মৃত্যুর কারণ ঈদের নতুন জামা!

আজাহার ইসলাম


রিমন আহমেদ। বয়স ১০ কি ১২ হবে। বাবা মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান। ঈদের বাকি আর দুই দিন। রিমন তার বাবা সাজিদকে বলছে, ‘বাবা, বাবা আমার নতুন জামা?’ বাবা কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না। তবু বোঝানোর অব্যর্থ চেষ্টা করলো।

করোনা ভাইরাসের কারণে ছেলের জামা কিনতে পারেনি সাজিদ আহমেদ। রিমন কিছুটা বুঝলেও অভিমান করে বসে আছে ঘরের এক কোণায়।

তামান্না আক্তার। সাজিদ আহমেদের স্ত্রী। তিনিও ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তবু ছেলের যেন অভিমান ভাঙছেই না। সাজিদ ছেলের অভিমান দেখে আর সাত পাঁচ না ভেবে ঠিক করলো বাজারে গিয়ে ছেলের নতুন জামা কিনতেই হবে।

সাজিদ আহমেদ ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, ‘বাবা আমি তোমার নতুন জামা আনতে বাজারে যাচ্ছি। খুশিতে রিমনের চোখ চকচকে হয়ে উঠলো। বলে উঠলো, ‘কি মজা! কি মজা!’

সাজিদ আহমেদ বাজারের দিকে রওয়ানা হল। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন বাজারে উপচে পরা ভীড়। সাজিদের মনে এ প্রশ্ন নাড়া দিল ‘করোনার মধ্যে এত লোক বাজারে কেন?’ কিছুক্ষণ পর ভাবলেন তাঁর মত হয়তো অনেকেই ছেলের অভিমান ভাঙাতে বাজারে এসেছে।

বাজার থেকে দ্রুত ছেলের জন্য জামা কিনেই বাড়ি ফিরলেন সাজিদ। নতুন জামা পেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো রিমন। ছেলের অভিমান ভাঙানো গেছে বলে নিশ্চিত হলেন সাজিদ ও তামান্না।

রোববার সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ঈদ। মসজিদে মসজিদে বাজছে কাজী নজরুল ইসলামের সেই প্রিয় গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এত খুশির ঈদ।’ রিমন রীতিমতো অস্থির। কখন সকাল হবে? নতুন জামা পড়বে।

সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী এবার ঈদের জামাত ঈদগাহে হবে না। প্রত্যেক এলাকায় মসজিদে হবে। করোনা ভাইরাসের জন্য গ্রামেও ফিরতে পারেনি তারা। ঈদের দিন খুব তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠলো রিমন। উঠেই বাবা মাকে ডাকতে শুরু করেছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৭ টা টায় অনুষ্ঠিত হবে। ঘুম থেকে উঠে গোসল করে সেমাই খেয়ে নামাজের উদ্যেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো সাজিদ ও তার ছেলে রিমন।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এবারের ঈদে তেমন আমেজ নেই। তবু ঈদ থেমে থাকেনি। রোজার শেষে রমজানের ঈদ এসেছে। পরিবারের বাইরে প্রথম ঈদ সাজিদের। মনে চাপা কষ্ট বাড়ি ফিরতে না পেরে। উপায়ান্তর না পেয়ে পরিবার নিয়ে শহরেই এবার ঈদ করছে।

দেখতে দেখতে ঈদ পেরিয়ে কয়েকদিন পরেই সাজিদ জ্বরে আক্রান্ত হলো। জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট। ধীরে ধীরে অসুস্থতা বেড়েই চলেছে সাজিদের। জ্বর, শ্বাসকষ্ট করোনার উপসর্গ বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে টেস্ট করালে করোনা পজিটিভ আসে। দু’দিন পর সপরিবারে করোনা টেস্ট করালে সবার পজিটিভ আসে।

সাজিদ, তামান্না ও তাদের ছেলে রিমন একটি হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে চিকিৎসাধীন। তামান্না ও রিমনের ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও সাজিদের অবনতি হচ্ছে। কিছুদিন পরেই তামান্না ও রিমন সুস্থ হয়ে উঠলেও সাজিদ পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে পরপারে চলে গেলেন। মৃত্যু হলো একটি বাবার। একটি স্বপ্ন দেখানোর পথিকের।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।