আমেরিকায় নতুন প্রেসিডেন্ট: মুসলিমদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ!

মুহিব মাহমুদঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের পরিবর্তন হয় ঠিকই কিন্তু তাদের পররাষ্ট্রনীতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না,কথাটি বহুল প্রচলিত এবং বাস্তবিক অর্থে যার সত্যতাও রয়েছে। এই কথাটির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ মুসলিম বিশ্বে মার্কিন বাহিনীর বছরের পর বছর ধরে চালানো আগ্রাসন,যেটি যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টই বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বরং নতুন করে এমন মুসলিম দেশগুলোকে টার্গেট করেছে যেখানে তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক সার্থ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি গণতান্ত্রিক দেশ যাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্য সব দেশের তুলনায় ভিন্ন।এখানে পপুলার ভোট বেশি পেলেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই বরং যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি অঙ্গরাজ্য ও ১টি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট মিলিয়ে মোট ৫৩৮ টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ২৭০ টি পেলে সেই প্রার্থীকে বিজয়ী বলা হয়।এই পদ্ধতিটি ১৭৮৯ সাল হতে অর্থাৎ আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের আমল থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যমান।

আমেরিকার ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন আগামী ২০শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন।তিনি হয়তো মুসলিমদের জন্য শান্তির বাহক হবেন নাহ অথবা সিরিয়া,ইয়েমেন,ইরাক কিংবা আফগানিস্তানের মাটিতে মার্কিন আগ্রাসন বন্ধও করবেন না।

তবে আশারবানী হচ্ছে জো বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে ১৩টি মুসলিম দেশের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন এবং ইরানের সাথে করা ছয় বিশ্ব শক্তির পরমাণু চুক্তিতে আমেরিকাকে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।যার ফলে মধ্যপ্রাচ্য তথা হরমুজ প্রণালীতে কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে আসতে পারে।

পারস্য উপসাগরে প্রবেশ করতে হলে ২১ মাইল সরু হরমুজ প্রণালীর প্রয়োজন হয়,যেখান দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত তেল রপ্তানি হয় এবং এই প্রনালী নিয়ে ইরান আর আমেরিকার মধ্যে যদি কোনো যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে পুরো মুসলিম বিশ্বকে এর ফল ভোগ করতে হবে।কেননা ইরানের সমর্থক হিসেবে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ,ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী কিংবা ইরাকের কাতাইব হিজবুল্লাহও ইরানের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

ট্রাম্প তার চার বছরের শাসনামলে শিয়া প্রধান ইরানকে চাপে রাখার জন্য অনেক কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন,সেটার বহিঃপ্রকাশ তিনি ঘটিয়েছেন ইরানের ইসলামী রেভুলেশনারি গার্ড বাহিনীর ‘কুদস্ ফোর্সের’ শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ৪টি মুসলিম প্রধান দেশকে বাধ্য করেছেন অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে এবং ইহুদিদের তুষ্ট করার জন্য সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের ভূমি হিসেবে স্বীকৃতি ও তেল আবিবের পরিবর্তে ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম বলে ঘোষনা দিয়েছেন,যেটি অন্য কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কখনো সাহস করেনি,যার ফলে তিনি ১৯৪৮ সাল থেকে চলে আসা ফিলিস্তিনের ব্যাপারে মার্কিন নীতি ভঙ্গ করেছেন এবং স্পষ্টত তিনি মুসলিমদের পিঠে ছুরি মেরেছেন।

তবে এই ক্ষেত্রে জো বাইডেন একটু ভিন্ন,তিনি ট্রাম্পের মত এতটা ইসলাম বিদ্বেষী কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদেও বিশ্বাসী না।বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে চলে আসা ফিলিস্তিনিদের উপর অমানবিকতা হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হবে নাহ তবে উদারপন্থী বাইডেন ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলি আগ্রাসন অল্প হলেও বন্ধের চেষ্টা করবেন।

সবথেকে বড় কথা,ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন ক্ষ্যাপাটে মানুষের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬৮০০ পারমাণবিক বোমার বোতাম থাকার ফলে পুরো বিশ্ব একটা হুমকির ভিতর ছিলো।এখন জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় কিছুটা হলেও সেই হুমকি কেটে গেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা জো বাইডেন দুজনের কেউই মুসলিমদের প্রকৃত বন্ধু নয়। সুতরাং মুসলিম দেশগুলোকে অবশ্যই আমেরিকা প্রীতি বন্ধ করতে হবে এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে সর্বাত্মক মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।এমন একদিন হয়তো আসবে যেদিন নাগোরনো কারাবাখের মতো সিরিয়ার গোলান মালভূমি,ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও পবিত্র শহর জেরুজালেম সহ সমগ্র বিশ্বে মুসলিমদের বিজয়ের ধ্বনি শোনা যাবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।