আমাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকাটা আনন্দের

 

চৌধুরী মাসাবি:গেল বছরের ১৬ মার্চ, দেশে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া করোনার সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তড়িঘড়ি করেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেন। বাকি যারা ছিলেন তারাও আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলেন।

এরপর একে একে কাঁঠাল তলা, বাবুই চত্বর, মুক্ত মঞ্চ, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হারিয়ে ফেললো তাদের চিরচেনা রূপ। সময়টা এমন ছিলো যেন শহীদ মিনারের বেদীতে কত হাজার হাজার বছর ক্যাম্পাসের জুটিগুলো গল্প করতে আসে নাই। কেন্দ্রীয় মাঠটা যেন কোনো কাল ঘুমে ঘুমোচ্ছিল। বিষাদময় শূন্যতা ছড়িয়ে গেল গোটা ক্যাম্পাসে।

এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ নয় মাস। তারপর ডিসেম্বরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নেওয়া শুরু করলে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবার মুখর হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এতে কিছুটা হলেও আগের রূপ ফিরে পায় কুবি। আড্ডা জমে উঠে মুক্ত মঞ্চ, কাঁঠাল তলা, আর ক্যাম্পাসের আশেপাশের টংগুলোতে। সকলে যেন এক রুদ্ধশ্বাসে কাটানো সময় থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচল।

তবে এই উচ্ছ্বাস বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাস দুয়েক না যেতেই আবারও নির্দেশ আসে মহামারীর দ্বিতীয় থাবা থেকে বাঁচতে বন্ধ করতে হবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান পরীক্ষা। ঠিক সেই মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় আবারও বন্ধ হয়ে যায়। তবে তারুণ্য আর মহামারী যেন একে অপরকে মানতে নারাজ। ক্যাম্পাস খোলা আর পরীক্ষা চলমান রাখার দাবিতে আন্দোলন করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানববন্ধন আর মৌন মিছিল পালন করলেও শেষমেষ করোনার কাছে হার মানতে হয় শিক্ষার্থীদের। করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্যাম্পাস। আবারও নিস্তব্ধতার চাদরে ঢেকে যায় কুবি।

কিন্তু কিছু মানুষ ছিলেন যারা বাড়ি যেতে পারেননি। যাদের কোনো ছুটি হয়নি। বৃক্ষের মত ছায়া হয়ে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রেখেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে। জনমানবশূন্য এই পরিবেশ তাদের কাছেই বা কেমন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অভিজিৎ চৌধুরী তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ক্যাম্পাস খোলা থাকলে আমাদের কাজের চাপ বেশি থাকে। এখন শিথিল আছে তবে আমার কাছে ঐ সময়টাই ভালো লাগে। সারাক্ষণ ছেলেমেয়েদের চলাচল থাকে। সময়ও কাটে দেখতে দেখতে। আমরাও চাই ক্যাম্পাস আবার আগের মত হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সুপার ভাইজার মুনির মুন্সির সাথে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাটা আমাদের জন্যেও কষ্টের। খোলা থাকলেই আমরা খুশি।

অনেকটা দুঃখ প্রকাশ করে তিনি জানালেন, ক্যাম্পাস বন্ধ। শিক্ষক, কর্মকর্তা, ছাত্র সবাই ছুটিতে কিন্তু আমরা কর্মচারী যারা আছি তাদের ছুটি নাই। সামনে একটা ঈদ। ঐটাই বাড়ি যাব, তাও ছুটি নাই।

জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনায় এমন দায়িত্ব পালন করছি। একটা টাকা ঝুঁকি ভাতা জোটেনি। তবে এত কিছুর পরেও চাই, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক অতি শীঘ্রই। আমাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকাটা আনন্দের।

বলা হয়ে থাকে, নীরবতা আর শূন্যতা শব্দ দুটো একে অপরের হাত ধরে চলে। আর এই নীরবতা প্রায় বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যদি সেখানে শূন্যতার দায় থাকে।

নিরাপত্তা কর্মীদের নির্ঘুম রাত আর একাকী দুপুর লালমাটির ক্যাম্পাসটাকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রেখেছে।

কেউ থাকুক আর না থাকুক তারা সর্বদা জাগ্রত। তারা বলছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো নেই পৃথিবীর ন্যায়। মহামারী কাটিয়ে আবারও কোলাহলপূর্ণ হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, লাল- নীল বাসগুলো আবারও আগের মত দাপিয়ে বেড়াবে তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে, ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবারও জমবে আড্ডা এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।