ঐস্বর্গীক বগুড়ার, নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য

ইসরাত জাহান ইতি


বগুড়া বুক চিরে বয়ে চলা করতোয়ার কলকল শব্দে মুখরিত বগুড়ার আকাশ বাতাশ। কোকিলের কুহু কুহু শব্দে মুখরিত কাঞ্চকানন। সোনালী রোদের আভায় চিক চিক করে পুণ্ড্রনগর যা একসময় ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী।

প্রাচীন বগুড়া শহরটি করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত । নদীটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বগুড়াকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, দক্ষিনে সিরাজগঞ্জ জেলা, পুর্বে যমুনা নদী এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা।

অপূর্ব এ্ই বগুড়াকে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলা হয়। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।

১৮২১ সালে এটি জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর আয়তন: ২৮৯৫.০১ বর্গ কিমি এবং মোট উপজেলা ১২ টি। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ গড়ে উঠেছিল এই বগুড়া জেলাতেই। ইতিহাস থেকে জানা যায় এই বগুড়া জেলা বাংলার প্রাচীনতম একটি শহর ।

ভারতের রাজা “আশকা” বাংলা জয় করার পর এর নাম রাখেন পুণ্ড্রবর্ধন । প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এ বগুড়া জেলা যার বর্তমান নাম মহাস্থানগড়। আবার অনেকের মতে, বগুড়ার প্রাচীন নাম বরেন্দ্রভূমি ও পৌণ্ড্রবর্ধন। আজকের রাজশাহীও এই অঞ্চলভুক্ত ছিল। অঞ্চলটি ৯ থেকে ১২ শতক সেন রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়। পরে ১৩শ শতকের শুরুতে তা মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে।

পৌরাণিক এবং প্রাচীনকালের ইতিহাসে বগুড়া দখল করে আছে নান্দনিক বৈচিত্র্য । চমৎকার কারুকাজখচিত মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনিতে এখানকার স্থাপনাগুলো অত্যন্ত চমৎকার । ঐতিহাসিকদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনের অধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ ।

এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ । মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি রাজাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল এই প্রাচীন জনপদ বগুড়া । ১২৭৯ – ১২৮২ পর্যন্ত এই বগুড়া অঞ্চলের শাসক ছিলেন সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন । তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া ।

ইংরেজি উচ্চারন ‘বগড়া’ (English: Bogra) হলেও বাংলায় কালের বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে ‘বগুড়া’ শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২ এপ্রিল ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিখ্যাত “মহাস্থানগড়” যা বগুড়া শহরে থেকে ১১ কিঃমিঃ উত্তরে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সবার কাছেই একটি পবিত্র স্থান। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বহু লোক সমাগম ঘটে।

এছাড়াও আছে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাসর ঘর, গোকুল মেধ, বসু বিহার, যোগীর ভবণ,‍‍‌ বিহার, ভিমের জঙ্গল, খেরুয়া মসজিদ, বড় মসজিদ, শাহ সুলতান বলখীর মাযার, পাঁচপীর মাযার, পরশুরামের প্রাসাদ, পল্লী-উন্নয়ন একাডেমী, সাউদিয়া পার্কসিটি, কারুপল্লী, ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক, শাহনেওয়াজ শিশুবাগান, উডবার্ন পার্ক, দৃষ্টিনন্দন পার্ক, বিজয়াঙ্গন ও শহীদ চান্দু নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। বগুড়া শহরে রয়েছে “নওয়াব প্যালেস” যা ব্রিটিশ আমলে “নীলকুঠী” নামে পরিচিত ছিল । এখানে থাকার জন্য রয়েছে চার তারকা বিশিষ্ট “নাজ গার্ডেন” ।

করতোয়া স্রত জেলা ভূমিতে জম্মগ্রহণ করেছেন প্রোথিতযশা অনেক কবি সাহিত্যিক । তাঁদের রচনা কর্মে একদিকে যেমন এ জেলার গৌরবময় ভূমিকাকে উজ্জল করেছে, তেমনি এদেশের সাহিত্যিাঙ্গনকে করেছে গতিশীল ও সমৃদ্ধ। এ জেলার প্রাচীন কালের কবি সাহিত্যিকদের রচনাবলী দ্বারা আমরা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে বার বার ফিরে পাই। লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কবি জীবনকৃঞ্চ মৈত্র। তিনি বাংলা সাহিত্যির ইতিহাসে মনসা মঙ্গলের কবি হিসাবে পরিচিত।

