আসবে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের সেই মতিহার সবুজ চত্ত্বরে। চলবে……


লেখকঃ উপ-উপাচার্য ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী

প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা


আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী। বাবা-মা’র কনিষ্ঠতম সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৬১ সালের ৭ই মে (বাংলা ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথকে মনে করা হয় বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক।

তিনি ছিলেন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীত স্রষ্টা, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু, বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

মৃত্যুর সাত দিন আগেও রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯১৫টি গান রচনা করেন এবং ২০০০ এর অধিক ছবি এঁকেছেন।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song offerings’ এর জন্য নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি আমেরিকার বোস্টন এবং হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আমন্ত্রণে বক্তব্য প্রদান করেন। রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করেন। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, জাপান, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরী, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, গ্রীস, মিশর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইরান, ইরাক, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা এর মধ্যে অন্যতম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।

পারিবারিক জীবন

কবিগুরু ১৮৮৩ সালে ২২ বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৮৮৬ সালে তঁাদের ঘর আলোকিত করে প্রথম কন্যা সন্তান মাধুরীলতার জন্ম হয়। ১৮৮৮ সালে জন্ম হয় তঁার প্রথম পুত্র রথীন্দ্রনাথের। ১৮৯০ সালে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান রেনুকার পিতা হন। ১৮৯৪ সালে তৃতীয় কন্যা সন্তান মীরা এবং ১৮৯৬ সালে পুত্র শমীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করে।

পারিবারিক জীবনে তাঁর বিয়োগব্যথাও কম নয়, ১৯০২ সালে কবিগুরুর স্ত্রী মারা যান। এর ৬মাস পরে মারা যায় দ্বিতীয় কন্যাসন্তান রেনুকা। ১৯০৫ সালে মারা যান বাবা দেবেন্দ্রনাথ, ১৯০৭ সালে শমী মারা যায়। ১৯১৮ সালে মারা যায় প্রথম সন্তান। তঁার জীবনে কষ্ট ছিলো, দুঃখ ছিলো, ছিলো বেদনা কিন্তু তাঁর সৃষ্টিশীল কাজ কখনো থেমে থাকেনি।

রবীন্দ্রনাথের জীবনে দু-একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেষ করবো। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে মহাত্মা গান্ধী ‘ঈশ্বরের রোষ’ বলেছিলেন, কবিগুরু গান্ধিজীর এ বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন। প্রেম সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন- প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে রস নিবিড় হয় না। তিনি এও বলেছিলেন- আগুনকে যে ভয় পায়, সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারে না।

বিশ্বকবি ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট ৮০ বছর বয়সে কিডনি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১৫৯তম জন্মজয়ন্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি জানাই আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।


লেখকঃ উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্যারিস রোড

প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে অন্যরকম আকর্ষণ প্যারিস রোড। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই প্যারিস রোডের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য লাগানো হয়েছিলো গগন শিরীষ (Albizia richardiana) । ইটালির বিশিষ্ট ব্যক্তির নামানুযায়ী গগন শিরীষের বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয় Albigia sp.।

গাছগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগানোর পিছনে যার অবদান বেশী তিনি হচ্ছেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম প্রফেসর আলী মো. ইউনুস। বর্তমানে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রফেসর ড. সাবরিনা নাজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের দায়িত্ব পালন করছেন। রাস্তার দু’ধারে লাগানো গাছগুলো বিশাল লম্বা। দু’পাশের ডালগুলো একত্রিত হয়ে রাস্তাটিকে ছাতার মতো আচ্ছাদিত করে রেখেছে যা দেখতে খুবই চমৎকার লাগে।

এই ধরনের আচ্ছাদনকে জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় Canopy । বর্তমানে গাছে পুরাতন পাতা ঝরে নতুন পাতা এসেছে। তাদের সৌন্দর্য অপূর্ব সুন্দর। এছাড়াও প্রতিদিন প্যারিসরোড ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার রাখা হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিন অতি কষ্ট করে ঝাড়– দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার রাখে। রাস্তার দু’পাশে যে জায়গায় গগন শিরীষ ঝড়ে ভেঙে ফাঁকা হয়েছে- সে জায়গায় বিকল্প হিসেবে কাঠবাদাম গাছ লাগানো হয়েছে।

গত দু’বছরে কিছু গাছ যেখানে সূর্যের প্রচুর আলো পেয়েছে বেশ বড় হয়েছে এবং দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। এছাড়াও রয়েছে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবনের দেওয়ালের পাশে লাগানো গোলাপ গাছগুলো। কিছুদিন আগে গাছে প্রচুর ফুল ফুটেছিলো দেখতে ভীষণ ভাল লাগছিলো।

তবে গগন শিরীষ গাছগুলো বর্তমানে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২-৩ বছরে ঝড়ে অনেক গাছ উপড়ে গেছে এবং ডাল ভেঙে যাওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ৮-১০টি লাইটপোস্ট ভেঙে গিয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ২-৩ দিন পশ্চিমপাড়াসহ অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক আলো পাওয়া যায়নি। উপাচার্য মহোদয়ের বাংলোর দেয়াল ২-৩ বার ভেঙে গিয়েছে।