জীবন কৃঞ্চ মৈত্রের কাব্যেবের নাম ‘‘ পদ্ম পুরন’’, এতে চাঁদসওদাগর মনসা, বেহুলা লক্ষিদরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ডাঃ কহরউল্লাহ এর লেখা ‘‘মহাস্থান’’ নামক ঐতিহাসিক উপন্যাস থেকে মহাস্থানগড়ের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞ্যাত হওয়া যায়। তাছাড়া এ উপজেলায় তদানিনত্মন পাকিসত্মানের প্রধানমন্ত্রী জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধূরী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক রোমেনা আফাজ, এম.আর আকতার মুকুল, বি.এম ইলিয়াস, ভাষা সৈনিক গাজীউল হক , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জেড ফোর্সের প্রধান মেজর (অবঃ) জিয়াউর রহমান, পলস্নী কবি রোসত্মম আলী কর্ণপুরী, কণ্ঠশিল্পি আঞ্জুমান আরা এবং রাষ্ট্রপতির শিল্পউদ্যোক্তা পুরস্কারপ্রাপ্ত ওয়ান ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের অন্যতম সিআইপি কৃষিবিদ কে.এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান জম্ম গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের বগুড়া জেলা একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর। এখানে বিসিকসহ ছোট ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র ফাউন্ড্রি শিল্পখ্যাত এই বগুড়া জেলায়। ফাউন্ড্রি শিল্পের পাশাপাশি বর্জ্য তুলা, ঝুট কাপড়, বেডসীট মশারী কাপড়, সাবান, জুট মিলস, পেপার মিলস, ফিড মিলস, সিমেন্ট কারখানা, পোল্ট্রিশিল্প সহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে উঠেছে। এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন হয়। যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তান্তি বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ইহা শিল্পের শহর নামে পরিচিত।

উপজেলাটি খাদ্য শস্য ও শাকসবজি উৎপাদনের ভান্ডার হিসেবেও বেশ খ্যাত। এখানকার মরিচ ও দই খুবই বিখ্যাত। বগুড়ার দই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বগুড়া জেলার বিখ্যাত মিষ্টি। কথিত আছে, ষাটের দশকের প্রথম ভাগে বৃটেনের রানী এলিজাবেথ থেকে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছিল এই বগুড়ার দই।

পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠিয়েছিলেন এই বগুড়ার বিখ্যাত দই। আবার এখানকার মাটি বেশ উর্বর হওয়ায় প্রচুর শস্য উৎপাদন হয় । বিগত কয়েক বছরে বগুড়ায় লাল মরিচের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা ১০০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে । সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়া শহরের প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নতি সাধিত হয়েছে । উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত বগুড়া সদর উপজেলার উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশ্বরোড নামক প্রশসত্ম সড়ক।

বাঙালি সংস্কৃতি বলতে সাধারণত বোঝানো হয় বিশেষ সমাজের সাহিত্য, সংগীত, ললিত কলা, ক্রিড়া, মানবিকতা, জ্ঞানের উৎকর্ষ ও আরো অনেক শান্তি ও সৌন্দর্যের সমাহার। আঞ্চলিক সংস্কৃতি বলতেই আমরা বাঙালি সংস্কৃতি বুঝি । প্রতিটি আঞ্চলের নিজস্ব কিছু ভাষা ও সংস্কৃতি থাকে । তেমনি সুফি, মারাঠি, লালন ইত্যাদি নিয়ে বগুড়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

তাছাড়া জারিগান, মারফতি, ভাটিয়ালি, কবি গান, কীর্তন, যাত্রাপালা, মেয়েলি গীত, প্রবাদ, প্রবচন, ধাঁধাঁ ইত্যাদি বেশ উল্লেখযোগ্য । শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বগুড়ার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক বলয়। মানুষ প্রকৃতির সন্তান । সজীব প্রকৃতি মানে শুধু বৃক্ষ বা অরণ্য নয়। আমরা মানুষেরাও এই প্রকৃতির অংশ । এ জেলার প্রকৃতি অপরুপ সাজে সজ্জিত । মানুষগুলো প্রকৃতির মতোই সহজ সরল ও সংস্কৃতিমনা ।

ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে এখানকার প্রকৃতি মুখরিত হয়ে ওঠে । এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য যেনো ছবির মতো পটে আঁকা। শিল্পের রংতুলিতে আঁকা যেন এখানকার গ্রামীন মেঠো পথগুলো । প্রকৃতি যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে! কী রোদ কী বৃষ্টি, সকল বাঁধা উপেক্ষা করেই ভ্রমণপিপাসুরা সারা দিচ্ছে তার ডাকে ।

লেখকঃ তরুণ নারী উদ্যোক্তা।

নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

ইসরাত জাহান ইতি


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নাটোর জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা। এ জেলার উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। জেলাটির আয়তন প্রায় ১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার।

বর্তমানে এক হাজার চারশত চৌত্রিশ গ্রাম ও সাতটি উপজেলা তথা নাটোর সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা নিয়ে এ জেলা গঠিত।

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। প্রকৃতি, পরিবেশ, যাতায়াত ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, অর্থনীতি সবই নদীর সঙ্গে সম্পর্কিত। নাটোর জেলার উল্লেখযোগ্য নদ-নদীর মধ্যের রয়েছে মুসাখান, নন্দকুঁজা, বারনই, গোদাই, বড়াল, খলিসা ডাঙ্গা, গুনাই, নারদ নদ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, নারদ বাংলাদেশের অতি প্রাচীনতম নদের একটি। এ নদকে ঘিরে প্রায় তিনশত বছর আগে নাটোর শহরের গোড়াপত্তন হয়। এরপর ধীরে ধীরে নারদ নদের চারপাশের উর্বর ভূমিকে কেন্দ্র করে বসতি গড়ে ওঠতে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল খরস্রোতা এই নারদ নদ। নাটোরের রাজা রামজীবন ও রঘুনাথ আঠারো শতকের প্রথম দিকে এখানে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন।

প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্বিক ঐশ্বর্য্যমন্ডিত বরেন্দ্র ভূমি সংলগ্ন এ নাটোর জেলা। কথিত আছে, নাটোর জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নারদ নদীর নাম থেকেই ‘নাটোর’ শব্দটির উৎপত্তি। ভাষা গবেষকদের মতে মূল শব্দ হচ্ছে, ‘নাতোর’ । উচ্চারণগত কারণে এটি ‘নাটোর’ হয়েছে। নাটোর অঞ্চলটি নিম্নমুখী হওয়ায় চলাচল করা ছিল খুব কষ্টকর। এই জনপদের দুর্গমতার বোঝাতেই বলা হতো ‘নাতোর’। এর অর্থ দুর্গম।

আবার অনেকেই বলেন, বর্তমান নাটোর শহরের ওপরেই একসময় চলনবিলের বিস্তৃতি ছিল। জনৈক রাজা নৌকায় চড়ে সেই স্থানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাপকে ব্যাঙ ধরেছে দেখে নৌকার মাঝিদের ‘নাও ঠারো’ অর্থাৎ নৌকা থামাও বলেছিলেন। হিন্দু ধর্মমতে বেঙ সাপকে ধরলে মনসাদেবী ক্রোধান্বিত হন। সুতরাং নৌকা থামিয়ে মনসা পুজা করাই হিন্দু রাজার পক্ষে অধিক সংগত। তাই ‘নাও ঠারো’ কথা হতেই নাটোর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে অষ্টাদশ শতকে নাটোরের রাজবংশের উৎপত্তি। রাজা রামজীবন রায় ছিলেন নাটোর রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। মান-মর্যাদা ও বিষয় সম্পত্তিতে নাটোরের রাজা ছিলেন উত্তরবঙ্গের মধ্যে অসামান্য। কথিত আছে লস্কর খাঁ তার সৈন্য-সামন্তদের জন্য যে স্থান (বর্তমান পুঠিয়া এলাকা) হতে রসদ সংগ্রহ করতেন তা কালক্রমে লস্করপুর পরগনা নামে রুপান্তর হয়। এই পরগনার একটি নিচু চলাভূমির নাম ছিল ছাইভাংগা ।

১৭১০ সনে রাজা রামজীবন রায় এ স্থানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী স্থাপন করেন। দিনেদিনে তা প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান, মন্দির ও মনোরম অট্রালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নগরিতে পরিনত হয় উঠে । রামজীবনের পালিত পুত্র রামকান্ত রায়ের সাথে বগুড়া জেলার ছাতিয়ান গ্রামের আত্মারাম চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ভবানীর বিবাহ হয়। বিয়ের সময় ভবানীর বয়স ছিল ১৫ বছর। রাজা রামজীবন রায় ১৭৩০ সালে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রামকান্ত রায়কে রাজা এবং দেওয়ান দয়ারাম রায়কে তার অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেও প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ রাজকার্যাদি পরিচালনা করতেন দয়ারাম রায়। তাঁর দক্ষতার কারনে নাটোর রাজবংশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটে।