এগুলো মেরামত করতে বেশ সময় লাগে এবং অর্থও ব্যয় হয়। গত বছর গাছ ভেঙে নাটোরের একজন ভদ্রলোকের প্রিমিও গাড়ি ভেঙে চুরমার হয়েছে তবে সৌভাগ্যবশত: ভদ্রলোকের শারীরিক কোন ক্ষতি হয়নি। তাই ঝড়ের সময় প্যারিস রোড দিয়ে চলাচল না করাই ভালো। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এই দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য কি করা যেতে পারে? কয়েক বছর পূর্বে মৃতপ্রায় ডালগুলো কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো কিন্তু শিক্ষার্থীরা গাছ জড়িয়ে ধরে ডাল কাটায় বাঁধা দিয়েছিলো। গত বছর অতিবর্ষণের সময় শিকড়সহ গাছ উপড়ে গিয়ে সিনেট ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিলো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জানিয়েছেন- যেহেতু গাছের পাশদিয়ে মাটির ড্রেন আছে তাই গাছগুলো উপড়ে যায়। কথাটি একেবারে মিথ্যা নয় কিন্তু সিনেট ভবন, প্রশাসন ভবন-২ এবং শহীদ মিনারের সামনে কোন ড্রেন নেই, সেখানেও গাছ উপড়ে যায়, ডাল ভেঙে ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু কেন এমন হয়? গাছের নিজস্ব আয়ুষ্কাল আছে। যে গাছ বেশী বৃদ্ধি পায় সে গাছে ঝড়ও লাগে বেশী। এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি করতে পারে? শিরীষ গাছগুলো বিশাল উঁচু, ঝড়ে ভাঙবে, ক্ষতিও হবে প্রচুর, গাছও কাটা যাবে না- তাহলে করণীয় কি?


লেখকঃ উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা যোদ্ধাদের কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই

অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা


১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলো, দু’লক্ষেরও অধিক মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছিলো। বাঙালি জাতি সেই বীর শহীদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে সম্মান জানিয়েছেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি।

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বাঙালি জাতি আর একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। বাঙালি জাতি শুধু একা নয়। সারাবিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ যুদ্ধে আজ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। যুদ্ধ এখনও থামেনি, কতদিন চলবে তাও বুঝতে পারছি না।

যাঁরা এ যুদ্ধে বিশেষ করে বাংলাদেশে সম্মুখ সমরে আছে, তাঁদের প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষত যে সকল ডাক্তার, নার্স, আয়া সরাসরি কোভিড-১৯ এর সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করছেন, তাঁদেরকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এঁদের সঙ্গেই আছেন সিভিল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, র‌্যাব এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাঁদের অবদানও আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

সাংবাদিক বন্ধুরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায়, পাড়া-মহল্লায়, হাসপাতালে করোনা বিষয় নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছেন তাঁদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। যে মুহূর্তে দাফন করবার জন্য নিকট আত্মীয়রা এগিয়ে আসছেন না, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ এগিয়ে আসছেন, তাদেরকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানাই তাদেরকেও যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আমরা মানসিকভাবে আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকবো। এ যুদ্ধে জয়ী আমরা হবোই।


লেখকঃ উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন রাবি উপ-উপাচার্য

ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি প্রতিনিধিঃ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) থাবায় অসুস্থ পৃথিবীর পাশে দাঁড়ানো চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, গবেষক সাংবাদিকসহ সকল স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।

শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বাঙালি জাতি আর একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। বাঙালি জাতি শুধু একা নয়। সারাবিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ যুদ্ধে আজ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। যুদ্ধ এখনও থামেনি, কতদিন চলবে তাও বুঝতে পারছি না।

যাঁরা এ যুদ্ধে বিশেষ করে বাংলাদেশে সম্মুখ সমরে আছে, তাঁদের প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষত যে সকল ডাক্তার, নার্স, আয়া সরাসরি কোভিড-১৯ এর সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করছেন, তাঁদেরকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এঁদের সঙ্গেই আছেন সিভিল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, র‌্যাব এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাঁদের অবদানও আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’

এছাড়া সাংবাদিক বন্ধুরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায়, পাড়া-মহল্লায়, হাসপাতালে করোনা বিষয় নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছেন তাঁদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। যে মুহূর্তে দাফন করবার জন্য নিকট আত্মীয়রা এগিয়ে আসছেন না, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ এগিয়ে আসছেন, তাদেরকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানাই তাদেরকেও যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আমরা মানসিকভাবে আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকবো। এ যুদ্ধে জয়ী আমরা হবোই।

তিনি আরও বলেছেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলো, দু’লক্ষেরও অধিক মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছিলো। বাঙালি জাতি সেই বীর শহীদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে সম্মান জানিয়েছেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। তাঁদেরও আমরা ভুলি নাই। পৃথিবী যতদিন থাকবে এধরনের আত্মত্যাগী যোদ্ধারা সকলের হৃদয়ে অবস্থান করবে।