১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্ত পরোলোকগমন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাণী ভবানী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এবং রাণী ভবানী নায়েব দয়ারামের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিঘাপতিয়া পরগনা উপহার দেন যা এখন উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। বর্তমান উত্তরা গণভবনটি দয়ারামের পরবর্তী বংশধর রাজা প্রমদানাথের সময় রূপকথার রাজ প্রাসাদে উন্নীত হয়। ১৭৮২ সালে ক্যাপ্টেন রেনেল এর ম্যাপ অনুযায়ী রাণী ভবানীর জমিদারীর পরিমাণ ছিল ১২৯৯৯ বর্গমাইল। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য সুবেদার মুর্শিদ কুলী খান বাংলাকে ১৩ টি চাকলায় বিভক্ত করেন। এর মধ্যে রাণী ভবানীর জমিদারী ছিল ৮ চাকলা বিস্তৃত।

বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ জেলার পুখুরিয়া পরগণা এবং ঢাকা জেলার রাণীবাড়ী অঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলাব্যাপী বিস্তৃত ছিল তার রাজত্ব । এ বিশাল জমিদারীর অধিশ্বরী হওয়ার জন্যই তাকে মহারাণী উপাধী দেয়া হয় এবং তাকে অর্ধ-বঙ্গেশ্বরী হিসাবে অভিহিত করা হতো। ১৮০২ সালে বড়নগর রাজবাড়ীতে ৭৯ বছর বয়সে রাণী ভবানী মৃত্যুবরণ করেন।

প্রাচীন জনপদগুলো সচরাচর সংস্কৃতির ভান্ডার ও বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে। নাটোর ও তার ব্যতিক্রম নয়। এ অঞ্চলে রয়েছে আঞ্চলিক অসংখ্য প্রবাদ-প্রবচন পালাগান, লোকসংস্কৃতি, পল্লীগীতি, গ্রাম্য ধাঁধা যাকে নাটোরের কোনো কোনো অঞ্চলে ‘মান’ বলা হয় । বৈচিত্র্য এ প্রবাদ-প্রবচনে কৃষি, আবহাওয়া, সামাজিক অবস্থাসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার নানাদিক ফুটে উঠে ।

এর মাধ্যমে তারা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে থাকে ।জোছনা ভরা সন্ধ্যায় গ্রামাঞ্চলের মুরুব্বিরা সারাদিনের কর্মক্লান্ত দেহ এলিয়ে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিকে সাথে নিয়ে উঠোনে সপ বা পাটি বিছিয়ে শুয়ে-বসে নানা ধরনের ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন, পালাগান ও পল্লীগীতির আসর বসিয়ে থাকেন। এ অঞ্চলের আঞ্চলিক গানগুলোর মধ্যে মাদার গান, পদ্মপুরাণ বা মনসার গান ও ভাসানযাত্রা, বিয়ের গীত, মনসার গান বা ভাসান যাত্রা, বারোসা গান, মুর্শিদী গান উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের অন্যান্য অনেক অঞ্চলের তুলনায় নাটোরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ও রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য । নাটোরের ৬টি উপজেলাতে বসবাসরত মোট আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রায় ৪৫ হাজার । আদিবাসী সম্প্রদায় আছে ২২-২৩ টি। সম্প্রদায়গুলো হচ্ছে : ওঁরাও, পাহান, পাহাড়ী, সিং, মাহাতো, মুন্ডারী, সাঁওতাল, লোহার, তেলী, রায়, চৌহান, মাল পাহাড়ী, বাগতি, রামদাস, রবিদাস, মল্লিক, গারো, হাড়ী, তুড়ি, ভান্ডারী, ঋষি, কোনাই, মালো প্রভৃতি।

এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান। এদের প্রচলিত ভাষাসমূহের মধ্যে রয়েছে সাদ্রি, কুরুখ,সাঁওতালী, ফারসী, নাগরী, উড়িয়া, পাহাড়ী ইত্যাদি । আদিবাসীরা মূলতঃ প্রকৃতি পূজারী। আদিবাসীদের নিজস্ব কিছু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে । এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ, কারাং উৎসব, ধান বান গাড়ী, শহরাই উৎসব, পুংটাডী, ডান্ডা-কাটনা, ফাগুয়া। এছাড়াও এরা সনাতন ধর্মের পূজা পার্বণ পালন করে থাকে ।

কবি জীবনানন্দ দাশ-এর লেখা বিখ্যাত ‘বনলতা সেন, কবিতায় নাটোর অমর হয়ে আছে। ঐতিহ্য আর প্রাচীন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি। প্রাচীণ ঐতিহ্য আর প্রত্নতাত্বিক ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত তিলোত্তমা এই রাজবাড়ি নাটোরকে এনে দিয়েছে এক বিশেষ খ্যাতি ও পরিচিতি।

রাণী ভবানীর রাজবাড়ী, উত্তরা গণভবন, দয়ারামপুর রাজবাড়ি, চাপিলা শাহী মসজিদে, চলনবিল, চলনিবল যাদুঘর, হালতির বিল বনপাড়া লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী ও অন্যান্য দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে পর্যটন জোন গড়ে তোলা গেলে তা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে ।


লেখকঃ তরুণ নারী উদ্যোক্তা ।

পথশিশুদের শিক্ষায় আমাদের করণীয়

ইসরাত জাহান ইতি


শিশু পথে জন্মানোর কারনে সে পথশিশু হয় না বরং এ সমাজ তাদেরকে পথশিশু বানায়। পথশিশু হল সেইসব শিশু যারা দারিদ্র্য বা গৃহহীনতার কারণে শহর, নগর বা গ্রামের রাস্তায় বসবাস করে। তাছাড়া বাবা মায়ের বিচ্ছেদ, বাবা মা মারা যাওয়ায়, গ্রামে দরিদ্রতা বেড়ে যাওয়া, গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা কাজের খোঁজে বা বাবা মায়ের অসচেতনতার কারনে অনেক শিশু ঢাকায় এসে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এদিকে অর্থ লোভী কিছু মাদক ব্যবসায়ীর কারনেও এখন কিছু শিশুরা পথে দিন কাটায়। বাংলাদেশে লাখ লাখ পথশিশুদের নিরাপদ থাকার স্থানের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি রয়েছে অপরাধে জড়িয়ে পরার ব্যাপক সম্ভাবনা।

জাতিসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত ঘোষণা অনুযায়ী ১৮ বয়সের কম বয়সী সকলকেই শিশু বলে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার পথশিশু রয়েছে।

রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, অফিস চত্বর, পার্ক ও খোলা আকাশের নিচে তাদের বাস। এই পথশিশুদের বড় অংশই রয়েছে রাজধানী ঢাকায় ৷ এদের বয়স ৬ থেকে ১৮ বছরের নীচে ৷ বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই৷ কেউ বলেন ২০ লাখ৷ আবার কেউ বলেন ২৫ লাখ৷ ঢাকা শহরে আছে কমপক্ষে ৬-৭ লাখ ৷ তবে এদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় থাকে৷

সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না৷

ঢাকা শহরের দুইটি জায়গায় পথশিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী, কাওরান বাজার ও কমলাপুর । কার্যক্রম পরিচালক ড. আবুল হোসেন একটি প্রেজেন্টেশনে বলেন কমলাপুরের পথশিশুদের প্রায় ৫৩ শতাংশ ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী এবং প্রায় ৮৩ শতাংশ পথশিশু তারা তাদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করে। তাদের ৬০ শতাংশ মাদক নেয় এবং প্রায় ৮০ শতাংশ পথশিশু যথাযথভাবে টয়লেট ব্যবস্থা নেয় না। তার ওপর শারীরিক, অর্থনৈতিক, যৌন নির্যাতন, মাদক এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শিশুদের জাড়ানো হচ্ছে ৷ ফলে সার্বিকভাবেই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে পথশিশুরা ।

সম্প্রতি আরো এক গবেষণায় দেখা যায়- দেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি পথশিশু রয়েছে। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ১০ লাখেরও বেশি। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনো মাদক সেবন করে। বিবিএস এর তথ্য মতে শিশুরা বড়দের মত কাজ করে ৮৫ শতাংশ , স্কুলে যায় না ২৪ লাখ শিশু, মজুরি পায় না ১৬ লাখ শিশু, পরিবারকে সহায়তা দিতে কাজ করে ৩০ শতাংশ শিশু, কৃষি ও কল কারখানায় কাজ করে ৬৫ শতাংশ শিশু।

শিক্ষা সবার জন্মগত মৌলিক অধিকার । অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের অনেক ছিন্নমূল শিশুরা । একটি শিশুকে স্কুলে আসতে গেলে তাকে তো পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে ও পেট ভরে খেয়ে আসতে হবে ৷ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষায় পথশিশুদের অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না, যদি না তাদের অন্যান্য চাহিদাগুলো পূরণ করা যায় ৷ শিশুর ভিতরে স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে হবে ৷ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি ভালো জায়গায় তৈরি করতে হবে । প্রতিটি শিশুর মধ্যে রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা।

তেমনিভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের ভেতরও রয়েছে আলাদা একটি জগৎ। তাদের চিন্তাধারাও আলাদা আলাদা। একটু সহযোগিতা, সহানুভূতি আর একটু ভালোবাসায় বদলে দিতে পারে তাদের জীবন। এই শিশুদের মধ্যেই রয়েছে ভবিষ্যতের কত কবি, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ইত্যাদি ।

শিশুদেরকে আমরা কাজে না এনে স্কুলে দিতে পারি ৷ আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে অবশ্যই পথশিশুদের মৌলিক অধিকার সুযোগ গুলো পূরণ করতে হবে। শিক্ষার আলোয় পথশিশুরা আলোকিত হলেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে। কেবল শিক্ষাই পারে দেশকে দারিদ্র মুক্ত করতে। শিক্ষাই জাতীয় ও সামাজিক সমস্যা গুলোর স্থায়ী সমাধান করতে পারে।

পথশিশুদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ লোকই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। বেঁচে থাকার আহার টুকু কখনো রোজগার করতে না পারলে ওরাই পেটের জ্বালায় বেছে নেয় চুরি, ডাকাতিসহ নানা সামাজিক অপরাধমূলক কাজ। অনেক কঠিন ও ঝুকিপূর্ণ কাজে কারখানার মালিকেরা শিশুদের অল্প টাকার বিনিময়ে কাজ করায়। এতে অকালেই অনেক শিশুরা ঝরে পড়ে।

এসব শিশুরা যদি শিক্ষার সুযোগ পায় তাহলে তারা ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে অবগত থাকবে। তাই এসব ছিন্নমূল টোকাই-পিচ্চিদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ওদের মেধা ও শ্রমের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটিয়ে দেশের সম্পদে পরিণত করতে হবে।

এসব অধিকার বঞ্চিত শিশুকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তুলতে চাই উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিবেশ। ভিক্ষা নয়, দেশের উৎপাদনের বড় একটি অংশের যোগান দেয়া যেতে পারে ওদের দ্বারাই। উন্নত দেশে দেখা যায় যে, শিশুর সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করে। তেমনি আমাদের দেশের অবহেলিত শিশুদের সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্র নিলে সমাজে আর কোন অরাজকতার সৃস্টি হবে না।

শিক্ষা বঞ্চিত সমাজ সভ্যতা তিমিরে নিমজ্জিত । শিক্ষা, বিনোদনসহ এবং সকলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সমাজ ও রাষ্ট্র দায়িত্ব । দেশের এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে তাদেরকে হাতের কাজ শিখানো, কারিগরী শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। শিশুদের নৈতিকতা শিক্ষাও দিতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ না থাকলে মানুষের জীবন বিপথে পরিচালিত হয়।

উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তারা যেন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। বিভন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা তাদেরকে করে দিতে হবে। তাদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষা ও শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে। শিশুদেরকে শিক্ষা দানের জন্য ‍বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ পথ শিশুকে বাদ দিয়ে জাতি বা দেশ কখনো নিরক্ষরতা, উন্নতি, এবং আধুনিকায়নে স্বাক্ষর রাখতে পারবে না ।

অসহায় পথশিশু যাদের ক্ষুধার জন নেই একমুঠো খাবার, মায়ের হাতের পিঠাপুলি সেতো স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নেই দেহ ঢাকার এক টুকরো কাপড়, তার কাছে শীত মানেই বিভীষিকা । বাসস্থান হলো খোলা আকাশ, রাত মানেই তার কাছে দুঃস্বপ্ন । শিক্ষাতো তাদের কাছে শুধুই বিলাসিতা । আর চিকিৎসা সেতো সরকারি হাসপাতালের অবহেলা।


ক্ষুধা যেন আজ সুকান্ত ভট্টাচার্য এর কবিতার মত

“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।”


লেখকঃ শিশু সাহিত্যিক।